alt

রমজান সামনে : অস্থির বাজার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩

আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি রমজানের। তাই রমজান সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ছোলা, অ্যাঙ্কর ডাল, বেসন ও ট্যাং থেকে শুরু করে চিনি, তেল, আটা-ময়দার দাম আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বাজার অস্থির থাকায় দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষ বাজার করছেন কাটছাঁট করে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত সপ্তাহে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ছোলা এখন ৯৫-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০-৯০ টাকা, অ্যাঙ্করের বেসন ৭৫-৮৫ টাকা এবং বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। তবে পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোন হাত নেই বলে জানান তারা।

বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল্লাহ যুবায়ের স্বাদ বলেন, ‘আগে রোজা এলে একসঙ্গে দুই কেজি গরুর মাংস, কয়েকটা মুরগি দু-চার কেজি বড় মাছ কিনতাম, আজ শুধু একটা ব্রয়লার মুরগি কিনলাম (২৫০ টাকা কেজি দরে) ৩৬০ টাকায়। এবার মাছের দামও বেশি, গরু-খাসির কথা তো চিন্তাই করতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেখেন একপোয়া কাঁচা মরিচ আজ কিনলাম ৩০ টাকা দিয়ে, আর ২টা লেবু কিনলাম ৩০ টাকা দিয়ে। রোজা শুরু হলে এসব খাবারের দাম যে কোথায় গিয়ে দাড়াবে।’

অমিত কুমার ভদ্র। রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় আপন ছোট ভাইয়ের মেসে উঠেছেন। বর্তমানে একটি টিউশনি করে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা পান। মেসে থাকতে দুই বেলা খাইতে কম করে হলেও মাসে ছয় হাজার টাকা লাগে। এরপরও বাইরে চলতে আরও খরচ হয়। বাড়ির অবস্থা বেশি ভালো না। কাছের পরিচিতজন, আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার-দেনা, সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। ছোট ভাইয়ের পড়া এখনও শেষ হয়নি। ছোট ভাই শান্ত ভদ্রও একটি বেসরকারি বিশ^ব্যিালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। দুই ভাই মিলে একই মেসের আটজনের বাজার করতে এসেছেন রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড কাঁচা বাজারে।

বাজারের বিষয়ে জানতে চাইলে অমিত কুমার ভদ্র সংবাদকে বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহে মেসে মাছ মাংস কেনা হতো। বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে এখন মাঝেমধ্যে কেনা হয়। দুই সপ্তাহ পর আজ মেসে দুইশ’ পঞ্চাশ টাকা দরে দেড় কেজি ব্রয়লার মাংস কিনলাম। আগের মতো তেমন খাইতে পারি না। দেশি মুরগি নিতে গেলে ভয় লাগে কারণ ছয় থেকে সাড়ে ছয়শ’ টাকা কেজি, খাসিও সাড়ে এগারোশ’ টাকা কেজি। ব্যাচেলর লাইফ মানে ডিম দিয়াই চলতাছে ডাল দিয়াই চলতাছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার দেখা অনেক ছাত্র খরচ বাঁচানোর জন্য সেন্টার পয়েন্ট থেকে সরে গিয়ে জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জের দিকে মেস ভাড়া করছে।’

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে শেওরাপাড়া কাঁচা বাজারের মায়ের দোয়া চিকেন হাউজের প্রোপাইটর মো. সবুজ মিয়া সংবাদকে বলেন, ‘ ব্রয়লার মুরগির দাম কমেনি। আজকেও কেজি (একদাম) ২৫০ টাকা, সোনালি (একদাম) ৩৫০ এবং হাঁস ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছি। দাম বাড়বে না কমবে বলতে পারছি না।’

এই বাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা শাহানা আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে গরুর মাংস খাওয়া হয় না। সামনে রোজা, তাই এ উপলক্ষে আজ আধা সের গরুর মাংস কিনলাম ৭৫০ টাকা কেজি দরে। আগে এক কেজি করে মাংস কিনতাম। আর হয়তো কিনতে পারবো কি না, আর দাম যে কততে দাঁড়াবে।

মিরপুর শেওড়াপাড়া কাঁচা বাজারে ২০ বছর ধরে গরুর মাংসের ব্যবসা করছেন নাজমুল। বেচা-বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘মাংসের দাম বাড়ার ফলে বেচা-বিক্রি অধাআধি হচ্ছে। আগে শুক্রবারে দুই আড়াই মণ মাংস বিক্রি করতাম। এখন ৪০ থেকে ৫০ কেজির বেশি মাংস বিক্রি হয় না।’

কারওয়ান বাজারে এসে গরুর মাংস বিক্রেতা হাজী মোহাম্মদ টিপু সুলতানের কাছে বেচা-বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে একাই একটা গরু কাটতাম এখন দুইজন মিলে একটা গরু কাটি। আজ গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে ৮০০ টাকা হতে বাধ্য। জিনিসপত্র যেভাবে দাম বাড়ছে ও বাড়তাছে প্রত্যেকটা মানুষ পেরেশানির মধ্যে আছে টেনশন আছে।

এই বাজারে চাষের পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৫০ টাকায়। এছাড়া চাষের কই ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এই বাজারের সবজি বিক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, ‘বাজার প্রায় সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে দশ থেকে ত্রিশ টাকা।’

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার, মান ও জাত ভেদে বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, সজনে কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, লাউ পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইফতারে শরবত বানানোর উপকরণ লেবু রমজানের আগেই বিক্রি হচ্ছে হালি ৪০ থেকে ৭০ টাকায়।

মাছ-মাংসের মতো রোজার আগে বেড়ে গেছে সবজির দামও। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে অন্তত ১০-২০ টাকা বেড়েছে। নতুন সবজির দাম বেড়েছে বেশি।

ভোক্তা পর্যায়ে কৃষিপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হলেও কৃষক এর সুফল পাচ্ছে না। শুক্রবার (১৭ মার্চ) রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা বাজারে নিজের উৎপাদিত পণ্য বেগুন ২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছেন সাদিক হোসেন। ওই বাজার থেকেই রাজধানীতে আসার পর সেই বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি।

ওই বাজারে রাশেদুল ইসলাম নামে একজন কৃষক কাঁচা মরিচ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি ৪০ কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন ২৫০০ টাকা দরে (৬২ টাকা কেজি)। অথচ ঢাকায় শুক্রবার কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি।

জানা গেছে, কৃষকের খেত থেকে পাইকারি বাজার, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে সবজির দামের আকাশ-পাতাল ব্যবধান। কৃষক পর্যায় থেকে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে পাইকারি বাজারে সবজি বেচাকেনা হচ্ছে। আবার পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। এতে কৃষকের হাত থেকে পাইকারি বাজারে আসতে সবজির দাম বাড়ে প্রায় চারগুণ।

কৃষকের উৎপাদিত প্রতিটি পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে তিন থেকে কয়েকবার হাত বদল হয়। প্রত্যেক হাত বদলের সময়ই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায় পণ্যের দাম। কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারি, ব্যাপারির কাছ থেকে পাইকার, পাইকারের কাছ থেকে সর্বশেষ খুচরা দোকানির কাছে পৌঁছায় এসব কাঁচা পণ্য।

কৃষক যদি কোন পণ্যের দাম পান ১০ টাকা, তবে ভোক্তাকে তা কিনতে হয় কমপক্ষে ৩০ টাকা বা আরও বেশি দামে। অজুহাত হিসেবে দেখানো হয় পরিবহন আর জ্বালানির খরচ বৃদ্ধিকে। হাত বদলে সবজির দাম আবার কয়েক গুণ দাম বেড়ে যায়। তবে দাম বাড়লেও কিছু যায় আসে না চাষিদের। লাভের টাকার পুরোটাই ঢুকছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে, বলে জানা চাষিরা।

কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রেতা মনির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আমদানি বাড়লে দাম কম, আমদানি নাই তো দাম বাড়ে।’

আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল-ডাল-তেল-চিনি-আটা-ময়দা। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে কাজ করছে। আমরা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের বাজার, বিশেষ করে রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ ঠিক আছে কি না তা দেশব্যাপী যাচাই করছি। কারওয়ান বাজারের মুদি ও মুরগির বাজার তদারকি করা হয়েছে। তদারকিতে দেখা গেছে, রমজানকেন্দ্রিক যেসব পণ্য রয়েছে যেমন ছোলা, চালের দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

ছবি

ডেলটা ফার্মার ৩১ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ, বেজার সঙ্গে লিজ চুক্তি

ছবি

কুঁড়ার তেল রফতানিতে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ

ছবি

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর

ছবি

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ছবি

১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রেমিট্যান্স প্রবাহে ২৮.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি

ছবি

দুবাইয়ে বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটিতে ২৬ ঘণ্টা ভোগান্তি

ছবি

২ শতাংশ অর্থ জমা দিয়ে খেলাপি ঋণ নিয়মিত করার সুযোগ

ছবি

অধিকাংশ শেয়ারের দরপতন, সামান্য বেড়েছে লেনদেন

ছবি

অক্টোবরে বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতি জাতিসংঘকে জানাতে হবে

ছবি

শ্রমিকের পাওনা পরিশোধে নাসা গ্রুপের সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত

ছবি

একনেকে ৮৩৩৩ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

ছবি

ঢাকায় নিরাপত্তা প্রযুক্তির সর্বশেষ উদ্ভাবন নিয়ে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী

ছবি

পদত্যাগ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক মুখপাত্র মেজবাউল

ছবি

প্রথম চালানে ভারতে গেল সাড়ে ৩৭ টন ইলিশ

ছবি

তাপমাত্রা বাড়ায় বাংলাদেশের ক্ষতি ২১ হাজার কোটি টাকা: বিশ্বব্যাংক

ছবি

পাঁচ বেসরকারি শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করার প্রথম ধাপে প্রশাসক বসাবে বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

কয়েকটি দেশ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পেছানোর বিরোধিতা করছে

ছবি

শেয়ারবাজারে লেনদেন নামলো ৬শ’ কোটি টাকার ঘরে

ছবি

ব্যবসা মাঝে মন্থর ছিল, এখন একটু ভালো: অর্থ উপদেষ্টা.

ছবি

অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী জাপানি রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাংলাদেশ ব্যাংকে সভা: একীভূত হচ্ছে পাঁচ ব্যাংক, বসছে প্রশাসক

ছবি

বিজিএমইএ–মার্কিন প্রতিনিধিদল বৈঠক: শুল্ক কমাতে আহ্বান

ছবি

জুলাই-আগস্টে এডিপি বাস্তবায়ন ২ দশমিক ৩৯ শতাংশ

ছবি

বিবিএসের নাম পরিবর্তন ও তদারক পরিষদ রাখার সুপারিশ

ছবি

শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করার তাগিদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের

ছবি

নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে আসছে একীভূত পেমেন্ট সিস্টেম: গভর্নর

ছবি

আড়াই মাসে ১৩৯ কোটি ডলার কিনলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে আবেদনের সময় বাড়লো ২ নভেম্বর পর্যন্ত

ছবি

পুঁজিবাজারে সূচকের নামমাত্র উত্থান, লেনদেন আরও তলানিতে

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে খরচ বাড়লো ৪১ শতাংশ

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে লেনোভো ভি সিরিজের নতুন ল্যাপটপ

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরও কমতে পারে: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ছবি

বাজারে গিগাবাইট এআই টপ ১০০ জেড৮৯০ পিসি

ছবি

কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি’ তৈরি হয়েছে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা

ছবি

শেয়ারবাজারে বড় পতন, এক মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন লেনদেন

ছবি

অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার সফটওয়্যার চালু করলো এনবিআর

tab

রমজান সামনে : অস্থির বাজার

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০২৩

আর মাত্র এক সপ্তাহ বাকি রমজানের। তাই রমজান সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে বাজারে। ছোলা, অ্যাঙ্কর ডাল, বেসন ও ট্যাং থেকে শুরু করে চিনি, তেল, আটা-ময়দার দাম আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বাজার অস্থির থাকায় দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষ বাজার করছেন কাটছাঁট করে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, গত সপ্তাহে ৯০-৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়া ছোলা এখন ৯৫-১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। ভালো মানের মসুর ডাল ১৫০ টাকা, খেসারি ডাল ৮০-৯০ টাকা, অ্যাঙ্করের বেসন ৭৫-৮৫ টাকা এবং বুটের বেসন বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়। তবে পণ্যের দাম বাড়ার পেছনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কোন হাত নেই বলে জানান তারা।

বেসরকারি চাকরিজীবী আবদুল্লাহ যুবায়ের স্বাদ বলেন, ‘আগে রোজা এলে একসঙ্গে দুই কেজি গরুর মাংস, কয়েকটা মুরগি দু-চার কেজি বড় মাছ কিনতাম, আজ শুধু একটা ব্রয়লার মুরগি কিনলাম (২৫০ টাকা কেজি দরে) ৩৬০ টাকায়। এবার মাছের দামও বেশি, গরু-খাসির কথা তো চিন্তাই করতে পারি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেখেন একপোয়া কাঁচা মরিচ আজ কিনলাম ৩০ টাকা দিয়ে, আর ২টা লেবু কিনলাম ৩০ টাকা দিয়ে। রোজা শুরু হলে এসব খাবারের দাম যে কোথায় গিয়ে দাড়াবে।’

অমিত কুমার ভদ্র। রাজধানীর মিরপুরের পশ্চিম শেওড়াপাড়ায় আপন ছোট ভাইয়ের মেসে উঠেছেন। বর্তমানে একটি টিউশনি করে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা পান। মেসে থাকতে দুই বেলা খাইতে কম করে হলেও মাসে ছয় হাজার টাকা লাগে। এরপরও বাইরে চলতে আরও খরচ হয়। বাড়ির অবস্থা বেশি ভালো না। কাছের পরিচিতজন, আত্মীয়-স্বজনের কাছে ধার-দেনা, সহযোগিতা নিতে হচ্ছে। ছোট ভাইয়ের পড়া এখনও শেষ হয়নি। ছোট ভাই শান্ত ভদ্রও একটি বেসরকারি বিশ^ব্যিালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। দুই ভাই মিলে একই মেসের আটজনের বাজার করতে এসেছেন রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড কাঁচা বাজারে।

বাজারের বিষয়ে জানতে চাইলে অমিত কুমার ভদ্র সংবাদকে বলেন, ‘আগে প্রতি সপ্তাহে মেসে মাছ মাংস কেনা হতো। বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ার কারণে এখন মাঝেমধ্যে কেনা হয়। দুই সপ্তাহ পর আজ মেসে দুইশ’ পঞ্চাশ টাকা দরে দেড় কেজি ব্রয়লার মাংস কিনলাম। আগের মতো তেমন খাইতে পারি না। দেশি মুরগি নিতে গেলে ভয় লাগে কারণ ছয় থেকে সাড়ে ছয়শ’ টাকা কেজি, খাসিও সাড়ে এগারোশ’ টাকা কেজি। ব্যাচেলর লাইফ মানে ডিম দিয়াই চলতাছে ডাল দিয়াই চলতাছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার দেখা অনেক ছাত্র খরচ বাঁচানোর জন্য সেন্টার পয়েন্ট থেকে সরে গিয়ে জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জের দিকে মেস ভাড়া করছে।’

দামের বিষয়ে জানতে চাইলে শেওরাপাড়া কাঁচা বাজারের মায়ের দোয়া চিকেন হাউজের প্রোপাইটর মো. সবুজ মিয়া সংবাদকে বলেন, ‘ ব্রয়লার মুরগির দাম কমেনি। আজকেও কেজি (একদাম) ২৫০ টাকা, সোনালি (একদাম) ৩৫০ এবং হাঁস ৪৫০ টাকায় বিক্রি করছি। দাম বাড়বে না কমবে বলতে পারছি না।’

এই বাজারে গরুর মাংস কিনতে আসা শাহানা আক্তার সংবাদকে বলেন, ‘অনেক দিন ধরে গরুর মাংস খাওয়া হয় না। সামনে রোজা, তাই এ উপলক্ষে আজ আধা সের গরুর মাংস কিনলাম ৭৫০ টাকা কেজি দরে। আগে এক কেজি করে মাংস কিনতাম। আর হয়তো কিনতে পারবো কি না, আর দাম যে কততে দাঁড়াবে।

মিরপুর শেওড়াপাড়া কাঁচা বাজারে ২০ বছর ধরে গরুর মাংসের ব্যবসা করছেন নাজমুল। বেচা-বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘মাংসের দাম বাড়ার ফলে বেচা-বিক্রি অধাআধি হচ্ছে। আগে শুক্রবারে দুই আড়াই মণ মাংস বিক্রি করতাম। এখন ৪০ থেকে ৫০ কেজির বেশি মাংস বিক্রি হয় না।’

কারওয়ান বাজারে এসে গরুর মাংস বিক্রেতা হাজী মোহাম্মদ টিপু সুলতানের কাছে বেচা-বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সংবাদকে বলেন, ‘আগে একাই একটা গরু কাটতাম এখন দুইজন মিলে একটা গরু কাটি। আজ গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকায় বিক্রি করছি। তবে ৮০০ টাকা হতে বাধ্য। জিনিসপত্র যেভাবে দাম বাড়ছে ও বাড়তাছে প্রত্যেকটা মানুষ পেরেশানির মধ্যে আছে টেনশন আছে।

এই বাজারে চাষের পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে কেজি ২৫০ টাকায়। এছাড়া চাষের কই ৩০০ টাকা, তেলাপিয়া ২৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

এই বাজারের সবজি বিক্রেতা রফিক মিয়া বলেন, ‘বাজার প্রায় সবজির দাম কেজিতে বেড়েছে দশ থেকে ত্রিশ টাকা।’

সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজার, মান ও জাত ভেদে বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, সজনে কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, বরবটি ৮০ থেকে ১০০ টাকা, কচুর লতি ৮০ থেকে ১২০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১২০ টাকা, ঢেঁড়শ ৬০ থেকে ৮০ টাকা, লাউ পিস ৫০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইফতারে শরবত বানানোর উপকরণ লেবু রমজানের আগেই বিক্রি হচ্ছে হালি ৪০ থেকে ৭০ টাকায়।

মাছ-মাংসের মতো রোজার আগে বেড়ে গেছে সবজির দামও। ক্রেতা-বিক্রেতারা বলছেন, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সবজিতে অন্তত ১০-২০ টাকা বেড়েছে। নতুন সবজির দাম বেড়েছে বেশি।

ভোক্তা পর্যায়ে কৃষিপণ্যের দাম আকাশচুম্বি হলেও কৃষক এর সুফল পাচ্ছে না। শুক্রবার (১৭ মার্চ) রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার চতরা বাজারে নিজের উৎপাদিত পণ্য বেগুন ২০০ টাকা মণ বিক্রি করেছেন সাদিক হোসেন। ওই বাজার থেকেই রাজধানীতে আসার পর সেই বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকা কেজি।

ওই বাজারে রাশেদুল ইসলাম নামে একজন কৃষক কাঁচা মরিচ নিয়ে এসেছিলেন। তিনি ৪০ কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছেন ২৫০০ টাকা দরে (৬২ টাকা কেজি)। অথচ ঢাকায় শুক্রবার কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকা কেজি।

জানা গেছে, কৃষকের খেত থেকে পাইকারি বাজার, পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে সবজির দামের আকাশ-পাতাল ব্যবধান। কৃষক পর্যায় থেকে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি দামে পাইকারি বাজারে সবজি বেচাকেনা হচ্ছে। আবার পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজারে দাম বেড়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ। এতে কৃষকের হাত থেকে পাইকারি বাজারে আসতে সবজির দাম বাড়ে প্রায় চারগুণ।

কৃষকের উৎপাদিত প্রতিটি পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছাতে তিন থেকে কয়েকবার হাত বদল হয়। প্রত্যেক হাত বদলের সময়ই উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায় পণ্যের দাম। কৃষকের কাছ থেকে ব্যাপারি, ব্যাপারির কাছ থেকে পাইকার, পাইকারের কাছ থেকে সর্বশেষ খুচরা দোকানির কাছে পৌঁছায় এসব কাঁচা পণ্য।

কৃষক যদি কোন পণ্যের দাম পান ১০ টাকা, তবে ভোক্তাকে তা কিনতে হয় কমপক্ষে ৩০ টাকা বা আরও বেশি দামে। অজুহাত হিসেবে দেখানো হয় পরিবহন আর জ্বালানির খরচ বৃদ্ধিকে। হাত বদলে সবজির দাম আবার কয়েক গুণ দাম বেড়ে যায়। তবে দাম বাড়লেও কিছু যায় আসে না চাষিদের। লাভের টাকার পুরোটাই ঢুকছে মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের পকেটে, বলে জানা চাষিরা।

কারওয়ান বাজারে সবজি বিক্রেতা মনির হোসেন সংবাদকে বলেন, ‘আমদানি বাড়লে দাম কম, আমদানি নাই তো দাম বাড়ে।’

আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে চাল-ডাল-তেল-চিনি-আটা-ময়দা। শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারের নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। তিনি বলেন, ‘রমজান উপলক্ষে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে মাঠে কাজ করছে। আমরা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নিত্যপণ্যের বাজার, বিশেষ করে রমজানকেন্দ্রিক পণ্যের মূল্য ও সরবরাহ ঠিক আছে কি না তা দেশব্যাপী যাচাই করছি। কারওয়ান বাজারের মুদি ও মুরগির বাজার তদারকি করা হয়েছে। তদারকিতে দেখা গেছে, রমজানকেন্দ্রিক যেসব পণ্য রয়েছে যেমন ছোলা, চালের দাম কমেছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

back to top