কিশোর বয়সে অপরাধ জগতে প্রবেশ, ৫০ বছর বয়সে গ্রেফতার
আল-আমিন শিকদার ওরফে কালু। বয়স ৫০ বছর। জন্মস্থান বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ। জন্মের পর থেকেই ছিলেন ফুটপাতে। ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সে ছোটখাটো অপরাধের মধ্য দিয়ে হাতেখড়ি।
প্রথমে ছাগল চুরি, এরপর ধীরে ধীরে নানা অপরাধে জড়ায় সে। এক পর্যায়ে জড়িয়ে যান আন্তঃজেলা অপরাধী চক্রের সঙ্গে । লোভ দেখিয়ে প্রথম চুরি করানো হয় তাকে দিয়ে। এরপর ডাকাতি ও দস্যুতার মত অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া। এরপর বরিশালে গিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করার পর সাহস আরও বেড়ে যায় তার।
একসময় খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা ও যশোরসহ আশপাশে গড়ে তোলে কালু বাহিনী। চলতো দলবদ্ধভাবে ডাকাতি। ডাকাতির পর গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে থাকতো সে।
সর্বশেষ একটি দস্যুতার মামলার অনুসন্ধান করতে গিয়ে কালু বিষয়টি নজরে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার অবস্থান নিশ্চিত করে তারা। গত শনিবার (২৫ নভেম্বর) রাতে খুলনার সোনাতলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে তার দেয়া তথ্যে বেরিয়ে আসছে অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি।
তার অপরাধের ফিরিস্তি শুনে হতবাক হয়ে যায় তদন্তকারি কর্মকর্তারা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেমন পিবিআইয়ের ধানমন্ডি ও যশোর অফিস জানায়, কালুর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার পলাতক সহযোগীদেরকে ধরতে অভিযান চলছে এখন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন সংবাদ প্রতিবেদককে জানান, ২০১৯ সালে যশোর বেনাপোল পোর্ট থানাধীন মাঠপাড়া গ্রামে একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাতদল বাড়ির বাউন্ডারি দেয়াল টপকে বাড়ির ছাদে উঠে। এরপর সিড়ির দরজা ভেঙ্গে নিচে নামে। বাসার লোকজন জেগে উঠলে এবং দরজা আটকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে গৃহবধূকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্বক আহত করে। ডাকাতরা বাড়ি থেকে স্বর্ণলংকার ও নগদ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
এরপর পাশ্বের আরেকটি বাসায় ঢুকে নগদ ৫ হাজার টাকাসহ ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় রোকসানা বেগম বাদি হয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা (নম্বর-৬৮) তারিখ-২৬-৭-২০১৯) দায়ের করেন। পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করেও কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি।
অবশেষে মামলাটি সম্পর্কে পিবিআইয়ের তদন্ত টিম খোজ খবর নিতে শুরু করেন। তারা পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজি বনজ কুমার মজুমদারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাত কালুকে ধরতে অনুসন্ধানে নামেন।
২০২০ সালে মার্চ মাসে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন শামিম শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য অনুয্য়াী পলাতক অন্যান্য আসামিদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনায় জড়িত প্রধান অভিযুক্ত কালু গ্রেফতার এড়াতে নানা ভাবে পালিয়ে থাকত। কখনো বাস টার্মিনালে,কখনো বস্তিতে আবার বাসায় লোক পাহারায় রাত কাটাত। শেষ পর্যন্ত গত ২৫ নভেম্বর-২০২৩ শনিবার রাতে অভিযুক্ত কালুকে (৫০) খুলনার সোনাডাঙ্গা ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন কাঁচাবাজার মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত কালুর অপরাধের রেকর্ড যাচাই ও তদন্ত করে দেখা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ,অস্ত্র,ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা রয়েছে। সে আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য। প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার জড়িত থাকার কথা পিবিআইয়ের কাছে স্বীকার করেছে।
গতকাল পিবিআইয়ের এসপি সংবাদকে জানান,অভিযুক্ত কালু খুলনা ,বাগেরহাট,সাতক্ষীরা ও যশোরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করত। তার বিরুদ্ধে বরিশালে একটি ব্যাংকে ডাকাতি ও হত্যা মামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনার বটিয়া ঘাটায় ১টি অস্ত্র ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে। সে তার ছেলেকেও ডাকাতসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছে।
পিবিআই জানতে পেরেছে মামলা চালানোর জন্য নিজস্ব লোকও রয়েছে কালুর। পিবিআই জানায়, কালুর আারও মামলা ও সম্পদ সম্পর্কে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে ডাকাতিতে আরো যারা জড়িত, বিশেষ করে তার সঙ্গে যুক্ত খুলনা ,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার সংঘবদ্ধ পলাতক ডাকাতদের ধরতে চেষ্টা চলছে। লুটের মালামাল কোথায় আছে বা বিক্রি করছে তাও বের করার জন্য অনুসন্ধানী টিমের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত পিবিআইয়ের টিম তার সম্পর্কে যতটুকু তথ্য পেয়েছে, কালু ডাকাতের বাড়ি বাগেরহাটে হলেও সে খুলনায় বেশি থাকে।
কিশোর বয়সে অপরাধ জগতে প্রবেশ, ৫০ বছর বয়সে গ্রেফতার
মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
আল-আমিন শিকদার ওরফে কালু। বয়স ৫০ বছর। জন্মস্থান বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ। জন্মের পর থেকেই ছিলেন ফুটপাতে। ১৩ থেকে ১৪ বছর বয়সে ছোটখাটো অপরাধের মধ্য দিয়ে হাতেখড়ি।
প্রথমে ছাগল চুরি, এরপর ধীরে ধীরে নানা অপরাধে জড়ায় সে। এক পর্যায়ে জড়িয়ে যান আন্তঃজেলা অপরাধী চক্রের সঙ্গে । লোভ দেখিয়ে প্রথম চুরি করানো হয় তাকে দিয়ে। এরপর ডাকাতি ও দস্যুতার মত অপরাধে জড়িয়ে যাওয়া। এরপর বরিশালে গিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করার পর সাহস আরও বেড়ে যায় তার।
একসময় খুলনা,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা ও যশোরসহ আশপাশে গড়ে তোলে কালু বাহিনী। চলতো দলবদ্ধভাবে ডাকাতি। ডাকাতির পর গ্রেফতার এড়াতে পালিয়ে থাকতো সে।
সর্বশেষ একটি দস্যুতার মামলার অনুসন্ধান করতে গিয়ে কালু বিষয়টি নজরে আসে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ের। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে তার অবস্থান নিশ্চিত করে তারা। গত শনিবার (২৫ নভেম্বর) রাতে খুলনার সোনাতলা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাৎক্ষণিক ভাবে তার দেয়া তথ্যে বেরিয়ে আসছে অপরাধ জগতের চাঞ্চল্যকর স্বীকারোক্তি।
তার অপরাধের ফিরিস্তি শুনে হতবাক হয়ে যায় তদন্তকারি কর্মকর্তারা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেমন পিবিআইয়ের ধানমন্ডি ও যশোর অফিস জানায়, কালুর কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার পলাতক সহযোগীদেরকে ধরতে অভিযান চলছে এখন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন সংবাদ প্রতিবেদককে জানান, ২০১৯ সালে যশোর বেনাপোল পোর্ট থানাধীন মাঠপাড়া গ্রামে একটি বাড়িতে ডাকাতি হয়। ডাকাতদল বাড়ির বাউন্ডারি দেয়াল টপকে বাড়ির ছাদে উঠে। এরপর সিড়ির দরজা ভেঙ্গে নিচে নামে। বাসার লোকজন জেগে উঠলে এবং দরজা আটকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে গৃহবধূকে দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্বক আহত করে। ডাকাতরা বাড়ি থেকে স্বর্ণলংকার ও নগদ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়।
এরপর পাশ্বের আরেকটি বাসায় ঢুকে নগদ ৫ হাজার টাকাসহ ৬ লাখ ১৫ হাজার টাকার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় রোকসানা বেগম বাদি হয়ে বেনাপোল পোর্ট থানায় একটি মামলা (নম্বর-৬৮) তারিখ-২৬-৭-২০১৯) দায়ের করেন। পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করেও কোন ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি।
অবশেষে মামলাটি সম্পর্কে পিবিআইয়ের তদন্ত টিম খোজ খবর নিতে শুরু করেন। তারা পিবিআই প্রধান অ্যাডিশনাল আইজি বনজ কুমার মজুমদারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনা ও আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ডাকাত কালুকে ধরতে অনুসন্ধানে নামেন।
২০২০ সালে মার্চ মাসে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন শামিম শিকদারকে গ্রেফতার করা হয়। তার দেয়া তথ্য অনুয্য়াী পলাতক অন্যান্য আসামিদেরকে গ্রেফতার করা হয়।
ঘটনায় জড়িত প্রধান অভিযুক্ত কালু গ্রেফতার এড়াতে নানা ভাবে পালিয়ে থাকত। কখনো বাস টার্মিনালে,কখনো বস্তিতে আবার বাসায় লোক পাহারায় রাত কাটাত। শেষ পর্যন্ত গত ২৫ নভেম্বর-২০২৩ শনিবার রাতে অভিযুক্ত কালুকে (৫০) খুলনার সোনাডাঙ্গা ট্রাকস্ট্যান্ড সংলগ্ন কাঁচাবাজার মোড় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত কালুর অপরাধের রেকর্ড যাচাই ও তদন্ত করে দেখা যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক ,অস্ত্র,ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা রয়েছে। সে আন্তঃজেলা ডাকাতদলের সদস্য। প্রথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার জড়িত থাকার কথা পিবিআইয়ের কাছে স্বীকার করেছে।
গতকাল পিবিআইয়ের এসপি সংবাদকে জানান,অভিযুক্ত কালু খুলনা ,বাগেরহাট,সাতক্ষীরা ও যশোরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করত। তার বিরুদ্ধে বরিশালে একটি ব্যাংকে ডাকাতি ও হত্যা মামলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খুলনার বটিয়া ঘাটায় ১টি অস্ত্র ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে। সে তার ছেলেকেও ডাকাতসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়েছে।
পিবিআই জানতে পেরেছে মামলা চালানোর জন্য নিজস্ব লোকও রয়েছে কালুর। পিবিআই জানায়, কালুর আারও মামলা ও সম্পদ সম্পর্কে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। তার সঙ্গে ডাকাতিতে আরো যারা জড়িত, বিশেষ করে তার সঙ্গে যুক্ত খুলনা ,বাগেরহাট ও সাতক্ষীরার সংঘবদ্ধ পলাতক ডাকাতদের ধরতে চেষ্টা চলছে। লুটের মালামাল কোথায় আছে বা বিক্রি করছে তাও বের করার জন্য অনুসন্ধানী টিমের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, গতকাল দুপুর পর্যন্ত পিবিআইয়ের টিম তার সম্পর্কে যতটুকু তথ্য পেয়েছে, কালু ডাকাতের বাড়ি বাগেরহাটে হলেও সে খুলনায় বেশি থাকে।