চক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার
দেশের দরিদ্র মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায় একটি চক্র। এরপর দিল্লিতে নিয়ে জিম্মি করে ফেলে। পরে টাকার লোভসহ ভিন্ন কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেয়। এখন পর্যন্ত দেশ থেকে ১০ জন ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামে এক ভুক্তভোগী মামলা করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানা পুলিশ এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। ১১ মে শনিবার রাতে ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে এবং বাগেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫) ও সাগর ওরফে মোস্তফা (৩৭)-সহ ১০-১২ জন। ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা যায়, এই চক্রটি দেশের দরিদ্র মানুষকে ভালো চাকরি দেয়ার কথা বলে ভারতে নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নিয়ে যায়। পরে নানান কৌশলে তার কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করে। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ৬ লাখ টাকা দেয়ার কথা, কিন্তু দিয়েছে ৩ লাখ টাকা।
রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে মিরপুর ১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। এ সময় পাশে বসে মাছুমও (বর্তমানে পলাতক আসামি) চা পান করছিলেন। কথাবার্তা শুনে মাছুম জানায় ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং রবিনকে চাকরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে তারা মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেন। এরপর তাদের নিয়মিত কথা হতো। একপর্যায়ে ভারতে চাকরির বিষয়ে রাজি হন রবিন।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, একপর্যায়ে মাছুম রবিনকে জানায়, ভারতে চাকরি করতে হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে রবিনকে নিয়ে যায় মাছুম। সেখানে রবিনের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর রবিনের পাসপোর্ট তারা নেয় ভারতের ভিসার জন্য।
ভিসা পাওয়ার পর রবিনকে মাছুম ও রাজু হাওলাদার আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা ব্যবসায়িক পার্টনার এবং বাংলাদেশ ও ভারতে যৌথভাবে ব্যবসা করে বলে রবিনকে জানায়। পরে রবিনকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রিসিভ করে আসামি শাহীন (৩৫) ও সাগর। সেখানে তারা তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। পরে দিল্লি থেকে ফরিদাবাদ এলাকার নিয়ে রাখে।
তিনি আরও বলেন, ফরিদাবাদে রবিনকে আটক রাখা অবস্থায় মাছুম ও সাগর সেখানে যায়। মাছুমকে পেয়ে রবিন চাকরির কথা বললে টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা রবিনকে একটি কিডনি দেয়ার জন্য প্ররোচিত করে। পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশে ফিরতে পারবে না বলেও জানায়। পরে তাকে নয়াদিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে কিডনির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। কিছু দিন পর তাকে গুজরাটে নিয়ে যায় এবং মুক্তিনগর এলাকায় একটি বাসায় রাখে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আসামিরা ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাটে কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে ভিকটিমের একটি কিডনি নিয়ে নেয়। হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পর ছাড়া পান রবিন। পরে আসামিরা তাকে ভারতের অজ্ঞাত স্থানে ১০-১১ দিন আটকে রাখে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে রবিন জানতে পারেন তার কিডনি দালাল চক্রের কাছে ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। একপর্যায়ে রবিনকে কিছু টাকা দেবে বলে জানায় তারা। বাংলাদেশে থাকা চক্রের সদস্যরা রবিনের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেয়। দেশে ফিরে রবিন বুঝতে পারেন দালালের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, তাদের টার্গেট যাদের আর্থিক চাহিদা আছে। রবিনের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে, তাকে খুব সামান্য পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে। চক্রটি এসব কিডনি চড়া দামে বিক্রি করে? আসছে। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে কলকাতা ও গুজরাটেও কাজ করছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা জানতে পেরেছি চক্রটি এখন পর্যন্ত ভারতে নিয়ে ১০ জনের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া তাদের পাইপলাইনে আরও পাঁচ-ছয় জন ছিল বলে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, চক্রটি কিডনির বিনিময়ে রবিনকে ৬ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন লাখ টাকা দেয়। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাদের কিডনি নেয়া হচ্ছে তাদের কিডনির গ্রহীতারাও বাংলাদেশি।
চক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার
রোববার, ১২ মে ২০২৪
দেশের দরিদ্র মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে যায় একটি চক্র। এরপর দিল্লিতে নিয়ে জিম্মি করে ফেলে। পরে টাকার লোভসহ ভিন্ন কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেয়। এখন পর্যন্ত দেশ থেকে ১০ জন ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে তাদের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ধানমন্ডি থানায় চক্রটির বিরুদ্ধে রবিন নামে এক ভুক্তভোগী মামলা করেন। সেই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ধানমন্ডি থানা পুলিশ এই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। ১১ মে শনিবার রাতে ধানমন্ডির ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সামনে থেকে এবং বাগেরহাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন মো. রাজু হাওলাদার (৩২), শাহেদ উদ্দীন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পী (২৮)। এ ঘটনায় পলাতক রয়েছে মো. মাছুম (২৭), শাহীন (৩৫) ও সাগর ওরফে মোস্তফা (৩৭)-সহ ১০-১২ জন। ধানমন্ডি থানা সূত্রে জানা যায়, এই চক্রটি দেশের দরিদ্র মানুষকে ভালো চাকরি দেয়ার কথা বলে ভারতে নিয়ে বিভিন্ন কৌশলে তাদের কিডনি হাতিয়ে নেয়। ভুক্তভোগী রবিনকে ভারতে চাকরি দেয়ার কথা বলে প্রথমে দিল্লির ফরিদাবাদ এলাকায় নিয়ে যায়। পরে নানান কৌশলে তার কিডনি বিক্রির জন্য রাজি করে। চুক্তি অনুযায়ী তাকে ৬ লাখ টাকা দেয়ার কথা, কিন্তু দিয়েছে ৩ লাখ টাকা।
রোববার (১২ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে মিরপুর ১০ নং শাহ আলী মার্কেটের পেছনে চায়ের দোকানে রবিন তার এক বন্ধুর সঙ্গে সংসারের অভাব-অনটন নিয়ে কথাবার্তা বলছিলেন। এ সময় পাশে বসে মাছুমও (বর্তমানে পলাতক আসামি) চা পান করছিলেন। কথাবার্তা শুনে মাছুম জানায় ভারতে তার ব্যবসা আছে এবং রবিনকে চাকরি দিতে পারবে। একপর্যায়ে তারা মোবাইল নম্বর আদান-প্রদান করেন। এরপর তাদের নিয়মিত কথা হতো। একপর্যায়ে ভারতে চাকরির বিষয়ে রাজি হন রবিন।
ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, একপর্যায়ে মাছুম রবিনকে জানায়, ভারতে চাকরি করতে হলে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকার ল্যাব এইড হাসপাতালে রবিনকে নিয়ে যায় মাছুম। সেখানে রবিনের সঙ্গে গ্রেপ্তারকৃত রাজু হাওলাদারের পরিচয় হয়। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর রবিনের পাসপোর্ট তারা নেয় ভারতের ভিসার জন্য।
ভিসা পাওয়ার পর রবিনকে মাছুম ও রাজু হাওলাদার আসামি শাহেদ উদ্দিন (২২) ও মো. আতাহার হোসেন বাপ্পীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা ব্যবসায়িক পার্টনার এবং বাংলাদেশ ও ভারতে যৌথভাবে ব্যবসা করে বলে রবিনকে জানায়। পরে রবিনকে ভারতের দিল্লিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাকে রিসিভ করে আসামি শাহীন (৩৫) ও সাগর। সেখানে তারা তার পাসপোর্ট নিয়ে নেয়। পরে দিল্লি থেকে ফরিদাবাদ এলাকার নিয়ে রাখে।
তিনি আরও বলেন, ফরিদাবাদে রবিনকে আটক রাখা অবস্থায় মাছুম ও সাগর সেখানে যায়। মাছুমকে পেয়ে রবিন চাকরির কথা বললে টালবাহানা করতে থাকে। একপর্যায়ে আসামিরা রবিনকে একটি কিডনি দেয়ার জন্য প্ররোচিত করে। পাসপোর্ট ছাড়া সে দেশে ফিরতে পারবে না বলেও জানায়। পরে তাকে নয়াদিল্লির এশিয়ান হাসপাতালে নিয়ে কিডনির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করায়। কিছু দিন পর তাকে গুজরাটে নিয়ে যায় এবং মুক্তিনগর এলাকায় একটি বাসায় রাখে।
ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার বলেন, আসামিরা ভয়ভীতি দেখিয়ে গত ৪ মার্চ ভারতের গুজরাটে কিডনি অ্যান্ড স্পেশালাইজড হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করে ভিকটিমের একটি কিডনি নিয়ে নেয়। হাসপাতাল থেকে ৪ দিন পর ছাড়া পান রবিন। পরে আসামিরা তাকে ভারতের অজ্ঞাত স্থানে ১০-১১ দিন আটকে রাখে। হাসপাতালে থাকা অবস্থায় বিভিন্ন মাধ্যমে রবিন জানতে পারেন তার কিডনি দালাল চক্রের কাছে ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। একপর্যায়ে রবিনকে কিছু টাকা দেবে বলে জানায় তারা। বাংলাদেশে থাকা চক্রের সদস্যরা রবিনের স্ত্রী ইশরাত জাহানের বিকাশ নম্বরে ৩ লাখ টাকা দেয়। দেশে ফিরে রবিন বুঝতে পারেন দালালের খপ্পরে পড়ে কিডনি হারিয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, তাদের টার্গেট যাদের আর্থিক চাহিদা আছে। রবিনের ক্ষেত্রে যেটি ঘটেছে, তাকে খুব সামান্য পরিমাণ অর্থ দেয়া হয়েছে। চক্রটি এসব কিডনি চড়া দামে বিক্রি করে? আসছে। চক্রটি বাংলাদেশ থেকে শুরু করে কলকাতা ও গুজরাটেও কাজ করছে। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। আমরা জানতে পেরেছি চক্রটি এখন পর্যন্ত ভারতে নিয়ে ১০ জনের কিডনি হাতিয়ে নিয়েছে। এছাড়া তাদের পাইপলাইনে আরও পাঁচ-ছয় জন ছিল বলে জানতে পেরেছি। তিনি আরও বলেন, চক্রটি কিডনির বিনিময়ে রবিনকে ৬ লাখ টাকা দেয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিন লাখ টাকা দেয়। বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাদের কিডনি নেয়া হচ্ছে তাদের কিডনির গ্রহীতারাও বাংলাদেশি।