প্রশাসনের অনুমোদনের অপেক্ষায় নীতিমালা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জকসুর জন্য নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
২০০৫ সালে কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’-এ ছাত্র সংসদ সম্পর্কিত কোনো ধারা না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর একবারও জকসু নির্বাচন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বহুবার নির্বাচন দাবি করলেও এই ‘আইনি জটিলতার’ কারণে তা আয়োজন করা যায়নি।
চলতি বছরের ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় প্রথমবারের মতো জকসুর জন্য একটি নীতিমালার খসড়া উত্থাপন করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার শর্তে নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়।
খসড়া নীতিমালায় প্রার্থীদের বয়সসীমা ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়মিত অনার্স ও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই প্রার্থী হতে পারবেন। এমফিল, পিএইচডি বা গবেষণায় নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি, নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে সবার মতামত বিবেচনা করা জরুরি।
তবে শিক্ষার্থীদের মতামত আহ্বান করা হলেও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, মাত্র ১৮ জন শিক্ষার্থী লিখিত মতামত দিয়েছেন। এসব মতামত টেবিল আকারে সাজিয়ে সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হবে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে নীতিমালাটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন অজুহাত তৈরি করে সময়ক্ষেপণ করছে। নতুন কমিটি গঠনের পর তিন মাসে মাত্র একটি বৈঠক হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার জন্য ১০ কার্যদিবস নির্ধারণ করা হলেও সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে।
এর আগে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় বাংলায় অনুবাদের দোহাই দিয়ে নীতিমালা আটকে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছি এবং বিশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদন দিয়েছি। এখন আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হলে আমরা জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারব। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া, যা শেষ না হলে নির্বাচনের পথে যাওয়া সম্ভব নয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নীতিমালা অনুমোদনে ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অনেকে দ্রুত নির্বান চাচ্ছেন। তবে কারও কারও মত ‘দমন-পীড়নের’ বিচারের পর ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ তৈরি করে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।
জবি শাখার ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীব বলেন, ‘শুধু খসড়া তৈরি করলেই হবে না, ছাত্রসংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তা পুনর্গঠন করতে হবে এবং দ্রুত আইনে যুক্ত করতে হবে। প্রশাসন যে গতিতে কাজ করছে, তাতে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে তারা আন্তরিক নয় মনে হচ্ছে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলছেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস ছাড়া কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত ১৭ বছরে যারা ছাত্রদের দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তাদের বিচারের পর গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তারপরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। অথচ জবিতে কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা চাই, আগস্টের মধ্যেই নীতিমালা চূড়ান্ত করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি ও প্রয়োজনের জায়গা থেকে জকসু নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচিত ছাত্রনেতারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা তুলে ধরতে পারেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আইনি কারণে তারা সরাসরি নির্বাচন আয়োজন করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫-এ ছাত্র সংসদ নিয়ে কোনো ধারা নেই। ফলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ছাড়া কোনোভাবেই জকসু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছেন, এই আইনি অজুহাতের আড়ালে বছরের পর বছর ধরে তাদের অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারা চায়, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা হোক। তারা বলছেন এবারও প্রশাসন দ্রুত তফসিল ঘোষণা না করলে তারা আবারও আন্দোলনের পথে নামবেন।
প্রশাসনের অনুমোদনের অপেক্ষায় নীতিমালা
বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও হয়নি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জকসুর জন্য নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি না হওয়া পর্যন্ত তা কার্যকর করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ভবিষ্যৎ এখনো অনিশ্চিত।
২০০৫ সালে কলেজ থেকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫’-এ ছাত্র সংসদ সম্পর্কিত কোনো ধারা না থাকায় প্রতিষ্ঠার পর একবারও জকসু নির্বাচন হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বহুবার নির্বাচন দাবি করলেও এই ‘আইনি জটিলতার’ কারণে তা আয়োজন করা যায়নি।
চলতি বছরের ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় প্রথমবারের মতো জকসুর জন্য একটি নীতিমালার খসড়া উত্থাপন করা হয়। পরে শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার শর্তে নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়।
খসড়া নীতিমালায় প্রার্থীদের বয়সসীমা ২৮ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। নিয়মিত অনার্স ও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরাই প্রার্থী হতে পারবেন। এমফিল, পিএইচডি বা গবেষণায় নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। ছাত্রসংগঠনগুলোর দাবি, নীতিমালা চূড়ান্ত করার আগে সবার মতামত বিবেচনা করা জরুরি।
তবে শিক্ষার্থীদের মতামত আহ্বান করা হলেও প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, মাত্র ১৮ জন শিক্ষার্থী লিখিত মতামত দিয়েছেন। এসব মতামত টেবিল আকারে সাজিয়ে সিন্ডিকেটে উপস্থাপন করা হবে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পেলে নীতিমালাটি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসন অজুহাত তৈরি করে সময়ক্ষেপণ করছে। নতুন কমিটি গঠনের পর তিন মাসে মাত্র একটি বৈঠক হয়েছে। শিক্ষার্থীদের মতামত নেওয়ার জন্য ১০ কার্যদিবস নির্ধারণ করা হলেও সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেছে।
এর আগে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন আহ্বায়ক থাকা অবস্থায় বাংলায় অনুবাদের দোহাই দিয়ে নীতিমালা আটকে রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে প্রক্রিয়াটি আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘আমরা নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছি এবং বিশেষ সিন্ডিকেটে অনুমোদন দিয়েছি। এখন আইন মন্ত্রণালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ জারি হলে আমরা জকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে পারব। এটি একটি আইনি প্রক্রিয়া, যা শেষ না হলে নির্বাচনের পথে যাওয়া সম্ভব নয়।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নীতিমালা অনুমোদনে ধীরগতির কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অনেকে দ্রুত নির্বান চাচ্ছেন। তবে কারও কারও মত ‘দমন-পীড়নের’ বিচারের পর ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ তৈরি করে নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।
জবি শাখার ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ইভান তাহসীব বলেন, ‘শুধু খসড়া তৈরি করলেই হবে না, ছাত্রসংগঠনগুলোর মতামতের ভিত্তিতে তা পুনর্গঠন করতে হবে এবং দ্রুত আইনে যুক্ত করতে হবে। প্রশাসন যে গতিতে কাজ করছে, তাতে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে তারা আন্তরিক নয় মনে হচ্ছে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলছেন, ‘ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস ছাড়া কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। বিগত ১৭ বছরে যারা ছাত্রদের দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তাদের বিচারের পর গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তারপরই নির্বাচন আয়োজন করা উচিত।’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম বলেন, ‘অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। অথচ জবিতে কোনো অগ্রগতি নেই। আমরা চাই, আগস্টের মধ্যেই নীতিমালা চূড়ান্ত করে সেপ্টেম্বরের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হোক।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি একেএম রাকিব বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি ও প্রয়োজনের জায়গা থেকে জকসু নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। নির্বাচিত ছাত্রনেতারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সমস্যা তুলে ধরতে পারেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, আইনি কারণে তারা সরাসরি নির্বাচন আয়োজন করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫-এ ছাত্র সংসদ নিয়ে কোনো ধারা নেই। ফলে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ ছাড়া কোনোভাবেই জকসু নির্বাচন করা সম্ভব নয়।
শিক্ষার্থীদের একাংশ বলছেন, এই আইনি অজুহাতের আড়ালে বছরের পর বছর ধরে তাদের অধিকার বঞ্চিত করা হচ্ছে। তারা চায়, গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা হোক। তারা বলছেন এবারও প্রশাসন দ্রুত তফসিল ঘোষণা না করলে তারা আবারও আন্দোলনের পথে নামবেন।