দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শণ এবং পুনরুজ্জীবন দান করার লক্ষ্য নিয়ে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব।
শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরের ময়ুরপঙ্খী মঞ্চে মাসব্যাপী এই মেলা ও উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শণ এবং পুনরুজ্জীবন দান করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র রক্ষায় সরকারের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। লোক কারু শিল্পের শিল্পীদের উৎপাদিত পণ্য সারা বছর যাতে প্রদর্শন ও বিপণনের ব্যবস্থা করা হয় সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, পানাম নগর আমাদের মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পানাম নগরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনগুলো কিভাবে সংস্কার করা যায় সেটি নিয়েও কাজ করবে মন্ত্রণালয়। পানাম নগরের স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের পর হ্যারিটেজ মিউজিয়াম ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সারাদেশে সংস্কৃতি উৎসব ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এসময় প্রধান অতিথি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ফ্যাসিস্ট সরকার উল্লেখ করে বলেন, আমাদের পাশের দেশে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোষরা মন্দিরে হামলা করার পরিকল্পনা করেছিল। সেই হামলার চক্রান্ত আমাদের দেশের মানুষ রুখে দিয়েছে। ফলে সেই চক্রান্ত সফল হয়নি। এখনো পাশের দেশে বসে তারা বিভিন্ন চক্রান্ত করছে। গত ৫ আগস্টের পর দেশে অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ১৫-২০দিন দেশের কোথাও পুলিশের ভূমিকা দেখা যায়নি। পুলিশের অনুপস্থিতিতে আমরা ওইসময় মুসলমানরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছি। আমরা নিজেরা নিজেদের মহল্লা পাহাড়া দিয়েছি, আমরা নিজেরা নিজেদের পাশে দাড়িয়েছি। এটাই মূলত বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব হেলাল উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার। এসময় স্থানীয় বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৫জন কারুশিল্পীকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির কোমড় তাঁত শিল্পে নিলাম চিসিং, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া ও মমি পুতুল শিল্পে বীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর ও করিমগঞ্জের টেপা পুতুল শিল্পে সুনীল পালসহ প্রত্যেককে এক ভরি ওজনের স্বর্ণ পদক, এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন আজীবন সম্মানা দেয়া হয় সোনারগাঁয়ের নকশি কাঁথা শিল্পে হোসনে আরা ও কুমিল্লার তামা কাঁসা শিল্পে মানিক সরকারকে। তাদের প্রত্যেককে দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণ পদক, তিন লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ময়ূর পঙ্খী মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। পরে অতিথিরা মেলা চত্বর ঘুরে দেখেন।
এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের পণ্য প্রদর্শণ ও বিক্রির জন্য ১০০ টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার পাশাপাশি লোকজ মঞ্চে প্রতিদিন বাউলগান, কবিগান, পালাগান, জারি-সারি ও ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান এবং লোক জীবন প্রদর্শণীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়াও মেলায় দেশের লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী স্থানীয় স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে প্রদর্শণ করা হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কারুশিল্পীরা তাদের শিল্পকর্ম তৈরি প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য যে স্টল পেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদাহ ও মাগুরার শেলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ী, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের কাঠের পুতুল, কাঠের কারুশিল্প ও নকশী কাঁথা, সিলেটের শীতল পাটি, ধামরাইয়ের তামা কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, বান্দরবান ও রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির কারুপণ্য ও টাঙ্গাইলের বাঁশের কারুশিল্প। মাসব্যাপী লোকজ উৎসব প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং চলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শণ এবং পুনরুজ্জীবন দান করার লক্ষ্য নিয়ে শনিবার (১৮ জানুয়ারি) থেকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে শুরু হয়েছে মাসব্যাপী লোককারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসব।
শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরের ময়ুরপঙ্খী মঞ্চে মাসব্যাপী এই মেলা ও উৎসবের উদ্বোধন করা হয়। মেলার উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের লুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শণ এবং পুনরুজ্জীবন দান করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সংস্কৃতির বৈচিত্র রক্ষায় সরকারের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। লোক কারু শিল্পের শিল্পীদের উৎপাদিত পণ্য সারা বছর যাতে প্রদর্শন ও বিপণনের ব্যবস্থা করা হয় সে বিষয়টি নিয়ে কাজ করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়।
তিনি বলেন, পানাম নগর আমাদের মন্ত্রণালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। পানাম নগরের পুরনো জরাজীর্ণ ভবনগুলো কিভাবে সংস্কার করা যায় সেটি নিয়েও কাজ করবে মন্ত্রণালয়। পানাম নগরের স্থাপনাগুলো সংরক্ষণের পর হ্যারিটেজ মিউজিয়াম ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সারাদেশে সংস্কৃতি উৎসব ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
এসময় প্রধান অতিথি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ফ্যাসিস্ট সরকার উল্লেখ করে বলেন, আমাদের পাশের দেশে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট ও তাদের দোষরা মন্দিরে হামলা করার পরিকল্পনা করেছিল। সেই হামলার চক্রান্ত আমাদের দেশের মানুষ রুখে দিয়েছে। ফলে সেই চক্রান্ত সফল হয়নি। এখনো পাশের দেশে বসে তারা বিভিন্ন চক্রান্ত করছে। গত ৫ আগস্টের পর দেশে অন্যরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ১৫-২০দিন দেশের কোথাও পুলিশের ভূমিকা দেখা যায়নি। পুলিশের অনুপস্থিতিতে আমরা ওইসময় মুসলমানরা হিন্দুদের মন্দির পাহারা দিয়েছি। আমরা নিজেরা নিজেদের মহল্লা পাহাড়া দিয়েছি, আমরা নিজেরা নিজেদের পাশে দাড়িয়েছি। এটাই মূলত বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনে পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব হেলাল উদ্দিন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক এ কে এম আজাদ সরকার। এসময় স্থানীয় বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান, সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সূরা সদস্য অধ্যাপক ইকবাল হোসেনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থী উপস্থিত ছিলেন।
মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ৫জন কারুশিল্পীকে সম্মাননা ও স্বর্ণপদক দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্টির কোমড় তাঁত শিল্পে নিলাম চিসিং, সোনারগাঁয়ের হাতি ঘোড়া ও মমি পুতুল শিল্পে বীরেন্দ্র চন্দ্র সূত্রধর ও করিমগঞ্জের টেপা পুতুল শিল্পে সুনীল পালসহ প্রত্যেককে এক ভরি ওজনের স্বর্ণ পদক, এক লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়।
শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন আজীবন সম্মানা দেয়া হয় সোনারগাঁয়ের নকশি কাঁথা শিল্পে হোসনে আরা ও কুমিল্লার তামা কাঁসা শিল্পে মানিক সরকারকে। তাদের প্রত্যেককে দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণ পদক, তিন লাখ টাকার চেক প্রদান করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ময়ূর পঙ্খী মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। পরে অতিথিরা মেলা চত্বর ঘুরে দেখেন।
এবারের মেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কারুশিল্পীদের পণ্য প্রদর্শণ ও বিক্রির জন্য ১০০ টি স্টল স্থান পেয়েছে। মেলার পাশাপাশি লোকজ মঞ্চে প্রতিদিন বাউলগান, কবিগান, পালাগান, জারি-সারি ও ভাটিয়ালি, ভাওয়াইয়া গান এবং লোক জীবন প্রদর্শণীসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান পরিবেশিত হবে। এছাড়াও মেলায় দেশের লুপ্তপ্রায় গ্রামীণ জীবনের বিভিন্ন দৃশ্যাবলী স্থানীয় স্কুল কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মাধ্যমে প্রদর্শণ করা হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে কারুশিল্পীরা তাদের শিল্পকর্ম তৈরি প্রদর্শন ও বিক্রয়ের জন্য যে স্টল পেয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছে ঝিনাইদাহ ও মাগুরার শেলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ী, চট্টগ্রামের তালপাতার হাতপাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁয়ের কাঠের পুতুল, কাঠের কারুশিল্প ও নকশী কাঁথা, সিলেটের শীতল পাটি, ধামরাইয়ের তামা কাঁসা ও পিতলের কারুশিল্প, বান্দরবান ও রাঙামাটির ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির কারুপণ্য ও টাঙ্গাইলের বাঁশের কারুশিল্প। মাসব্যাপী লোকজ উৎসব প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এবং চলবে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।