দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করবে। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে বদলি, পদোন্নতি এবং জনবল নিয়োগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে ঘুষবাণিজ্য করেছেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর কামাল বস্তা বস্তা টাকা ঘুষ হিসেবে নিতেন, যা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিস থেকে আদায় করা হতো।
তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেটে যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হারুন অর রশীদ বিশ্বাস টাকার আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন। অভিযোগ রয়েছে যে, হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, সাবেক মন্ত্রীর সিন্ডিকেট জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগসহ গুরুত্বপূর্ণ পদায়নে ঘুষ নিতেন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীর দপ্তর থেকে তালিকা পাঠানো হতো।
দুদক সূত্র বলেন, ‘জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনি¤œ ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিতো এই চক্র। এই সিন্ডিকেটের আশির্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনও জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৩ কোটি টাকা নিতো এই সিন্ডিকেট।’
উদাহরণ তুলে ধরে দুদকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্ল্যা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর মাস খানেক আগে হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন মোল্ল্যা নজরুল। পরবর্তী সময়ে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর হোটেল ওয়েস্টিনে হারুন অর রশীদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি। এ সময় পূর্বের চেকটি ফেরত নিয়ে মোল্ল্যা নজরুল ৩ কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরবর্তী সময়ে বাকি টাকাও দেয়া হয়। এসব টাকা আসাদুজ্জামান খান কামালের ফার্মগেটের বাসায় বস্তায় ভরে পৌঁছে দেয়া হতো বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান (জ্যোতি) পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বদলি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। কামাল তাকে জানান, হারুন অর রশীদের সঙ্গে কথা বলতে। এনিয়ে গত জুন মাসে বাসায় কলহ তৈরি হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে বাসায় ব্যাপক-ভাঙচুর করেন জ্যোতি।
এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থাকে আসাদুজ্জামান খান কামালকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দিতে হতো বলেও দাবি এই দুদক কর্মকর্তার। তিনি বলেন, এর মধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে। তারপরও অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। ফার্মগেট এলাকায় কামালের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে।
ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনো সার্কুলার হলেই সাবেক এই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হতো বলেও জানান মো. আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেই মোতাবেক তাদের নিয়োগ দিতে ফায়ার সার্ভিসকে বাধ্য করতেন সাবেক এই মন্ত্রী। ২০২৩ সালে ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছিলেন ৪৩৬ পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্দেশে সেই তালিকা মোতাবেক নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস।’ প্রতি নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা নিতো কামাল-হারুন সিন্ডিকেট।
শুক্রবার, ১৬ আগস্ট ২০২৪
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ঘুষবাণিজ্যের অভিযোগ তদন্ত করবে। অভিযোগ রয়েছে, মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে বদলি, পদোন্নতি এবং জনবল নিয়োগে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা ঘুষ নেয়া হয়েছে।
দুদকের উপ-পরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুসন্ধান শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবে। অভিযোগে বলা হয়েছে, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং তার সহযোগীরা সিন্ডিকেট করে ঘুষবাণিজ্য করেছেন। মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেয়ার পর কামাল বস্তা বস্তা টাকা ঘুষ হিসেবে নিতেন, যা পুলিশ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এবং ফায়ার সার্ভিস থেকে আদায় করা হতো।
তৎকালীন অতিরিক্ত সচিব হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের নেতৃত্বে গঠিত সিন্ডিকেটে যুগ্ম সচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস, মন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) মনির হোসেন, জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু, এবং প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোল্লা ইব্রাহিম হোসেন অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। হারুন অর রশীদ বিশ্বাস টাকার আদায় বা উত্তোলনে মূল ভূমিকা পালন করতেন। অভিযোগ রয়েছে যে, হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া, সাবেক মন্ত্রীর সিন্ডিকেট জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগসহ গুরুত্বপূর্ণ পদায়নে ঘুষ নিতেন এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীর দপ্তর থেকে তালিকা পাঠানো হতো।
দুদক সূত্র বলেন, ‘জেলায় পুলিশ সুপার নিয়োগে সর্বনি¤œ ৮০ লাখ থেকে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত নিতো এই চক্র। এই সিন্ডিকেটের আশির্বাদ ছাড়া পুলিশের কেউ কোনও জেলায় বা গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন পেতেন না। জেলা পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়নের ক্ষেত্রে ১ থেকে ৩ কোটি টাকা নিতো এই সিন্ডিকেট।’
উদাহরণ তুলে ধরে দুদকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, ২০২২ সালের ৩০ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান ডিআইজি মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম। ৫ কোটি টাকার বিনিময়ে মোল্ল্যা নজরুলকে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে পদায়ন করা হয়। এর মাস খানেক আগে হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের কাছে ৫ কোটি টাকার একটি চেক দেন মোল্ল্যা নজরুল। পরবর্তী সময়ে গাজীপুরের কমিশনার হিসেবে নিয়োগের পর হোটেল ওয়েস্টিনে হারুন অর রশীদের কাছে নগদ ২ কোটি টাকা দেন তিনি। এ সময় পূর্বের চেকটি ফেরত নিয়ে মোল্ল্যা নজরুল ৩ কোটি টাকার একটি চেক দেন। পরবর্তী সময়ে বাকি টাকাও দেয়া হয়। এসব টাকা আসাদুজ্জামান খান কামালের ফার্মগেটের বাসায় বস্তায় ভরে পৌঁছে দেয়া হতো বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছেলে সাফি মোদ্দাসের খান (জ্যোতি) পুলিশের এক কর্মকর্তাকে বদলি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন। কামাল তাকে জানান, হারুন অর রশীদের সঙ্গে কথা বলতে। এনিয়ে গত জুন মাসে বাসায় কলহ তৈরি হয়। ক্ষুব্ধ হয়ে বাসায় ব্যাপক-ভাঙচুর করেন জ্যোতি।
এনজিওর ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ বা ‘এনওসি’ দিতে গিয়ে প্রতি সংস্থাকে আসাদুজ্জামান খান কামালকে ৮০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা দিতে হতো বলেও দাবি এই দুদক কর্মকর্তার। তিনি বলেন, এর মধ্যে ২০১৮ সালে রাজধানীর উত্তরা এলাকার একটি উন্নয়ন সংস্থার এনওসি নিতে গেলে বিপত্তি শুরু হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। এর আগে পুলিশের বিশেষ শাখা, জেলা প্রশাসক, এনএসআই ইতিবাচক প্রতিবেদন দাখিল করে। তারপরও অদৃশ্য কারণে ফাইলটি মাসের পর মাস আটকে রাখা হয় মন্ত্রণালয়ে। বাধ্য হয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নির্বাচনের আগে মন্ত্রীকে ৮৫ লাখ টাকা দেয়া হয়। ফার্মগেট এলাকায় কামালের বাসার সামনে টাকার ব্যাগটি দেয়া হয় তার পরিবারের এক সদস্যের কাছে।
ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সে কোনো সার্কুলার হলেই সাবেক এই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে একটি তালিকা পাঠানো হতো বলেও জানান মো. আকতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘সেই মোতাবেক তাদের নিয়োগ দিতে ফায়ার সার্ভিসকে বাধ্য করতেন সাবেক এই মন্ত্রী। ২০২৩ সালে ২ অক্টোবর ৫৩৫ জনকে জনকে নিয়োগ দেয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। এর মধ্যে ছিলেন ৪৩৬ পুরুষ ফায়ার ফাইটার, ১৫ জন নারী ফায়ার ফাইটার ও ৮৪ জন গাড়িচালক। নিয়োগ কার্যক্রমের শুরুতেই মন্ত্রীর দপ্তর থেকে ২৫০ জনের একটি তালিকা পাঠানো হয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে। সাবেক এই মন্ত্রীর নির্দেশে সেই তালিকা মোতাবেক নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় ফায়ার সার্ভিস।’ প্রতি নিয়োগের জন্য জনপ্রতি ৮ থেকে ১২ লাখ টাকা নিতো কামাল-হারুন সিন্ডিকেট।