রোববার স্থানীয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ক্যাম্পাস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে সহ-উপাচার্যসহ শতাধিক আহত হন -সংবাদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংর্ঘষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত থেকে শুরু হয়ে রোববার,(৩১ আগস্ট ২০২৫) দুপুর পর্যন্ত টানা কয়েক দফা সংঘর্ষে সহ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর ড. তানভীর হায়দার আরিফ ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), প্রক্টরসহ আহত শতাধিক, দু’দিনে আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক
যৌথবাহিনী অভিযান শুরু
সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে, তবে ক্লাস চলবে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবরার ২নং গেইট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে, তবে ক্লাস চলবে বলে জানানো হয়েছে।
সংর্ঘষের সূত্রপাত গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী রাতে ২নং গেইটসংলগ্ন নিজের ভাড়া বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে ভবনের দারোয়ান দরজা খুলতে আপত্তি করেন এবং ওই ছাত্রীকে দেরি করে বাসায় ফেরার জন্য অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। একপর্যায়ে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে চড় মারেন ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এ ঘটনায় ভবনে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা এবং পার্শ্ববর্তী ভবনে থাকা শিক্ষার্থীরা বের হয়ে প্রতিবাদ করলে দারোয়ান পালিয়ে যায়। তাকে ধাওয়া করার সময় স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এরপর মাইকিং করে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে আশপাশের আরও শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলে।
প্রথম দফা সংঘর্ষে অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসক মোহাম্মদ ডা. আবু তৈয়ব বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জনের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে। অন্যদের লাঠিসোঁটা, কাঠ, ইট-পাটকেল ইত্যাদি দিয়ে জখম করা হয়েছে। একসঙ্গে এত আহত শিক্ষার্থী আগে দেখিনি। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ‘এখানে ২৩ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় এসেছে। তাদের আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আর মোট আহত শিক্ষার্থী একশ’র বেশি হবে। এত বেশি শিক্ষার্থী এসেছে যে আমরা সবার নাম তালিকায় লিখতে পারিনি।’
যা ঘটেছিল
সংর্ঘষ চলাকালে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইন পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান, কিন্তু তারা এলাকায় ঢুকতে পারেননি। পুরোটা সময় স্থানীয়দের দখলে ছিল এলাকা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোববার দুপুরে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুইপক্ষ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রান্তে এবং অপর প্রান্তে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সহ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামালউদ্দিন ও প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও দুপুর ১২টার পর আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় স্থানীয়রা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। পাল্টাপাল্টি হামলায় ইটের আঘাতে সহ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর ড. তানভীর হায়দার আরিফসহ অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি এ সময় ছিল না বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ আরিফ এর আগে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ইতোমধ্যেই একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
### ১৪৪ ধারা জারি
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন চবির জোবরা ২নং গেইট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউএনও জানান, চবি ও জোবরা এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে জোবরা ২নং গেইট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, চবি এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট বাজারের পূর্বসীমা থেকে পূর্বদিকের রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশেই জারিকৃত ১৪৪ ধারা ২টা থেকে আজ (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এই সময়ে উক্ত এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র বহনসহ পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে অবস্থান ও চলাফেরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
### চমেকে ভর্তি ৫১ শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিনসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালে ৫১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাংবাদিকদের জানান, সংঘর্ষে অনেকেই আহত হয়েছেন। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। এই পর্যন্ত ৫১ জনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
সরেজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাস ও মিনিবাসে করে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের বেশিরভাগেরই মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। তাদের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।
রোববার স্থানীয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষে ক্যাম্পাস এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। সংঘর্ষে সহ-উপাচার্যসহ শতাধিক আহত হন -সংবাদ
রোববার, ৩১ আগস্ট ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেইট এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে দফায় দফায় সংর্ঘষ ও ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার রাত থেকে শুরু হয়ে রোববার,(৩১ আগস্ট ২০২৫) দুপুর পর্যন্ত টানা কয়েক দফা সংঘর্ষে সহ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর ড. তানভীর হায়দার আরিফ ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
উপ-উপাচার্য (প্রশাসন), প্রক্টরসহ আহত শতাধিক, দু’দিনে আহতের সংখ্যা দেড় শতাধিক
যৌথবাহিনী অভিযান শুরু
সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে, তবে ক্লাস চলবে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জোবরার ২নং গেইট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। একইসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত করেছে, তবে ক্লাস চলবে বলে জানানো হয়েছে।
সংর্ঘষের সূত্রপাত গতকাল শনিবার রাত সোয়া ১২টার দিকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের এক ছাত্রী রাতে ২নং গেইটসংলগ্ন নিজের ভাড়া বাসায় প্রবেশ করতে চাইলে ভবনের দারোয়ান দরজা খুলতে আপত্তি করেন এবং ওই ছাত্রীকে দেরি করে বাসায় ফেরার জন্য অকথ্য ভাষায় গালাগাল করতে থাকেন। একপর্যায়ে দারোয়ান ওই ছাত্রীকে চড় মারেন ও ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। এ ঘটনায় ভবনে থাকা অন্য শিক্ষার্থীরা এবং পার্শ্ববর্তী ভবনে থাকা শিক্ষার্থীরা বের হয়ে প্রতিবাদ করলে দারোয়ান পালিয়ে যায়। তাকে ধাওয়া করার সময় স্থানীয় লোকজন শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এরপর মাইকিং করে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। খবর পেয়ে আশপাশের আরও শিক্ষার্থী এগিয়ে এলে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া চলে।
প্রথম দফা সংঘর্ষে অন্তত ৬০ শিক্ষার্থী আহত হন। বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসক মোহাম্মদ ডা. আবু তৈয়ব বলেন, ‘আহত ব্যক্তিদের মধ্যে দু’জনের শরীরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জখম করার চিহ্ন রয়েছে। অন্যদের লাঠিসোঁটা, কাঠ, ইট-পাটকেল ইত্যাদি দিয়ে জখম করা হয়েছে। একসঙ্গে এত আহত শিক্ষার্থী আগে দেখিনি। তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসক মুহাম্মদ টিপু সুলতান বলেন, ‘এখানে ২৩ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত অবস্থায় এসেছে। তাদের আমরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। আর মোট আহত শিক্ষার্থী একশ’র বেশি হবে। এত বেশি শিক্ষার্থী এসেছে যে আমরা সবার নাম তালিকায় লিখতে পারিনি।’
যা ঘটেছিল
সংর্ঘষ চলাকালে গতকাল শনিবার দিবাগত রাত পৌনে একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. কোরবান আলী ও নাজমুল হোসাইন পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান, কিন্তু তারা এলাকায় ঢুকতে পারেননি। পুরোটা সময় স্থানীয়দের দখলে ছিল এলাকা। রাত সাড়ে তিনটার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
রোববার দুপুরে আবারও মুখোমুখি অবস্থান নেয় দুইপক্ষ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রান্তে এবং অপর প্রান্তে স্থানীয় বাসিন্দারা জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে থাকেন। সহ-উপাচার্য (অ্যাকাডেমিক) অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান, সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামালউদ্দিন ও প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ তাদের বোঝানোর চেষ্টা করলেও দুপুর ১২টার পর আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় স্থানীয়রা ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হয়। পাল্টাপাল্টি হামলায় ইটের আঘাতে সহ-উপাচার্য মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর ড. তানভীর হায়দার আরিফসহ অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি এ সময় ছিল না বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ আরিফ এর আগে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সহ-উপাচার্য ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ইতোমধ্যেই একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় দায়ীদের বিচারের আওতায় আনবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ইতোমধ্যেই স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেছি।’
### ১৪৪ ধারা জারি
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন চবির জোবরা ২নং গেইট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছেন। এক বিজ্ঞপ্তিতে ইউএনও জানান, চবি ও জোবরা এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে জোবরা ২নং গেইট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
আদেশে বলা হয়, চবি এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা ও শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেইট বাজারের পূর্বসীমা থেকে পূর্বদিকের রেলগেইট পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশেই জারিকৃত ১৪৪ ধারা ২টা থেকে আজ (১ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টা পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
এই সময়ে উক্ত এলাকায় সব ধরনের সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র, দেশীয় অস্ত্র বহনসহ পাঁচ বা ততোধিক ব্যক্তি একত্রে অবস্থান ও চলাফেরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।
### চমেকে ভর্তি ৫১ শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের দফায় দফায় সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক কামাল উদ্দিনসহ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এর মধ্যে চমেক হাসপাতালে ৫১ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে সাংবাদিকদের জানান, সংঘর্ষে অনেকেই আহত হয়েছেন। কেউ কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। এই পর্যন্ত ৫১ জনকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা গুরুতর।
সরেজমিনে হাসপাতালে দেখা যায়, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বাস ও মিনিবাসে করে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নেয়া হয়। তাদের বেশিরভাগেরই মাথা, হাতসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন। তাদের জরুরি বিভাগে নিয়ে যেতে দেখা গেছে।