চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় চুনতি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাতগড় লম্বা শিয়ার পাহাড়ের মুখ এলাকায় সংরক্ষিত বন বিভাগের জায়গায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করে বালু জব্দ করে। তবে তা পুনরায় নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে। বালু উত্তোলনকারীরা শ্যালো বসিয়ে বালু তুলে নিলাম দেওয়া বালুর উপর পুনরায় বালু জমা করছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন বালু নিলাম নেওয়া ব্যক্তি ও উত্তোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের একটা যোগসাজস রয়েছে। কারণ বালু উত্তোলনকারীরাই তাদের উত্তোলনকৃত বালুগুলো বারবার নিলাম নিয়ে থাকে। প্রশাসনও তাদের সুযোগ দেওযার জন্য মাস দেড়েক পরে একবার অভিযান চালিয়ে আসে।
স্থানীয়রা আরো বলেন, নিয়ম মোতাবেক প্রতি ঘনফুট বালুর মুল্য ২০ টাকা হয়। অথচ প্রশাসন নিলাম দিয়ে ১২-১৩ টাকা। কোন সময় আবার ৫-৬ টাকাও দিয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বনাঞ্চল।এই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সম্পদ,যা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।উক্ত বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল। তবে অন্যায়ভাবে পাহাড় কাটার ফলে তাদের আবাসস্থল নষ্টের সঙ্গে দেখা দিয়েছে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট। যার ফলে মাঝেমধ্যে বন্য হাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে এসে জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট ও পদুয়া রেঞ্জর ডলু বনবিটের আওতাধীন ঘোড়ামারা, করিম্মাকাটা, বদারবর ঘোনা, সাইটতালা ও লম্বাশিয়া এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ের ছড়ায় আনুমানিক ২০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক পাহাড়ের মধ্যে প্রায় ৩০ টির মত পাহাড় ইতিমধ্যে বালু ব্যবসায়িরা সাবাড় করে দিয়েছে। হাতি চলাচলের জন্য নির্ধারিত এসব পাহাড় বিলীন হয়ে যাওয়াই নিয়মিত চলার পথ হারিয়ে হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। প্রসঙ্গত গত বছরের চলতি মাসের ২৬ তারিখে বালুখেকোদের বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এখানে একটি হাতি শাবক গর্তে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরিচয় গোপন করার স্বার্থে স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বালু উত্তোলন করার ফলে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকায় হাতির দল নিয়মিত বিচরণ করে। গত বছর চলতি মাসে একটি হাতি বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তে পড়ে মারাও গেছে। আর মাত্রাতিরিক্ত বালু পরিবহনের গাড়ি চলাচলের ফলে সড়কের বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। বর্ষার মৌসুমে আমাদের চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।এছাড়া ধুলোবালি সারা শরীরে এমনি নাকের ভিতর ঢুকে যায়, যা পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট হয়। এই পাহাড় নিধনের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ঝুঁকির মধ্যে, যা পরিবেশ প্রকৃতির জন্য এক মহাবিপদ সংকেত।
এভাবে দিন কিংবা বছরের পর বছর পাহাড় ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো নীরব। উক্ত ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা পরিবেশবাদী কর্মী ও শিক্ষক সানজিদা রহমান বলেন, বালু উত্তোলন এখানকার একটি নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত হয়ে গেছে। এখানকার মানুষ এইটা ধরে নিয়েছে বা এটা শিক্ষার অভাব বা সচেতনতার অভাব হতে পারে। এই বালু উত্তোলন একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে, আমি প্রায় দেড় বছর যাবত পরিবেশ নিয়ে কাজ করতেছি, এখানে দেখা যাচ্ছে অবৈধ বালু যখন প্রশাসন এসে জব্দ করে নিলামে, বিক্রি করে দেয়, তখন ওই সিন্ডিকেটরা কিনে নেয়। কিন্তু যে পরিমাণ বালু জব্দ করে সে পরিমাণ বালু থেকেই থাকে।
প্রতিদিন দেড়শো থেকে দুইশত ট্রাক করে বালি নেওয়ার পরও কমেনা। এবং স্যালো মেশিন দিয়ে পাহাড় কেটে বালু উঠাতে থাকে,কাজেই, নিলাম কোন সমাধান না , যে পরিমাণ বালু সিন্ডিকেটরা বের করছে প্রশাসনের সাহায্যে সে পরিমান বালু ওই স্থানে ফেরত এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রচুর অর্থ দন্ড কিংবা অন্যান্য আইনি দন্ডে দন্ডিত করতে হবে, এবং দুর্গম পাহাড় কেটে যে রাস্তা করছে তা বন্ধ করে দিয়ে সিলগালা করে দিতে হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার নাজমুন লায়েল বলেন,অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন প্রশাসনের কোন কমর্কতা জড়িত নেই এবং জড়িত থেকে থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরো বলেন, জব্দকৃত বালি নিলামে দেওয়ার পর নতুন করে বালু উঠানোর কোন সুযোগ নেই। এবং লম্বাশিয়াসহ অন্যান্য পাহাড় কাটা বন্ধের ব্যাপারে আমরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে আলোচনা করে একটা স্থায়ী পদক্ষেপ নেব।
চুনতি রেঞ্জাধীন সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি এ ব্যাপারে যাচাই করে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাহাড় ও পাহাড়ের ভেতর চলমান ছরা থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালি তোলা হলে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা থাকে। এটি বনভূমির জন্য ক্ষতিকর।
তাই কাউকে পাহাড় ও বনের ভেতর চলমান ছড়া থেকে বালি উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয় না। যারা এসব করছেন অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শনিবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৩
চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় চুনতি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ সাতগড় লম্বা শিয়ার পাহাড়ের মুখ এলাকায় সংরক্ষিত বন বিভাগের জায়গায় শ্যালো মেশিনের মাধ্যমে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযান পরিচালনা করে বালু জব্দ করে। তবে তা পুনরায় নিলামের মাধ্যমে বিক্রি করে। বালু উত্তোলনকারীরা শ্যালো বসিয়ে বালু তুলে নিলাম দেওয়া বালুর উপর পুনরায় বালু জমা করছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন বালু নিলাম নেওয়া ব্যক্তি ও উত্তোলনকারীদের সঙ্গে প্রশাসনের একটা যোগসাজস রয়েছে। কারণ বালু উত্তোলনকারীরাই তাদের উত্তোলনকৃত বালুগুলো বারবার নিলাম নিয়ে থাকে। প্রশাসনও তাদের সুযোগ দেওযার জন্য মাস দেড়েক পরে একবার অভিযান চালিয়ে আসে।
স্থানীয়রা আরো বলেন, নিয়ম মোতাবেক প্রতি ঘনফুট বালুর মুল্য ২০ টাকা হয়। অথচ প্রশাসন নিলাম দিয়ে ১২-১৩ টাকা। কোন সময় আবার ৫-৬ টাকাও দিয়েছে। প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর আমাদের বনাঞ্চল।এই বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার সম্পদ,যা রক্ষা করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।উক্ত বনাঞ্চলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল। তবে অন্যায়ভাবে পাহাড় কাটার ফলে তাদের আবাসস্থল নষ্টের সঙ্গে দেখা দিয়েছে বন্যপ্রাণীর খাদ্য সংকট। যার ফলে মাঝেমধ্যে বন্য হাতি খাদ্যের সন্ধানে লোকালয়ে চলে এসে জনসাধারণের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে থাকে। সরেজমিনে দেখা যায়, চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের চুনতি রেঞ্জের সাতগড় বনবিট ও পদুয়া রেঞ্জর ডলু বনবিটের আওতাধীন ঘোড়ামারা, করিম্মাকাটা, বদারবর ঘোনা, সাইটতালা ও লম্বাশিয়া এলাকায় সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের পাহাড়ের ছড়ায় আনুমানিক ২০টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এখানে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় শতাধিক পাহাড়ের মধ্যে প্রায় ৩০ টির মত পাহাড় ইতিমধ্যে বালু ব্যবসায়িরা সাবাড় করে দিয়েছে। হাতি চলাচলের জন্য নির্ধারিত এসব পাহাড় বিলীন হয়ে যাওয়াই নিয়মিত চলার পথ হারিয়ে হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। প্রসঙ্গত গত বছরের চলতি মাসের ২৬ তারিখে বালুখেকোদের বেপরোয়াভাবে বালু উত্তোলনের ফলে এখানে একটি হাতি শাবক গর্তে পড়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটে।
পরিচয় গোপন করার স্বার্থে স্থানীয়রা জানান, বালু উত্তোলনকারীরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলার সাহস পায় না। বালু উত্তোলন করার ফলে বিভিন্ন স্থানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ওই এলাকায় হাতির দল নিয়মিত বিচরণ করে। গত বছর চলতি মাসে একটি হাতি বালু উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট গর্তে পড়ে মারাও গেছে। আর মাত্রাতিরিক্ত বালু পরিবহনের গাড়ি চলাচলের ফলে সড়কের বেহাল দশা হয়ে পড়েছে। বর্ষার মৌসুমে আমাদের চলাচল করতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়।এছাড়া ধুলোবালি সারা শরীরে এমনি নাকের ভিতর ঢুকে যায়, যা পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট হয়। এই পাহাড় নিধনের ফলে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ঝুঁকির মধ্যে, যা পরিবেশ প্রকৃতির জন্য এক মহাবিপদ সংকেত।
এভাবে দিন কিংবা বছরের পর বছর পাহাড় ধ্বংসের ফলে প্রকৃতি তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো নীরব। উক্ত ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা পরিবেশবাদী কর্মী ও শিক্ষক সানজিদা রহমান বলেন, বালু উত্তোলন এখানকার একটি নিয়মিত ব্যবসায় পরিণত হয়ে গেছে। এখানকার মানুষ এইটা ধরে নিয়েছে বা এটা শিক্ষার অভাব বা সচেতনতার অভাব হতে পারে। এই বালু উত্তোলন একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে, আমি প্রায় দেড় বছর যাবত পরিবেশ নিয়ে কাজ করতেছি, এখানে দেখা যাচ্ছে অবৈধ বালু যখন প্রশাসন এসে জব্দ করে নিলামে, বিক্রি করে দেয়, তখন ওই সিন্ডিকেটরা কিনে নেয়। কিন্তু যে পরিমাণ বালু জব্দ করে সে পরিমাণ বালু থেকেই থাকে।
প্রতিদিন দেড়শো থেকে দুইশত ট্রাক করে বালি নেওয়ার পরও কমেনা। এবং স্যালো মেশিন দিয়ে পাহাড় কেটে বালু উঠাতে থাকে,কাজেই, নিলাম কোন সমাধান না , যে পরিমাণ বালু সিন্ডিকেটরা বের করছে প্রশাসনের সাহায্যে সে পরিমান বালু ওই স্থানে ফেরত এর ব্যবস্থা করতে হবে এবং প্রচুর অর্থ দন্ড কিংবা অন্যান্য আইনি দন্ডে দন্ডিত করতে হবে, এবং দুর্গম পাহাড় কেটে যে রাস্তা করছে তা বন্ধ করে দিয়ে সিলগালা করে দিতে হবে।
লোহাগাড়া উপজেলা ভূমি সহকারী কমিশনার নাজমুন লায়েল বলেন,অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন প্রশাসনের কোন কমর্কতা জড়িত নেই এবং জড়িত থেকে থাকলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরো বলেন, জব্দকৃত বালি নিলামে দেওয়ার পর নতুন করে বালু উঠানোর কোন সুযোগ নেই। এবং লম্বাশিয়াসহ অন্যান্য পাহাড় কাটা বন্ধের ব্যাপারে আমরা বন বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে বসে আলোচনা করে একটা স্থায়ী পদক্ষেপ নেব।
চুনতি রেঞ্জাধীন সাতগড় বনবিট কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি সবে মাত্র যোগদান করেছি এ ব্যাপারে যাচাই করে অবশ্যই অভিযান পরিচালনা করবো। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, পাহাড় ও পাহাড়ের ভেতর চলমান ছরা থেকে অনিয়ন্ত্রিত বালি তোলা হলে পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা থাকে। এটি বনভূমির জন্য ক্ষতিকর।
তাই কাউকে পাহাড় ও বনের ভেতর চলমান ছড়া থেকে বালি উত্তোলনের অনুমতি দেয়া হয় না। যারা এসব করছেন অচিরেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।