থানা পুলিশকে মাদকের তথ্য দেওয়ায় গাজীপুরে এক যুবককে কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দিয়েছে চিহ্নিত মাদককারবিরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর আসামী গ্রেফতারের পরিবর্তে ভিকটিমকে ধরে নিয়ে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে।
মহানগরের লক্ষিপুরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মাদককারবারিদের হামলায় আহত ভুক্তভোগী ওই যুবকের নাম মিনহাজুল আবেদীন কনক (২৬)। গত ১ মে রাত সাড়ে ১০টায় চিহ্নিত মাদককারবারীদের হামলায় কনক গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে মহানগর ডিবি পুলিশ আসামী গ্রেফতারের পরিবর্তে গত ৪ মে বিকেলে ভিকটিম কনককে তুলে নিয়ে যায়। পরে ওই দিনই রাতে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেয়।
ভুক্তভোগী কনক জানান, এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা তাকে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মাদক ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। পরে বিষয়টি তিনি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। ঘটনার তিন দিন আগে পুলিশকে তিনি মাদককারবারিদের আস্তানা চিনিয়ে দেন। এ ঘটনার জেরে গত ১ মে রাত সাড়ে ১০টায় চিহ্নিত মাদককারবারি সজিব দলবল নিয়ে তার ( কনকের) ওপর হামলা চালায়। এসময় তাকে উপর্যকুপি কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দেয়।
স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে তাকে উন্নতি চিকিৎসার জন্য ওই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ৩ মে তিনি চিহ্নিত মাদককারবারি সজীবকে প্রধান করে ১১ মাদক কারবারির নামে জিএমপি সদর থানায় মামলা করেন। পর দিন ৪ মে পুলিশের সোর্স শামীম মামলার আসামী গ্রেফতারের কথা বলে তাকে স্থানীয় তিন সড়ক নামক স্থানে ডেকে নেয়।
সেখানে অপেক্ষমান ডিবি পুলিশের গাড়িতে তুলে তাকে সজীবের নামে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ভয়ভীতি দেখায়। গাড়িতে তার ওপর নির্যাতনও করা হয়। একপর্যায়ে তিনি ভয়ে গাড়ীতেই প্রস্রাব-পায়খানা করে দেন। ডিবি পুলিশ সদস্যরা মাথায় পানি ঢেলে তাকে সুস্থ করেন এবং একটি ফাঁকা জায়গায় মিয়ে শৌচকাজ করান। এর পর তাকে বিভিন্নস্থানে ঘুরিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। অন্যথায় তাকে ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখায়।
সোর্স শামীম তার পিতার মোবাইলে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। তার পিতা, মাতা ও স্ত্রীর সাথে সোর্স শামীমের এবিষয়ে কথোপকথনের একাধিক কলরেকর্ডও সংরক্ষণ করেছে তার পরিবার। যা প্রমাণ হিসেবে সাংবাদিকদের কাছেও সরবরাহ করা হয়।
কনক জানান, তার স্ত্রী বহু কষ্টে টাকা যোগার করে ৫০ হাজার টাকা জিএমপি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের হাতে তুলে দিলে ওই দিনই রাত ১০টার দিকে নগরীর মারিয়ালি জামতলা এলাকায় ডিবির গাড়ি থেকে তার মুক্তি মিলে।
এলাকাবাসী জানান, গরু পালন ও বাসা ভাড়ার টাকায় কনকদের সংসার চলে।
কনকের মা মিনা বেগম বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য ইতিপূর্বে দু’টি গরু বিক্রি করতে হয়েছে। হাত খালি থাকায় বহু কষ্টে টাকা যোগাড় করে ছেলেকে ডিবি পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে।
এদিকে মাদককারবারিদের হামলায় ভুক্তভোগী কনক আহত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জিএমপি সদর থানার ওসি সৈয়দ রাফিউল করীম বলেন, এঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার প্রধান আসামী সজীবের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে ডিবি পুলিশ কর্তৃক ভিকটিম কনককে তুলে নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান ওসি।
এব্যাপার যোগাযোগ করা হলে ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সোর্স শামীমকে চিনেন কিনা চানতে চাইলে তিনি বলেন, সে আমাদের সোর্স না। থানা পুলিশের সোর্স।
এদিকে এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জবেদ আলী বলেন, কনকের ওপর হামলাকারীরা এলাকার চিহ্নত মাদককারবারি। এদের মধ্যে প্রধান আসামী সজীব পারিবারিকভাবেই মাদক কারবারে জড়িত। তার বাবা-মা প্রত্যেকের নামে অন্তত ৫০টি করে মাদকের মামলা রয়েছে। সজীব দৈনিক ৩০-৪০ লাখ টাকার মাদক বেচাকেনা করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরা আমাদের সমাজটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেক ওপরে তার (সজীবের) হাত রয়েছে। ডিবি পুলিশের সাথে তার খুব সখ্য।
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
থানা পুলিশকে মাদকের তথ্য দেওয়ায় গাজীপুরে এক যুবককে কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দিয়েছে চিহ্নিত মাদককারবিরা। এ ঘটনায় থানায় মামলা হওয়ার পর আসামী গ্রেফতারের পরিবর্তে ভিকটিমকে ধরে নিয়ে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে।
মহানগরের লক্ষিপুরা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
মাদককারবারিদের হামলায় আহত ভুক্তভোগী ওই যুবকের নাম মিনহাজুল আবেদীন কনক (২৬)। গত ১ মে রাত সাড়ে ১০টায় চিহ্নিত মাদককারবারীদের হামলায় কনক গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে মহানগর ডিবি পুলিশ আসামী গ্রেফতারের পরিবর্তে গত ৪ মে বিকেলে ভিকটিম কনককে তুলে নিয়ে যায়। পরে ওই দিনই রাতে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করে তাকে ছেড়ে দেয়।
ভুক্তভোগী কনক জানান, এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারিরা তাকে হঠাৎ বড়লোক হওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মাদক ব্যবসা করার প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু তিনি রাজি না হওয়ায় তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। পরে বিষয়টি তিনি থানা পুলিশকে অবহিত করেন। ঘটনার তিন দিন আগে পুলিশকে তিনি মাদককারবারিদের আস্তানা চিনিয়ে দেন। এ ঘটনার জেরে গত ১ মে রাত সাড়ে ১০টায় চিহ্নিত মাদককারবারি সজিব দলবল নিয়ে তার ( কনকের) ওপর হামলা চালায়। এসময় তাকে উপর্যকুপি কুপিয়ে হাতের রগ কেটে দেয়।
স্থানীয়রা তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেন। সেখান থেকে তাকে উন্নতি চিকিৎসার জন্য ওই দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে পাঠানো হয়। পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে গত ৩ মে তিনি চিহ্নিত মাদককারবারি সজীবকে প্রধান করে ১১ মাদক কারবারির নামে জিএমপি সদর থানায় মামলা করেন। পর দিন ৪ মে পুলিশের সোর্স শামীম মামলার আসামী গ্রেফতারের কথা বলে তাকে স্থানীয় তিন সড়ক নামক স্থানে ডেকে নেয়।
সেখানে অপেক্ষমান ডিবি পুলিশের গাড়িতে তুলে তাকে সজীবের নামে মামলা প্রত্যাহারের জন্য ভয়ভীতি দেখায়। গাড়িতে তার ওপর নির্যাতনও করা হয়। একপর্যায়ে তিনি ভয়ে গাড়ীতেই প্রস্রাব-পায়খানা করে দেন। ডিবি পুলিশ সদস্যরা মাথায় পানি ঢেলে তাকে সুস্থ করেন এবং একটি ফাঁকা জায়গায় মিয়ে শৌচকাজ করান। এর পর তাকে বিভিন্নস্থানে ঘুরিয়ে এক লাখ টাকা দাবি করা হয়। অন্যথায় তাকে ইয়াবা দিয়ে মাদক মামলায় চালান দেওয়ার ভয় দেখায়।
সোর্স শামীম তার পিতার মোবাইলে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে আসতে বলেন। তার পিতা, মাতা ও স্ত্রীর সাথে সোর্স শামীমের এবিষয়ে কথোপকথনের একাধিক কলরেকর্ডও সংরক্ষণ করেছে তার পরিবার। যা প্রমাণ হিসেবে সাংবাদিকদের কাছেও সরবরাহ করা হয়।
কনক জানান, তার স্ত্রী বহু কষ্টে টাকা যোগার করে ৫০ হাজার টাকা জিএমপি ডিবি উত্তরের পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামানের হাতে তুলে দিলে ওই দিনই রাত ১০টার দিকে নগরীর মারিয়ালি জামতলা এলাকায় ডিবির গাড়ি থেকে তার মুক্তি মিলে।
এলাকাবাসী জানান, গরু পালন ও বাসা ভাড়ার টাকায় কনকদের সংসার চলে।
কনকের মা মিনা বেগম বলেন, আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য ইতিপূর্বে দু’টি গরু বিক্রি করতে হয়েছে। হাত খালি থাকায় বহু কষ্টে টাকা যোগাড় করে ছেলেকে ডিবি পুলিশের হাত থেকে ছাড়িয়ে আনতে হয়েছে।
এদিকে মাদককারবারিদের হামলায় ভুক্তভোগী কনক আহত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জিএমপি সদর থানার ওসি সৈয়দ রাফিউল করীম বলেন, এঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। মামলার প্রধান আসামী সজীবের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে ডিবি পুলিশ কর্তৃক ভিকটিম কনককে তুলে নেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান ওসি।
এব্যাপার যোগাযোগ করা হলে ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মনিরুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। সোর্স শামীমকে চিনেন কিনা চানতে চাইলে তিনি বলেন, সে আমাদের সোর্স না। থানা পুলিশের সোর্স।
এদিকে এব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জবেদ আলী বলেন, কনকের ওপর হামলাকারীরা এলাকার চিহ্নত মাদককারবারি। এদের মধ্যে প্রধান আসামী সজীব পারিবারিকভাবেই মাদক কারবারে জড়িত। তার বাবা-মা প্রত্যেকের নামে অন্তত ৫০টি করে মাদকের মামলা রয়েছে। সজীব দৈনিক ৩০-৪০ লাখ টাকার মাদক বেচাকেনা করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। এরা আমাদের সমাজটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। অনেক ওপরে তার (সজীবের) হাত রয়েছে। ডিবি পুলিশের সাথে তার খুব সখ্য।