alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

রাজধানীর আজিমপুরে ডাকাতি মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও নিয়ে যায় ডাকাতরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/15Nov24/news/baby02.jpg

রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসায় দিনে দুপুরে ডাকাতি করতে ঢুকে মালামালের সঙ্গে একটি দুধের শিশুকেও নিয়ে চলে গেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় লালবাগ টাওয়ারের পাশের একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে। এক নারী সাবলেট ভাড়া নেয়ার একদিন পরেই তার সহযোগীদের মাধ্যমে এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। জড়িতদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক টিম।

শিশুটির ছবিসহ একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, শিশুটির বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ও মা ফারজানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। তারা আজিমপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন।

পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় মৌখিক অভিযোগ দেয়া হলেও সঙ্গে সঙ্গে থানা-পুলিশ তদন্তে নেমেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ওই শিশুসহ কিছু মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্বৃত্তদের চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না।

শিশুর ছবিসহ একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে ফেইসবুকে। যে বাসায় ডাকাতি হয়েছে তার গৃহকর্ত্রীর এক সহকর্মী ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘শুক্রবার আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলি থেকে আমার অফিস কলিগ ফারজানার বাসায় ডাকাতি হয়েছে। ডাকাত (একজন মহিলা আর দুইজন পুরুষ) জিনিসপত্র ও একমাত্র বাচ্চা নিয়ে গেছে।

শিশুটিকে পাওয়া গেলে যোগাযোগের জন্য ওই পোস্টে দুটি মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। দুটি নম্বরে কল করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেন তিনি। তবে ডাকাতির ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানেন না দাবি করে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজী হননি। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ফারজানা আমাদের সহকর্মী। ডাকাতির সঙ্গে জড়িত এক নারীকে ফারজানাদের বাসার একটি রুম সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেয়া হয় এমনটা শুনেছি। ডাকাতির সময় মালামালের সঙ্গে শিশুটিকেও নিয়ে যায় ডাকাতরা। শিশুটির খোঁজ পাওয়া গেলে যোগাযোগের জন্য ফেইসবুক পোস্টে তার নম্বর দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ থানার ওসি শ্যৈনু মারমা বলেন, ‘ডাকাতি করতে এসে দুর্বৃত্তরা বাচ্চা নিয়ে গেছে। শিশুটির মা সরকারি চাকরি করেন, একদিন আগে ওই বাসায় সাবলেট হিসাবে এক নারী সদস্য ভাড়া নেয়। ভাড়া দেয়ার একদিন পরেই এই ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি বা শিশু হারানোর কোনো অভিযোগ থানায় দেয়া হয়নি। তবে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

সিসিটিভি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তবে সিসিটিভি ফুটেজে দুবৃর্ত্তদের আইডেন্টিফাই করা যায়নি। এই ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

ওসি আরও বলেন, ‘পরিচিত হিসেবে কোনো ডকুমেন্টস না রেখেই মেয়েটিকে ওঠানো হয়। সেই মেয়েটি আমাদের প্রধান সাসপেক্ট। কিন্তু তার নাম-ঠিকানা বা কোথায় কাজ করত কিছুই বলতে পারছেন না গৃহকর্ত্রী।’ ঘটনার সময় গৃহকর্ত্রী এবং সাবলেট ওঠা ওই নারী বাসায় ছিলেন জানিয়ে ওসি বলেন, ‘জড়িত অন্যরা এলে সাবলেটে ওঠা মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। তারপর তারা গৃহকর্ত্রীকে বেঁধে অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায়।’ খবর পেয়ে ওই বাসায় গিয়ে সিসিটিভি ভিডিও দেখেছে পুলিশ। সেখানে তিনজন পুরুষকে বাসায় ঢুকতে দেখা যায়। পরে তাদের সঙ্গে সাবলেট ওঠা ওই নারীকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মো. জসীমউদ্দীন বলেন, ‘ডাকাতি করতে এসে দুর্বৃত্তরা বাচ্চা নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।’ মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/15Nov24/news/baby01.jpg

২৫ মিনিটে গৃহকর্ত্রীকে বেঁধে সন্তানকে নিয়ে যায় ‘ডাকাতরা’
শুক্রবার পুলিশ আসার পর প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, ওই বাসা থেকে লুটের পর তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। জাইফা নামে শিশুটির বয়স মোটে ৮ মাস, সে এখনো মায়ের দুধ খায়।

গৃহকর্তা আবু জাফর হাওলাদারের ভাই সোহাগ হাওলাদার বলেন, ১৬-১৭ বছর আগে ফারজানের সঙ্গে আবু জাফরের বিয়ে হয়। তাদের বাচ্চা ছিল না। এ বছর তাদের বাচ্চা হয়। অনেক সাধনার সন্তান তাদের। ঘটনা শুনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফারজানার সহকর্মী ও স্বজনেরা শুক্রবার বাসায় ভিড় করেন।

তাদের পারিবারিক বন্ধু ও ফারজানার সহকর্মীর স্বামী মো. রানা জানান, সকালে ঘটনা শুনে তারা বাসায় এসে দেখেন, আলমারি খোলা, ফারজানার নাকে, কানে সাধারণ যে গয়নাগুলো থাকে সেগুলোও নেই। ফারজানা তাকে বলেছেন, আলমারিতে থাকা দেড় লাখ টাকাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা। যাওয়ার সময় বলে গেছে,‘তোর বাচ্চাকে ইনডিয়ায় পাঠায় দেব।’

গত এক মাস বাচ্চা দেখাশোনার জন্য ফারজানার বাবা-মা এ বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার সকালে তারা বরিশালে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তার আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফারজানা ওই ‘পেয়িং গেস্ট’কে বাসায় রাখেন। সকালবেলা ফারজানার বাবা মা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনজন লোক বাসায় আসে। পেয়িং গেস্ট সেই নারী তাদের দড়জা খুলে দেন।

সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে তারা বাসায় ঢোকে। এর মধ্যে ফারজানাকে বেঁধে লুটপাট শেষে শিশুটিকে নিয়ে ৯টা ২৪ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা।

যেভাবে ঘটনা
মো. রানা জানান, ফারজানা তাদের বলেছেন, পেয়িং গেস্ট হিসেবে বাসা ওঠা ওই নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল স্টাফ বাসে। ওই নারী ফারজানাকে বলেছেন, তিনি সরকারি পরিবহন পুলে চাকরি করেন, পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর ফারজানা তাকে বাসায় থাকার কথা বলেন।

ফারজানা তাদের (রানা ও তার স্ত্রীকে) বলেছেন, সকালে তার বাবা-মা চলে যাওয়ার পর মেয়েটি বাজার করার কথা বলে বাইরে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসেন। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজলে মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। এরপর তিনজন পুরুষ বাসায় ঢুকে পড়ে। ‘ঢুকেই তারা ফারজানার উপর আক্রমণ চালায়। ফারজানাকে বেঁধে টাকা পয়সা লুট করে তার শিশুটিকে নিয়ে তারা চলে যায়।’ এদিকে ফারজানার প্রতিবেশীরা বলছেন, ফারজানা ও জাফর ওই বাসায় ওঠেন দুই বছর আগে। তবে প্রায় দুই মাস ধরে জাফর বাসায় আসতেন না নিয়মিত। ফারজানার বাবা-মাই এখানে থেকে বাচ্চার দেখাশোনা করতেন।

এ ঘটনার পর পুলিশ ফারজানার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে বলে প্রতিবেশীদের ভাষ্য। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ফারজানার স্বামীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।

ওই বাড়ির মালিকের নাম শরিফুল ইসলাম। ওই এলাকায় তার পাশাপাশি দুটো বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলো দেখাশোনা ও ভাড়া আদায় করেন মোহাম্মদ ইসরাফিল সরকার নামের একজন। ইসরাফিল বলেন,‘প্রায় দুই বছর ধরে সাড়ে চৌদ্দ হাজার টাকা ভাড়ায় তারা (ফারজানা ও জাফর) এখানে রয়েছে। তবে গত কয়েক মাস ধরে স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্য চলছিল। স্বামী কয়েক মাস ধরে বাসায় আসে না। তবে ঘটনার পর সকালে বাচ্চার বাবা বাসায় এসেছিল। দুপুর পর্যন্ত এখানেই ছিল।’

ছবি

পীরগাছায় পুলিশের অভিযানে চুরি হওয়া ৩ মোটরসাইকেলসহ গ্রেফতার ৫

ছবি

মুরাদনগরে নারী নির্যাতনের ঘটনায় মূল উসকানিদাতা ভাই শাহ পরাণ: পরিকল্পনায় ‘মব’, ভিডিওও তার ‘নির্দেশে’

ছবি

মুরাদনগরে ধর্ষণ ও ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় চার আসামির তিন দিনের রিমান্ড

ভোটবিহীন নির্বাচন মামলায় নূরুল হুদা কারাগারে, পেলেন না জামিন

ছবি

শেখ রেহানার স্বামী ও তারিক সিদ্দিকের সম্পত্তি জব্দের আদেশ

ছবি

আদালত অবমাননায় শেখ হাসিনার ৬ মাসের কারাদণ্ড

ছবি

বিএনপির মামলায় সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জবানবন্দি রেকর্ড শুরু

ছবি

আবু সাঈদ হত্যা মামলা: বেরোবির সাবেক উপাচার্যসহ ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

তিনটি হত্যা মামলায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার দেখানোর নির্দেশ, আছেন সাবেক এসপিও

ধর্ষণের পর বিবস্ত্র অবস্থায় মারধর, ভিডিও ভাইরালের ঘটনায় গ্রেপ্তার ৫

ভুক্তভোগীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হাইকোর্টের নির্দেশ

রূপগঞ্জে মদ্যপ অবস্থায় অশোভন আচরণ, প্রতিবাদ করায় দুই যুবককে গুলি

নাইক্ষ্যংছড়িতে ইমাম হত্যা,৫ জনকে আসামী করে মামলা

ছবি

হত্যা মামলায় ইনু, কামাল, পলকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার দেখালো আদালত

ছবি

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ মামলায় প্রিন্স মামুনের বিচার শুরু

ছবি

ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অভিযোগ অস্বীকার করে দুদক চেয়ারম্যান, টিউলিপকে বাংলাদেশি নাগরিক বলেও মন্তব্য

ছবি

১৬ হাজার কোটি টাকার সম্পদ অবরুদ্ধ, এস আলম গ্রুপ ও ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আদালতের কঠোর পদক্ষেপ

ছবি

‘ভোটের প্রতারণা’ অভিযোগে রিমান্ড শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি নূরুল হুদার

ছবি

নগদের ১ কোটি টাকার ডাকাতি: রহস্য উদঘাটনের দাবি পুলিশের, উদ্ধার সাড়ে ৩২ লাখ

ছবি

স্বপ্না হত্যা: থানা থেকে সিআইডি, তবু রহস্য অজানা

ছবি

সাক্ষ্যগ্রহণের দিনে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালাল অপহরণ ও হত্যার আসামি

ছবি

আদালত অবমাননার মামলায় আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের সহায়তাকারী নিযুক্ত

ছবি

সবজি ব্যবসায়ী শাওন হত্যা মামলায় সালমান এফ রহমান ৪ দিনের রিমান্ডে, আনিসুল হক গ্রেপ্তার

মিরপুরে প্রকাশ্যে গুলি করে টাকা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ৫ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর

ছবি

কেরাণীগঞ্জে মেয়েকে ধর্ষণের দায়ে সৎ বাবার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

রংপুরের কাউনিয়ায় টিসিবির কার্ড বিতরণে টাকা আদায়ের অভিযোগে ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেফতার

ছবি

মানিলন্ডারিং তদন্ত: তিন সহযোগীর বিদেশ যাত্রায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

হাজিরা না দিলে অনুপস্থিতিতেই শেখ হাসিনার বিচার শুরু হবে: ট্রাইব্যুনাল

ছবি

যুক্তরাজ্যে বসুন্ধরা মালিকপক্ষসহ কয়েকজনের সম্পদ জব্দে উদ্যোগ: দুদক

ছবি

টিউলিপের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা, তাকে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে দেখছে দুদক

ছবি

লাশ টুকরো করে বালু চাপা: ব্যবসায়ী জাকির হত্যা মামলায় চার আসামি আদালতে, একজনের স্বীকারোক্তি

ছবি

বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরত পাঠাতে যুক্তরাজ্যকে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান

অবশেষে বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে বিএনপির ১৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে থানায় মামলা

পীরগাছায় ইসলামিক রিলিফের গরুর মাংস বিতরণের তালিকা তৈরিতে অনিয়মের অভিযোগ

খাগড়াছড়ির গুইমারায় এক পাহাড়ি গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে আটক-১

ছবি

রিমান্ড শেষে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন কারাগারে

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

রাজধানীর আজিমপুরে ডাকাতি মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও নিয়ে যায় ডাকাতরা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/15Nov24/news/baby02.jpg

রাজধানীর আজিমপুরের একটি বাসায় দিনে দুপুরে ডাকাতি করতে ঢুকে মালামালের সঙ্গে একটি দুধের শিশুকেও নিয়ে চলে গেছে দুর্বৃত্তরা। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) সকাল ৯টায় লালবাগ টাওয়ারের পাশের একটি বাসায় এই ঘটনা ঘটে। এক নারী সাবলেট ভাড়া নেয়ার একদিন পরেই তার সহযোগীদের মাধ্যমে এমন ডাকাতির ঘটনা ঘটিয়েছে। জড়িতদের ধরতে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক টিম।

শিশুটির ছবিসহ একটি পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। জানা গেছে, শিশুটির বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ও মা ফারজানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করেন। তারা আজিমপুর এলাকায় ভাড়া থাকেন।

পুলিশ বলছে, এই ঘটনায় মৌখিক অভিযোগ দেয়া হলেও সঙ্গে সঙ্গে থানা-পুলিশ তদন্তে নেমেছে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ওই শিশুসহ কিছু মালামাল নিয়ে যাচ্ছে। তবে দুর্বৃত্তদের চেহারা বোঝা যাচ্ছিলো না।

শিশুর ছবিসহ একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে ফেইসবুকে। যে বাসায় ডাকাতি হয়েছে তার গৃহকর্ত্রীর এক সহকর্মী ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘শুক্রবার আজিমপুর মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টার, লালবাগ টাওয়ারের পাশের গলি থেকে আমার অফিস কলিগ ফারজানার বাসায় ডাকাতি হয়েছে। ডাকাত (একজন মহিলা আর দুইজন পুরুষ) জিনিসপত্র ও একমাত্র বাচ্চা নিয়ে গেছে।

শিশুটিকে পাওয়া গেলে যোগাযোগের জন্য ওই পোস্টে দুটি মোবাইল নম্বর দেয়া হয়েছে। দুটি নম্বরে কল করলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পরিচয় দেন তিনি। তবে ডাকাতির ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানেন না দাবি করে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজী হননি। নাম প্রকাশ না করে তিনি বলেন, ফারজানা আমাদের সহকর্মী। ডাকাতির সঙ্গে জড়িত এক নারীকে ফারজানাদের বাসার একটি রুম সাবলেট হিসেবে ভাড়া দেয়া হয় এমনটা শুনেছি। ডাকাতির সময় মালামালের সঙ্গে শিশুটিকেও নিয়ে যায় ডাকাতরা। শিশুটির খোঁজ পাওয়া গেলে যোগাযোগের জন্য ফেইসবুক পোস্টে তার নম্বর দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ডিএমপির লালবাগ থানার ওসি শ্যৈনু মারমা বলেন, ‘ডাকাতি করতে এসে দুর্বৃত্তরা বাচ্চা নিয়ে গেছে। শিশুটির মা সরকারি চাকরি করেন, একদিন আগে ওই বাসায় সাবলেট হিসাবে এক নারী সদস্য ভাড়া নেয়। ভাড়া দেয়ার একদিন পরেই এই ঘটনা ঘটেছে। ডাকাতি বা শিশু হারানোর কোনো অভিযোগ থানায় দেয়া হয়নি। তবে এমন ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে।

সিসিটিভি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, একজন নারী ও তিনজন পুরুষ ডাকাতির সঙ্গে জড়িত। তবে সিসিটিভি ফুটেজে দুবৃর্ত্তদের আইডেন্টিফাই করা যায়নি। এই ঘটনায় পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

ওসি আরও বলেন, ‘পরিচিত হিসেবে কোনো ডকুমেন্টস না রেখেই মেয়েটিকে ওঠানো হয়। সেই মেয়েটি আমাদের প্রধান সাসপেক্ট। কিন্তু তার নাম-ঠিকানা বা কোথায় কাজ করত কিছুই বলতে পারছেন না গৃহকর্ত্রী।’ ঘটনার সময় গৃহকর্ত্রী এবং সাবলেট ওঠা ওই নারী বাসায় ছিলেন জানিয়ে ওসি বলেন, ‘জড়িত অন্যরা এলে সাবলেটে ওঠা মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। তারপর তারা গৃহকর্ত্রীকে বেঁধে অন্যান্য জিনিসপত্রের সঙ্গে বাচ্চাটিকে নিয়ে চলে যায়।’ খবর পেয়ে ওই বাসায় গিয়ে সিসিটিভি ভিডিও দেখেছে পুলিশ। সেখানে তিনজন পুরুষকে বাসায় ঢুকতে দেখা যায়। পরে তাদের সঙ্গে সাবলেট ওঠা ওই নারীকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।

পুলিশের লালবাগ বিভাগের ডিসি মো. জসীমউদ্দীন বলেন, ‘ডাকাতি করতে এসে দুর্বৃত্তরা বাচ্চা নিয়ে গেছে। এ ঘটনায় পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে।’ মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

https://sangbad.net.bd/images/2024/November/15Nov24/news/baby01.jpg

২৫ মিনিটে গৃহকর্ত্রীকে বেঁধে সন্তানকে নিয়ে যায় ‘ডাকাতরা’
শুক্রবার পুলিশ আসার পর প্রতিবেশীরা জানতে পারেন, ওই বাসা থেকে লুটের পর তাদের একমাত্র সন্তানকে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। জাইফা নামে শিশুটির বয়স মোটে ৮ মাস, সে এখনো মায়ের দুধ খায়।

গৃহকর্তা আবু জাফর হাওলাদারের ভাই সোহাগ হাওলাদার বলেন, ১৬-১৭ বছর আগে ফারজানের সঙ্গে আবু জাফরের বিয়ে হয়। তাদের বাচ্চা ছিল না। এ বছর তাদের বাচ্চা হয়। অনেক সাধনার সন্তান তাদের। ঘটনা শুনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ফারজানার সহকর্মী ও স্বজনেরা শুক্রবার বাসায় ভিড় করেন।

তাদের পারিবারিক বন্ধু ও ফারজানার সহকর্মীর স্বামী মো. রানা জানান, সকালে ঘটনা শুনে তারা বাসায় এসে দেখেন, আলমারি খোলা, ফারজানার নাকে, কানে সাধারণ যে গয়নাগুলো থাকে সেগুলোও নেই। ফারজানা তাকে বলেছেন, আলমারিতে থাকা দেড় লাখ টাকাও নিয়ে গেছে ডাকাতরা। যাওয়ার সময় বলে গেছে,‘তোর বাচ্চাকে ইনডিয়ায় পাঠায় দেব।’

গত এক মাস বাচ্চা দেখাশোনার জন্য ফারজানার বাবা-মা এ বাসাতেই ছিলেন। শুক্রবার সকালে তারা বরিশালে গ্রামের বাড়ি চলে যায়। তার আগে বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফারজানা ওই ‘পেয়িং গেস্ট’কে বাসায় রাখেন। সকালবেলা ফারজানার বাবা মা বেরিয়ে যাওয়ার পরপরই তিনজন লোক বাসায় আসে। পেয়িং গেস্ট সেই নারী তাদের দড়জা খুলে দেন।

সিসি ক্যামেরার ভিডিওতে দেখা গেছে সকাল ৮টা ৫৯ মিনিটে তারা বাসায় ঢোকে। এর মধ্যে ফারজানাকে বেঁধে লুটপাট শেষে শিশুটিকে নিয়ে ৯টা ২৪ মিনিটে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় তারা।

যেভাবে ঘটনা
মো. রানা জানান, ফারজানা তাদের বলেছেন, পেয়িং গেস্ট হিসেবে বাসা ওঠা ওই নারীর সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল স্টাফ বাসে। ওই নারী ফারজানাকে বলেছেন, তিনি সরকারি পরিবহন পুলে চাকরি করেন, পাশাপাশি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছেন। তাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর ফারজানা তাকে বাসায় থাকার কথা বলেন।

ফারজানা তাদের (রানা ও তার স্ত্রীকে) বলেছেন, সকালে তার বাবা-মা চলে যাওয়ার পর মেয়েটি বাজার করার কথা বলে বাইরে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরেও আসেন। কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বাজলে মেয়েটি দরজা খুলে দেয়। এরপর তিনজন পুরুষ বাসায় ঢুকে পড়ে। ‘ঢুকেই তারা ফারজানার উপর আক্রমণ চালায়। ফারজানাকে বেঁধে টাকা পয়সা লুট করে তার শিশুটিকে নিয়ে তারা চলে যায়।’ এদিকে ফারজানার প্রতিবেশীরা বলছেন, ফারজানা ও জাফর ওই বাসায় ওঠেন দুই বছর আগে। তবে প্রায় দুই মাস ধরে জাফর বাসায় আসতেন না নিয়মিত। ফারজানার বাবা-মাই এখানে থেকে বাচ্চার দেখাশোনা করতেন।

এ ঘটনার পর পুলিশ ফারজানার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে বলে প্রতিবেশীদের ভাষ্য। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে ফারজানার স্বামীকে আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি।

ওই বাড়ির মালিকের নাম শরিফুল ইসলাম। ওই এলাকায় তার পাশাপাশি দুটো বাড়ি রয়েছে। বাড়িগুলো দেখাশোনা ও ভাড়া আদায় করেন মোহাম্মদ ইসরাফিল সরকার নামের একজন। ইসরাফিল বলেন,‘প্রায় দুই বছর ধরে সাড়ে চৌদ্দ হাজার টাকা ভাড়ায় তারা (ফারজানা ও জাফর) এখানে রয়েছে। তবে গত কয়েক মাস ধরে স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্য চলছিল। স্বামী কয়েক মাস ধরে বাসায় আসে না। তবে ঘটনার পর সকালে বাচ্চার বাবা বাসায় এসেছিল। দুপুর পর্যন্ত এখানেই ছিল।’

back to top