alt

বিটিআরসির জরিপ: মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজ এবং ডাটার মূল্য, কী বললেন গ্রাহকরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজ সংখ্যা ও ডাটার মূল্যের উপরে অনলাইনে গ্রাহকদের জরিপ করেছে।

বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ আজ এক মতবিনিময় সভায় সেই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

জরিপে ৫৪৯ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ছাত্র/ছাত্রী ৪৯.৫ ভাগ, চাকরিজীবী ২৯.১ ভাগ, ব্যবসায়ী ৯.৫ ভাগ, অন্যান্য পেশার ৬ ভাগ গ্রাহক ছিল।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সম্মেলন কক্ষে কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। সভায় টেলিকম সেবা গ্রহীতা, সকল মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

একটি মোবাইল অপারেটর কর্তৃক সর্বোচ্চ কতগুলো অফার থাকা উচিত ? এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৪.৯ ভাগ ৪০-৪৫টি সর্বোচ্চ প্যাকেজ থাকা উচিত বলে মতামত দিয়েছেন। বাকী ২৩.২ ভাগ অংশগ্রহণকারী ৭১-৮৫ টি প্যাকেজ এবং ১৪ ভাগ ৫১-৬০ টি প্যাকেজের বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।

ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ কতদিন থাকা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫২.২ ভাগ প্যাকেজের মেয়াদে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড হওয়া উচিত বলে মতামত প্রদান করেন এবং ৪৪ ভাগ অংশগ্রহণকারী ৩/৭/১৫/ ৩০ দিন প্যাকেজের মেয়াদ থাকা উচিত বলে জানিয়েছেন।

ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড ( অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যুক্ত হওয়া) কি রকম হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৮৭.৮ ভাগ মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনো প্যাকেজ গ্রহণ করলেই নতুন প্যাকেজে অব্যবহৃত ডাটা যুক্ত হওয়া উচিত বলে মতামত প্রদান করেন।

ডাটা মূল্যমান কি রকম হওয়া উচিত? এর উত্তরে ৫২.৮ ভাগ অংশগ্রহণকারী প্রতি জিবির মূল্য যে কোনো মেয়াদের জন্য একই রকম থাকা উচিত বলে মতামত প্রদান করেন। ২৭.২ ভাগ অংশগ্রহণকারী জানান প্রতি জিবির ডাটার মূল্য বিভিন্ন মেয়াদের জন্য ভিন্ন রকম থাকা উচিত এবং ১৯.৬ ভাগ স্বল্প মেয়াদের ডাটার দাম অধিক মেয়াদের ডাটার দাম অপেক্ষা কম থাকা উচিত বলে জানান।

প্রতি জিবির ডাটা সর্বোচ্চ মূল্য ও সর্বনিম্ন মূল্য কত থাকা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৬ ভাগ অংশগ্রহণকারীরা জানান, প্রতি জিবির জন্য সবসময় একটি ফ্লোর (সর্বনিম্ন মূল্য) থাকা উচিত। ২০.৭ ভাগ মনে করেন ভিন্ন মেয়াদের ডাটার জন্য পৃথক সিলিং (সর্বোচ্চ মূল্য) ও ফ্লোর (সর্বনিম্ন মূল্য) থাকা উচিত। ১৭.১ ভাগ জানান প্রতি জিবির জন্য এতটি ফ্লোর ( সর্বনিম্ন মূল্য) ও একটি সিলিং (সর্বোচ্চ মূল্য) থাকা উচিত।

২০১৪ সাল থেকে টেলিটক সিম ব্যবহার করছেন জানিয়ে আতিক হাসান নামে একজন গ্রাহক টেলিটকের আনলিমিটেড প্যাকেজের মূল্য কমানো ও দেশব্যাপী এর নেটওয়ার্ক সুবিধা বাড়ানোর আহবান জানান। জবাবে টেলিটকের পক্ষ থেকে উপস্থিত প্রতিনিধি জানান, অন্যান্য অপারেটরদের চেয়ে টেলিটকের ডাটা সাশ্রয়ে পাওয়া যাচ্ছে এবং আগামীতেও এটা চলমান থাকবে।

টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আগামী বছরে প্রথম প্রান্তিকে টেলিটকের সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।

মাইনুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন জানিয়ে নেটওয়ার্ক সেবা আরো উন্নত করতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান।

মর্তুজা নামে একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর টেলিটকের নেটওয়ার্ক কভারেজ থাকে না। গ্রামীণফোন থেকে গ্রাহককে প্রচুর মেসেজ প্রদান করা হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত মেসেজ গ্রাহকের জন্য বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে।

অপর এক গ্রাহক ডাটার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৭ দিন এবং ১টি ভোটার আইডির বিপরীতে ১৫টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ কমিয়ে আনার পক্ষে মতামত প্রদান করেন।

সভায় টেলিকম বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান বলেন, গ্রাহকদের জন্য মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে সাপ্লাই লাইনে (সরবরাহ লাইন) যেসব অসঙ্গতি রয়েছে সেগুলো সমাধান করতে হবে যাতে গ্রাহক কোনোভাবে প্রতারিত না হয়।

অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব:) বলেন, প্রত্যেক গ্রাহকের ডাটা প্যাকেজের চাহিদা আলাদা। তরুন প্রজন্ম বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ চায় জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ গ্রাহকের জন্য অপারেটর কর্তৃক ৫০টি নিয়মিত প্যাকেজ চালু করেছে যা গ্রাহক চাহিদা বিবেচনায় বেশি বলে প্রতীয়মান নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল জাবের বলেন, প্রতিযোগিতামুলক বাজারে ডাটা মূল্য নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হয় না। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নজর দেয়ার পাশাপাশি মানসম্পন্ন ডাটা সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মতবিনিময় সভা আয়োজন করায় বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টেলিটকের এডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার ( মার্কেটিং, সেলস এন্ড ডিসট্রিবিউশন) সাইফুর রহমান খান বলেন, গ্রাহকের মতামত ওপর গুরুত্ব দিয়ে টেলিটক ডাটা প্যাকেজের পরবর্তী মূল্য ও সংখ্যা নির্ধারণ করবে।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বছর খানেক আগে ডাটা মূল্য নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও বর্তমানে সেবার মান নিয়ে গ্রাহকরা প্রশ্ন তুলছেন বেশি। বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেটরদের প্রচুর পরিচালন ব্যয় হওয়ায় ডাটার দাম চাইলেই কমানো সম্ভব হয়না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রবির চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, গ্রাহক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অপারেটরদের প্যাকেজ নির্ধারণ করতে হয় বলেই ডাটা প্যাকেজ সংখ্যা বেশি মনে হয়। কর কমানো হলে ডাটার দাম কমানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) হুসেইন সাদাত বলেন, অপারেটর ও গ্রাহকদের মতামত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসির পক্ষে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো: মাহবুব-উল-আলম বলেন, বিটিআরসি’র দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ‘এক দেশ এক রেট’ যেভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে তেমনিভাবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় ‘এক দেশ এক রেট’ চালু করা দরকার।

গ্রাহক সচেতন হলে মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ প্রযুক্তি সর্ম্পকে এখনো তেমন সচেতন নয়, তাই তাদের স্বার্থ বিবেচনায় ডাটার মূল্য ও মেয়াদ নির্ধারণ করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকের মতামত পুংখানুপুংখভাবে যাচাই করে আমরা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ১৮ কোটির অধিক মোবাইল সংযোগ রয়েছে তাই সকল গ্রাহক যাতে উপৃকত হয় সে লক্ষ্যেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, মোবাইল অপারেটরগণ ভয়েস কল, এসএমএস ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। অপারেটরদের ব্যয় এবং প্যাকেজ সংখ্যা সর্ম্পকে বিটিআরসি ইতোমধ্যে যাচাই বাছাই করছে। সকলের মতামত নিয়ে একটি ফলপ্রসু ও গ্রাহক বান্ধব সিদ্ধান্ত পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে বিটিআরসি।

অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের মতামত নিয়ে মোবাইল ইন্টারনেটের নিম্নসীমা ও প্যাকেজ সংখ্যার বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানান তিনি।

ছবি

ধারাবাহিক পতনে বাজার মূলধন হারালো সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা

ছবি

বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানিতে কমবে শুল্ক, রপ্তানিতে প্রণোদনার প্রস্তাব

ছবি

ছোট রপ্তানিকারকদের পণ্য রপ্তানি যেভাবে সহজ করলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্কহারের চুক্তি হতে পারে আগামী মাসে

ছবি

পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে ট্যারিফ কমিশন

ছবি

অনুষ্ঠিত হলো ৫ম বাংলাদেশ ফিনটেক সামিট

ছবি

এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম বাড়লো ৪০ টাকা, সবজি কিছুটা নিম্নমুখী

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীর ক্ষতিপূরণ বিবেচনা করতে পারে সরকার

ছবি

সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা অফিস প্রতিষ্ঠার সুপারিশ আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের

ছবি

নভেম্বরের প্রথম পাঁচ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ৫৮ কোটি ডলার

ছবি

কানাডায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়াতে এক সঙ্গে কাজ করবে বিবিসিসি ও বিজিএমইএ

ছবি

নগদ লভ্যাংশ পেল বীমা খাতের বিনিয়োগকারীরা

ছবি

বিএসইসির নতুন মার্জিন রুলসের গেজেট প্রকাশ

ছবি

মিরসরাইয়ে চার প্রতিষ্ঠানের ১১ কোটি ডলারের বিনিয়োগ

এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ ছাড়া মিলবে না মার্জিন ঋণ

ছবি

পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত, যেভাবে টাকা ফেরত পাবেন আমানতকারীরা

ছবি

অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নর পদত্যাগ না করলে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাওয়ের হুমকি

ছবি

সূচকের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কমেছে লেনদেন

ছবি

ই-কমার্স রপ্তানির সীমা দ্বিগুণ, ওয়ালেটে অর্থ আনার সুবিধা

ছবি

পাঁচ বছরের বেশি পুরোনো গাড়ি আমদানির প্রস্তাব

ছবি

তৈরি পোশাক খাতের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি সম্পর্কে জানতে চায় আইএমএফ

ছবি

কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োগকৃত প্রশাসক পাঁচ ব্যাংক একীভূত করবে, আমানতকারীরা নিরাপদ

ছবি

মূল্যস্ফীতি সামান্য কমেছে, ৩৯ মাসে সর্বনিম্ন

ছবি

ডিএসইএক্স সূচক ৪ মাস পর পাঁচ হাজার পয়েন্টের নিচে

ছবি

আর্থিক সংকটে থাকা শরিয়াহভিত্তিক ৫ ব্যাংকের বোর্ড বাতিল

ছবি

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন না হলে খাদ্য সংকট বাড়বে: কর্মশালায় বক্তারা

ছবি

জার্মান রাষ্ট্রদূত ও বিজিএমইএ সভাপতির সৌজন্য সাক্ষাৎ

ছবি

বন্ড ছেড়ে ২৫০০ কোটি টাকা তুলবে সরকার

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ বিলিয়ন ডলারে সয়াবিন কিনবে তিন প্রতিষ্ঠান

ছবি

জাপানি উপকরণ ও প্রশিক্ষকদের মাধ্যমে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ শুরু

ছবি

বাংলাদেশে তুলা রপ্তানিতে জটিলতার সমাধান চান যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা

ছবি

টানা তিন মাস কমলো দেশের পণ্য রপ্তানি

ছবি

শেয়ারবাজারে দরপতন চলছেই

ছবি

ডিজিটাল ব্যাংক খুলতে চায় ১২ প্রতিষ্ঠান

ছবি

নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না, আলোচনায় বক্তারা

ছবি

বে টার্মিনাল চালু হলে আমদানি-রপ্তানি খাতে নতুন যুগের সূচনা হবে: বন্দর চেয়ারম্যান

tab

বিটিআরসির জরিপ: মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজ এবং ডাটার মূল্য, কী বললেন গ্রাহকরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ৩০ মে ২০২৩

বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের প্যাকেজ সংখ্যা ও ডাটার মূল্যের উপরে অনলাইনে গ্রাহকদের জরিপ করেছে।

বিটিআরসির সিস্টেমস এন্ড সার্ভিসেস বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: নাসিম পারভেজ আজ এক মতবিনিময় সভায় সেই জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন।

জরিপে ৫৪৯ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ছাত্র/ছাত্রী ৪৯.৫ ভাগ, চাকরিজীবী ২৯.১ ভাগ, ব্যবসায়ী ৯.৫ ভাগ, অন্যান্য পেশার ৬ ভাগ গ্রাহক ছিল।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)-এর সম্মেলন কক্ষে কমিশনের স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ এর সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিটিআরসির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। সভায় টেলিকম সেবা গ্রহীতা, সকল মোবাইল অপারেটরের প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং টেলিকম বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার প্রতিনিধিগণ উপস্থিত ছিলেন।

একটি মোবাইল অপারেটর কর্তৃক সর্বোচ্চ কতগুলো অফার থাকা উচিত ? এমন প্রশ্নের উত্তরে জরিপে অংশগ্রহণকারী ৫৪.৯ ভাগ ৪০-৪৫টি সর্বোচ্চ প্যাকেজ থাকা উচিত বলে মতামত দিয়েছেন। বাকী ২৩.২ ভাগ অংশগ্রহণকারী ৭১-৮৫ টি প্যাকেজ এবং ১৪ ভাগ ৫১-৬০ টি প্যাকেজের বিষয়ে মতামত প্রদান করেন।

ডাটা প্যাকেজের মেয়াদ কতদিন থাকা উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৫২.২ ভাগ প্যাকেজের মেয়াদে ৭ দিন, ৩০ দিন ও আনলিমিটেড হওয়া উচিত বলে মতামত প্রদান করেন এবং ৪৪ ভাগ অংশগ্রহণকারী ৩/৭/১৫/ ৩০ দিন প্যাকেজের মেয়াদ থাকা উচিত বলে জানিয়েছেন।

ডাটা ক্যারি ফরওয়ার্ড ( অব্যবহৃত ডাটা পরবর্তী প্যাকেজে যুক্ত হওয়া) কি রকম হওয়া উচিত? এমন প্রশ্নের উত্তরে ৮৭.৮ ভাগ মেয়াদকালের মধ্যে যেকোনো প্যাকেজ গ্রহণ করলেই নতুন প্যাকেজে অব্যবহৃত ডাটা যুক্ত হওয়া উচিত বলে মতামত প্রদান করেন।

ডাটা মূল্যমান কি রকম হওয়া উচিত? এর উত্তরে ৫২.৮ ভাগ অংশগ্রহণকারী প্রতি জিবির মূল্য যে কোনো মেয়াদের জন্য একই রকম থাকা উচিত বলে মতামত প্রদান করেন। ২৭.২ ভাগ অংশগ্রহণকারী জানান প্রতি জিবির ডাটার মূল্য বিভিন্ন মেয়াদের জন্য ভিন্ন রকম থাকা উচিত এবং ১৯.৬ ভাগ স্বল্প মেয়াদের ডাটার দাম অধিক মেয়াদের ডাটার দাম অপেক্ষা কম থাকা উচিত বলে জানান।

প্রতি জিবির ডাটা সর্বোচ্চ মূল্য ও সর্বনিম্ন মূল্য কত থাকা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে ৪৬ ভাগ অংশগ্রহণকারীরা জানান, প্রতি জিবির জন্য সবসময় একটি ফ্লোর (সর্বনিম্ন মূল্য) থাকা উচিত। ২০.৭ ভাগ মনে করেন ভিন্ন মেয়াদের ডাটার জন্য পৃথক সিলিং (সর্বোচ্চ মূল্য) ও ফ্লোর (সর্বনিম্ন মূল্য) থাকা উচিত। ১৭.১ ভাগ জানান প্রতি জিবির জন্য এতটি ফ্লোর ( সর্বনিম্ন মূল্য) ও একটি সিলিং (সর্বোচ্চ মূল্য) থাকা উচিত।

২০১৪ সাল থেকে টেলিটক সিম ব্যবহার করছেন জানিয়ে আতিক হাসান নামে একজন গ্রাহক টেলিটকের আনলিমিটেড প্যাকেজের মূল্য কমানো ও দেশব্যাপী এর নেটওয়ার্ক সুবিধা বাড়ানোর আহবান জানান। জবাবে টেলিটকের পক্ষ থেকে উপস্থিত প্রতিনিধি জানান, অন্যান্য অপারেটরদের চেয়ে টেলিটকের ডাটা সাশ্রয়ে পাওয়া যাচ্ছে এবং আগামীতেও এটা চলমান থাকবে।

টেলিটকের নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আগামী বছরে প্রথম প্রান্তিকে টেলিটকের সেবার মান আরো বৃদ্ধি পাবে।

মাইনুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন জানিয়ে নেটওয়ার্ক সেবা আরো উন্নত করতে অপারেটরদের প্রতি আহবান জানান।

মর্তুজা নামে একজন ফ্রিল্যান্সার বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাটের পর টেলিটকের নেটওয়ার্ক কভারেজ থাকে না। গ্রামীণফোন থেকে গ্রাহককে প্রচুর মেসেজ প্রদান করা হয় জানিয়ে তিনি আরো বলেন, অতিরিক্ত মেসেজ গ্রাহকের জন্য বিরক্তিকর হয়ে যাচ্ছে।

অপর এক গ্রাহক ডাটার মেয়াদ সর্বোচ্চ ৭ দিন এবং ১টি ভোটার আইডির বিপরীতে ১৫টি সিম নিবন্ধনের সুযোগ কমিয়ে আনার পক্ষে মতামত প্রদান করেন।

সভায় টেলিকম বিশেষজ্ঞ আবু সাঈদ খান বলেন, গ্রাহকদের জন্য মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিতে টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদানে সাপ্লাই লাইনে (সরবরাহ লাইন) যেসব অসঙ্গতি রয়েছে সেগুলো সমাধান করতে হবে যাতে গ্রাহক কোনোভাবে প্রতারিত না হয়।

অ্যামটবের মহাসচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ (অব:) বলেন, প্রত্যেক গ্রাহকের ডাটা প্যাকেজের চাহিদা আলাদা। তরুন প্রজন্ম বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরণের প্যাকেজ চায় জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ গ্রাহকের জন্য অপারেটর কর্তৃক ৫০টি নিয়মিত প্যাকেজ চালু করেছে যা গ্রাহক চাহিদা বিবেচনায় বেশি বলে প্রতীয়মান নয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মইনুল জাবের বলেন, প্রতিযোগিতামুলক বাজারে ডাটা মূল্য নির্ধারণে নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন হয় না। মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে নজর দেয়ার পাশাপাশি মানসম্পন্ন ডাটা সেবার নিশ্চয়তা দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মতবিনিময় সভা আয়োজন করায় বিটিআরসিকে ধন্যবাদ জানিয়ে টেলিটকের এডিশনাল জেনারেল ম্যানেজার ( মার্কেটিং, সেলস এন্ড ডিসট্রিবিউশন) সাইফুর রহমান খান বলেন, গ্রাহকের মতামত ওপর গুরুত্ব দিয়ে টেলিটক ডাটা প্যাকেজের পরবর্তী মূল্য ও সংখ্যা নির্ধারণ করবে।

বাংলালিংকের চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অফিসার তাইমুর রহমান বলেন, বছর খানেক আগে ডাটা মূল্য নিয়ে বেশি আলোচনা হলেও বর্তমানে সেবার মান নিয়ে গ্রাহকরা প্রশ্ন তুলছেন বেশি। বিভিন্ন পর্যায়ে অপারেটরদের প্রচুর পরিচালন ব্যয় হওয়ায় ডাটার দাম চাইলেই কমানো সম্ভব হয়না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রবির চিফ কর্পোরেট এন্ড রেগুলেটরি অফিসার মোহাম্মদ সাহেদুল আলম বলেন, গ্রাহক চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অপারেটরদের প্যাকেজ নির্ধারণ করতে হয় বলেই ডাটা প্যাকেজ সংখ্যা বেশি মনে হয়। কর কমানো হলে ডাটার দাম কমানো সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।

গ্রামীণফোনের সিনিয়র ডিরেক্টর (কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্স) হুসেইন সাদাত বলেন, অপারেটর ও গ্রাহকদের মতামত নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিটিআরসির পক্ষে একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা সম্ভব হবে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টেলিকম) মো: মাহবুব-উল-আলম বলেন, বিটিআরসি’র দায়িত্ব হলো নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকে অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে ‘এক দেশ এক রেট’ যেভাবে প্রণয়ন করা হয়েছে তেমনিভাবে মোবাইল ইন্টারনেট সেবায় ‘এক দেশ এক রেট’ চালু করা দরকার।

গ্রাহক সচেতন হলে মূল্য নির্ধারণ প্রয়োজন হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ প্রযুক্তি সর্ম্পকে এখনো তেমন সচেতন নয়, তাই তাদের স্বার্থ বিবেচনায় ডাটার মূল্য ও মেয়াদ নির্ধারণ করতে হবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিটিআরসি’র ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, গ্রাহকের মতামত পুংখানুপুংখভাবে যাচাই করে আমরা একটি যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঘরে ঘরে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ১৮ কোটির অধিক মোবাইল সংযোগ রয়েছে তাই সকল গ্রাহক যাতে উপৃকত হয় সে লক্ষ্যেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার প্রকৌশলী শেখ রিয়াজ আহমেদ বলেন, মোবাইল অপারেটরগণ ভয়েস কল, এসএমএস ও ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। অপারেটরদের ব্যয় এবং প্যাকেজ সংখ্যা সর্ম্পকে বিটিআরসি ইতোমধ্যে যাচাই বাছাই করছে। সকলের মতামত নিয়ে একটি ফলপ্রসু ও গ্রাহক বান্ধব সিদ্ধান্ত পৌঁছানোর লক্ষ্যে কাজ করছে বিটিআরসি।

অপারেটর ও গ্রাহক উভয়ের মতামত নিয়ে মোবাইল ইন্টারনেটের নিম্নসীমা ও প্যাকেজ সংখ্যার বিষয়ে শিগগিরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলেও জানান তিনি।

back to top