alt

অর্থ-বাণিজ্য

স্মরণসভায় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আক্ষেপ

দেশে প্রাপ্য সম্মান পাননি অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক : সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩

https://sangbad.net.bd/images/2023/June/05Jun23/news/6.jpg

সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্মরণ সভায় বক্তারা এই অর্থনীতিবিদকে জাতীয়ভাবে কোনো সম্মান না দেয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

তাকে বাংলাদেশের আধুনিক অর্থনীতি শিক্ষা ও গবেষণার ‘আদি গুরু’ অভিহিত করে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, জীবদ্দশায় স্বাধীনতা বা একুশে পদকের কোনোটাই না দেওয়ায় তার প্রাপ্য সম্মানটুকে থেকে তাকে ‘বঞ্চিত’ করা হয়েছে।

দেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করা নুরুল ইসলামকে ‘সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থনৈতিক যৌক্তিক ভিত্তির মূল প্রণেতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন ওয়াহিদউদ্দিন।

রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত ‘প্রফেসর নুরুল ইসলাম: নানা প্রজন্মের দৃষ্টিতে দেখা’ শীর্ষক স্মরণসভায় নানাভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন প্যানেল বক্তারা। এর মধ্যে তাকে জীবদ্দশায় কোনো ‘জাতীয়’ পদক না দেওয়ার বিষয়টি বার বার এসেছে।

স্বাধীনতাত্তোর দেশ গঠনে সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তিনি গত ৮ মে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান।

স্মরণসভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বক্তব্য দেন।

এছাড়াও আইনজীবী কামাল হোসেন, ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির ও অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মেয়ে রুমিন ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১৯৬০ এর দশক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নুরুল ইসলামের অবদান আছে। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা মূলত তার গবেষণার ফসল এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে সরাসরি সরকারের অংশ হয়ে দেশ গড়াসহ নানাভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

https://sangbad.net.bd/images/2023/June/05Jun23/news/6%206.jpg

অধ্যাপক মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্র ও দেশে বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে আলোচনার বিভিন্ন সময়ের কথা তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন।

তিনি বলেন, “অনেক সময় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলতেন, ‘স্বাধীনতায় তো আমারও কিছুটা অবদান আছে। কিন্তু আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়নি’।

“তবে দেশের কোনোও পুরস্কারের জন্য অধ্যাপক নুরুল ইসলামের ক্ষোভ ছিল না। তবে তিনি চাইতেন দেশ যেন তাকে স্বীকৃতি দেয়।”

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “তিনি একজন অর্থনীতির অধ্যাপক, আবার দেশের জন্য কাজ করেছেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন সর্বাঙ্গীণ বা পূর্ণাঙ্গ অর্থনীতিবিদ।”

দুই কারণে তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ অর্থনীতিবিদ মনে করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৫০ দশকের শুরু থেকে যখন উন্নয়ন অর্থনীতি শুরু হলো, এরপর থেকে উন্নয়নের যত ধরনের ধারণা, তত্ত্ব ও বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং এসব অভিজ্ঞতার বিবর্তন হয়েছে, আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে এই সবগুলো বিষয়ে তার প্রকাশিত গবেষণাপত্র আছে।

“উন্নয়ন অর্থনীতির সকল দিক- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিশ্ব অর্থনৈতিক ক্রাইসিস, এমনকি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সকল কিছুতেই তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। এসব বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেনও।”

ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, “অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ না পেয়েও তার মতো উপর থেকে পাখির দৃষ্টিতে পুরো উন্নয়ন অর্থনীতিকে দেখা আমি আর কাউকেই দেখিনি।

“কোনো আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে তিনি যখন অন্যদের সঙ্গে ডিবেট করতেন বা কোনো প্রেজেন্টেশন দিতেন, সেখানে তিনি বহু নোবেল লরিয়েট অর্থনীতিবিদদেরকে ছাড়িয়ে যেতেন।”

অনুষ্ঠানে ফরাসউদ্দিন বলেন, “তিনি একজন পিওর অর্থনীতিবিদ ছিলেন। এদেশের মানুষের জন্য প্রথম কল্যাণ অর্থনীতির তত্ত্ব দেন।

“১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের বৈষম্যের অর্থনীতির গবেষণা তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু এটা গ্রহণ করে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু এই বৈষম্য প্রচারের উদ্যোগ নিলে দেশদ্রোহী বানানোর শঙ্কার কথাও বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন।”

এরপর বঙ্গবন্ধু ও নুরুল ইসলাম মিলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যান অর্থনীতির ছক তৈরি করেন; তবে রাজনৈতিকভাবে ছয় দফা একেবারেই বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি বলে জানান তার এক সময়ের সচিব ফরাসউদ্দিন।

অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কামাল হোসেন বলেন, “১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রফেসর নুরুল ইসলাম।

“পাকিস্তানের বৈষম্যের বিপরীতে এই দেশে বৈষম্যহীন অর্থনীতি কীভাবে করা যায়, তার জন্য প্রফেসর নুরুল ইসলামের অবদান অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার এই অবদান বাংলাদেশে স্মরণ করা হয়নি।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা দেশের এই কৃতি সন্তানকে স্বাধীনতা, অর্থনীতি এবং কল্যাণ অর্থনীতিতে অবদান রাখায় মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়ার দাবি জানান।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “তিনি পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে যে শক্তি নিয়ে দেশের উন্নয়ন অর্থনীতি পরিচালনা শুরু করেছিলেন, বর্তমানে সেই অবস্থা নেই।

“তার পরিকল্পনায় ওই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি মধ্যবিত্ত শহুরে অর্থনীতি গড়ে তোলে একটি কল্যাণমূখী অর্থনীতি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।”

১৯৭৪ সালে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া প্রশ্নের উদ্রেক করে মন্তব্য করে সাবেক আমলা মান্নান বলেন, “উনি কি ৭৫ এর বিষয়ে কিছু অনুমান বা কোনও খবর কি তার কাছে ছিল? আমি বলছি না যে তিনি জানতেন, তবে আমার মনে প্রশ্ন জাগে।”

ছবি

‘শাটডাউন’ এর মধ্যে কাস্টমস চাকরিকে অত্যাবশ্যক ঘোষণা করল সরকার

ছবি

স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করলে তদন্তে ভয় নেই’— এনবিআর ইস্যুতে অর্থ উপদেষ্টার মন্তব্য

ছবি

বিমানবন্দরের ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম গুটাতে বলল কর্তৃপক্ষ

ছবি

অর্থবছরের শেষ দিন শেয়ারবাজারে পতন

ছবি

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন ডিভিশন ডিরেক্টর জ্যঁ পেম

ছবি

রাজস্ব আদায় গতবারের চেয়ে বেশি হবে এটা নিশ্চিত: এনবিআর চেয়ারম্যান

রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধি ও ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

মঙ্গলবার ব্যাংক হলিডে, লেনদেন বন্ধ থাকবে

পুঁজিবাজার ঘুরে দাঁড়াবে: ডিবিএ সভাপতি

ছবি

দাম কমেছে অপো এ৩এক্স স্মার্টফোনের

ছবি

দুদক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, গ্রেপ্তার বেড়ে ৫

ছবি

রাজস্ব আদায়ে জোর, ভর্তুকি কমানোর পরামর্শ আইএমএফের

ছবি

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১.৩১ বিলিয়ন ডলার: বাংলাদেশ ব্যাংক

ছবি

রিজার্ভের নতুন হিসাব প্রকাশ: নিট রিজার্ভে উল্লেখযোগ্য উল্লম্ফন

স্টার্লিংয়ের এফডিআরের টাকা ফেরত দেয়নি ফারইস্ট ফাইন্যান্স, তদন্তে বিএসইসি

ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কে পোশাকের দাম বাড়ছে: এইচঅ্যান্ডএম সিইও

ছবি

আলোচনার আশা ভেঙে সচিবালয় থেকে ফিরে গেলেন এনবিআর আন্দোলনকারীরা

লজিস্টিক পলিসির বাস্তবায়নে সমন্বিত মাস্টারপ্ল্যান অপরিহার্য: ঢাকা চেম্বার

পরপর পাঁচ কার্যদিবস উত্থানে শেয়ারবাজার

ছবি

জাপান ও ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে

ছবি

‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচিতে কাস্টমস কার্যক্রমে অচলাবস্থা

ছবি

‘শর্ত ছাড়া আন্দোলন প্রত্যাহার করুন’—ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর অনুরোধ

ছবি

বিদেশিদের হস্তান্তরের আগপর্যন্ত এনসিটি পরিচালনায় আলোচনায় নৌবাহিনী

ব্যাংকিং খাত বর্তমানে সংকটময় অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে: ডিসিসিআই

বাংলাদেশের কাপড়-পাট-সুতার পণ্য আমদানিতে ভারতের নিষেধাজ্ঞা

বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন ওয়েবসাইট চালু করলো বিডা

ছবি

কৃষি যন্ত্রপাতি আমদানিতে হয়রানি দূর করার দাবি

ছবি

বাজার মূলধনে যোগ হলো ১১ হাজার কোটি টাকা

ছবি

এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ কাম্য নয়, হয়রানিমুক্ত এনবিআর চান ব্যবসায়ীরা

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের ফাউন্ডেশনের ‘কৃষি খাদ্যের অগ্রদূত’ তালিকায় আবদুল আউয়ালমিন্টু

ছবি

‘মার্চ টু এনবিআর’ কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান অর্থ মন্ত্রণালয়ের

ছবি

নগদের বোর্ড পুনর্গঠন, চেয়ারম্যান কাইজার আহমেদ চৌধুরী

ছবি

ব্যাংকের সীমাতিরিক্ত টাকা পরিশোধ বাধ্যতামূলক করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু

ট্রাম্পের শুল্কনীতি পোশাক শিল্পের জন্য মরণফাঁদ: শ্রমিক ফেডারেশন

স্বল্প আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশই মানুষ সকালের খাবার খায় না: জরিপ

tab

অর্থ-বাণিজ্য

স্মরণসভায় ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের আক্ষেপ

দেশে প্রাপ্য সম্মান পাননি অর্থনীতিবিদ নুরুল ইসলাম

অর্থনৈতিক বার্তা পরিবেশক

সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩

https://sangbad.net.bd/images/2023/June/05Jun23/news/6.jpg

সদ্য প্রয়াত অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্মরণ সভায় বক্তারা এই অর্থনীতিবিদকে জাতীয়ভাবে কোনো সম্মান না দেয়ায় আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন।

তাকে বাংলাদেশের আধুনিক অর্থনীতি শিক্ষা ও গবেষণার ‘আদি গুরু’ অভিহিত করে অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, জীবদ্দশায় স্বাধীনতা বা একুশে পদকের কোনোটাই না দেওয়ায় তার প্রাপ্য সম্মানটুকে থেকে তাকে ‘বঞ্চিত’ করা হয়েছে।

দেশের স্বাধীনতার আগে ও পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে কাজ করা নুরুল ইসলামকে ‘সর্বোপরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অর্থনৈতিক যৌক্তিক ভিত্তির মূল প্রণেতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন ওয়াহিদউদ্দিন।

রোববার বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএস আয়োজিত ‘প্রফেসর নুরুল ইসলাম: নানা প্রজন্মের দৃষ্টিতে দেখা’ শীর্ষক স্মরণসভায় নানাভাবে স্মৃতিচারণ করেছেন প্যানেল বক্তারা। এর মধ্যে তাকে জীবদ্দশায় কোনো ‘জাতীয়’ পদক না দেওয়ার বিষয়টি বার বার এসেছে।

স্বাধীনতাত্তোর দেশ গঠনে সরাসরি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে পরিকল্পনা কমিশনের প্রথম ডেপুটি চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন অধ্যাপক নুরুল ইসলাম। তিনি গত ৮ মে যুক্তরাষ্ট্রে মারা যান।

স্মরণসভায় পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মশিউর রহমান বক্তব্য দেন।

এছাড়াও আইনজীবী কামাল হোসেন, ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন, প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির ও অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মেয়ে রুমিন ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন।

ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, ১৯৬০ এর দশক থেকে পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে নুরুল ইসলামের অবদান আছে। বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা মূলত তার গবেষণার ফসল এবং স্বাধীনতা পরবর্তীতে সরাসরি সরকারের অংশ হয়ে দেশ গড়াসহ নানাভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।

https://sangbad.net.bd/images/2023/June/05Jun23/news/6%206.jpg

অধ্যাপক মাহমুদ যুক্তরাষ্ট্র ও দেশে বিভিন্ন সময়ে তার সঙ্গে আলোচনার বিভিন্ন সময়ের কথা তুলে ধরে স্মৃতিচারণ করেন।

তিনি বলেন, “অনেক সময় অধ্যাপক নুরুল ইসলাম বলতেন, ‘স্বাধীনতায় তো আমারও কিছুটা অবদান আছে। কিন্তু আমাকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়নি’।

“তবে দেশের কোনোও পুরস্কারের জন্য অধ্যাপক নুরুল ইসলামের ক্ষোভ ছিল না। তবে তিনি চাইতেন দেশ যেন তাকে স্বীকৃতি দেয়।”

এই অর্থনীতিবিদ বলেন, “তিনি একজন অর্থনীতির অধ্যাপক, আবার দেশের জন্য কাজ করেছেন। আমার দৃষ্টিতে তিনি একজন সর্বাঙ্গীণ বা পূর্ণাঙ্গ অর্থনীতিবিদ।”

দুই কারণে তিনি একজন পূর্ণাঙ্গ অর্থনীতিবিদ মনে করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৫০ দশকের শুরু থেকে যখন উন্নয়ন অর্থনীতি শুরু হলো, এরপর থেকে উন্নয়নের যত ধরনের ধারণা, তত্ত্ব ও বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতা এবং এসব অভিজ্ঞতার বিবর্তন হয়েছে, আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে এই সবগুলো বিষয়ে তার প্রকাশিত গবেষণাপত্র আছে।

“উন্নয়ন অর্থনীতির সকল দিক- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, বিশ্ব অর্থনৈতিক ক্রাইসিস, এমনকি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স সকল কিছুতেই তার প্রচণ্ড আগ্রহ ছিল। এসব বিষয় নিয়ে তিনি লিখেছেনও।”

ওয়াহিদ উদ্দিন বলেন, “অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ না পেয়েও তার মতো উপর থেকে পাখির দৃষ্টিতে পুরো উন্নয়ন অর্থনীতিকে দেখা আমি আর কাউকেই দেখিনি।

“কোনো আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে তিনি যখন অন্যদের সঙ্গে ডিবেট করতেন বা কোনো প্রেজেন্টেশন দিতেন, সেখানে তিনি বহু নোবেল লরিয়েট অর্থনীতিবিদদেরকে ছাড়িয়ে যেতেন।”

অনুষ্ঠানে ফরাসউদ্দিন বলেন, “তিনি একজন পিওর অর্থনীতিবিদ ছিলেন। এদেশের মানুষের জন্য প্রথম কল্যাণ অর্থনীতির তত্ত্ব দেন।

“১৯৬৬ সালে পাকিস্তানের বৈষম্যের অর্থনীতির গবেষণা তিনি বঙ্গবন্ধুর কাছে তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধু এটা গ্রহণ করে নিজের মতো করে সাজিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু এই বৈষম্য প্রচারের উদ্যোগ নিলে দেশদ্রোহী বানানোর শঙ্কার কথাও বঙ্গবন্ধুকে বলেছিলেন।”

এরপর বঙ্গবন্ধু ও নুরুল ইসলাম মিলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য কল্যান অর্থনীতির ছক তৈরি করেন; তবে রাজনৈতিকভাবে ছয় দফা একেবারেই বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি বলে জানান তার এক সময়ের সচিব ফরাসউদ্দিন।

অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কামাল হোসেন বলেন, “১৯৬৯ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মেনিফেস্টোর অন্যতম সদস্য ছিলেন প্রফেসর নুরুল ইসলাম।

“পাকিস্তানের বৈষম্যের বিপরীতে এই দেশে বৈষম্যহীন অর্থনীতি কীভাবে করা যায়, তার জন্য প্রফেসর নুরুল ইসলামের অবদান অস্বীকার করা সম্ভব নয়। কিন্তু তার এই অবদান বাংলাদেশে স্মরণ করা হয়নি।”

অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা দেশের এই কৃতি সন্তানকে স্বাধীনতা, অর্থনীতি এবং কল্যাণ অর্থনীতিতে অবদান রাখায় মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক দেওয়ার দাবি জানান।

বিআইডিএসের মহাপরিচালক বিনায়ক সেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী মান্নান বলেন, “তিনি পরিকল্পনা কমিশনের মাধ্যমে যে শক্তি নিয়ে দেশের উন্নয়ন অর্থনীতি পরিচালনা শুরু করেছিলেন, বর্তমানে সেই অবস্থা নেই।

“তার পরিকল্পনায় ওই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে একটি মধ্যবিত্ত শহুরে অর্থনীতি গড়ে তোলে একটি কল্যাণমূখী অর্থনীতি গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।”

১৯৭৪ সালে অধ্যাপক নুরুল ইসলামের বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া প্রশ্নের উদ্রেক করে মন্তব্য করে সাবেক আমলা মান্নান বলেন, “উনি কি ৭৫ এর বিষয়ে কিছু অনুমান বা কোনও খবর কি তার কাছে ছিল? আমি বলছি না যে তিনি জানতেন, তবে আমার মনে প্রশ্ন জাগে।”

back to top