রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দখলের চেষ্টা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় ব্যাংকটিতে বিপুল অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে রোববার (১১ আগস্ট) বিক্ষোভ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাংকের ভেতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ব্যাংকার সমাজ’ ব্যানারে বিক্ষোভ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর গুলি করা হয়।
এতে শফিউল্লাহ সরদার, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুর রহমান, বাকি বিল্লাহসহ ৬ জন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা ব্যাংক দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে চলে গেলেও দিনভর বিক্ষোভ চালিয়ে যান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, ব্যাংকে কর্মরত এস আলম গ্রুপের হয়ে কাজ করা কয়েকজন কর্মকর্তা শতাধিক লোক নিয়ে অস্ত্রসহ কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধা দেয়া হয়। তখন ওই সন্ত্রাসীরা এলোপাতারি গুলি চালায়।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকের দখল নিয়ে সংঘাত ও গোলাগুলিতে যারা জড়িত, তাদের শীঘ্রইর আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে এক মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের এ ঘটনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলা হবে। যারা দোষী, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
ইসলামী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরদিন গত মঙ্গলবার এস আলম গ্রুপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেন বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। সে সময় প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত মুজিব কর্নারও ভাঙচুর করা হয়। এরপর গত ৭ ও ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
বিক্ষোভে দাবি তোলা হয়-২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হবে না। কারণ ওই বছরের পর নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মীই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার, সে কারণে তারা পটিয়ার কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় বিপুল অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ জানাতে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে রোববার বিক্ষোভ শুরু করেন ২০১৭ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পটিয়ার কর্মীরাও আশপাশে জড়ো হয়ে ব্যাংকের দিকে রওনা দেন। এরপর পুরোনো কর্মীরা পটিয়ার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলি ছোড়া হলে ৬ জন আহত হন।
পুরনো কর্মকর্তারা বলছেন, এস আলম গ্রুপের হয়ে কাজ করা কয়েকজন কর্মকর্তা শতাধিক লোক নিয়ে অস্ত্রসহ কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে সেখানে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের এসএভিপি ড. শওকত আলী বলেন, আমরা জানতে পেরেছিলাম এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা ব্যাংক দখলের চেষ্টা করবে। সেজন্য আমরা সকাল থেকেই ব্যাংকের সামনে অবস্থান করছিলাম। পরে এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ও বহিরাগতরা সিটি সেন্টারের সামনে থেকে আমাদের কর্মকর্তাদের ওপরে সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে আমাদের ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইসলামী ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের জুন থেকে বাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির প্রায় অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয় তারা। এরপর দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানি ও ব্যক্তি শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করেন। ওই সময়ের পর থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের অবৈধ বলে এখন দাবি করছেন অন্য কর্মকর্তারা। তারা ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ‘লুটেরাদের’ বের করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মাওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাউসার আলী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ এস সালাম গ্রুপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান তারা।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। এরপর ব্যাংকে প্রায় ১৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়, যাদের বেশির ভাগই পটিয়া উপজেলার বলে জানা গেছে। এস আলম গ্রুপের মালিকদের আদি বাস ওই একই অঞ্চলে। ২০১৭ সালের আগে ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজার। ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এই অর্থ ব্যাংকে ফেরত না আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার দিয়ে ব্যাংকটির দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে।
সোমবার, ১২ আগস্ট ২০২৪
রাজধানীর মতিঝিলের দিলকুশায় ইসলামী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় দখলের চেষ্টা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় ব্যাংকটিতে বিপুল অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবাদে রোববার (১১ আগস্ট) বিক্ষোভ চলাকালে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ব্যাংকের ভেতরে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে ‘বৈষম্যবিরোধী ব্যাংকার সমাজ’ ব্যানারে বিক্ষোভ করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ওপর গুলি করা হয়।
এতে শফিউল্লাহ সরদার, আবদুল্লাহ আল মামুন, আবদুর রহমান, বাকি বিল্লাহসহ ৬ জন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে ইসলামী ব্যাংক সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সন্ত্রাসীরা ব্যাংক দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে চলে গেলেও দিনভর বিক্ষোভ চালিয়ে যান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের অভিযোগ, ব্যাংকে কর্মরত এস আলম গ্রুপের হয়ে কাজ করা কয়েকজন কর্মকর্তা শতাধিক লোক নিয়ে অস্ত্রসহ কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে বাধা দেয়া হয়। তখন ওই সন্ত্রাসীরা এলোপাতারি গুলি চালায়।
এদিকে ইসলামী ব্যাংকের দখল নিয়ে সংঘাত ও গোলাগুলিতে যারা জড়িত, তাদের শীঘ্রইর আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগে এক মতবিনিময় সভার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংকের এ ঘটনার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে কথা বলা হবে। যারা দোষী, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।
ইসলামী ব্যাংকের একাধিক কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পরদিন গত মঙ্গলবার এস আলম গ্রুপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেন বিক্ষুব্ধ ব্যাংকাররা। সে সময় প্রধান কার্যালয়ে অবস্থিত মুজিব কর্নারও ভাঙচুর করা হয়। এরপর গত ৭ ও ৮ আগস্ট ব্যাংকারদের বিক্ষোভ করতে দেখা যায়।
বিক্ষোভে দাবি তোলা হয়-২০১৭ সালের পর নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীদের ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়া হবে না। কারণ ওই বছরের পর নিয়োগ পাওয়া বেশির ভাগ কর্মীই চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার, সে কারণে তারা পটিয়ার কর্মকর্তা কর্মচারী হিসেবে পরিচিত। এরই ধারাবাহিকতায় এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা অবস্থায় বিপুল অঙ্কের ঋণ কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ জানাতে ইসলামী ব্যাংক টাওয়ারের সামনে রোববার বিক্ষোভ শুরু করেন ২০১৭ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা কর্মচারীরা। পটিয়ার কর্মীরাও আশপাশে জড়ো হয়ে ব্যাংকের দিকে রওনা দেন। এরপর পুরোনো কর্মীরা পটিয়ার কর্মকর্তা কর্মচারীদের বাধা দিলে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলি ছোড়া হলে ৬ জন আহত হন।
পুরনো কর্মকর্তারা বলছেন, এস আলম গ্রুপের হয়ে কাজ করা কয়েকজন কর্মকর্তা শতাধিক লোক নিয়ে অস্ত্রসহ কার্যালয়ে প্রবেশের চেষ্টা করেন। পরে সেখানে সংঘর্ষ বেঁধে যায় এবং এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের এসএভিপি ড. শওকত আলী বলেন, আমরা জানতে পেরেছিলাম এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তারা ব্যাংক দখলের চেষ্টা করবে। সেজন্য আমরা সকাল থেকেই ব্যাংকের সামনে অবস্থান করছিলাম। পরে এস আলমের নিয়োগকৃত কর্মকর্তা ও বহিরাগতরা সিটি সেন্টারের সামনে থেকে আমাদের কর্মকর্তাদের ওপরে সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে আমাদের ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুইজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইসলামী ব্যাংক সূত্র বলছে, ২০১৭ সালের জুন থেকে বাজার থেকে শেয়ার কিনে ব্যাংকটির মালিকানায় চলে আসে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির প্রায় অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয় তারা। এরপর দেশি-বিদেশি অনেক কোম্পানি ও ব্যক্তি শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করেন। ওই সময়ের পর থেকে নিয়োগপ্রাপ্তদের অবৈধ বলে এখন দাবি করছেন অন্য কর্মকর্তারা। তারা ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠনের মাধ্যমে ‘লুটেরাদের’ বের করে দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন। পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুল মাওলা, অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর কাউসার আলী, ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর আকিজ উদ্দিন, মিফতাহ উদ্দিনসহ এস সালাম গ্রুপের নিয়োগ করা কর্মকর্তাদের ব্যাংক থেকে বের করে দেয়ার দাবি জানান তারা।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় চট্টগ্রামভিত্তিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এস আলম গ্রুপ। এরপর ব্যাংকে প্রায় ১৪ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়, যাদের বেশির ভাগই পটিয়া উপজেলার বলে জানা গেছে। এস আলম গ্রুপের মালিকদের আদি বাস ওই একই অঞ্চলে। ২০১৭ সালের আগে ব্যাংকে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজার। ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা পরিবর্তনের পর এস আলম গ্রুপ ব্যাংক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ বের করে নিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু এই অর্থ ব্যাংকে ফেরত না আসার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকে থাকা ইসলামী ব্যাংকের চলতি হিসাবে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় টাকা ধার দিয়ে ব্যাংকটির দৈনন্দিন কার্যক্রম স্বাভাবিক রেখেছে।