alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

মিল্টন সমাদ্দার আবার ৪ দিনের রিমান্ডে

‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন : ডিবি প্রধান

# মিল্টনের অ্যাকাউন্টে এখনও ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : রোববার, ০৫ মে ২০২৪

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে আশ্রয় নিতে আসা গরিব-অসহায় মানুষগুলোর জন্য শরীরে বিভিন্ন স্থানে পচনের কারণে যখন অপারেশনের প্রয়োজন হতো, তখন নিজে ব্লেড দিয়ে তা কেটে ফেলতো আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার,এতে অসহায় মানুষগুলো অমানবিক কষ্ট পেতেন, আর্তনাথ করতেন। কিন্তু পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন। সে রীতিমতো টর্চার সেল চালাতো।

রোববার (৫ মার্চ) দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ।

এদিকে রাজধানীর মিরপুর থানায় দায়ের করা মানবপাচার আইনের এক মামলায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে ৪দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তারের আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে মৃত্যুসনদ জালিয়াতির অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর জোনাল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এরপর তাকে মানবপাচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শিকদার মাইতুল আলম।

প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর মডেল থানার (মানব পাচার) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

গত ২ মে আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানান হারুন। তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি যে নির্যাতন করে, ব্লেড-ছুরিতে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন তাদের তিনি ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড-ছুরি জব্দ করেছি।

তিনি আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দার ভয়াবহ অপরাধ করেছেন। একটি দুটি অপরাধ করেননি। তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তো ভয়াবহ। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তার অ্যাকাউন্টে এখনও ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এতোগুলো টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। তিনি নিজেই হয়ে গেছেন অপারেশন থিয়েটারের হেড। তার অপারেশন থিয়েটারে থাকতো একটা ছুরি ও কিছু ব্লেড। তিনি এগুলো দিয়েই নিজেই অপারেশন করাতেন। এরকম ভয়াবহ, অমানবিক আচরণ, অসভ্য আচরণ, এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যই তো লজ্জাজনক। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজড করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বার তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

হারুন বলেন, যে ছেলেটা সেই উজিরপুর থেকে বাবা পিটিয়ে ঢাকায় এসে ওষুধের দোকানে চুরি করেছে, এরপর একটা আশ্রম গড়ে তোলে। যেখানে সে অসহায়, গরীব শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, বাকপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে সংগ্রহ করে আশ্রমে নিত। তাদের দেখিয়ে সে ফেইসবুকে ফলোয়ারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতো। সেই টাকা আবার সে খরচ করতো না অসহায়দের পেছনে।

তার আশ্রমে ৯০০ লোক মারা গেছে বলে নিজেই প্রচার করতো উল্লেখ করে হারুন বলেন, মানুষগুলো মারা গেছেন। জানাজা হলো না, রাতের অন্ধকারে কবর দেওয়া হলো। আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হলো না। মিথ্যেভাবে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট দিলো। রেকর্ডেও রাখলো না। এসবই আমাদের তদন্তে আসবে।

যেসব শিশু তার আশ্রমে ছিল তাদের খোঁজ পাওয়ার পর দেখা করতে দেওয়া হতো না স্বজনদের। ওই শিশুদের ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটেছিল? বিক্রি করতো? কিছু পেয়েছেন আপনারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, একটু ধৈর্য ধরেন। সবই বেরিয়ে আসবে। এরকম আরও যেসব মিল্টন সমাদ্দার বাংলাদেশে যদি আরও থেকে থাকে, তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা নামে ধরনের অপকর্ম করে থাকে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

মিল্টন সমাদ্দার নিজেই বলেছেন, ৯০০ লোকের প্রাণ নিভে গেলো, কীভাবে নিভে গেলো? তিনি তো তাদের হাসপাতালে নেননি, ডেথ সার্টিফিকেটও নেননি, থানা পুলিশকে অবহিত করেননি। আবার ৯০০ লোকের প্রাণ যাওয়ার যে কথা তিনি বলেছেন, সেটা আদৌ সত্য কিনা, নাকি এটা টাকা ইনকামের একটা কথার কথা, সত্য হলে কী করেছেন। সব তদন্তে নিয়ে আসবো। এই আশ্রমের সঙ্গে আরও যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৯০০ লোকের মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, আসলে ৯০০ মানুষ মরেনি। তাহলে কতোজন মারা গেছে? বলেন ১৩৫ জন মারা গেছে। আসলে ৯০০ লোক মারা গেছে। তাদের দাফন করেছি। সেটারও তিনি রেজিস্টার্ড সংগ্রহে রাখেননি। যারা মারা গেলেন তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়নি। এতোগুলো মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে।

তিনি জানান, অটিজম শিশুদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা লজ্জাজনক। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাতনিপ্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম নিয়ে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের (ডবিøউএইচওএসইএআরও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বৈশ্বিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল)। আর সেই দেশে অটিজমের নাম ধারণ করে অসহায়, বাক প্রতিবন্ধী ভারসাম্যহীন মানুষ সংগ্রহ করে ফেসবুকে প্রচার করে ফলোয়ারদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে তিনি সেই টাকা খরচা করেননি। এটা তো লজ্জাজনক।

সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী মিঠু হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, মিঠু হালদার সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও দায় এড়াতে পারেন না।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মিল্টনের অপরাধ কার্যক্রম সম্পর্কে গতকাল তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি তিনি। মিডিয়াকেও কিছু জানাননি।’

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সঙ্গে মিঠু হালদারের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ, তথাকথিত মানবসেবার নামে টাকা আত্মসাৎ, রোগী দেখিয়ে টাকা আয় করেছেন মিল্টন। রোগীদের কাছে তো মিঠু হালদার যেতেন। তিনি নিজেও নার্স। স্বামীর অনিয়ম-অপকর্ম জেনেও থানা-পুলিশ বা কাউকে অবগত করেননি, প্রতিবাদ করেননি। স্বামীর অপকর্মের দায় তাই স্ত্রী হিসেবে তিনি এড়াতে পারেন না।’

ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ‘মিঠু হালদার দাবি করেছেন, ফাউন্ডেশনের নামে যেসব টাকা-পয়সা এসেছে, একাউন্ট বা কোনোকিছুতে তার নাম নাই।’ মিঠু হালদার গ্রেপ্তার হবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলছে, আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো।’ এর আগে শনিবার দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হারুন অর রশীদ বলেন,‘মিল্টন সমাদ্দার রিমান্ডে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার আশ্রমের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মিল্টনের স্ত্রীকে রোববার দুপুরে ডিবিতে ডাকা হয়েছে। তাকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো।’

২২ বছর পর স্ত্রী হত্যায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত স্বামী গ্রেপ্তার

আড়াইহাজারে কিশোরীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ

৭ বছর পর শিশু হত্যা রহস্য উদ্ঘাটন

ব্যবসার আড়ালে অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগ

ছবি

ঢাকা বাড্ডায় এক হত্যা মামলায় তিন আসামির যাবজ্জীবন

ছবি

সাগর-রুনি হত্যা: মামলার প্রতিবেদন জমা আবারও পেছালো

ছবি

আদালতের সময় নষ্ট করায় সেলিম প্রধানকে জরিমানা

খুলনা ও মৌলভীবাজারে চার জনের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেড় বছরে ৮০ জন হত্যা

ছবি

উড়োজাহাজ লিজে অনিয়ম: বিমানের সাবেক এমডিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ, বরখাস্ত অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

সার আত্মসাৎ মামলায় সাবেক এমপি পোটনসহ ৫ জন কারাগারে

ছবি

বিমানবন্দর ও টঙ্গী থেকে ৭ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

ছবি

ইন্স্যুরেন্স চাকরির আড়ালে জঙ্গি সংগঠনের রিক্রুটার : ডিবি

ছবি

স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

গোবিন্দগঞ্জে নির্যাতন করে গৃহবধূর মাথার চুল কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষ, ৩জন গ্রেফতার

লাখে ১১ হাজার লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

ছবি

ধর্ম অবমাননায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জবি শিক্ষার্থীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড

ভারতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি হাতিয়ে নিতো চক্রটি

ছবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

ডিজিটাল ডিভাইসে জানানো হতো উত্তর,১০মিনিটে পরীক্ষা শেষ

সংবাদের সার্কুলেশন ম্যানেজারকে প্রাণনাশের হুমকি

ছবি

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও দুইজনের যাবজ্জীবন, খালাস ৬

মাদকের তথ্য দেয়ায় হাতের রগ কর্তন, আসামীর পরিবর্তে ভুক্তভোগীকেই আটক, পরে ৫০ হাজার টাকায় মুক্তি

সাবেক এসপি সুব্রত কুমার হালদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

ছবি

এবার মানবপাচার মামলায় মিল্টন সমাদ্দারের ৪ দিনের রিমান্ড

ছবি

ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

রাবির ক্যান্টিন পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ

ছবি

মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

তিন দিন রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার

ছবি

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রলীগ নেতাকে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ

ছবি

নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট, আমেরিকায় নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা

আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ আসামি অভিযুক্ত

ছবি

ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতরা অচিরেই গ্রেফতার

ফরিদগঞ্জে মাকে জবাই করে হত্যা করলো ছেলে

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

মিল্টন সমাদ্দার আবার ৪ দিনের রিমান্ডে

‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন : ডিবি প্রধান

# মিল্টনের অ্যাকাউন্টে এখনও ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

রোববার, ০৫ মে ২০২৪

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমে আশ্রয় নিতে আসা গরিব-অসহায় মানুষগুলোর জন্য শরীরে বিভিন্ন স্থানে পচনের কারণে যখন অপারেশনের প্রয়োজন হতো, তখন নিজে ব্লেড দিয়ে তা কেটে ফেলতো আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দার,এতে অসহায় মানুষগুলো অমানবিক কষ্ট পেতেন, আর্তনাথ করতেন। কিন্তু পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন। সে রীতিমতো টর্চার সেল চালাতো।

রোববার (৫ মার্চ) দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন উর রশীদ।

এদিকে রাজধানীর মিরপুর থানায় দায়ের করা মানবপাচার আইনের এক মামলায় চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারকে ৪দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শান্তা আক্তারের আদালত এই আদেশ দেন। এর আগে মৃত্যুসনদ জালিয়াতির অভিযোগে মিরপুর মডেল থানায় দায়ের হওয়া মামলায় তিন দিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে আদালতে হাজির করেন তদন্ত কর্মকর্তা মিরপুর জোনাল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর মোহাম্মদ কামাল হোসেন। এরপর তাকে মানবপাচার আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোসহ সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শিকদার মাইতুল আলম।

প্রথমে তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেরা মাহবুব তাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। এরপর রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মিরপুর মডেল থানার (মানব পাচার) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর সাইফুল ইসলাম এ তথ্য জানান।

গত ২ মে আসামির তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। গত ১ মে রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এরপর তার বিরুদ্ধে মিরপুর মডেল থানায় তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুর মডেল থানায় দায়ের করা মামলায় তিনদিনের রিমান্ড শেষে মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বিষয়ে জানান হারুন। তিনি বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের মতো সাইকোপ্যাথ কীভাবে মানবতার ফেরিওয়ালা হয় তা আমাদের বোধগম্য নয়।

তিনি যে নির্যাতন করে, ব্লেড-ছুরিতে নিজেই অপারেশন করতেন, টর্চার সেলে মানুষকে পেটাতেন তাদের তিনি ‘বানর’ বলে অভিহিত করতেন, পিটিয়ে নিস্তেজ করতেন। তিনি স্বীকার করেছেন যে এসব করে তিনি পৈশাচিক আনন্দ পেতেন। আমরা তার টর্চার সেল থেকে আলামত জব্দ করেছি। কথিত অপারেশন থিয়েটার থেকে ব্লেড-ছুরি জব্দ করেছি।

তিনি আরও বলেন, মিল্টন সমাদ্দার ভয়াবহ অপরাধ করেছেন। একটি দুটি অপরাধ করেননি। তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ তো ভয়াবহ। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন। তার অ্যাকাউন্টে এখনও ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আছে। এতোগুলো টাকা থাকার পরও তিনি কাউকে চিকিৎসা করাননি। তিনি নিজেই হয়ে গেছেন অপারেশন থিয়েটারের হেড। তার অপারেশন থিয়েটারে থাকতো একটা ছুরি ও কিছু ব্লেড। তিনি এগুলো দিয়েই নিজেই অপারেশন করাতেন। এরকম ভয়াবহ, অমানবিক আচরণ, অসভ্য আচরণ, এটা বাংলাদেশের মানুষের জন্যই তো লজ্জাজনক। যারা তার সঙ্গে জড়িত, যারা পেট্রোনাইজড করেছে, সহযোগিতা করেছে, ফেসবুকে ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য যারা পেট্রন করেছে, ফাউন্ডেশনের মেম্বার তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

হারুন বলেন, যে ছেলেটা সেই উজিরপুর থেকে বাবা পিটিয়ে ঢাকায় এসে ওষুধের দোকানে চুরি করেছে, এরপর একটা আশ্রম গড়ে তোলে। যেখানে সে অসহায়, গরীব শিশু, বৃদ্ধ, প্যারালাইজড, বাকপ্রতিবন্ধী, মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে সংগ্রহ করে আশ্রমে নিত। তাদের দেখিয়ে সে ফেইসবুকে ফলোয়ারের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতো। সেই টাকা আবার সে খরচ করতো না অসহায়দের পেছনে।

তার আশ্রমে ৯০০ লোক মারা গেছে বলে নিজেই প্রচার করতো উল্লেখ করে হারুন বলেন, মানুষগুলো মারা গেছেন। জানাজা হলো না, রাতের অন্ধকারে কবর দেওয়া হলো। আত্মীয়-স্বজনকে জানানো হলো না। মিথ্যেভাবে সিল-স্বাক্ষর দিয়ে নিজেই ডেথ সার্টিফিকেট দিলো। রেকর্ডেও রাখলো না। এসবই আমাদের তদন্তে আসবে।

যেসব শিশু তার আশ্রমে ছিল তাদের খোঁজ পাওয়ার পর দেখা করতে দেওয়া হতো না স্বজনদের। ওই শিশুদের ক্ষেত্রে আসলে কী ঘটেছিল? বিক্রি করতো? কিছু পেয়েছেন আপনারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, একটু ধৈর্য ধরেন। সবই বেরিয়ে আসবে। এরকম আরও যেসব মিল্টন সমাদ্দার বাংলাদেশে যদি আরও থেকে থাকে, তথাকথিত মানবতার ফেরিওয়ালা নামে ধরনের অপকর্ম করে থাকে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

মিল্টন সমাদ্দার নিজেই বলেছেন, ৯০০ লোকের প্রাণ নিভে গেলো, কীভাবে নিভে গেলো? তিনি তো তাদের হাসপাতালে নেননি, ডেথ সার্টিফিকেটও নেননি, থানা পুলিশকে অবহিত করেননি। আবার ৯০০ লোকের প্রাণ যাওয়ার যে কথা তিনি বলেছেন, সেটা আদৌ সত্য কিনা, নাকি এটা টাকা ইনকামের একটা কথার কথা, সত্য হলে কী করেছেন। সব তদন্তে নিয়ে আসবো। এই আশ্রমের সঙ্গে আরও যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৯০০ লোকের মৃত্যু সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে মিল্টন সমাদ্দার ডিবি পুলিশকে জানিয়েছে, আসলে ৯০০ মানুষ মরেনি। তাহলে কতোজন মারা গেছে? বলেন ১৩৫ জন মারা গেছে। আসলে ৯০০ লোক মারা গেছে। তাদের দাফন করেছি। সেটারও তিনি রেজিস্টার্ড সংগ্রহে রাখেননি। যারা মারা গেলেন তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়নি। এতোগুলো মৃত্যুর ঘটনা সম্পর্কে অবশ্যই তাকে জবাব দিতে হবে।

তিনি জানান, অটিজম শিশুদের সঙ্গে যা করা হয়েছে তা লজ্জাজনক। কারণ বঙ্গবন্ধুর নাতনিপ্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম নিয়ে সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের (ডবিøউএইচওএসইএআরও) আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বৈশ্বিক অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল)। আর সেই দেশে অটিজমের নাম ধারণ করে অসহায়, বাক প্রতিবন্ধী ভারসাম্যহীন মানুষ সংগ্রহ করে ফেসবুকে প্রচার করে ফলোয়ারদের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করে আত্মসাৎ করেছেন। অন্যদিকে তিনি সেই টাকা খরচা করেননি। এটা তো লজ্জাজনক।

সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী

‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী মিঠু হালদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেছেন, মিঠু হালদার সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি। তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেও দায় এড়াতে পারেন না।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ‘আমরা মিল্টন সমাদ্দারকে জিজ্ঞাসাবাদ করছি। মিল্টনের অপরাধ কার্যক্রম সম্পর্কে গতকাল তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি তিনি। মিডিয়াকেও কিছু জানাননি।’

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তার সঙ্গে মিঠু হালদারের সম্পৃক্ততা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে হারুন বলেন, ‘দিনের পর দিন বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ, তথাকথিত মানবসেবার নামে টাকা আত্মসাৎ, রোগী দেখিয়ে টাকা আয় করেছেন মিল্টন। রোগীদের কাছে তো মিঠু হালদার যেতেন। তিনি নিজেও নার্স। স্বামীর অনিয়ম-অপকর্ম জেনেও থানা-পুলিশ বা কাউকে অবগত করেননি, প্রতিবাদ করেননি। স্বামীর অপকর্মের দায় তাই স্ত্রী হিসেবে তিনি এড়াতে পারেন না।’

ডিএমপির গোয়েন্দাপ্রধান বলেন, ‘মিঠু হালদার দাবি করেছেন, ফাউন্ডেশনের নামে যেসব টাকা-পয়সা এসেছে, একাউন্ট বা কোনোকিছুতে তার নাম নাই।’ মিঠু হালদার গ্রেপ্তার হবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের তদন্ত চলছে, আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো।’ এর আগে শনিবার দুপুরে মিন্টো রোডের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সামনে হারুন অর রশীদ বলেন,‘মিল্টন সমাদ্দার রিমান্ডে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে সেসব বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার আশ্রমের বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে মিল্টনের স্ত্রীকে রোববার দুপুরে ডিবিতে ডাকা হয়েছে। তাকেও আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করবো।’

back to top