alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন

৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে ওসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

মো. পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা) : শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় এনে মারধর করে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

ঐ অভিযোগের পর গত ৭ জুন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

নির্যাতন করে চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে, এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম। মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ঠান্ডুর চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তাঁর ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর ঠান্ডু কর্তৃক পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর ঠান্ডু। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাঁকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর ঠান্ডু। চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর ঠান্ডু।

আবু জাফর ঠান্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।’

আবু জাফর আরও বলেন, ‘নাওডোবা বাজারে থাকা আমার চাচা ও চাচাতো ভাইদের দুটি দোকান আমাকে কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেন ওসি মোস্তাফিজ। শহীদুল ইসলামের নামে এসব চেক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে দুটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন, তিনি ওই পাঁচটি চেক উদ্ধার করেছেন।’

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারী সংবাদকে বলেন, ‘যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি আমার ভাগনে হয়। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাঁদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।’

এবিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। অফিশিয়াল প্রসেসের কারণে হয়তো তাঁর দায়িত্ব ছাড়তে এক দিন সময় লেগেছে। নাওডোবার এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন একজনকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল তাঁর কর্মস্থলে থাকবেন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণিত হলে তখন আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

ছবি

পলাতক ২৩ জনকে আদালতে হাজিরের নির্দেশ, হাজির না হলে অনুপস্থিতিতেই বিচার

ছবি

পীরগাছায় পুলিশের অভিযানে চুরি হওয়া ৩ মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার ৫

ছবি

মুরাদনগরে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মূল উসকানিদাতা ভাই শাহ পরাণ: পরিকল্পনায় ‘মব’, ভিডিওও তার ‘নির্দেশে’

ছবি

মুরাদনগরে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড

ভোটবিহীন নির্বাচন মামলায় নূরুল হুদা কারাগারে, পেলেন না জামিন

ছবি

শেখ রেহানার স্বামী ও তারিক সিদ্দিকের সম্পত্তি জব্দের আদেশ

ছবি

আদালত অবমাননায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

ছবি

বিএনপির মামলায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দি রেকর্ড শুরু

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তিনটি হত্যা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ, আছেন সাবেক এসপিও

ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর, ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

রূপগঞ্জে মদ্যপ অবস্থায় অশোভন আচরণ, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি

নাইক্ষ্যংছড়িতে ইমাম হত্যা,৫ জনকে আসামী করে মামলা

ছবি

হত্যা মামলায় ইনু, কামাল, পলকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখালো আদালত

ছবি

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় প্রিন্স মামুনের বিচার শুরু

ছবি

ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দুদক চেয়ারম্যান, টিউলিপকে বাংলাদেশি নাগরিক বলেও মন্তব্য

ছবি

১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ, এস আলম গ্রুপ ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

‘ভোটের প্রতারণা’ অভিযোগে রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি নূরুল হুদার

ছবি

নগদের ১ কোটি টাকার ডাকাতি: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, উদ্ধার সাড়ে ৩২ লাখ

ছবি

স্বপ্না হত্যা: থানা থেকে সিআইডি, তবু রহস্য অজানা

ছবি

সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাল অপহরণ ও হত্যার আসামি

ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের সহায়তাকারী নিযুক্ত

ছবি

সবজি ব্যবসায়ী শাওন হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে, আনিসুল হক গ্রেপ্তার

মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

ছবি

কেরাণীগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

রংপুরের কাউনিয়ায় টিসিবির কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

ছবি

মানিলন্ডারিং তদন্ত: তিন সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

হাজিরা না দিলে অনুপস্থিতিতেই শেখ হাসিনার বিচার শুরু হবে: ট্রাইব্যুনাল

ছবি

যুক্তরাজ্যে বসুন্ধরা মালিকপক্ষসহ কয়েকজনের সম্পদ জব্দে উদ্যোগ: দুদক

ছবি

টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, তাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখছে দুদক

ছবি

লাশ টুকরো করে বালু চাপা: ব্যবসায়ী জাকির হত্যা মামলায় চার আসামি আদালতে, একজনের স্বীকারোক্তি

ছবি

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্যকে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান

অবশেষে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা

পীরগাছায় ইসলামিক রিলিফের গরুর মাংস বিতরণের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আটক-১

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে নির্যাতন

৭২ লাখ টাকার চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগে ওসি প্রত্যাহার, তদন্ত কমিটি গঠন

মো. পলাশ খান, শরীয়তপুর(জাজিরা)

শনিবার, ১০ জুন ২০২৩

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় এক ব্যবসায়ীকে থানায় এনে মারধর করে ৭২ লাখ টাকার ব্যাংক চেক লিখে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২ জুন এ ঘটনার বিচার চেয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই ব্যবসায়ী। অভিযুক্ত দুই পুলিশ কর্মকর্তা হলেন নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমান।

ঐ অভিযোগের পর গত ৭ জুন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোস্তাফিজুর রহমানকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার একটি কমিটি গঠন করেছেন। শরীয়তপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোহাম্মদ বদিউজ্জামান অভিযোগটির বিষয়ে তদন্ত করছেন।

ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ীর নাম আবু জাফর ওরফে ঠান্ডু চোকদার। তিনি জাজিরা উপজেলার নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী।

নির্যাতন করে চেক লিখিয়ে নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনিরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলতে চাননি।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা কোনো ব্যক্তিকে উঠিয়ে এনে নির্যাতন করিনি। কারও চেক সই করে আমরা কেন নেব? এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’

পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানা সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ মে জাজিরার আহাদী বয়াতিকান্দি গ্রামের শাহীন আলম শেখ নামের এক ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগী ছোট কৃষ্ণনগর গ্রামের সেকান্দার মাদবরের কাছ থেকে ১৭ হাজার ডলার, নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনতাই হয়। এতে ২১ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ টাকা খোয়া গেছে, এমন অভিযোগ এনে গত ২৩ মে ৯ ব্যক্তিকে আসামি করে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানায় একটি মামলা করেন শাহীন আলম। মামলায় নাওডোবা বাজারের ব্যবসায়ী আবু জাফর ঠান্ডুর চার আত্মীয়কে আসামি করা হয়। আসামিরা হলেন জাফরের চাচা রশিদ চোকদার, তাঁর ছেলে বকুল চোকদার, জাফরের আরেক চাচা বাদশা চোকদার ও তাঁর ছেলে সাদ্দাম চোকদার।

আবু জাফর ঠান্ডু কর্তৃক পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগে সূত্রে জানা যায়, ৩১ মে গভীর রাতে পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে নড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার ওসি শেখ মোস্তাফিজুর রহমান তাঁকে চার আত্মীয়ের পক্ষে ৭২ লাখ টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দেন। এর বিনিময়ে তাঁকে বলা হয়, ওই আত্মীয়দের মালিকানাধীন নাওডোবা বাজারের দুটি দোকান তাঁর নামে লিখে দেওয়া হবে। তবে এতে রাজি হননি আবু জাফর ঠান্ডু। তখন দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে মারধর করেন। ওসির কক্ষে আটকে চোখ বেঁধে তাঁকে দুই ঘণ্টাব্যাপী পেটানো হয়। একপর্যায়ে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখে দিতে রাজি হলে তাঁর চাচা ও মামলার আসামি রশিদ চোকদারের জিম্মায় ভোররাতে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন সকালে ন্যাশনাল ব্যাংক নাওডোবা শাখায় নিজের হিসাব নম্বরের ৫টি চেকে ৭২ লাখ টাকা লিখে দেন আবু জাফর ঠান্ডু। চেকগুলো ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে দেওয়া হয়। মো. শহীদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নামে চেক লিখে রাখা হয়। শহীদুল মামলার বাদীপক্ষ ও পুলিশের পরিচিত বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আবু জাফর ঠান্ডু।

আবু জাফর ঠান্ডু সংবাদকে বলেন, ‘ছিনতাইয়ের টাকা উদ্ধারের জন্য বাদীরা জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল ব্যাপারীসহ পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তারা আমার চাচাতো ভাই ও চাচাদের কাছ থেকে ৭২ লাখ টাকা আদায়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। ২১ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের মামলায় ৭২ লাখ টাকা দাবি করায় আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করেছিলাম। ওই রাতেই পুলিশ বাড়ি থেকে আমাকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। সেখানে ওসির রুমে আটকে আমাকে চোখ বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটানো হয়। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল মনির ও ওসি মোস্তাফিজুর রহমান আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন করেছেন।’

আবু জাফর আরও বলেন, ‘নাওডোবা বাজারে থাকা আমার চাচা ও চাচাতো ভাইদের দুটি দোকান আমাকে কেনার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ। আমাকে নির্যাতন করে ন্যাশনাল ব্যাংকের ৫টি চেকের মাধ্যমে ৭২ লাখ টাকার চেক লিখিয়ে নেন ওসি মোস্তাফিজ। শহীদুল ইসলামের নামে এসব চেক নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমার কাছ থেকে দুটি নন–জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পেও স্বাক্ষর নেওয়া হয়। পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ করার পর ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। যিনি তদন্ত করছেন, তিনি ওই পাঁচটি চেক উদ্ধার করেছেন।’

জাজিরা উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল বেপারী সংবাদকে বলেন, ‘যার ডলার এবং টাকা ছিনতাই হয়েছে, তিনি আমার ভাগনে হয়। তাঁকে সহযোগিতা করার জন্য সামাজিকভাবে আমি মামলার আসামি ও তাঁদের মুরব্বি ঠান্ডু চোকদারের (আবু জাফর) ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলাম। তিনি স্বেচ্ছায় আসামিদের দোকান লিখে নিয়ে ৭২ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছিলেন।’

এবিষয়ে শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার সাইফুল হক বলেন, ‘ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের বদলির আদেশ দেয়া হয়েছে। অফিশিয়াল প্রসেসের কারণে হয়তো তাঁর দায়িত্ব ছাড়তে এক দিন সময় লেগেছে। নাওডোবার এক ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ এসেছে, তা তদন্ত করা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পাওয়া যাবে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও কেন একজনকে বদলি করা হলো, এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নড়িয়া সার্কেল তাঁর কর্মস্থলে থাকবেন। তদন্তে অভিযোগের বিষয়ে প্রমাণিত হলে তখন আমরা তাঁর বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেব।’

back to top