নির্বাচনের প্রচার- প্রচারণা শুরু, নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৪৭১
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভোটের দিনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সাতটি প্রবেশপথে সেনাসদস্যরা অবস্থান করবেন। ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রগুলো কর্ডন করে রাখবে সেনারা, যাতে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে না পারে বা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি না হয়। মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেনাসদস্যরা শুধু গণনার সময় ভোটকেন্দ্রে থাকবেন বলে জানানো হয়।
ডাকসুর ইতিহাসে নির্বাচনের দিন এভাবে শুধু সেনা সদস্য নয় পুলিশ মোতায়নের নজির পাওয়া যায়নি। ফলে এবারের ডাকসুতে সেনাবাহিনী মোতায়ন নিয়ে প্রশ্ন জমেছে অনেকের মনে। তবে প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা একটি সুুষ্ঠু নির্বাচন; তা পূরণ করতেই এমন সিদ্ধান্ত। এর প্রতিফলনও দেখা গিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অন্তত আটজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশিরভাগকেই একই সুরে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তারা জানান, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তারা ডাকসু নির্বাচন হওয়া নিয়েই সন্দিহান। সেখানে নির্বাচন হলেও তা কতটুকু সুষ্ঠু হবে সে বিষয়ে তাদের সন্দেহের মাত্রা আরও বেশি। ফলে নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনী মোতায়নের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবেই নিচ্ছে তারা। তবে এদের মধ্যে মাত্র একজন শিক্ষার্থী ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তার দাবি, সেনাবাহিনী মোতায়নের মধ্য দিয়ে ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) অনধিকার চর্চার সুযোগ তৈরি হবে। যেহেতু সেনাবাহিনী এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা অভ্যুত্থান পরবর্তীতে এখনও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি সেহেতু নির্বাচনে বাহিনী নির্দিষ্ট কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে বলেই আশঙ্কা তার।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ডাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতির। তিনি বলেন, আমাদের সময়কালে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এমন পদক্ষেপ আগে কখনও দেখিনি। প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কেন করলো তারা? সেনাবাহিনী থাকবে কেন? আমাদের সময়ে এগুলো কখনও ঘটেনি। আমাদের সময় পুলিশও রাখা হয়নি। আর পরিস্থিতিতো এমন না যে রাখাটা জরুরি। আমাদের সময় বিএনসিসির সদস্যরা থাকতো ফর্মালিটিস হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে আমি অবাক হয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সাতটি প্রবেশপথে সেনাসদস্যরা অবস্থান করবেন। তারা শুধু থাকবে যেন ওই দিন কোনো বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে না পারে।
ডাকসুকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ভোটের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে। এছাড়া নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকেই হলগুলোতে কোনো বহিরাগত থাকতে পারবে না।
ডাকসু নির্বাচনের
প্রচার-প্রচারণা শুরু
মঙ্গলবার,(২৬ আগস্ট ২০২৫) থেকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে এবং প্রার্থীদের নির্ধারিত সময়সূচি মেনে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। কমিশন আরও সতর্ক করেছেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় যদি কোনো প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ, পারিবারিক বা ধর্মীয় পরিচয়কে কেন্দ্র করে কাউকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন, তবে প্রার্থিতা বাতিলসহ ছাত্রত্বও রদ করা হতে পারে।
এদিন সকাল এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়েল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন জামাল উদ্দীন খালিদ ও মাহিন সরকারের নেতৃত্বাধীন মন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলে প্রার্থীরা।
বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিরোধ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু এবং এজিএস প্রার্থী মো. জাবির আহমেদ জুবেলের নেতৃত্বে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে পর্ষদের নির্বাচনীপ্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১ টায় শাহবাগে অবস্থিত জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে উমামা ফাতেমা ও আল সাদী ভূইয়া নেতৃত্বাধীন ডাকসুর স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা। বিকেল চারটায় ভিসি চত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের মহান একাত্তরের শহীদদের স্মৃতি ফলক স্মৃতি চিরন্তনে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রচারণা শুরু করে ছাত্রদল সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ।
দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল।
প্রচারণার প্রথম দিনেই শিবিরের ফেস্টুন ভাঙচুর ও বিকৃতি
আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রথম দিনেই চারুকলা অনুষদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি প্রার্থীদের ছবি বিকৃত করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত একজনকে শনাক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনাক্ত হওয়া শিক্ষার্থীর নাম তোহান মজুমদার। তিনি চারুকলা অনুষদের ক্রাফট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল।
সূত্র জানায়,মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট চারুকলা ইনস্টিটিউট এলাকায় অস্থায়ীভাবে একটি ব্যানার স্থাপন করে। তবে কিছু সময় পর দুই অজ্ঞাতনামা যুবক সেটি ফেলে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ঘটনার বিষয়ে চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কারা এটি করেছে তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো প্রার্থী আইনি সহায়তা চায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। পরে এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে বলেও জানা যায়।
# ডাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৪৭১
এবারের ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭১ জন। মঙ্গলবার বিকেলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা অনুযায়ী, ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সম্পাদক পদগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৫ জন প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে এবার মোট প্রার্থী হয়েছেন ২১৭ জন। সব মিলিয়ে ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের মধ্যে ২৮ জন স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। অন্যদিকে, বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্রও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
নির্বাচনের প্রচার- প্রচারণা শুরু, নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৪৭১
ছবি: ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত
মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভোটের দিনে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সাতটি প্রবেশপথে সেনাসদস্যরা অবস্থান করবেন। ভোটগ্রহণ শেষে ফল ঘোষণার আগ পর্যন্ত কেন্দ্রগুলো কর্ডন করে রাখবে সেনারা, যাতে বাইরের কেউ প্রবেশ করতে না পারে বা অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি তৈরি না হয়। মঙ্গলবার রিটার্নিং কর্মকর্তাদের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেনাসদস্যরা শুধু গণনার সময় ভোটকেন্দ্রে থাকবেন বলে জানানো হয়।
ডাকসুর ইতিহাসে নির্বাচনের দিন এভাবে শুধু সেনা সদস্য নয় পুলিশ মোতায়নের নজির পাওয়া যায়নি। ফলে এবারের ডাকসুতে সেনাবাহিনী মোতায়ন নিয়ে প্রশ্ন জমেছে অনেকের মনে। তবে প্রশাসন বলছে, শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা একটি সুুষ্ঠু নির্বাচন; তা পূরণ করতেই এমন সিদ্ধান্ত। এর প্রতিফলনও দেখা গিয়েছে শিক্ষার্থীদের মাঝে। এ প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অন্তত আটজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেছে। তাদের বেশিরভাগকেই একই সুরে কথা বলতে দেখা গিয়েছে। তারা জানান, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তারা ডাকসু নির্বাচন হওয়া নিয়েই সন্দিহান। সেখানে নির্বাচন হলেও তা কতটুকু সুষ্ঠু হবে সে বিষয়ে তাদের সন্দেহের মাত্রা আরও বেশি। ফলে নির্বাচনের দিন সেনাবাহিনী মোতায়নের সিদ্ধান্তকে ভালোভাবেই নিচ্ছে তারা। তবে এদের মধ্যে মাত্র একজন শিক্ষার্থী ভিন্নমত পোষণ করেছেন। তার দাবি, সেনাবাহিনী মোতায়নের মধ্য দিয়ে ডিজিএফআই (ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) অনধিকার চর্চার সুযোগ তৈরি হবে। যেহেতু সেনাবাহিনী এবং তার গোয়েন্দা সংস্থা অভ্যুত্থান পরবর্তীতে এখনও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ও স্বতন্ত্র বাহিনী হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি সেহেতু নির্বাচনে বাহিনী নির্দিষ্ট কোনো দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে বলেই আশঙ্কা তার।
১৯৭৯ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত দুই মেয়াদে ডাকসুর নির্বাচিত ভিপি ছিলেন মাহমুদুর রহমান মান্না। ডাকসু নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বর্তমানে নাগরিক ঐক্যের সভাপতির। তিনি বলেন, আমাদের সময়কালে ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে এমন পদক্ষেপ আগে কখনও দেখিনি। প্রশাসনের দিকে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কেন করলো তারা? সেনাবাহিনী থাকবে কেন? আমাদের সময়ে এগুলো কখনও ঘটেনি। আমাদের সময় পুলিশও রাখা হয়নি। আর পরিস্থিতিতো এমন না যে রাখাটা জরুরি। আমাদের সময় বিএনসিসির সদস্যরা থাকতো ফর্মালিটিস হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে আমি অবাক হয়েছি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাকসু নির্বাচনের চিফ রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান সাতটি প্রবেশপথে সেনাসদস্যরা অবস্থান করবেন। তারা শুধু থাকবে যেন ওই দিন কোনো বহিরাগত বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে না পারে।
ডাকসুকে ঘিরে কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত নেই। রিটার্নিং কর্মকর্তা জানান, ভোটের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেট্রোরেল স্টেশন বন্ধ থাকবে। এছাড়া নির্বাচনের সাত দিন আগে থেকেই হলগুলোতে কোনো বহিরাগত থাকতে পারবে না।
ডাকসু নির্বাচনের
প্রচার-প্রচারণা শুরু
মঙ্গলবার,(২৬ আগস্ট ২০২৫) থেকে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হয়েছে। সকাল থেকেই বিভিন্ন প্যানেলের প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছেন। এদিকে নির্বাচন কমিশন পোস্টার, লিফলেট ও হ্যান্ডবিল ব্যবহারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিয়েছে এবং প্রার্থীদের নির্ধারিত সময়সূচি মেনে প্রচারণা চালানোর আহ্বান জানিয়েছে। কমিশন আরও সতর্ক করেছেন, নির্বাচনী প্রচারের সময় যদি কোনো প্রার্থী মুক্তিযুদ্ধ, পারিবারিক বা ধর্মীয় পরিচয়কে কেন্দ্র করে কাউকে অপদস্থ করার চেষ্টা করেন, তবে প্রার্থিতা বাতিলসহ ছাত্রত্বও রদ করা হতে পারে।
এদিন সকাল এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়েল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছেন জামাল উদ্দীন খালিদ ও মাহিন সরকারের নেতৃত্বাধীন মন্বিত শিক্ষার্থী সংসদ প্যানেলে প্রার্থীরা।
বেলা ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রতিরোধ পর্ষদের ভিপি প্রার্থী শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি, জিএস প্রার্থী মেঘমল্লার বসু এবং এজিএস প্রার্থী মো. জাবির আহমেদ জুবেলের নেতৃত্বে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে পর্ষদের নির্বাচনীপ্রচার-প্রচারণা শুরু হয়। বেলা সাড়ে ১১ টায় শাহবাগে অবস্থিত জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভে শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করে উমামা ফাতেমা ও আল সাদী ভূইয়া নেতৃত্বাধীন ডাকসুর স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থীরা। বিকেল চারটায় ভিসি চত্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের মহান একাত্তরের শহীদদের স্মৃতি ফলক স্মৃতি চিরন্তনে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রচারণা শুরু করে ছাত্রদল সমর্থিত আবিদ-হামিম-মায়েদ পরিষদ।
দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে থেকে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রম শুরু করে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট প্যানেল।
প্রচারণার প্রথম দিনেই শিবিরের ফেস্টুন ভাঙচুর ও বিকৃতি
আনুষ্ঠানিক প্রচারণার প্রথম দিনেই চারুকলা অনুষদে ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলার পাশাপাশি প্রার্থীদের ছবি বিকৃত করার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত একজনকে শনাক্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনাক্ত হওয়া শিক্ষার্থীর নাম তোহান মজুমদার। তিনি চারুকলা অনুষদের ক্রাফট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। শনাক্তের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল।
সূত্র জানায়,মঙ্গলবার সকাল থেকে শুরু হওয়া নির্বাচনী প্রচারের অংশ হিসেবে ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট চারুকলা ইনস্টিটিউট এলাকায় অস্থায়ীভাবে একটি ব্যানার স্থাপন করে। তবে কিছু সময় পর দুই অজ্ঞাতনামা যুবক সেটি ফেলে দেয় বলে অভিযোগ ওঠে।
ঘটনার বিষয়ে চারুকলা অনুষদের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল বলেন, আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। কারা এটি করেছে তা শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তিনি আরও বলেন, ‘যদি কোনো প্রার্থী আইনি সহায়তা চায়, তাহলে নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ করতে পারেন। পরে এ ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্যানেলের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে বলেও জানা যায়।
# ডাকসু নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৪৭১
এবারের ডাকসু নির্বাচনে চূড়ান্ত প্রার্থী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৭১ জন। মঙ্গলবার বিকেলে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকা অনুযায়ী, ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে ৪৫ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২৫ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। সম্পাদক পদগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক পদে ১৭ জন, কমনরুম, রিডিংরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে ১১ জন, আন্তর্জাতিক সম্পাদক পদে ১৪ জন, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ১৯ জন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ১২ জন, গবেষণা ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৯ জন, ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১৩ জন, ছাত্র পরিবহন সম্পাদক পদে ১২ জন, সমাজসেবা সম্পাদক পদে ১৭ জন, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক পদে ১৫ জন, মানবাধিকার ও আইনবিষয়ক সম্পাদক পদে ১১ জন এবং ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১৫ জন প্রার্থী। সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে সদস্য পদে। ১৩টি সদস্য পদের বিপরীতে এবার মোট প্রার্থী হয়েছেন ২১৭ জন। সব মিলিয়ে ২৮টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন মোট ৪৭১ জন প্রার্থী। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে মনোনয়ন জমা দেয়া প্রার্থীদের মধ্যে ২৮ জন স্বেচ্ছায় প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছেন। অন্যদিকে, বাছাই প্রক্রিয়ায় বাদ পড়া ১০ জন প্রার্থী আপিল না করায় তাদের মনোনয়নপত্রও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।