খেলাপি ঋণ আদায়ে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু, চাপে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ
জনতা ব্যাংকের কাছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বকেয়া থাকার অভিযোগে এস আলম গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক এই বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। নিলামে তোলা সম্পত্তি দুটি হলো—এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড।
জনতা ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে ব্যাংকের পাওনা এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের কাছে দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা। শর্তানুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ব্যাংকটি জানিয়েছে, একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও ঋণ পরিশোধে সাড়া দেয়নি গ্রুপটি। ফলে অর্থঋণ আদালতের আইন মেনে এই সম্পত্তি নিলামে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করতে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে জনতা ব্যাংক।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, জানিয়েছে যে তাদের লিগ্যাল বিভাগ নিলামের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোম্পানির সচিব আল মামুন জানান, ‘লিগ্যাল বিভাগের আইনজীবীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত শিগগিরই জানানো হবে।’
এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটির কাছে নিলামের বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। উত্তরে এস আলম জানিয়েছে, নিলামের সিদ্ধান্তের কারণে কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হলেও তারা উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
জনতা ব্যাংকের তথ্যমতে, এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের ঋণের বিপরীতে গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে মোট দুই হাজার ৬৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ঋণের বিপরীতে বন্ধক রয়েছে দুই হাজার ৯৭১ দশমিক ২৭ শতাংশ জমি।
নিলামে তোলা জমি এবং অবকাঠামো বিক্রির মাধ্যমে ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছে ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।’
২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপ চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। দলটির আমলে সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত গ্রুপটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি অনুভব করছে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তার এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা গ্রুপটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে এবং বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা শেয়ার হস্তান্তরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এস আলম গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচিতি নম্বর (বিন) বন্ধ করে দেওয়ায় গ্রুপটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। নতুন ঋণ পেতে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিগুলোতে তীব্র অর্থসংকট দেখা দিয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে কাঁচামাল সঙ্কটের কারণে গ্রুপের আটটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেগুলো পুনরায় চালু করা হলেও এখন পর্যন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের ঋণ পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধ না করায় সুদসহ ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের শেয়ার দর ২০২৪ সালের আগস্টে ২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে এখন ১০ টাকায় নেমে এসেছে। কোম্পানিটি ২০২৩ সালে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
নিলামের এই উদ্যোগ এস আলম গ্রুপের আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি হলে গ্রুপটির দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত থাকবে এবং নিলামের নোটিসের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ এস আলমের ওপর ব্যাংকগুলোর চাপ বাড়ছে। জনতা ব্যাংকের এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং আর্থিক খাতের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এস আলম গ্রুপের আইনি লড়াই কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।
খেলাপি ঋণ আদায়ে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু, চাপে দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ
বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫
জনতা ব্যাংকের কাছে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ঋণ বকেয়া থাকার অভিযোগে এস আলম গ্রুপের দুই প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি নিলামে তোলার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করতে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক এই বৃহৎ শিল্পগ্রুপ। নিলামে তোলা সম্পত্তি দুটি হলো—এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড।
জনতা ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের কাছে ব্যাংকের পাওনা এক হাজার ৭৭৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা এবং এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের কাছে দুই হাজার তিন কোটি ৩৭ লাখ টাকা। শর্তানুযায়ী কিস্তি পরিশোধ না করায় এসব ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়।
ব্যাংকটি জানিয়েছে, একাধিকবার তাগাদা দেওয়া হলেও ঋণ পরিশোধে সাড়া দেয়নি গ্রুপটি। ফলে অর্থঋণ আদালতের আইন মেনে এই সম্পত্তি নিলামে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করতে সম্প্রতি বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছে জনতা ব্যাংক।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেড, যা পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত, জানিয়েছে যে তাদের লিগ্যাল বিভাগ নিলামের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোম্পানির সচিব আল মামুন জানান, ‘লিগ্যাল বিভাগের আইনজীবীরা দ্রুত পদক্ষেপ নেবেন এবং এ বিষয়ে বিস্তারিত শিগগিরই জানানো হবে।’
এর আগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) কোম্পানিটির কাছে নিলামের বিষয়টি নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়েছিল। উত্তরে এস আলম জানিয়েছে, নিলামের সিদ্ধান্তের কারণে কোম্পানির ব্যবসা পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হলেও তারা উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
জনতা ব্যাংকের তথ্যমতে, এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের ঋণের বিপরীতে গাজীপুর এবং চট্টগ্রামে মোট দুই হাজার ৬৮৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ জমি বন্ধক রাখা হয়েছে। অন্যদিকে, এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের ঋণের বিপরীতে বন্ধক রয়েছে দুই হাজার ৯৭১ দশমিক ২৭ শতাংশ জমি।
নিলামে তোলা জমি এবং অবকাঠামো বিক্রির মাধ্যমে ঋণ আদায়ের পরিকল্পনা করেছে ব্যাংক। জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল জব্বার বলেন, ‘খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংক সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।’
২০২৪ সালের আগস্টে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এস আলম গ্রুপ চরম আর্থিক সংকটে পড়ে। দলটির আমলে সুবিধাভোগী হিসেবে পরিচিত গ্রুপটি রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব সরাসরি অনুভব করছে।
এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। তার এবং পরিবারের সদস্যদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন সংস্থা গ্রুপটির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে এবং বিভিন্ন ব্যাংকে থাকা শেয়ার হস্তান্তরের ওপরও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এস আলম গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা পরিচিতি নম্বর (বিন) বন্ধ করে দেওয়ায় গ্রুপটির আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। নতুন ঋণ পেতে ব্যর্থ হওয়ায় কোম্পানিগুলোতে তীব্র অর্থসংকট দেখা দিয়েছে।
গত ডিসেম্বর মাসে কাঁচামাল সঙ্কটের কারণে গ্রুপের আটটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে সেগুলো পুনরায় চালু করা হলেও এখন পর্যন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড এবং এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলস লিমিটেডের ঋণ পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৭৮০ কোটি টাকার বেশি। ব্যাংক হিসাব অনুযায়ী, ঋণ পরিশোধ না করায় সুদসহ ঋণের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
এস আলম কোল্ড রোল্ড স্টিলসের শেয়ার দর ২০২৪ সালের আগস্টে ২১ টাকা ৭০ পয়সা থেকে কমে এখন ১০ টাকায় নেমে এসেছে। কোম্পানিটি ২০২৩ সালে কর-পরবর্তী নিট মুনাফা করেছিল চার কোটি ৭৮ লাখ টাকা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছিল।
নিলামের এই উদ্যোগ এস আলম গ্রুপের আর্থিক স্থিতিশীলতার ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে বন্ধকী সম্পত্তি বিক্রি হলে গ্রুপটির দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে।
তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যাহত থাকবে এবং নিলামের নোটিসের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ এস আলমের ওপর ব্যাংকগুলোর চাপ বাড়ছে। জনতা ব্যাংকের এই উদ্যোগকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক গোষ্ঠী এবং আর্থিক খাতের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এই সংকট কাটিয়ে উঠতে এস আলম গ্রুপের আইনি লড়াই কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।