alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

আওয়ামী লীগ নেতা টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যা

‘মোল্লা শামিমকে পেলেই তদন্ত ক্লোজ করবে পুলিশ’

সাইফ বাবলু : বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২

যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যার পর মতিঝিল ও শাহজাহানপুর এলাকা নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের কাছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ওই নিয়ন্ত্রণ নিজের কব্জায় নিয়ে আসে জাহিদুল ইসলাম টিপু। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিল্কী হত্যায় যে কালিমা লেগেছিল টিপুর গায়ে সেই কালিমা মোচনের জন্য এমপি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। টিপু অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায় মিল্কীবিরোধী গ্রুপ টিপুর এ অগ্রযাত্রাকে নিজেদের জন্য বিপজ্জনক মনে করেন। ফলে টিপুকে না সরাতে পারলে হারানো সাম্রাজ্য যেমন ফিরে পাবেন না তেমনি অস্তিত্ব সংকটেও পড়বেন তারা। এ কারণে টিপুকে হত্যা করা হয়। আর এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় ঘি দেন আগামী নির্বাচনে মতিঝিল-রমনা থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা ৮ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের একটি অংশ। টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার সোহেল শাহরিয়া ওরফে সুন্দরী সোহেল এবং মারুফ রেজার কাছ থেকে এমন তথ্য মিলেছে।

এদিকে টিপু হত্যায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অপরাধ প্রমাণে মোল্লা শামীমকে গ্রেপ্তার জরুরি মনে করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। পাশাপাশি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার না হওয়ায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ডিবির এক কর্মকর্তা। এখন পর্যন্ত তারা ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, টিপু হত্যায় রোববার (৩১ জুলাই) রাতে সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল এবং মারুফ রেজা সাগর নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা রিমান্ড হেফাজতে আছে। এর আগে গ্রেপ্তার হন জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টিটু, আরিফুর রহমান সোহেল এবং খায়রুল নামের ৪ জন। তাদের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার সুমন শিকদার ওরফে মুসা রিমান্ড হেফাজতে ১৬ থেকে ১৭ জনের নাম বলেছিল। এর মধ্যে কয়েকজন আগেই গ্রেপ্তার হয়েছে। যাদের এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুসার দেয়া তথ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুসা আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে সেখানেও তাদের নাম রয়েছে। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন তারা মোল্লা শামিমকে খুঁজছেন। মোল্লা শামিমকে গ্রেপ্তার করতে পারলে হত্যাকান্ডের মোটিভ কারা, কীভাবে পরিকল্পনায় ছিল, অস্ত্র কোথা থেকে এসেছে, ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল কোথায় আছে তা বের হবে। ‘ডিবি চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি। আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে, তাদের ধরতে অভিযান চলছে। সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ডিবির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মুসার দেয়া স্বীকারোক্তিতে যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই হত্যাকান্ডে নানাভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে।’

ডিবির ভাষ্য, রিমান্ড হেফাজতে সুন্দরী সোহেল ও মারুফ রেজার তথ্য অনুযায়ী, মতিঝিল এলাকায় জাহিদুল ইসলাম টিপুর একক আধিপত্য বিস্তারকে আগামী দিনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকের পথের কাঁটা হতে পারেন বলে মনে করছিলেন টিপুকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পদক সোহেল শাহরিয়ার ওরফে সুন্দরী সোহেল মতিঝিল এলাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। সুন্দরী সোহেলের সঙ্গে আরও দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর আগে মতিঝিলে ক্যাসিনোর চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রক গ্রুপের তোপের মুখে সুন্দরী সোহেল ২০১৬ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোতে অভিযান চালানোর পর সুন্দরী সোহেল দেশে ফিরেন। মতিঝিল এলাকার রাজনৈতিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ তিনি প্রত্যাশা করেন। এ নিয়ে টিপুর সঙ্গে সোহেলের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। অন্য দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যেও এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল শাহারিয়ার ওরফে সুন্দরী সোহেল জানান, তিনি ছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী গ্রুপের। ২০১৩ সালে মিল্কী হত্যার পর তিনি (সুন্দরী সোহেল) টিপুর গ্রুপের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তার ওপর শাহাজানপুরে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি কাউছার আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১ নম্বর আসামি ছিলেন সে। ২০০৮ সালের ৪ মার্চ শাহজাহানপুরে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাউছার আলীকে। তোপের মুখে ২০১৬ সালে তিনি (সুন্দরী সোহেল) পাড়ি জমান কানাডায়। সেখানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোতে অভিযানে পর সোহেল দেশে ফিরেন। মতিঝিল এলাকার রাজনৈতিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ প্রত্যাশা করেন তিনি। এ নিয়ে টিপুর সঙ্গে সোহেলের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য দুই আওয়ামী লীগ নেতার গ্রুপও সুন্দরী সোহেলের সঙ্গে যোগ দেয়।

সুন্দরী সোহেলের ‘বড় ভাই’ ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। ২০১৬ সালে মতিঝিল এজিবি কলোনিতে রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি র‌্যাবের গ্রেপ্তার হওয়া ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ও নাসির উদ্দিন। ওমর ফারুকও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদপ্রত্যাশী। ওদিকে কারাগারে বন্দী ক্যাসিনোবাজ ল্যাংড়া খালেদও টিপুর ওপর ক্ষিপ্ত। সব মিলিয়ে সবারই ‘পথের কাঁটা’ হলেন টিপু। টিপুকে সরিয়ে দিতে পারলে মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিশাল সম্রাজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আসবে।

টিপুকে সরিয়ে দেয়ার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে কিলার মুসা। মুসা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী বলে পরিচিত। আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছে মুসা একটি ভয়ঙ্কর নাম। টেন্ডারবাজির কোটি কোটি টাকার কমিশন যেকোন গ্রুপকে নিয়ে দিতে মুসা কাজ করে। এজন্য প্রতিপক্ষকে খুনের পরিকল্পনা নেয় মুসা। হত্যার বদলা হত্যা। প্রতিশোধ নিতে ‘গ্যাং মার্ডার’। ‘কাট আউট’ পদ্ধতিতে পরিকল্পনা। টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়। সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে খুন করতে হবে। এ জন্য মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। শুটার গ্রুপ ঠিক করা হয়। কোটি টাকায় খুনের চুক্তি হলেও প্রথম দফায় শুটার গ্রুপের কাছে ১৫ লাখ টাকা পৌঁছে যায়। এক গ্রুপ গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসে। অতঃপর কাট আউট পদ্ধতিতে শুটার গ্রুপ রেকি করে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে একাধিক শুটার গ্রুপ খুনের ছক বাস্তবায়ন করে। বাস্তবায়নের ১২ দিন আগেই গত ১২ মার্চ মুসা দুবাই পালিয়ে যায়। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা নেয় খুনের। এর পাশাপাশি ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেপ্তার ল্যাংড়া খালেদের সঙ্গেও শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের যোগাযোগ হয়েছিল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন গাড়িতে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু। এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তার দেয়া তথ্য থেকে ডিবি আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ’র ছোট ভাই যুবলীগ নেতা এরফান উল্লাহ দামালকে গ্রেপ্তার করে। খুনের এক সপ্তাহ পর র‌্যাব এ ঘটনায় মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (৫২), সুমন সিকদার মুসার ছোট ভাই আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) এবং মোরশেদুল আলম ওরফে কাইলা পলাশসহ এ পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পারিপার্শ্বিকতা, সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আগে গ্রেপ্তারদের তথ্য বিশ্লেষণ করে যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার করেছি। আমি মনে করি, অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার বিষয় জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের টিম কাজ করছে। সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শীঘ্রই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

গত ২৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি নামের এক কলেজছাত্রীও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। পরে র‌্যাব ও ডিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে টিপু হত্যা জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে।

ছাত্রদল নেতাসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

ছাত্রদল নেতাসহ ৬ জন গ্রেপ্তার

গ্রাহকের সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় কর্মকর্তা

রাজধানীতে ২০৯টি মামলায় গ্রেপ্তার ২৩৫৭

নারী সাংবাদিককে শ্লীলতাহানি, ঢাকা থেকে একজন গ্রেপ্তার

হত্যার টার্গেট নিয়ে পুলিশের ওপর এই হামলা

ছবি

কোটা আন্দোলন : বাসার ভেতরে গুলিতে শিশুর করুণ মৃত্যু

নাশকতার অভিযোগে সারাদেশে সাড়ে ৫ হাজার গ্রেপ্তার

কিশোরী কন্যাকে ধর্ষণের দায়ে জন্মদাতার যাবজ্জীবন

ছবি

সিলেটে ৭ জুয়াড়ি গ্রেফতার

প্রশ্নপত্র কিনে সহযোগী দুই ভাইকে দিতেন পিএসসির অফিস সহায়ক সাজেদুল

ছবি

গরুকাণ্ডে ফাঁসছেন সাদিক অ্যাগ্রোর ইমরান ও প্রাণিসম্পদের কর্মকর্তারা

ছবি

এমপি আজীম খুন : আরও দুই খুনি ভারতে

ছাত্রীকে আটকে রেখে ধর্ষণ, নির্যাতন

ছবি

প্রশ্ন ফাঁস: বরখাস্ত ৫ কর্মীর বিষয়ে তদন্ত করতে দুদকে চিঠি দিলো পিএসসি

ছবি

স্ত্রীসহ ডিপিডিসির ব্যবস্থাপকের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

প্রশ্নফাঁসের মাস্টারমাইন্ড নোমান সিদ্দিক

ছবি

প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় পিএসসির ২ উপপরিচালকসহ ১৭ জন গ্রেপ্তার

ছবি

অভিযোগ গঠন বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে ড. ইউনূস

ছবি

জয়পুরহাটে তিন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার

ছবি

মুন্সীগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানকে গুলি করে হত্যা

জাটকা নিধন রোধে অভিযান, গ্রেপ্তার ৮ হাজার জেলে

ছবি

ঘোড়াঘাটে টিকটকের আড়ালে সমকামী ভিডিও তৈরি, পুলিশের জালে দুই যুবক

ছবি

এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউরের পরিবারের সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ

ছবি

ড. ইউনূসসহ ৪ জনের জামিনের মেয়াদ ফের বাড়লো

ছবি

"অবৈধ সম্পদ: চিত্রনায়ক শান্ত খানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দায়ের"

ছবি

১৩ বছর পর সাভারে সাবেক এমপির স্ত্রী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন

ছবি

সাজা কখনও স্থগিত হয় না : ড. ইউনূসের মামলার পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট

ছবি

সাবেক ডিসি ও জজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগপত্র দাখিল

ছবি

নকল কসমেটিকস উৎপাদন : ৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা সাড়ে ১৪ লাখ টাকা

চাঁদপুরে কোহিনুর হত্যা মামলায় ২ আসামীর মৃত্যুদণ্ড

ছবি

মাথাচাড়া দিচ্ছে নিত্য-নতুন সাইবার অপরাধ: সিক্যাফ’র গবেষণা

ছবি

কেন্দ্রে প্রভাষকসহ ১০ শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছাগলকাণ্ডে বেরিয়ে আসছে আরও দুর্নীতি

সোনারগাঁয়ে বিচার শালিসে সন্ত্রাসী হামলায় দলিল লেখক গুলিবিদ্ধ

ছবি

নরসিংদীতে ভূয়া পুলিশ আটক

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

আওয়ামী লীগ নেতা টিপু ও কলেজছাত্রী প্রীতি হত্যা

‘মোল্লা শামিমকে পেলেই তদন্ত ক্লোজ করবে পুলিশ’

সাইফ বাবলু

বুধবার, ০৩ আগস্ট ২০২২

যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যার পর মতিঝিল ও শাহজাহানপুর এলাকা নিয়ন্ত্রণ চলে যায় আওয়ামী লীগের একটি গ্রুপের কাছে। কিন্তু ধীরে ধীরে ওই নিয়ন্ত্রণ নিজের কব্জায় নিয়ে আসে জাহিদুল ইসলাম টিপু। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মিল্কী হত্যায় যে কালিমা লেগেছিল টিপুর গায়ে সেই কালিমা মোচনের জন্য এমপি নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। টিপু অনেকটা এগিয়ে যাওয়ায় মিল্কীবিরোধী গ্রুপ টিপুর এ অগ্রযাত্রাকে নিজেদের জন্য বিপজ্জনক মনে করেন। ফলে টিপুকে না সরাতে পারলে হারানো সাম্রাজ্য যেমন ফিরে পাবেন না তেমনি অস্তিত্ব সংকটেও পড়বেন তারা। এ কারণে টিপুকে হত্যা করা হয়। আর এ হত্যাকান্ডের পরিকল্পনায় ঘি দেন আগামী নির্বাচনে মতিঝিল-রমনা থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা ৮ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী আওয়ামী লীগের একটি অংশ। টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার সোহেল শাহরিয়া ওরফে সুন্দরী সোহেল এবং মারুফ রেজার কাছ থেকে এমন তথ্য মিলেছে।

এদিকে টিপু হত্যায় যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের অপরাধ প্রমাণে মোল্লা শামীমকে গ্রেপ্তার জরুরি মনে করছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি। পাশাপাশি হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার না হওয়ায় মামলার তদন্ত কার্যক্রম শেষ করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে ডিবির এক কর্মকর্তা। এখন পর্যন্ত তারা ২২ জনকে গ্রেপ্তার করে।

ডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, টিপু হত্যায় রোববার (৩১ জুলাই) রাতে সোহেল শাহরিয়ার ওরফে শটগান সোহেল এবং মারুফ রেজা সাগর নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা রিমান্ড হেফাজতে আছে। এর আগে গ্রেপ্তার হন জাতীয় পার্টির নেতা জুবের আলম খান রবিন, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুর রহমান টিটু, আরিফুর রহমান সোহেল এবং খায়রুল নামের ৪ জন। তাদের রিমান্ড হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

ডিবির ওই কর্মকর্তা বলেন, টিপু হত্যায় গ্রেপ্তার সুমন শিকদার ওরফে মুসা রিমান্ড হেফাজতে ১৬ থেকে ১৭ জনের নাম বলেছিল। এর মধ্যে কয়েকজন আগেই গ্রেপ্তার হয়েছে। যাদের এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মুসার দেয়া তথ্যেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুসা আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছে সেখানেও তাদের নাম রয়েছে। অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তা বলেন, এখন তারা মোল্লা শামিমকে খুঁজছেন। মোল্লা শামিমকে গ্রেপ্তার করতে পারলে হত্যাকান্ডের মোটিভ কারা, কীভাবে পরিকল্পনায় ছিল, অস্ত্র কোথা থেকে এসেছে, ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল কোথায় আছে তা বের হবে। ‘ডিবি চেষ্টা করেও এখন পর্যন্ত হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করতে পারেনি। আরও কয়েকজনের নাম রয়েছে এ হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে, তাদের ধরতে অভিযান চলছে। সবকিছু মিলিয়ে তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ডিবির কর্মকর্তাদের ভাষ্য, মুসার দেয়া স্বীকারোক্তিতে যে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তারা প্রত্যেকেই হত্যাকান্ডে নানাভাবে নেতৃত্ব দিয়েছে।’

ডিবির ভাষ্য, রিমান্ড হেফাজতে সুন্দরী সোহেল ও মারুফ রেজার তথ্য অনুযায়ী, মতিঝিল এলাকায় জাহিদুল ইসলাম টিপুর একক আধিপত্য বিস্তারকে আগামী দিনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অনেকের পথের কাঁটা হতে পারেন বলে মনে করছিলেন টিপুকে। স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পদক সোহেল শাহরিয়ার ওরফে সুন্দরী সোহেল মতিঝিল এলাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। সুন্দরী সোহেলের সঙ্গে আরও দুইজন আওয়ামী লীগ নেতা নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এর আগে মতিঝিলে ক্যাসিনোর চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রক গ্রুপের তোপের মুখে সুন্দরী সোহেল ২০১৬ সালে কানাডায় পাড়ি জমান। সেখানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোতে অভিযান চালানোর পর সুন্দরী সোহেল দেশে ফিরেন। মতিঝিল এলাকার রাজনৈতিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ তিনি প্রত্যাশা করেন। এ নিয়ে টিপুর সঙ্গে সোহেলের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। অন্য দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যেও এ নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।

জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল শাহারিয়ার ওরফে সুন্দরী সোহেল জানান, তিনি ছিলেন মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক খান মিল্কী গ্রুপের। ২০১৩ সালে মিল্কী হত্যার পর তিনি (সুন্দরী সোহেল) টিপুর গ্রুপের কাছে কোণঠাসা হয়ে পড়েন। তার ওপর শাহাজানপুরে ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি কাউছার আলী হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত ১ নম্বর আসামি ছিলেন সে। ২০০৮ সালের ৪ মার্চ শাহজাহানপুরে দিনে-দুপুরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় ৩৪নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি কাউছার আলীকে। তোপের মুখে ২০১৬ সালে তিনি (সুন্দরী সোহেল) পাড়ি জমান কানাডায়। সেখানে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগ কানাডা শাখার সাধারণ সম্পাদক পদ পান। ২০১৯ সালে ক্যাসিনোতে অভিযানে পর সোহেল দেশে ফিরেন। মতিঝিল এলাকার রাজনৈতিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ডে একক আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করেন। মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদ প্রত্যাশা করেন তিনি। এ নিয়ে টিপুর সঙ্গে সোহেলের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য দুই আওয়ামী লীগ নেতার গ্রুপও সুন্দরী সোহেলের সঙ্গে যোগ দেয়।

সুন্দরী সোহেলের ‘বড় ভাই’ ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক। ২০১৬ সালে মতিঝিল এজিবি কলোনিতে রিজভী হাসান ওরফে বোঁচা বাবু হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি র‌্যাবের গ্রেপ্তার হওয়া ওমর ফারুক, আবু সালেহ শিকদার ও নাসির উদ্দিন। ওমর ফারুকও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতির পদপ্রত্যাশী। ওদিকে কারাগারে বন্দী ক্যাসিনোবাজ ল্যাংড়া খালেদও টিপুর ওপর ক্ষিপ্ত। সব মিলিয়ে সবারই ‘পথের কাঁটা’ হলেন টিপু। টিপুকে সরিয়ে দিতে পারলে মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ডের বিশাল সম্রাজ্য নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আসবে।

টিপুকে সরিয়ে দেয়ার সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে কিলার মুসা। মুসা শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সহযোগী বলে পরিচিত। আন্ডারওয়ার্ল্ডের কাছে মুসা একটি ভয়ঙ্কর নাম। টেন্ডারবাজির কোটি কোটি টাকার কমিশন যেকোন গ্রুপকে নিয়ে দিতে মুসা কাজ করে। এজন্য প্রতিপক্ষকে খুনের পরিকল্পনা নেয় মুসা। হত্যার বদলা হত্যা। প্রতিশোধ নিতে ‘গ্যাং মার্ডার’। ‘কাট আউট’ পদ্ধতিতে পরিকল্পনা। টার্গেট নির্ধারণ করে দেয়। সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে খুন করতে হবে। এ জন্য মতিঝিলের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণকারী শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। শুটার গ্রুপ ঠিক করা হয়। কোটি টাকায় খুনের চুক্তি হলেও প্রথম দফায় শুটার গ্রুপের কাছে ১৫ লাখ টাকা পৌঁছে যায়। এক গ্রুপ গুলি ও আগ্নেয়াস্ত্র সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে রেখে আসে। অতঃপর কাট আউট পদ্ধতিতে শুটার গ্রুপ রেকি করে। এরপর নির্দিষ্ট সময়ে একাধিক শুটার গ্রুপ খুনের ছক বাস্তবায়ন করে। বাস্তবায়নের ১২ দিন আগেই গত ১২ মার্চ মুসা দুবাই পালিয়ে যায়। সেখানে শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের সঙ্গে বসে পরিকল্পনা নেয় খুনের। এর পাশাপাশি ক্যাসিনোকান্ডে গ্রেপ্তার ল্যাংড়া খালেদের সঙ্গেও শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানের যোগাযোগ হয়েছিল।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এক কর্মকর্তা জানান, গত ২৪ মার্চ রাত ১০টার দিকে শাহজাহানপুরের আমতলা এলাকায় অস্ত্রধারীর গুলিতে নিহত হন গাড়িতে থাকা মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু। এলোপাতাড়ি গুলিতে নিহত হন প্রীতি নামে এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর শুটার মাসুম মোহাম্মদ ওরফে আকাশকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। তার দেয়া তথ্য থেকে ডিবি আবৃত্তিকার আহকাম উল্লাহ’র ছোট ভাই যুবলীগ নেতা এরফান উল্লাহ দামালকে গ্রেপ্তার করে। খুনের এক সপ্তাহ পর র‌্যাব এ ঘটনায় মতিঝিলের ১০ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক (৫২), সুমন সিকদার মুসার ছোট ভাই আবু সালেহ শিকদার ওরফে শুটার সালেহ (৩৮), নাছির উদ্দিন ওরফে কিলার নাছির (৩৮) এবং মোরশেদুল আলম ওরফে কাইলা পলাশসহ এ পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা পারিপার্শ্বিকতা, সাক্ষ্যপ্রমাণ এবং আগে গ্রেপ্তারদের তথ্য বিশ্লেষণ করে যাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট প্রমাণ পেয়েছি শুধু তাদেরই গ্রেপ্তার করেছি। আমি মনে করি, অন্যায়ভাবে কাউকে গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা হচ্ছে না। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার বিষয় জানতে চাইলে গোয়েন্দা পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের টিম কাজ করছে। সবাইকে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শীঘ্রই আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হবে।

গত ২৪ মার্চ রাজধানীর শাহজাহানপুরে আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম টিপুকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এ সময় গাড়ির পাশে রিকশায় থাকা সামিয়া আফরান প্রীতি নামের এক কলেজছাত্রীও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ ঘটনায় টিপুর গাড়িচালক মুন্নাও গুলিবিদ্ধ হন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের পর ওইদিন রাতেই শাহজাহানপুর থানায় নিহত টিপুর স্ত্রী ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফারহানা ইসলাম ডলি বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন। এতে অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়। পরে র‌্যাব ও ডিবি পৃথক অভিযান চালিয়ে টিপু হত্যা জড়িতদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে।

back to top