কিলিং স্পট কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়ক
৬ জনকে অভিযুক্ত করে শীঘ্রই চার্জশিট
প্রায় দুই বছর দশ মাস টানা তদন্ত করে কক্সবাজারের উখিয়ার মেরিন ড্রাইভ সড়কে আলোচিত জসিম উদ্দিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার প্রাথী নির্বাচন নিয়ে বিরোধসহ পূর্ব শত্রুতার কারণে তাকে বাসা থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া গেলে মামলাটির চার্জশিট দেয়া হবে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের তদন্তে এ হত্যাকা-ের রহস্য বেরিয়ে আসছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ অভিযুক্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পিবিআই ধানমন্ডিস্থ প্রধান কার্যালয় ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সব তথ্য জানা গেছে। উখিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ২৭ জুলাই সন্ধায় দুর্বৃত্তরা জসিম উদ্দিনকে উখিয়ার বাসা থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়। এরপর রাতে সে আর বাসায় ফিরেনি। তার স্বজনরা তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও পায়নি। ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন আকাশমণি গাছ বাগানের কাছের সাগর পাড় থেকে জসিম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।
এ ঘটনায় জসিমের ভাই সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে কক্সবাজার উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। এরপর মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই তদন্ত শুরু করেন। পিবিআই টানা দুই বছরের ও বেশি সময় ধরে তদন্ত করে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার সন্দেহে ৪ অভিযুক্ততে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হত্যাকা-ে নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ের আগাম পরিকল্পনাসহ নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর ফজলুল হক জানান, মামলাটির ক্লু উদ্ঘাটনে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর ঘটনায় জড়িত দুই আসামি এখনও পলাতক রয়েছে।
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামি তোফায়েল আহম্মেদ, মো. জাহাঙ্গীর ও আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকা- সম্পর্কে তথ্য জানা যায়। এরপর আসামি আবদুল কাদের স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
হতাকা-ের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলা হয়েছে, হত্যাকা-ের আগেই অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, রহিম মামা, আশিকসহ কয়েকজন জসিমকে হত্যার পরিকল্পনার ছক তৈরি করেন। পরিকল্পনার পর জসিমকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে জাহাঙ্গীর, আশিক ও শহিদ লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আগ থেকে প্রস্তুত থাকে। জসিম যাওয়ার পর কথা বলার এক পর্যায়ে প্রথমে রহিম লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। হত্যাকা-ের পর লাশ ফেলে সবাই পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার মতামতে বলেছেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আসামিদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা গেছে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আবদুল কাদের, জাহাঙ্গীর, তোফায়েল ও পলাতক আসামি শহিদ পলাতক আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জসিম উদ্দিনকে হত্যা করেছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আলোচিত এ মামলারটি তদন্ত তদারকি করেন। পিবিআই সদর দপ্তরের অনুমতি পাওয়া গেলে আলোচিত এ মামলার শীঘ্রই চার্জশিট দেয়া হবে।
এ দিকে মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন গতকাল বিকেলে সংবাদকে জানান, তার ভাই জসিম উদ্দিন মাছের ব্যবসা করত। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচন নিয়ে এলাকায় বিরোধ ও পারিবারিক বিরোধের কারণে তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। জসিম মাছের ব্যবসাসহ অন্যান্য কাজ করে সংসার চালাত। জসিমকে হত্যার পর থেকে এখনও কয়েকজন আসামি পলাতক রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক সন্ধ্যার পরে অপরাধীদের বিচরণ বেড়ে যায়। তারা সেখানে নানা অপরাধ করে থাকে। মাঝে মধ্যে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা সেখানে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে শুরু করে হিমছড়ি, ইনানী ও পাথরের রানী সি-বিচসহ বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজিসহ নানা পেশার অপরাধীরা মেরিন ড্রাইভ সড়ক, আকাশমণি বাগান এলাকায় নানা বেশে অবস্থান নিয়ে অপরাধ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেখলে তারা পাহাড়ে বা বাগানের ভেতর ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
কিলিং স্পট কক্সবাজার মেরিনড্রাইভ সড়ক
৬ জনকে অভিযুক্ত করে শীঘ্রই চার্জশিট
শনিবার, ২১ মে ২০২২
প্রায় দুই বছর দশ মাস টানা তদন্ত করে কক্সবাজারের উখিয়ার মেরিন ড্রাইভ সড়কে আলোচিত জসিম উদ্দিন হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন করা হয়েছে। উখিয়া জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার প্রাথী নির্বাচন নিয়ে বিরোধসহ পূর্ব শত্রুতার কারণে তাকে বাসা থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। পিবিআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি পাওয়া গেলে মামলাটির চার্জশিট দেয়া হবে।
পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআইয়ের তদন্তে এ হত্যাকা-ের রহস্য বেরিয়ে আসছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৪ অভিযুক্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। পিবিআই ধানমন্ডিস্থ প্রধান কার্যালয় ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সব তথ্য জানা গেছে। উখিয়া থানায় দায়েরকৃত মামলায় বলা হয়েছে, ২০১৯ সালে ২৭ জুলাই সন্ধায় দুর্বৃত্তরা জসিম উদ্দিনকে উখিয়ার বাসা থেকে মোবাইল ফোনে ডেকে নেয়। এরপর রাতে সে আর বাসায় ফিরেনি। তার স্বজনরা তাকে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও পায়নি। ২০১৯ সালের ২৮ জুলাই দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক সংলগ্ন আকাশমণি গাছ বাগানের কাছের সাগর পাড় থেকে জসিম উদ্দিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। তার মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখমের চিহ্ন রয়েছে।
এ ঘটনায় জসিমের ভাই সাহাব উদ্দিন বাদী হয়ে কক্সবাজার উখিয়া থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি প্রথমে থানা পুলিশ তদন্ত করে। এরপর মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই তদন্ত শুরু করেন। পিবিআই টানা দুই বছরের ও বেশি সময় ধরে তদন্ত করে হত্যাকা-ে জড়িত থাকার সন্দেহে ৪ অভিযুক্ততে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হত্যাকা-ে নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের স্বীকারোক্তিতে হত্যাকা-ের আগাম পরিকল্পনাসহ নানা কাহিনী বেরিয়ে আসছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর ফজলুল হক জানান, মামলাটির ক্লু উদ্ঘাটনে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর ঘটনায় জড়িত দুই আসামি এখনও পলাতক রয়েছে।
ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আসামি তোফায়েল আহম্মেদ, মো. জাহাঙ্গীর ও আবদুল কাদেরকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকা- সম্পর্কে তথ্য জানা যায়। এরপর আসামি আবদুল কাদের স্বেচ্ছায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে।
হতাকা-ের ঘটনায় আদালতে স্বীকারোক্তিতে বলা হয়েছে, হত্যাকা-ের আগেই অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর, রহিম মামা, আশিকসহ কয়েকজন জসিমকে হত্যার পরিকল্পনার ছক তৈরি করেন। পরিকল্পনার পর জসিমকে মেরিন ড্রাইভ সড়কে ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে জাহাঙ্গীর, আশিক ও শহিদ লাঠি ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আগ থেকে প্রস্তুত থাকে। জসিম যাওয়ার পর কথা বলার এক পর্যায়ে প্রথমে রহিম লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এরপর দা দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। হত্যাকা-ের পর লাশ ফেলে সবাই পাহাড়ের দিকে পালিয়ে যায়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তার মতামতে বলেছেন, সাক্ষ্য-প্রমাণ, ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও আসামিদের জবানবন্দি পর্যালোচনায় দেখা গেছে গ্রেপ্তারকৃত আসামি আবদুল কাদের, জাহাঙ্গীর, তোফায়েল ও পলাতক আসামি শহিদ পলাতক আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে জসিম উদ্দিনকে হত্যা করেছে। কক্সবাজার জেলা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম আলোচিত এ মামলারটি তদন্ত তদারকি করেন। পিবিআই সদর দপ্তরের অনুমতি পাওয়া গেলে আলোচিত এ মামলার শীঘ্রই চার্জশিট দেয়া হবে।
এ দিকে মামলার বাদী সাহাব উদ্দিন গতকাল বিকেলে সংবাদকে জানান, তার ভাই জসিম উদ্দিন মাছের ব্যবসা করত। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার নির্বাচন নিয়ে এলাকায় বিরোধ ও পারিবারিক বিরোধের কারণে তাকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। জসিম মাছের ব্যবসাসহ অন্যান্য কাজ করে সংসার চালাত। জসিমকে হত্যার পর থেকে এখনও কয়েকজন আসামি পলাতক রয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়ক সন্ধ্যার পরে অপরাধীদের বিচরণ বেড়ে যায়। তারা সেখানে নানা অপরাধ করে থাকে। মাঝে মধ্যে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা সেখানে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। মেরিন ড্রাইভ সড়ক থেকে শুরু করে হিমছড়ি, ইনানী ও পাথরের রানী সি-বিচসহ বিভিন্ন পয়েন্টে স্থানীয় মাদকাসক্ত ছিনতাইকারী, চাঁদাবাজিসহ নানা পেশার অপরাধীরা মেরিন ড্রাইভ সড়ক, আকাশমণি বাগান এলাকায় নানা বেশে অবস্থান নিয়ে অপরাধ করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল দেখলে তারা পাহাড়ে বা বাগানের ভেতর ঢুকে পড়ে বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি মেরিন ড্রাইভ সড়কে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।