তিন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মালিক টুটুল
এইচএসসি পাস সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল এক সময় মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দ্রী গ্রামের মুদি দোকানি ছিলেন। এক পর্যায়ে বিদেশে লোক পাঠানো দালালদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। ওই দালালদের মাধ্যমে গ্রামের কয়েকজনকে বিদেশে পাঠান। এরপর অধিক লোভের আশায় মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নিজেই হয়ে ওঠেন পাচারের মূল হোতা। রাজধানীর বাড্ডায় খুলে বসেন, তিনটি অবৈধ ওভারসিজ এজেন্সি। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক নারী-পুরুষদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, ৭ সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাত থেকে বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বাড্ডায় ‘টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজ’ নামে তিনটি ভুয়া ওভারসিজ এজেন্সিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্যরা হলো, টুটুলের প্রধান সহযোগী এক সময়ের চা দোকানি তৈয়ব আলী, শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন, মেহেরপুরের মো. মারুফ হাসান, জাহাঙ্গীর আলম ও লালটু ইসলাম, আলামিন হোসাইন, আবদুল্লাহ আল মামুন। অভিযানের সময় দুই নারীসহ চার ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১০টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪টি সিল, ১৭টি মোবাইল, ৫টি রেজিস্ট্রার, ব্যাংকের চেকবই, ২টি কম্পিউটার, ৩টি লিফলেট ও নগদ ১০ হাজার টাকা। র্যাব বলছে, ভুয়া ওভারসিজ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে গত ৫-৭ বছরে অন্তত অর্ধশত নারী পুরুষকে বিদেশে পাঠিয়েছে টুটুল। এছাড়াও শতাধিক মানুষের সঙ্গে বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা করেছে চক্রটি।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, এই পাচারকারী চক্রের কিছু সদস্য দেশের বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-তরুণীকে সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বাসা-বাড়িতে লোভনীয় বেতনে কাজ দেয়ার নামে রাজি করিয়ে টুটুল ও তৈয়বের কাছে নিয়ে আসে। এরপর টুটুল ও তৈয়ব ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশে ভুয়া মানি রিসিট দিয়ে ২-৫ লাখ টাকা অগ্রিম নিতেন। পরে চক্রের সদস্যরা ভিকটিমের কাছে নিজেদের উচ্চ শিক্ষিত পরিচয় দিয়ে বাসাবাড়িতে কাজের প্রশিক্ষণ দিতো। চক্রের কয়েকজন সদস্য নিজেদের অফিস স্টাফ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের পাসপোর্ট বানানোর সব কাগজপত্র সংগ্রহ করতো। পাসপোর্ট অফিসের দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করিয়ে আনার পরে ভিকটিমের মনে আর কোন সন্দেহ কাজ করতো না। পরে ভিকটিমদের লোক দেখানো মেডিকেল সম্পন্ন করা হতো।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক বলেন, বৈধ ওভারসিজের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে অর্ধশত নারী পুরুষকে চক্রটি সৌদি আরব (জেদ্দা ও রিয়াদ), জর্ডান ও লেবাননে পাঠিয়েছে। সেখানে চক্রটির আলাদা একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ভিকটিমরা দেশগুলোতে যাওয়ার পর, পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। এরপর নারীদের বিক্রি ও পুরুষদের কম বেতনে অমানবিক কাজ করানো হয়। অনেক সময়, ভিকটিমদের ছাড়ানোর কথা বলে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে ১-২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো টুটুল। আবার, উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভনেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এক্ষেত্রে তৈয়ব আলী নিজেকে একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দিত। শতাধিক মানুষের কাছ থেকে অগ্রিম ২-৫ লাখ টাকা করে নিয়ে প্রতারণাও করেছে চক্রটি।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, এ চক্রের বিরুদ্ধে ২০-২৫ জন অভিযোগ করেছে। চক্রটির সঙ্গে বৈধ কোন ওভারসিজ জড়িত সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-৪ এর সিও বলেন, বৈধ কোন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্য নয়। তবে বৈধতার আড়ালে কেউ যাতে মানবপাচার করতে না পারে সে জন্যই র্যাবের অভিযান। যারা মানবপাচারসহ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে মানুষকে সর্বশান্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
তিন ভুয়া প্রতিষ্ঠানের মালিক টুটুল
বুধবার, ১৩ অক্টোবর ২০২১
এইচএসসি পাস সাইফুল ইসলাম ওরফে টুটুল এক সময় মেহেরপুরের গাংনী থানার কামন্দ্রী গ্রামের মুদি দোকানি ছিলেন। এক পর্যায়ে বিদেশে লোক পাঠানো দালালদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে তার। ওই দালালদের মাধ্যমে গ্রামের কয়েকজনকে বিদেশে পাঠান। এরপর অধিক লোভের আশায় মানবপাচারকারী চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। নিজেই হয়ে ওঠেন পাচারের মূল হোতা। রাজধানীর বাড্ডায় খুলে বসেন, তিনটি অবৈধ ওভারসিজ এজেন্সি। পরে দেশের বিভিন্ন এলাকার মধ্যপ্রাচ্যে যেতে ইচ্ছুক নারী-পুরুষদের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি, ৭ সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (১২ অক্টোবর) রাত থেকে বুধবার (১৩ অক্টোবর) সকাল পর্যন্ত রাজধানীর বাড্ডায় ‘টুটুল ওভারসিজ, লিমন ওভারসিজ ও লয়াল ওভারসিজ’ নামে তিনটি ভুয়া ওভারসিজ এজেন্সিতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার অন্যরা হলো, টুটুলের প্রধান সহযোগী এক সময়ের চা দোকানি তৈয়ব আলী, শাহ্ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন লিমন, মেহেরপুরের মো. মারুফ হাসান, জাহাঙ্গীর আলম ও লালটু ইসলাম, আলামিন হোসাইন, আবদুল্লাহ আল মামুন। অভিযানের সময় দুই নারীসহ চার ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয়েছে ১০টি পাসপোর্ট, ৭টি ফাইল, ৪টি সিল, ১৭টি মোবাইল, ৫টি রেজিস্ট্রার, ব্যাংকের চেকবই, ২টি কম্পিউটার, ৩টি লিফলেট ও নগদ ১০ হাজার টাকা। র্যাব বলছে, ভুয়া ওভারসিজ কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে গত ৫-৭ বছরে অন্তত অর্ধশত নারী পুরুষকে বিদেশে পাঠিয়েছে টুটুল। এছাড়াও শতাধিক মানুষের সঙ্গে বিদেশ পাঠানোর নামে প্রতারণা করেছে চক্রটি।
বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, এই পাচারকারী চক্রের কিছু সদস্য দেশের বেকার ও অস্বচ্ছল যুবক-তরুণীকে সৌদি আরব, জর্ডান ও লেবাননসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশের বাসা-বাড়িতে লোভনীয় বেতনে কাজ দেয়ার নামে রাজি করিয়ে টুটুল ও তৈয়বের কাছে নিয়ে আসে। এরপর টুটুল ও তৈয়ব ভিকটিমদের বিদেশে পাঠানোর উদ্দেশে ভুয়া মানি রিসিট দিয়ে ২-৫ লাখ টাকা অগ্রিম নিতেন। পরে চক্রের সদস্যরা ভিকটিমের কাছে নিজেদের উচ্চ শিক্ষিত পরিচয় দিয়ে বাসাবাড়িতে কাজের প্রশিক্ষণ দিতো। চক্রের কয়েকজন সদস্য নিজেদের অফিস স্টাফ হিসেবে পরিচয় দিয়ে ভিকটিমের পাসপোর্ট বানানোর সব কাগজপত্র সংগ্রহ করতো। পাসপোর্ট অফিসের দালালদের মাধ্যমে পাসপোর্ট করিয়ে আনার পরে ভিকটিমের মনে আর কোন সন্দেহ কাজ করতো না। পরে ভিকটিমদের লোক দেখানো মেডিকেল সম্পন্ন করা হতো।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক বলেন, বৈধ ওভারসিজের মাধ্যমে ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে অর্ধশত নারী পুরুষকে চক্রটি সৌদি আরব (জেদ্দা ও রিয়াদ), জর্ডান ও লেবাননে পাঠিয়েছে। সেখানে চক্রটির আলাদা একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। ভিকটিমরা দেশগুলোতে যাওয়ার পর, পাসপোর্ট নিয়ে নেয়া হয়। এরপর নারীদের বিক্রি ও পুরুষদের কম বেতনে অমানবিক কাজ করানো হয়। অনেক সময়, ভিকটিমদের ছাড়ানোর কথা বলে ভিকটিমের পরিবারের কাছ থেকে ১-২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিতো টুটুল। আবার, উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভনেও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। এক্ষেত্রে তৈয়ব আলী নিজেকে একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্সের ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে ইমিগ্রেশনসহ বিভিন্ন উচ্চ বেতনের চাকরির প্রলোভন দিত। শতাধিক মানুষের কাছ থেকে অগ্রিম ২-৫ লাখ টাকা করে নিয়ে প্রতারণাও করেছে চক্রটি।
অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, এ চক্রের বিরুদ্ধে ২০-২৫ জন অভিযোগ করেছে। চক্রটির সঙ্গে বৈধ কোন ওভারসিজ জড়িত সে বিষয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যাদেরই সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলে মানববন্ধন করেছেন এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব-৪ এর সিও বলেন, বৈধ কোন জনশক্তি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানকে হয়রানি করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশ্য নয়। তবে বৈধতার আড়ালে কেউ যাতে মানবপাচার করতে না পারে সে জন্যই র্যাবের অভিযান। যারা মানবপাচারসহ অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে মানুষকে সর্বশান্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।