alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

রাশিয়া থেকে জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণ, দেশে ল্যাব তৈরি করে পরিচালনা

প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা করে পাচার, গত ১ বছর ধরে

চক্রের এজেন্টসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার

সাইফ বাবলু : শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অনলাইন জুয়ার বিনিয়োগের অর্থ কৌশলে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনলাইন জুয়ার অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় এ জুয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টরা বাসায় ল্যাব তৈরি করে সাইটগুলো পরিচালনা করছে। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত ৩টি অনলাইন জুয়ার সাইট নজরে আসার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যে চক্রের মূল নিয়ন্ত্রণ হিসেবে রাশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি এক নাগরিকের নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডি বলছে, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে গত ১ বছর ধরে প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা করে পাচার করেছে বলে তথ্য মিলেছে। চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর এজেন্ট-কর্মচারীরাও যুক্ত।

সিআইডি জানিয়েছে, সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্ট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজম্যান টিমের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে মনিটরিং করার পর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে Mel Bet, 1x Bet Ges Bet winner নামের বেটিং সাইটসমূহ নজরে আসে। সিআইডি লক্ষ্য করে সেখানে বাংলাদেশের প্রচুর গ্রাহক বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে। সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া নির্দেশনায় ওই তিনটি সাইটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এনালাইসিস করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট-এর একটি টিম।

গত ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সিআইডির সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদের নেতৃত্বাধীন টিমের সদস্যরা ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মো. রেজাউল করিম (৩১), মো. সৈকত রহমান (৩০), মো. সাদিকুল ইসলাম (২৮), নাজমুল আহসান (৩০), মো. তৌহিদ হোসেন (২৫) এবং মো. জাকির হোসেন (৩৪) আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকালীন সময়ে তাদের কাছ থেকে ১৭টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, ২১টি সিম, ল্যাপটপ ৪টি, ডেস্কটপ কম্পিউটার ৭টি, ট্যাব ২টি, এবং নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।

সিআইডির ভাষ্য, অনলাইন জুয়ায় টাকা দিয়ে খেলায় অংশ নেয় জুয়াড়িরা। বেটার রা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাপসে। আর এসব অর্থ কৌশলে চলে যায় দেশের বাইরে। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে জুয়া খেলার বিভিন্ন অ্যাপসে জুয়াড়িদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনার জন্য আপস নিয়ন্ত্রণকারীরা বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। এসব প্রতিনিধিরা নিজ নিজ বাসায় ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করে একাধিক কম্পিউটার বসিয়ে জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনা করছে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টায় জানিয়েছেন, অন লাইনে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ উঠতি বয়সের তরুণ- তরুণীরা। এছাড়া স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশও এখন অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসে এসব তরুন-তরুণী ও শিক্ষার্থীদের নানা কৌশলে অনলাইনে জুয়া খেলায় সম্পৃক্ত করতে লোভনীয় অফার দিচ্ছে। আর এ ফাঁদে পড়ে অংশগ্রহণকারীরা যে টাকা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে দিচ্ছে তা কৌশলে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি মেল বেট ও ওয়ান এক্স বেট এবং বেট উইনার নামে ৩টি জুয়ার মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি টাকা পাচার হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।

সিআইডি বলছে, রাশিয়া থেকে মূলত এই সমস্ত অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। জুয়ার এজেন্টরা এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক রাখেন।

গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল করিম তার বাসায় ৭টি কম্পিউটার ও ৪টি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সঙ্গে যুক্ত হন গ্রেপ্তারকৃত সাদিকুল ও জাকির হোসেনের মতো এমএফএস এজেন্ট। গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল, তৌহিদদের মতো এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার কাজসমূহ নির্বিঘেœ করতে পারে।

আটককৃত চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান যিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করছেন তিনি মূলত এই সাইটসমূহের বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান।

এই দুইজন এবং গ্রেপ্তারকৃত সৈকত ও রেজাউল এই চারজনের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের মাধ্যমে জুয়ার এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে প্রতি মাসে এই চক্রটি এমএফএস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ তারা টাকার একটা ক্ষুদ্র অংশ পেয়ে জুয়াড়িদের কাছ থেকে সংগৃহীত পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টো কারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, শরিয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান এ অনলাইন জুয়া চক্রের মূল দলনেতা। গ্রেপ্তারকৃতরা তার অনেকগুলো গ্রুপের একটি গ্রুপ। গ্রেপ্তারকৃত গ্রুপের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা পেতো মতিউর। তার এ গ্রুপের রেজাউল ও সৈকত অ্যাপস পরিচালনা করে মাসে ৭০ হাজার টাকা পেতেন। এজেন্টরা টাকা লেনদেন করে একটি কমিশন পেতেন। যে মোবাইল সিমগুলো উদ্ধার হয়েছে প্রতিটি সিমের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা করে লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

রেজাউল মাসুদ জানান, আমরা ধারণা করছি মতিউরের আরও একাধিক গ্রুপ রয়েছে। যে অ্যাপসগুলো দ্বারা জুয়া চলতো এসব অ্যাপসে অনেক নামীদামি মডেল, অভিনেতা অভিনেত্রীদের বিজ্ঞাপন দিতেও দেখা গেছে। এ রকম আরও জুয়ার সাইট আছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

যশোরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ দেশ ক্লিনিকের লাইসেন্স বাতিল ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি

খাগড়াছড়ি বিজিবি’র অভিযানে পানছড়ি সীমান্তে ভারতীয় মালামাল উদ্ধার

ছবি

খুলনায় ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার দায়ে ২১ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

রংপুরে কিশোরকে চোরের অপবাদে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল

ছবি

লাকী যুগের অবসানের পর প্রথম সভায় বসছে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন

সিলেটে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

শরীয়তপুরে জমিসংক্রান্ত জেরে জামায়াত নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ

চালের সাইলোতে গম, নেপথ্যে ‘দুর্নীতি’

যশোর শহরের বকচরে যুবককে গলাকেটে হত্যা

চালের সাইলোতে রাখা গম, নেপথ্যে দুর্নীতিবাজ চক্র

সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি : টিআইবি

ছবি

এনআইডির তথ্য ফাঁস: জয়-পলকসহ ১৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা

ছবি

নাম ‘পরিবর্তন করে জালিয়াতি’ : সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের দুই ভাইয়ের পাসপোর্ট বাতিল

ছবি

এস আলম পরিবারের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

চাকরির প্রলোভনে ধর্ষণ, ঘটনা ফাঁস হওয়ার ভয়ে শ্বাসরোধে হত্যা

ছবি

রামুতে চাঞ্চল্যকর ব্যবসায়ী রাশেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামী গ্রেফতার

ছবি

হিজবুত তাহরিরের মিডিয়া সমন্বয়কারী আটক

ছবি

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা কামাল নাসের চৌধুরী গ্রেপ্তার

ছবি

ত্বকী হত্যায় আজমেরীর আত্মীয় গ্রেপ্তার

ছবি

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব জাহাংগীর গ্রেফতার

বিয়ানীবাজারে পার্লার কর্মী ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেফতার ১

খবর প্রকাশের জেরে পীরগাছায় সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাংবাদিক,অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে

নোয়াখালীতে ভিডিওতে লাইফ দিয়ে ১ যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা,ভিডিও ভাইরাল

দিনাজপুরে মাছ ধরার জাল চুরির অভিযোগে যুবককে পিটিয়ে হত্যা

গজারিয়ায় ডাকাতি প্রস্ততিকালে অস্ত্রসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

ছবি

সন্তানকে গাছে বেঁধে স্বামীর কাছে ভিডিও পাঠিয়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ

সোনারগাঁয়ে ডাকাতি, প্রবাসির গ্রীনকার্ড, বৈদেশীক মুদ্রাসহ ১০ লাখ টাকার মালামাল লুট

ছবি

ছিনতাই ও চুরি হওয়া ৭৪টি মোবাইল ফোন সেট উদ্ধার

ছবি

জেনারেল আজিজের দুই ভাইয়ের চার এনআইডি বাতিল

ছবি

হত্যা মামলা: সাবেক আইজিপি মামুন ৪ দিনের রিমান্ডে

ছবি

এবার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আনিসুল হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন

গোয়ালন্দে গুলি ও কুপিয়ে চরমপন্থী নেতা সুশিলকে হত্যা

ছবি

শরীয়তপুরে পিটিয়ে বৃদ্ধ বাবাকে মেরে ফেলা সেই ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ

ওষুধ ব্যবসায়ীদের দুই পক্ষের মারামারি

ছবি

ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ, চট্টগ্রামে ‘কিলার ফয়সাল’ গ্রেপ্তার

ছবি

সিলেটের সমন্বয়ক পরিচয়ে চাঁদাবাজি, আটক ৯

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

রাশিয়া থেকে জুয়ার সাইট নিয়ন্ত্রণ, দেশে ল্যাব তৈরি করে পরিচালনা

প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা করে পাচার, গত ১ বছর ধরে

চক্রের এজেন্টসহ ৬ জনকে গ্রেপ্তার

সাইফ বাবলু

শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

অনলাইন জুয়ার বিনিয়োগের অর্থ কৌশলে চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে। কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশ থেকে অনলাইন জুয়ার অ্যাপস নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বাংলাদেশের কয়েকটি এলাকায় এ জুয়ার কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এজেন্টরা বাসায় ল্যাব তৈরি করে সাইটগুলো পরিচালনা করছে। সম্প্রতি রাশিয়া থেকে নিয়ন্ত্রিত ৩টি অনলাইন জুয়ার সাইট নজরে আসার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যে চক্রের মূল নিয়ন্ত্রণ হিসেবে রাশিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি এক নাগরিকের নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। সিআইডি বলছে, চক্রটি বাংলাদেশ থেকে গত ১ বছর ধরে প্রতি মাসে ২০ কোটি টাকা করে পাচার করেছে বলে তথ্য মিলেছে। চক্রের সদস্যদের সঙ্গে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন কোম্পানির মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) এর এজেন্ট-কর্মচারীরাও যুক্ত।

সিআইডি জানিয়েছে, সিআইডির সাইবার ইন্টেলিজেন্ট অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজম্যান টিমের সদস্য দীর্ঘদিন ধরে মনিটরিং করার পর অনলাইন প্ল্যাটফর্মে Mel Bet, 1x Bet Ges Bet winner নামের বেটিং সাইটসমূহ নজরে আসে। সিআইডি লক্ষ্য করে সেখানে বাংলাদেশের প্রচুর গ্রাহক বেটিং বা জুয়া খেলায় অংশগ্রহণ করছে। সিআইডিপ্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী মিয়া নির্দেশনায় ওই তিনটি সাইটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত এনালাইসিস করে সিআইডি সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট-এর একটি টিম।

গত ৩১ আগস্ট বৃহস্পতিবার সিআইডির সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদের নেতৃত্বাধীন টিমের সদস্যরা ঢাকার মোহাম্মদপুর, বনশ্রী ও আগারগাঁও এবং সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে মো. রেজাউল করিম (৩১), মো. সৈকত রহমান (৩০), মো. সাদিকুল ইসলাম (২৮), নাজমুল আহসান (৩০), মো. তৌহিদ হোসেন (২৫) এবং মো. জাকির হোসেন (৩৪) আটক করা হয়। গ্রেপ্তারকালীন সময়ে তাদের কাছ থেকে ১৭টি বিভিন্ন ব্রান্ডের মোবাইল ফোন, ২১টি সিম, ল্যাপটপ ৪টি, ডেস্কটপ কম্পিউটার ৭টি, ট্যাব ২টি, এবং নগদ প্রায় ৪ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়। আটককৃতদের বিরুদ্ধে শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পল্টন মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।

সিআইডির ভাষ্য, অনলাইন জুয়ায় টাকা দিয়ে খেলায় অংশ নেয় জুয়াড়িরা। বেটার রা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে টাকা বিনিয়োগ করে অ্যাপসে। আর এসব অর্থ কৌশলে চলে যায় দেশের বাইরে। দীর্ঘদিন ধরে অনলাইনে জুয়া খেলার বিভিন্ন অ্যাপসে জুয়াড়িদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনার জন্য আপস নিয়ন্ত্রণকারীরা বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি নিয়োগ করেছে। এসব প্রতিনিধিরা নিজ নিজ বাসায় ডিজিটাল ল্যাব তৈরি করে একাধিক কম্পিউটার বসিয়ে জুয়ার সাইটগুলো পরিচালনা করছে।

সিআইডির তদন্ত সংশ্লিষ্টায় জানিয়েছেন, অন লাইনে জুয়া খেলায় অংশগ্রহণকারীদের একটি বড় অংশ উঠতি বয়সের তরুণ- তরুণীরা। এছাড়া স্কুল-কলেজসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশও এখন অনলাইন জুয়ায় জড়িয়ে পড়েছে। একটি সংঘবদ্ধ চক্র বিভিন্ন ধরনের অ্যাপসে এসব তরুন-তরুণী ও শিক্ষার্থীদের নানা কৌশলে অনলাইনে জুয়া খেলায় সম্পৃক্ত করতে লোভনীয় অফার দিচ্ছে। আর এ ফাঁদে পড়ে অংশগ্রহণকারীরা যে টাকা কিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে দিচ্ছে তা কৌশলে দেশের বাইরে পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি মেল বেট ও ওয়ান এক্স বেট এবং বেট উইনার নামে ৩টি জুয়ার মাধ্যমে দেশ থেকে কোটি টাকা পাচার হওয়ার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।

সিআইডি বলছে, রাশিয়া থেকে মূলত এই সমস্ত অনলাইন জুয়ার ওয়েবসাইট নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বিভিন্ন দেশে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যানেজার নিয়োগ করা হয়। ম্যানেজার বাংলাদেশে জুয়ার এজেন্ট হিসাবে বিশ্বস্তদের নিয়োগ দেয়। জুয়ার এজেন্টরা এ সমস্ত অ্যাপস পরিচালনা করতে পারে টেকনিক্যালি দক্ষ এমন লোক রাখেন।

গ্রেপ্তারকৃত রেজাউল করিম তার বাসায় ৭টি কম্পিউটার ও ৪টি ল্যাপটপ নিয়ে টেকনিক্যালি দক্ষ কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আইটি ল্যাব তৈরি করে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছিল। জুয়ার টাকা লেনদেনের জন্য তাদের সঙ্গে যুক্ত হন গ্রেপ্তারকৃত সাদিকুল ও জাকির হোসেনের মতো এমএফএস এজেন্ট। গ্রেপ্তারকৃত নাজমুল, তৌহিদদের মতো এমএফএস ডিস্ট্রিবিউশন হাউসের কিছু অসাধু কর্মচারীর সহযোগিতায় এই চক্র এজেন্ট সিম সংগ্রহ করে অনলাইন জুয়ার কাজসমূহ নির্বিঘেœ করতে পারে।

আটককৃত চক্রটি ঢাকার বিভিন্ন এলাকা এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসমূহে এই জুয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, শরীয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান যিনি রাশিয়ার মস্কোতে অবস্থান করছেন তিনি মূলত এই সাইটসমূহের বাংলাদেশের দায়িত্বে রয়েছেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছেন যশোরের আশিকুর রহমান।

এই দুইজন এবং গ্রেপ্তারকৃত সৈকত ও রেজাউল এই চারজনের সমন্বয়ে বাংলাদেশে এ তিনটি ওয়েবসাইটের নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তাদের মাধ্যমে জুয়ার এজেন্টরা ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত এমএফএস (এজেন্ট সিম) ব্যবহার করে সারা বাংলাদেশ থেকে জুয়াড়িদের টাকা সংগ্রহ করে প্রতি মাসে এই চক্রটি এমএফএস এবং বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লেনদেন করে। কমিশন বাবদ তারা টাকার একটা ক্ষুদ্র অংশ পেয়ে জুয়াড়িদের কাছ থেকে সংগৃহীত পুরো টাকা অ্যাপস পরিচালনাকারীদের কাছে হুন্ডি কিংবা ক্রিপ্টো কারেন্সিতে কনভার্ট করে রাশিয়াতে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

সাইবার টিমের পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ টেলিফোনে সংবাদকে জানান, শরিয়তপুরের বাসিন্দা মতিউর রহমান এ অনলাইন জুয়া চক্রের মূল দলনেতা। গ্রেপ্তারকৃতরা তার অনেকগুলো গ্রুপের একটি গ্রুপ। গ্রেপ্তারকৃত গ্রুপের কাছ থেকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকা পেতো মতিউর। তার এ গ্রুপের রেজাউল ও সৈকত অ্যাপস পরিচালনা করে মাসে ৭০ হাজার টাকা পেতেন। এজেন্টরা টাকা লেনদেন করে একটি কমিশন পেতেন। যে মোবাইল সিমগুলো উদ্ধার হয়েছে প্রতিটি সিমের বিপরীতে ২০ লাখ টাকা করে লেনদেনের তথ্য মিলেছে।

রেজাউল মাসুদ জানান, আমরা ধারণা করছি মতিউরের আরও একাধিক গ্রুপ রয়েছে। যে অ্যাপসগুলো দ্বারা জুয়া চলতো এসব অ্যাপসে অনেক নামীদামি মডেল, অভিনেতা অভিনেত্রীদের বিজ্ঞাপন দিতেও দেখা গেছে। এ রকম আরও জুয়ার সাইট আছে কি না সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।

back to top