নিত্যপণ্যের বেড়ে যাওয়া দামের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা এখন বেশি ওভারটাইম করছেন। এই অতিরিক্ত কায়িক শ্রমের ধকল সইতে না পেরে মৃত্যুও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ‘বেঁচে থাকার মতো ব্যয় নির্বাহে’ নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
এই দাবির জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘তারা শ্রমিকদের ভালো চান। তাদের যেমন অর্ধাহারে দেখতে চান না, আবার মালিকরাও ব্যয় সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ুক, তাও দেখতে চান না। এ ক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থা খুঁজে বের করতে হবে।’
বুধবার (৩১ আগস্ট) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়। এর বিষয় ছিল ‘পোশাক খাতে সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি : শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে কি?’ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিভিন্ন স্তরের শ্রমিক নেতা এবং মালিক সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা চরম সংকটে রয়েছে দাবি করে গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্তু ঘোষ বলেন, ‘যে আয় আছে তা দিয়ে সে (শ্রমিক) চলতে পারছে না। বাবা-মা-ভাইবোনকে সে খাওয়াতে পারছে না। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতেই বাড়তি পরিশ্রম করে তার জীবন ধ্বংস করছে। একজন শ্রমিক আট ঘণ্টার জায়গায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করছে। হাড়ভাঙা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে ইতোমধ্যে কেউ কেউ মারাও গেছে। অথচ মালিকরা মনে করেন শ্রমিকরা ভালো আছে।’
সরকার অভিভাবক হলেও সংকট সমাধানের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি যদি সরকার গভীরভাবে বিবেচনা না করে, মালিকরা যদি আমলে না নেয়, তাহলে পোশাক খাতে শ্রমিকরা আকস্মিক বিক্ষুব্ধ হয়ে যেতে পারে।’ এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে পোশাকশ্রমিকদের রেশনিংয়ের আওতায় আনার পরামর্শও দেন এই শ্রমিক নেতা।
শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার দাবি করেন, ‘দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, শ্রমিকদের বেঁচে থাকার কষ্ট আরও বেড়েছে। অথচ বর্তমান মজুরি স্ট্যান্ডার্ডে থাকা তো দূরের কথা, মিনিমাম ওয়েজ স্ট্যান্ডার্ডেও বেঁচে থাকার ধারেকাছে নেই। কিন্তু সুসংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন না থাকায় সেই দাবিটিও শ্রমিকরা জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারছে না। তাদের চাকরি হারানোর ভয় আছে।’
কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘করোনা কেটে যাওয়ার পর পোশাক খাতের শ্রমিকের কাজ করার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনক হলো, দেশে যে নারী শ্রমিক একটা সময় ৮৫ শতাংশ ছিল, সেটি ধীরে ধীরে কমে ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কেন এই নারী শ্রমিকের আধিক্য পোশাক খাতে কমে এলো, তা নিয়ে গবেষণার দাবি রাখে।’
তিনি জানান, শ্রমিকের আয়ের তুলনায় ব্যয় সাড়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে। ব্যয় সামলাতে তারা এখন আগের থেকে বেশি কাজ করছে। এতে ৮৪ শতাংশ কারখানায় অতিরিক্ত কাজের চাপের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পোশাক কারখানাগুলোতে গড়ে ৪০ জন করে শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। নারী শ্রমিকের প্রতি যৌন হয়রানি কমলেও সাম্প্রতিক সময় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সাবকন্ট্রাক্টের কারখানায় বেড়েছে। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা যথাযথ আইনি অধিকার পায় না। ব্র্যান্ড বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর লেবার রাইট ইস্যুতে মনিটরিং আগের তুলনায় কমেছে। এর বিপরীতে সাম্প্রতিক সময় পোশাক কারখানাগুলোতে ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর অর্ডার বেড়েছে।
এসব বক্তেব্যের জবাবে নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘আমরা আসলে সমস্যাগুলো আগে দেখি যাতে সমাধানটা বের করা যায়। সে কারণে সমস্যাগুলোই সবার সামনে আগে আসে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেয়া হচ্ছে না এই দাবিও সঠিক নয়।’
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘দেশে এখন ১১৩৬ ইউনিয়ন আছে। ফলে ইউনিয়ন করতে দেয়া হচ্ছে না- এই দাবি সঠিক নয়। নারী শ্রমিকের ঘাটতির পেছনে নারীর কাজে দক্ষতার ঘাটতিই দায়ী।
আগের তুলনায় পোশাক খাতের শ্রমিকরা ভালো আছে দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের আয়, পোশাক-আশাক, চলনেবলনে ও দক্ষতায় আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। এসব কারণে পোশাক খাতেও সমৃদ্ধি বেড়েছে। আমাদের একটি ব্যালেন্স ওয়ে আউট বের করতে হবে। সমস্যা থাকবে। এর জন্য আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’
বুধবার, ৩১ আগস্ট ২০২২
নিত্যপণ্যের বেড়ে যাওয়া দামের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা এখন বেশি ওভারটাইম করছেন। এই অতিরিক্ত কায়িক শ্রমের ধকল সইতে না পেরে মৃত্যুও হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের ‘বেঁচে থাকার মতো ব্যয় নির্বাহে’ নতুন মজুরি বোর্ড গঠনের দাবি জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।
এই দাবির জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, ‘তারা শ্রমিকদের ভালো চান। তাদের যেমন অর্ধাহারে দেখতে চান না, আবার মালিকরাও ব্যয় সামলাতে না পেরে ছিটকে পড়ুক, তাও দেখতে চান না। এ ক্ষেত্রে একটি মধ্যপন্থা খুঁজে বের করতে হবে।’
বুধবার (৩১ আগস্ট) বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি আয়োজিত এক কর্মশালায় এসব কথা বলা হয়। এর বিষয় ছিল ‘পোশাক খাতে সাম্প্রতিক প্রবৃদ্ধি : শোভন কর্মসংস্থান নিশ্চিত হচ্ছে কি?’ সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সভাপতিত্বে এই আয়োজনে বিভিন্ন স্তরের শ্রমিক নেতা এবং মালিক সংগঠন ও বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা চরম সংকটে রয়েছে দাবি করে গার্মেন্ট ওয়ার্কার্স ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি মন্তু ঘোষ বলেন, ‘যে আয় আছে তা দিয়ে সে (শ্রমিক) চলতে পারছে না। বাবা-মা-ভাইবোনকে সে খাওয়াতে পারছে না। পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতেই বাড়তি পরিশ্রম করে তার জীবন ধ্বংস করছে। একজন শ্রমিক আট ঘণ্টার জায়গায় ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করছে। হাড়ভাঙা অতিরিক্ত কাজের চাপ নিয়ে ইতোমধ্যে কেউ কেউ মারাও গেছে। অথচ মালিকরা মনে করেন শ্রমিকরা ভালো আছে।’
সরকার অভিভাবক হলেও সংকট সমাধানের কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি যদি সরকার গভীরভাবে বিবেচনা না করে, মালিকরা যদি আমলে না নেয়, তাহলে পোশাক খাতে শ্রমিকরা আকস্মিক বিক্ষুব্ধ হয়ে যেতে পারে।’ এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে পোশাকশ্রমিকদের রেশনিংয়ের আওতায় আনার পরামর্শও দেন এই শ্রমিক নেতা।
শ্রমিক নেত্রী কল্পনা আক্তার দাবি করেন, ‘দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, শ্রমিকদের বেঁচে থাকার কষ্ট আরও বেড়েছে। অথচ বর্তমান মজুরি স্ট্যান্ডার্ডে থাকা তো দূরের কথা, মিনিমাম ওয়েজ স্ট্যান্ডার্ডেও বেঁচে থাকার ধারেকাছে নেই। কিন্তু সুসংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন না থাকায় সেই দাবিটিও শ্রমিকরা জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারছে না। তাদের চাকরি হারানোর ভয় আছে।’
কর্মশালায় উপস্থাপিত প্রবন্ধে সিপিডির জ্যেষ্ঠ গবেষণা পরিচালক গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘করোনা কেটে যাওয়ার পর পোশাক খাতের শ্রমিকের কাজ করার হার ২০ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু আশঙ্কাজনক হলো, দেশে যে নারী শ্রমিক একটা সময় ৮৫ শতাংশ ছিল, সেটি ধীরে ধীরে কমে ৬৮ শতাংশে নেমে এসেছে। কেন এই নারী শ্রমিকের আধিক্য পোশাক খাতে কমে এলো, তা নিয়ে গবেষণার দাবি রাখে।’
তিনি জানান, শ্রমিকের আয়ের তুলনায় ব্যয় সাড়ে ৯ শতাংশ বেড়েছে। ব্যয় সামলাতে তারা এখন আগের থেকে বেশি কাজ করছে। এতে ৮৪ শতাংশ কারখানায় অতিরিক্ত কাজের চাপের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পোশাক কারখানাগুলোতে গড়ে ৪০ জন করে শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। নারী শ্রমিকের প্রতি যৌন হয়রানি কমলেও সাম্প্রতিক সময় শিশু শ্রমিকের সংখ্যা সাবকন্ট্রাক্টের কারখানায় বেড়েছে। অনেক কারখানায় শ্রমিকরা যথাযথ আইনি অধিকার পায় না। ব্র্যান্ড বায়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর লেবার রাইট ইস্যুতে মনিটরিং আগের তুলনায় কমেছে। এর বিপরীতে সাম্প্রতিক সময় পোশাক কারখানাগুলোতে ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলোর অর্ডার বেড়েছে।
এসব বক্তেব্যের জবাবে নিট পোশাক মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ‘আমরা আসলে সমস্যাগুলো আগে দেখি যাতে সমাধানটা বের করা যায়। সে কারণে সমস্যাগুলোই সবার সামনে আগে আসে। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করতে দেয়া হচ্ছে না এই দাবিও সঠিক নয়।’
বিজিএমইএর সিনিয়র সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, ‘দেশে এখন ১১৩৬ ইউনিয়ন আছে। ফলে ইউনিয়ন করতে দেয়া হচ্ছে না- এই দাবি সঠিক নয়। নারী শ্রমিকের ঘাটতির পেছনে নারীর কাজে দক্ষতার ঘাটতিই দায়ী।
আগের তুলনায় পোশাক খাতের শ্রমিকরা ভালো আছে দাবি করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শ্রমিকদের আয়, পোশাক-আশাক, চলনেবলনে ও দক্ষতায় আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। এসব কারণে পোশাক খাতেও সমৃদ্ধি বেড়েছে। আমাদের একটি ব্যালেন্স ওয়ে আউট বের করতে হবে। সমস্যা থাকবে। এর জন্য আমাদের সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’