alt

অর্থ-বাণিজ্য

এলসি খোলার জটিলতায় বিপাকে খুলনার ব্যবসায়ীরা

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা : বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে না পেরে খুলনায় আমদানিনির্ভর পণ্যের ব্যবসায় জড়িতরা সংকটে পড়েছেন। করোনার ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব দেশেও পড়েছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা চরমসংকটের সম্মুখীন এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে পণ্যের দামও বাড়বে।

ব্যবসায়ীরা জানান, শবেবরাত, রমজান ও ঈদউৎসবে চাহিদা বাড়ে এমন বেশিরভাগ পণ্য এখনও আমদানিনির্ভর। প্রতি বছর ধর্মীয় এসব আয়োজনের আগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আমদানির প্রস্তুতি সেরে ফেলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান না হলে বাজার অস্থিরতার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের জোগান কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জরুরি পণ্য আমদানি ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছাড়ছে না। শুধু ভোগ্যপণ্য, শিশুখাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ডলারের জোগান দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় আমদানির এলসি খোলা যাচ্ছে না।

আমদানি-রপ্তানি যুগ্ম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় নিবন্ধিত আমদানিকারক রয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৯ জন। এরমধ্যে নিয়মিত লাইসেন্স নবায়ন করেন ১ হাজার ৯৩৩ জন। এদের মধ্যে সার আমদানিকারক ছাড়া অন্যদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, আমদানি একটি চেইন ব্যবসা। এরসঙ্গে লাইটার জাহাজের মালিক-শ্রমিক, নদীবন্দরের শ্রমিক, ঠিকাদার, যন্ত্রপাতি ব্যবসায়ী, পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক মালিক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা জড়িত। আমদানি কমে যাওয়ায় এ সেক্টরের সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে ছোট ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য পরিমাণে কম হলে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ট্রাকে খুলনায় আসে।

এর বাইরে অন্য দেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যই মোংলা অথবা চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সড়ক অথবা নৌপথে খুলনায় আসে। এরমধ্যে যেসব পণ্য পরিমাণে বেশি, সেগুলো মোংলা বন্দরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে করে নদীবন্দরে খালাস হয়। পরে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়।

তরিকুল হোসেন নামে একজন গাড়ি আমদানিকারক জানান, তুলনামূলক কমখরচে আমদানি ও গাড়ি রাখার সুবিধার কারণে গাড়ি আমদানিতে মোংলা বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ বেড়েছে আমদানিকারকদের। আমদানিকারকদের মধ্যে খুলনার ১৫-২০ জন ব্যবসায়ী মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। অপ্রয়োজনীয় আমদানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে এলসি খুলতে না পারায় চরম সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

চীন থেকে রাইস কুকার, প্রেশারকুকারসহ ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আমদানি করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন ফিরোজ আহমেদ। নগরীর হার্ডমেটাল গ্যালারিতে তার অনয় হার্ডওয়্যার ও ইলেকট্রনিক্সে কাজ করতেন প্রায় ২০-২২ জন কর্মচারী। গত অক্টোবর থেকে তার ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ।

ফিরোজ জানান, ডলার সংকটের কথা বলে কোন ব্যাংক এলসি খুলতে রাজি হয় না। প্রতিষ্ঠানের ১২ কর্মচারীকে ছাঁটাই করে দিয়েছেন। বাকি যে ৮-১০ জন আছেন, তাদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানি করতেন কাজী নিজাম উদ্দিন সুজন। সুজন জানান, বাজারে কয়লা ও পাথরের চাহিদা রয়েছে; কিন্তু ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরে সেই অনুযায়ী এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না। এবছর পাথর আমদানি করা যায়নি, কয়লা আমদানিও খুব সীমিত। আমদানি কমে যাওয়ায় এ সেক্টরের কার্গো, ট্রাক মালিক-শ্রমিকদেরও কাজ নেই।

খুলনায় গৃহস্থালি ব্যবহারিক ও বৈদ্যুতিক পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার নগরীর ডাকবাংলো মোড়। এখানকার খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মাদিয়া ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মনজুরুল কাদির মঞ্জু জানান, রাইস কুকার, রুম হিটার, অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে ব্যবহূত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এখন নিত্যপ্রয়োজনীয়। কিন্তু আমদানি বন্ধ থাকায় গত কয়েক মাস পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আল্লাহর দান ফ্রুট এজেন্সির কাজী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘খুলনার বড়বাজারে ১৫টি ফলের আড়তে বেদানা, কমলা, আঙুর, আপেল, মাল্টা, খেজুর ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে আমদানি হয়। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানিতে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।’

মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস এম সার্জিক্যালের স্বত্বাধিকারী শুকুর আলী বলেন, ‘নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কোন ব্যাংকই এলসি খুলতে রাজি হয়নি। জানুয়ারির শুরুতে কয়েকটি ব্যাংক স্বল্পমূল্যের আমদানির এলসি গ্রহণ করছে।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি জিএম নাসির উল্লাহ বলেন, ‘তাদের অনেক সদস্যই এলসি খুলে পণ্য আনেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না।’

এবি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অঞ্চলপ্রধান আরিফ কামাল চৌধুরী বলেন, ‘এলসি খোলা বন্ধ নয়, আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানোর একটা প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।’

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখার ব্যবস্থাপক (অপারেশন) এস এম রবিউল আলম বলেন, ‘এলসি একেবারে বন্ধ নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে ডলার প্রাপ্তি সাপেক্ষে এলসি খোলা হচ্ছে।’

জানতে চাওয়া হলে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, ‘ডলার সংকটে ব্যবসায়ীদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তবে সরকার এরইমধ্যে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নির্দেশনাও দিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে।’

ছবি

হঠাৎ ঝলকের পর আবার পতন, বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

শেয়ারবাজারে টানা দরপতনের প্রতিবাদে বিনিয়োগকারীদের বিক্ষোভ

ছবি

পদত্যাগ করেছেন পদ্মা ব্যাংকের এমডি তারেক রিয়াজ

ঈদের পর শেয়ারবাজার কিছুটা ভালো হতে শুরু করেছে

ছবি

দিনাজপুরে বাঁশ ফুলের চাল তৈরি

ছবি

অভিনেতা ওয়ালিউল হক রুমি মারা গেছেন

ছবি

বিআইপিডি’র অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করছে : এফএফআইএল

ছবি

চাহিদা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সরকার বদ্ধপরিকর

ছবি

রাজধানীতে ঈদের পরও চড়া সবজির বাজার

ছবি

সয়াবিন তেলের লিটার প্রতি দাম বাড়ল ৪ টাকা

ছবি

সূচকের পতনে পুঁজিবাজারে চলছে লেনদেন

ছবি

ব্যাংক এশিয়া কিনবে পাকিস্তানি ব্যাংক আলফালাহর বাংলাদেশ অংশ

ছবি

এ বছর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৫.৭%: আইএমএফ

ছবি

একীভূতকরণ প্রক্রিয়ায় থাকা ব্যাংক চাইলে সরে যেতে পারবে, তবে শর্তসাপেক্ষে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

পণ্যের দাম ঠিক রাখতে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে : প্রতিমন্ত্রী

ছবি

একীভূত ব্যাংক : পাঁচটির বাইরে আপাতত আর না

ছবি

ঈদে মানুষের মাঝে স্বস্তি দেখেছি : বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি বিশ্ব ব্যাংকের চেয়ে বেশি দেখছে এডিবি

ছবি

মার্চে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৮১ শতাংশ

ছবি

ঈদের আগে পাঁচ দিনে দেশে এলো ৪৬ কোটি ডলার

ছবি

শিল্পাঞ্চলের বাইরের কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুৎ আর নয়, পাবেনা ঋণও

এবার ঈদে পর্যটন খাত চাঙ্গা হওয়ার আশা

ছবি

জাতীয় লজিস্টিক নীতির খসড়ার অনুমোদন

সোনালীতে একীভূত হচ্ছে বিডিবিএল

ছবি

সোনার দাম আবার বাড়লো, ভরি ১ লাখ ১৭ হাজার ৫৭৩ টাকা

ছবি

সিটি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বেসিক ব্যাংক

ছবি

বিজিএমইএর দায়িত্ব নিলেন এস এম মান্নান কচি

ছবি

বাজার মূলধন কিছুটা বাড়লো, তবু লাখ কোটি টাকার ওপরে ক্ষতি

ছবি

নতুন বিদেশী ঋণ নিয়ে পুরনো ঋণ শোধ করছে সরকার : সিপিডি

ছবি

ব্যাংক একীভুতকরনে নীতিমালা জারি

রাষ্ট্রীয় চার ব্যাংক একীভূত হয়ে হবে দুই

ছবি

এবার একীভূত হচ্ছে ‘সোনালীর সাথে বিডিবিএল’ ও ‘কৃষির সাথে রাকাব’

ছবি

শেয়ার প্রতি ১ পয়সা লভ্যাংশ দেবে একমি পেস্টিসাইড

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানী লিমিটেডের কর্মীদের জন্য মেটলাইফের বীমা সুরক্ষা

গাজীপুরে এক বছরে ট্রাফিক পুলিশের ৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয়

ছবি

প্রবৃদ্ধি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে: বিশ্বব্যাংক

tab

অর্থ-বাণিজ্য

এলসি খোলার জটিলতায় বিপাকে খুলনার ব্যবসায়ীরা

জেলা বার্তা পরিবেশক, খুলনা

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৩

ডলার সংকটের কারণে ঋণপত্র বা এলসি খুলতে না পেরে খুলনায় আমদানিনির্ভর পণ্যের ব্যবসায় জড়িতরা সংকটে পড়েছেন। করোনার ক্ষতি পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তার প্রভাব দেশেও পড়েছে।

আমদানিকারকরা বলছেন, ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যাংক এলসি খুলতে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে ব্যবসায়ীরা চরমসংকটের সম্মুখীন এবং আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে পণ্যের দামও বাড়বে।

ব্যবসায়ীরা জানান, শবেবরাত, রমজান ও ঈদউৎসবে চাহিদা বাড়ে এমন বেশিরভাগ পণ্য এখনও আমদানিনির্ভর। প্রতি বছর ধর্মীয় এসব আয়োজনের আগে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এলসি খুলে পণ্য আমদানির প্রস্তুতি সেরে ফেলেন। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না। দ্রুত এসব সমস্যা সমাধান না হলে বাজার অস্থিরতার সম্ভাবনা দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ডলারের জোগান কমিয়ে দেয়া হয়েছে। জরুরি পণ্য আমদানি ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার ছাড়ছে না। শুধু ভোগ্যপণ্য, শিশুখাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ডলারের জোগান দেয়া হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর কাছে চাহিদা অনুযায়ী ডলারের জোগান না থাকায় আমদানির এলসি খোলা যাচ্ছে না।

আমদানি-রপ্তানি যুগ্ম নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, খুলনায় নিবন্ধিত আমদানিকারক রয়েছেন ৩ হাজার ৪৪৯ জন। এরমধ্যে নিয়মিত লাইসেন্স নবায়ন করেন ১ হাজার ৯৩৩ জন। এদের মধ্যে সার আমদানিকারক ছাড়া অন্যদের ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে।

আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, আমদানি একটি চেইন ব্যবসা। এরসঙ্গে লাইটার জাহাজের মালিক-শ্রমিক, নদীবন্দরের শ্রমিক, ঠিকাদার, যন্ত্রপাতি ব্যবসায়ী, পরিবহনে ব্যবহৃত ট্রাক মালিক-শ্রমিকসহ বিভিন্ন সেক্টরের কয়েক হাজার মানুষের জীবিকা জড়িত। আমদানি কমে যাওয়ায় এ সেক্টরের সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে ছোট ব্যবসায়ীদের।

ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত ভারত থেকে আমদানি করা পণ্য পরিমাণে কম হলে বেনাপোল ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ট্রাকে খুলনায় আসে।

এর বাইরে অন্য দেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্যই মোংলা অথবা চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে সড়ক অথবা নৌপথে খুলনায় আসে। এরমধ্যে যেসব পণ্য পরিমাণে বেশি, সেগুলো মোংলা বন্দরে বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে করে নদীবন্দরে খালাস হয়। পরে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় যায়।

তরিকুল হোসেন নামে একজন গাড়ি আমদানিকারক জানান, তুলনামূলক কমখরচে আমদানি ও গাড়ি রাখার সুবিধার কারণে গাড়ি আমদানিতে মোংলা বন্দর ব্যবহারের আগ্রহ বেড়েছে আমদানিকারকদের। আমদানিকারকদের মধ্যে খুলনার ১৫-২০ জন ব্যবসায়ী মোংলা বন্দর দিয়ে গাড়ি আমদানি করেন। অপ্রয়োজনীয় আমদানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে এলসি খুলতে না পারায় চরম সংকটের সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।

চীন থেকে রাইস কুকার, প্রেশারকুকারসহ ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী আমদানি করে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতেন ফিরোজ আহমেদ। নগরীর হার্ডমেটাল গ্যালারিতে তার অনয় হার্ডওয়্যার ও ইলেকট্রনিক্সে কাজ করতেন প্রায় ২০-২২ জন কর্মচারী। গত অক্টোবর থেকে তার ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ।

ফিরোজ জানান, ডলার সংকটের কথা বলে কোন ব্যাংক এলসি খুলতে রাজি হয় না। প্রতিষ্ঠানের ১২ কর্মচারীকে ছাঁটাই করে দিয়েছেন। বাকি যে ৮-১০ জন আছেন, তাদের বসিয়ে বেতন দিতে হচ্ছে।

ভারত থেকে কয়লা ও পাথর আমদানি করতেন কাজী নিজাম উদ্দিন সুজন। সুজন জানান, বাজারে কয়লা ও পাথরের চাহিদা রয়েছে; কিন্তু ব্যাংকগুলো কয়েক মাস ধরে সেই অনুযায়ী এলসি খুলতে রাজি হচ্ছে না। এবছর পাথর আমদানি করা যায়নি, কয়লা আমদানিও খুব সীমিত। আমদানি কমে যাওয়ায় এ সেক্টরের কার্গো, ট্রাক মালিক-শ্রমিকদেরও কাজ নেই।

খুলনায় গৃহস্থালি ব্যবহারিক ও বৈদ্যুতিক পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার নগরীর ডাকবাংলো মোড়। এখানকার খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মাদিয়া ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মনজুরুল কাদির মঞ্জু জানান, রাইস কুকার, রুম হিটার, অন্যান্য গৃহস্থালি কাজে ব্যবহূত বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এখন নিত্যপ্রয়োজনীয়। কিন্তু আমদানি বন্ধ থাকায় গত কয়েক মাস পণ্য পাওয়া যাচ্ছে না।

ফল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আল্লাহর দান ফ্রুট এজেন্সির কাজী সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘খুলনার বড়বাজারে ১৫টি ফলের আড়তে বেদানা, কমলা, আঙুর, আপেল, মাল্টা, খেজুর ভারত, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিল থেকে আমদানি হয়। ডলার সংকটের কারণে ফল আমদানিতে নানা অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।’

মেডিকেল ডিভাইস আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এস এম সার্জিক্যালের স্বত্বাধিকারী শুকুর আলী বলেন, ‘নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে কোন ব্যাংকই এলসি খুলতে রাজি হয়নি। জানুয়ারির শুরুতে কয়েকটি ব্যাংক স্বল্পমূল্যের আমদানির এলসি গ্রহণ করছে।’

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির খুলনা বিভাগীয় সভাপতি জিএম নাসির উল্লাহ বলেন, ‘তাদের অনেক সদস্যই এলসি খুলে পণ্য আনেন। কিন্তু গত কয়েক মাস ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকে ব্যাংকে ঘুরেও সাধারণ ব্যবসায়ীরা এলসি খোলার অনুমতি পাচ্ছেন না।’

এবি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও অঞ্চলপ্রধান আরিফ কামাল চৌধুরী বলেন, ‘এলসি খোলা বন্ধ নয়, আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমানোর একটা প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।’

সাউথ বাংলা এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক খুলনা শাখার ব্যবস্থাপক (অপারেশন) এস এম রবিউল আলম বলেন, ‘এলসি একেবারে বন্ধ নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী যাচাই-বাছাই করে ডলার প্রাপ্তি সাপেক্ষে এলসি খোলা হচ্ছে।’

জানতে চাওয়া হলে খুলনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি কাজী আমিনুল হক বলেন, ‘ডলার সংকটে ব্যবসায়ীদের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তবে সরকার এরইমধ্যে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নির্দেশনাও দিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই এ সংকট কেটে যাবে।’

back to top