কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসও’র মধ্যে গুলাগুলির ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুইজন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পে ১৫ দিনে সাবেক হেড মাঝিসহ ৯ জন খুন হয়েছে৷
নিহতরা হলেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-ক্যাম্প-১ ইস্ট ব্লক-জি/১২ এর মনি উল্লাহর ছেলে ইমাম হোসেন (২২) ১৫ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পের আনোয়ার সাদেক (১৭), আবুল কাসেম (৩৪) ও জোবাইর (১৮)।
গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এর এফ/১৬ ব্লকে এবং বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টার সময় ১৫ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-৪ এর এফ/১৬ ব্লকে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ইমাম হোসেন নামের রোহিঙ্গা যুবককে গুলি করে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে ঘটনাস্থলে ইমাম হোসেনের মৃত্যু ঘটে।
তিনি আরও বলেন, রাতে উখিয়ার ১৭ নম্বর মধুরছড়া ও জামতলি ১৫ নম্বর ক্যাম্পে আরসা ও আরএসও মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও ৩ জন নিহত হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তারপরও কারা, কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর থেকে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১৫ দিনে ক্যাম্পের সাবেক হেড মাঝিসহ ৯ জন খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মিয়ানমার কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আসরা-আরএসওর সদস্যরা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিদিনই নির্মম এ হত্যাকা- গুলো ঘটাচ্ছে বলে অভিমত সাধারণ রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্ট আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের।
সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধু রাতে নয়, এখন দিনেও চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। উখিয়া-টেকনাফে ৩২টি ক্যাম্পেই পরস্পর বিরোধী একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই ক্যাম্পগুলোর সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খুনোখুনি, অপহরণ, গুম, লুটপাট সেখানে এখন স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের টেকনাফ যেন এখন মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) ও আরএসওর (আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
এমন পরিস্থিতিতে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের তালিকা নিয়ে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় দেখা গেছে, কক্সবাজার ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা অবস্থান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আরসার সদস্যরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্দোলন করছে। এক্ষেত্রে আরএসওর বেশির ভাগ নেতাই প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। এই নিয়ে আরসা ও আরএসও’র মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। এ কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে খুনোখুনি ও হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না দিলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র কারবার মানবপাচারসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরসার সদস্যরা অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবারে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তারা ক্যাম্পের সদস্যের তালিকায় নাম লেখালেও বেশির ভাগ সময় শূন্য রেখায় অবস্থান করে। আবার কিছু সদস্য সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।
গত ৬ বছরে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রায় ১৭০ জনের মতো খুন হয়েছে। এসব ঘটনার জের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। গত ছয় বছরে ৩ হাজারের মতো মামলায় আসামি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার জন। এর মধ্যে হত্যা, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা অন্যতম।
সম্প্রতি শূন্য রেখার কাছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নিহত হন আরসার মাদক চোরাকারবারিদের হাতে। ঐ ঘটনার পর আরসার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের একটি তালিকা করেছে। এই তালিকায় অন্তত ৭০০ জনের নাম রয়েছে। যদিও আগে থেকেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা শিবিরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা ও আরএসও’র মধ্যে গুলাগুলির ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আরও দুইজন রোহিঙ্গা গুরুতর আহত হয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পে ১৫ দিনে সাবেক হেড মাঝিসহ ৯ জন খুন হয়েছে৷
নিহতরা হলেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-ক্যাম্প-১ ইস্ট ব্লক-জি/১২ এর মনি উল্লাহর ছেলে ইমাম হোসেন (২২) ১৫ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পের আনোয়ার সাদেক (১৭), আবুল কাসেম (৩৪) ও জোবাইর (১৮)।
গত মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৪ এর এফ/১৬ ব্লকে এবং বুধবার (৬ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ২টার সময় ১৫ ও ১৭ নম্বর ক্যাম্পে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।
উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, মঙ্গলবার বেলা আড়াইটা থেকে তিনটার দিকে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প-৪ এর এফ/১৬ ব্লকে ১০ থেকে ১২ জনের একটি সন্ত্রাসী দল ইমাম হোসেন নামের রোহিঙ্গা যুবককে গুলি করে পালিয়ে যায়। সন্ত্রাসীদের ছোঁড়া গুলিতে ঘটনাস্থলে ইমাম হোসেনের মৃত্যু ঘটে।
তিনি আরও বলেন, রাতে উখিয়ার ১৭ নম্বর মধুরছড়া ও জামতলি ১৫ নম্বর ক্যাম্পে আরসা ও আরএসও মুখোমুখি অবস্থান নেয়। একপর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে আরও ৩ জন নিহত হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) মোহাম্মদ রাসেল জানান, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। তারপরও কারা, কী কারণে এ ঘটনা ঘটিয়েছে সে ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়না তদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গত ২০ নভেম্বর থেকে মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) পর্যন্ত ১৫ দিনে ক্যাম্পের সাবেক হেড মাঝিসহ ৯ জন খুন হয়েছেন। এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পে আতঙ্ক বিরাজ করছে। মিয়ানমার কেন্দ্রিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আসরা-আরএসওর সদস্যরা আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিদিনই নির্মম এ হত্যাকা- গুলো ঘটাচ্ছে বলে অভিমত সাধারণ রোহিঙ্গা ও সংশ্লিষ্ট আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের।
সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে শুধু রাতে নয়, এখন দিনেও চলছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। উখিয়া-টেকনাফে ৩২টি ক্যাম্পেই পরস্পর বিরোধী একাধিক রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপ এখন মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই ক্যাম্পগুলোর সর্বত্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খুনোখুনি, অপহরণ, গুম, লুটপাট সেখানে এখন স্বাভাবিক ঘটনায় রূপ নিয়েছে। পর্যটন নগরী কক্সবাজারের টেকনাফ যেন এখন মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরসা (আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি) ও আরএসওর (আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশন) রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এই দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও।
এমন পরিস্থিতিতে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যদের তালিকা নিয়ে অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায় দেখা গেছে, কক্সবাজার ও টেকনাফের ৩২টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পেই দুই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সশস্ত্র সদস্যরা অবস্থান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আরসার সদস্যরা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য আন্দোলন করছে। এক্ষেত্রে আরএসওর বেশির ভাগ নেতাই প্রত্যাবাসনের বিরোধিতা করছে। এই নিয়ে আরসা ও আরএসও’র মধ্যে দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। এ কারণে দুই গ্রুপের মধ্যে খুনোখুনি ও হামলার ঘটনা বেড়ে চলেছে।
এ বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতনরা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না দিলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অস্ত্র কারবার মানবপাচারসহ গুরুতর অপরাধের সঙ্গে এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। আরসার সদস্যরা অস্ত্র ও মাদক চোরাকারবারে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তারা ক্যাম্পের সদস্যের তালিকায় নাম লেখালেও বেশির ভাগ সময় শূন্য রেখায় অবস্থান করে। আবার কিছু সদস্য সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে।
গত ৬ বছরে বিভিন্ন ক্যাম্পে নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জেরে প্রায় ১৭০ জনের মতো খুন হয়েছে। এসব ঘটনার জের ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করেছে। গত ছয় বছরে ৩ হাজারের মতো মামলায় আসামি হয়েছে প্রায় ১০ হাজার জন। এর মধ্যে হত্যা, অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা অন্যতম।
সম্প্রতি শূন্য রেখার কাছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নিহত হন আরসার মাদক চোরাকারবারিদের হাতে। ঐ ঘটনার পর আরসার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের একটি তালিকা করেছে। এই তালিকায় অন্তত ৭০০ জনের নাম রয়েছে। যদিও আগে থেকেই সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।