বিমানবন্দরে কাস্টাম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েব
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমস হাউসের গোডাউনের ভেতরে লকার ভেঙে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা একদিনে ঘটেনি। দীর্ঘদিন ধরে গোডাউনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে স্বর্ণের বার ও বিভিন্ন স্বর্ণলঙ্কার সরিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে গোডাউন থেকে স্বর্ণলঙ্কার চুরি যাওয়ার নাটক সাজিয়েছেন দুজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। পুলিশের তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস হাউসের বিমানবন্দর প্রিভেন্টিভ টিমের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে গত রোববার রাতে বিমানবন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। লকার ভেঙে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহ ঢাকা কাস্টমস হাউসের বিমানবন্দর প্রিভেন্টিভ টিমের ৪ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাসহ ৮ জনকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোর্শেদ আলম টেলিফোনে সংবাদকে জানান, ঢাকা কাস্টমস হাউসের গোডাউন থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহে কাস্টমসের রাজস্ব বিভাগের ৮ কর্মকর্তা ও সিপাহীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, ঘটনার দিন গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (গোডাউনে কর্মরত এ. বি. সি ও ডি শিফটের) মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম সাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ এবং সিপাহী রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মো. আফজাল হোসেন ও মো. নিয়ামত হাওলাদারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ইতোমধ্যে ৪ রাজস্ব কর্মকর্তার যোগসূত্রে গোডাউনের স্বর্ণ গায়েব হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছে।
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আটক হওয়া সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম শাহেদ ও শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে লকার থেকে বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়া স্বর্ণের বার ও স্বর্ণলঙ্কার সরিয়েছেন। এ দুজনের পরিকল্পনায় স্বর্ণবার ও স্বণলঙ্কার সরানো হয়। তারা দুজনসহ পুলিশ হেফাজতে থাকা ৪ রাজস্ব কর্মকর্তা গোডাউনের দায়িত্বে আছেন।
এর মধ্যে শাহেদ ও শহিদুল মিলে বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে স্বর্ণ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কাস্টমস কর্মকর্তাদের নজরে আসে বলে তাদের সন্দেহ হয়। শহিদুল ও সাহেদ বুঝতে পারে তারা ধরা পড়ে গেছেন। এরপর তারা লকার ভেঙে স্বর্ণলঙ্কার চুরির একটি নাটক সাজিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে গায়েব করা স্বর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন গোডউনের এসির বাতাস বের হওয়ার জায়গায় টিনের একটি অংশ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলানোর চেষ্টা করে। কিন্ত ফরেনসিক করে সেখানে কারো হাতের বা আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ চুরির নাটক সাজাতে সেখানে টিন কেটে রাখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারে কেউ ওই অংশ দিয়ে গোডাউনের ভেতরে এসে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কাস্টমসের নিয়ম অনুযায়ী জব্দ বা আটক করা স্বর্ণ অতি মূল্যবান হওয়ার কারণে তা দীর্ঘদিন ধরে গোডাউনে রাখার কোন বিধান নেই। এখানে ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা স্বর্ণলঙ্কার কীভাবে আসলো। এটির সঙ্গে কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তাদেরও যোগসূত্র থাকতে পারে। গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের বাইরে বড় পদের কর্মকর্তাদেরও যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।
পুলিশ বলছে, মামলায় বলা হয়েছে, কাস্টমস গোডাউনের গুদাম কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা ২ অক্টোবর গত শনিবার সকাল ৯টায় বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সংলগ্ন কাস্টমস ট্রানজিট গোডাউনের গুদামে প্রবেশ করে দেখতে পান মূল্যবান পণ্য সংরক্ষণের জন্য একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা অবস্থায় আছে। ওই কর্মকর্তা আগের রাতে জব্দ করা মালামাল গুমামে জমা করে রাত সোয়া ১২টায় গুদামে তালা মেরে বেরিয়ে যান। ওই সময় মাসুদ রানার আরো ৩ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাসহ একসঙ্গে বেরিয়ে যান। গোডাউন কর্মকর্তা মাসুদ রানার কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনারা গোডাউন পরিদর্শন করে লকার ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় গোডাউনের পূর্ব পাশে এসির বাতাস বের হওয়ার জায়গায় টিনের একটি অংশে কাটা দেখতে পান। পরিদর্শনের এসে গোডাউনে কর্মরত এবিসি ও ডি শিফটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম সাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ এবং সিপাহী রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মো. আফজাল হোসেন ও মো. নিয়ামত হাওলাদারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তারা লকার ভেঙে স্বর্ণ চুরির বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। পরে রেজিস্টার চেক করে এবং ভাঙা লকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের বিভিন্ন সময়ে আটককৃত ৩৮৯টি ডিএম এর সর্বমোট ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণবার ও স্বর্ণলঙ্কার লকার থেকে খোয়া যাওয়ার প্রমাণ পান। চুরি হওয়া স্বর্ণলঙ্কারের মূল্য ৪৫ কোটি টাকা বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, এজাহারে বলা হয়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার পর থেকে শুরু করে সকাল ৮টার মধ্যে যেকোন সময় অজ্ঞাতরা এসব স্বর্ণবার ও স্বর্ণলঙ্কার স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে। এহাজারে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে সাময়িক আটককৃত/ফেরতযোগ্য বা অফেরতযোগ্য বা বাজেয়াপ্তকৃত অমূল্যবান পণ্য নিলামের মাধ্যমে নিস্পত্তির জন্য ঢাকা কাস্টমস হাউস থেকে ইনভেন্টি কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ৪টি টিম গঠন করা হয়েছে গত ৩০ আগস্ট। ১ নম্বর টিম ১ অক্টোবর ইনভেন্টি (গণনা বা হিসেব মিলানো) কার্যক্রম করে কাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। ২ নম্বর টিম বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ইনভেন্টি কার্যক্রম চালায়। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চুরি হয়েছে। এ কার্যক্রম শেষ হলে প্রকৃতপক্ষে বুঝা যাবে কী পরিমাণ স্বণলঙ্কার চুরি হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, এটি চুরি নয়, গোডাউনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা কাস্টম হাউজের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিলেমিশে স্বর্নলঙ্কার সরিয়েছেন। এর সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তা তদন্ত করা হচ্ছে। যে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছে পুলিশ।
পর্যবেক্ষণ করছে দুদক
কাস্টমস গোডানের লকার থেকে সোনা চুরি যাওয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। থানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দুদকে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। এ বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়ের করেছে। এখন থানা কর্তৃপক্ষ যদি দেখে এটা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ, তাহলে তারা দুদকে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিমানবন্দরে কাস্টাম হাউজের গুদাম থেকে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েব
সোমবার, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ঢাকা কাস্টমস হাউসের গোডাউনের ভেতরে লকার ভেঙে ৫৫ কেজি স্বর্ণ গায়েবের ঘটনা একদিনে ঘটেনি। দীর্ঘদিন ধরে গোডাউনের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে স্বর্ণের বার ও বিভিন্ন স্বর্ণলঙ্কার সরিয়েছেন। তবে এ ঘটনায় ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে গোডাউন থেকে স্বর্ণলঙ্কার চুরি যাওয়ার নাটক সাজিয়েছেন দুজন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা। পুলিশের তদন্তে এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
এদিকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় মামলা করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস হাউসের বিমানবন্দর প্রিভেন্টিভ টিমের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বাদী হয়ে গত রোববার রাতে বিমানবন্দর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। লকার ভেঙে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় জড়িত সন্দেহ ঢাকা কাস্টমস হাউসের বিমানবন্দর প্রিভেন্টিভ টিমের ৪ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাসহ ৮ জনকে আটক করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোর্শেদ আলম টেলিফোনে সংবাদকে জানান, ঢাকা কাস্টমস হাউসের গোডাউন থেকে স্বর্ণ চুরির ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে এমন সন্দেহে কাস্টমসের রাজস্ব বিভাগের ৮ কর্মকর্তা ও সিপাহীকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, ঘটনার দিন গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (গোডাউনে কর্মরত এ. বি. সি ও ডি শিফটের) মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম সাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ এবং সিপাহী রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মো. আফজাল হোসেন ও মো. নিয়ামত হাওলাদারকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। ইতোমধ্যে ৪ রাজস্ব কর্মকর্তার যোগসূত্রে গোডাউনের স্বর্ণ গায়েব হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। পুলিশ তাদের কাছ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য পেয়েছে।
তদন্তের সঙ্গে যুক্ত পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আটক হওয়া সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম শাহেদ ও শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে লকার থেকে বিভিন্ন সময়ে আটক হওয়া স্বর্ণের বার ও স্বর্ণলঙ্কার সরিয়েছেন। এ দুজনের পরিকল্পনায় স্বর্ণবার ও স্বণলঙ্কার সরানো হয়। তারা দুজনসহ পুলিশ হেফাজতে থাকা ৪ রাজস্ব কর্মকর্তা গোডাউনের দায়িত্বে আছেন।
এর মধ্যে শাহেদ ও শহিদুল মিলে বিভিন্ন সময়ে লকার থেকে স্বর্ণ সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি কাস্টমস কর্মকর্তাদের নজরে আসে বলে তাদের সন্দেহ হয়। শহিদুল ও সাহেদ বুঝতে পারে তারা ধরা পড়ে গেছেন। এরপর তারা লকার ভেঙে স্বর্ণলঙ্কার চুরির একটি নাটক সাজিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে গায়েব করা স্বর্ণ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার দিন গোডউনের এসির বাতাস বের হওয়ার জায়গায় টিনের একটি অংশ কাটা পাওয়া যায়। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি সেখান থেকে আলামত সংগ্রহ করে ফিঙ্গার প্রিন্ট মেলানোর চেষ্টা করে। কিন্ত ফরেনসিক করে সেখানে কারো হাতের বা আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। অর্থাৎ চুরির নাটক সাজাতে সেখানে টিন কেটে রাখা হয়েছে, যাতে সবাই বুঝতে পারে কেউ ওই অংশ দিয়ে গোডাউনের ভেতরে এসে চুরির ঘটনা ঘটিয়েছেন। কাস্টমসের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কাস্টমসের নিয়ম অনুযায়ী জব্দ বা আটক করা স্বর্ণ অতি মূল্যবান হওয়ার কারণে তা দীর্ঘদিন ধরে গোডাউনে রাখার কোন বিধান নেই। এখানে ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে জব্দ করা স্বর্ণলঙ্কার কীভাবে আসলো। এটির সঙ্গে কাস্টমসের অনেক কর্মকর্তাদেরও যোগসূত্র থাকতে পারে। গোডাউনের দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের বাইরে বড় পদের কর্মকর্তাদেরও যোগসূত্র আছে কি না তা খতিয়ে দেখা দরকার।
পুলিশ বলছে, মামলায় বলা হয়েছে, কাস্টমস গোডাউনের গুদাম কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা ২ অক্টোবর গত শনিবার সকাল ৯টায় বিমানবন্দরের লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সংলগ্ন কাস্টমস ট্রানজিট গোডাউনের গুদামে প্রবেশ করে দেখতে পান মূল্যবান পণ্য সংরক্ষণের জন্য একটি স্টিলের আলমারির লক ভাঙা অবস্থায় আছে। ওই কর্মকর্তা আগের রাতে জব্দ করা মালামাল গুমামে জমা করে রাত সোয়া ১২টায় গুদামে তালা মেরে বেরিয়ে যান। ওই সময় মাসুদ রানার আরো ৩ জন সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাসহ একসঙ্গে বেরিয়ে যান। গোডাউন কর্মকর্তা মাসুদ রানার কাছ থেকে এমন সংবাদ পেয়ে কমিশনার, অতিরিক্ত কমিশনার ও যুগ্ম কমিশনারা গোডাউন পরিদর্শন করে লকার ভাঙা অবস্থায় দেখতে পান। এ সময় গোডাউনের পূর্ব পাশে এসির বাতাস বের হওয়ার জায়গায় টিনের একটি অংশে কাটা দেখতে পান। পরিদর্শনের এসে গোডাউনে কর্মরত এবিসি ও ডি শিফটের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মাসুদ রানা, সাইফুল ইসলাম সাহেদ, মো. শহিদুল ইসলাম, আকরাম শেখ এবং সিপাহী রেজাউল করিম, মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক মো. আফজাল হোসেন ও মো. নিয়ামত হাওলাদারকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কিন্তু জিজ্ঞাসাবাদে তারা লকার ভেঙে স্বর্ণ চুরির বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। পরে রেজিস্টার চেক করে এবং ভাঙা লকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সালের বিভিন্ন সময়ে আটককৃত ৩৮৯টি ডিএম এর সর্বমোট ৫৫ দশমিক ৫১ কেজি স্বর্ণবার ও স্বর্ণলঙ্কার লকার থেকে খোয়া যাওয়ার প্রমাণ পান। চুরি হওয়া স্বর্ণলঙ্কারের মূল্য ৪৫ কোটি টাকা বলে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে।
পুলিশ বলছে, এজাহারে বলা হয়, ২ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার পর থেকে শুরু করে সকাল ৮টার মধ্যে যেকোন সময় অজ্ঞাতরা এসব স্বর্ণবার ও স্বর্ণলঙ্কার স্টিলের আলমারির লকার ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে। এহাজারে বলা হয়েছে, বিমানবন্দরে সাময়িক আটককৃত/ফেরতযোগ্য বা অফেরতযোগ্য বা বাজেয়াপ্তকৃত অমূল্যবান পণ্য নিলামের মাধ্যমে নিস্পত্তির জন্য ঢাকা কাস্টমস হাউস থেকে ইনভেন্টি কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য ৪টি টিম গঠন করা হয়েছে গত ৩০ আগস্ট। ১ নম্বর টিম ১ অক্টোবর ইনভেন্টি (গণনা বা হিসেব মিলানো) কার্যক্রম করে কাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। ২ নম্বর টিম বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ইনভেন্টি কার্যক্রম চালায়। এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এর মধ্যে চুরি হয়েছে। এ কার্যক্রম শেষ হলে প্রকৃতপক্ষে বুঝা যাবে কী পরিমাণ স্বণলঙ্কার চুরি হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, এটি চুরি নয়, গোডাউনের দায়িত্বে থাকা ঢাকা কাস্টম হাউজের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিলেমিশে স্বর্নলঙ্কার সরিয়েছেন। এর সঙ্গে আর কারা কারা জড়িত তা তদন্ত করা হচ্ছে। যে ৮ জনকে আটক করা হয়েছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচ্ছে পুলিশ।
পর্যবেক্ষণ করছে দুদক
কাস্টমস গোডানের লকার থেকে সোনা চুরি যাওয়ার ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। থানা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দুদকে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সংস্থাটি।
এ বিষয়ে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বিষয়টি আসলেই দুঃখজনক। এ বিষয়ে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা দায়ের করেছে। এখন থানা কর্তৃপক্ষ যদি দেখে এটা দুদকের তফসিলভুক্ত অপরাধ, তাহলে তারা দুদকে পাঠালে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।