alt

শিক্ষা

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে

মানসম্মত পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন

রাকিব উদ্দিন : সোমবার, ২১ আগস্ট ২০২৩

সরকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম দামে পাঠ্যবই ছাপতে চায় ছাপাখানা মালিকরা। এ কারণে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য যথাযথ মানের পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। ছাপাখানা মালিকদের ‘অতি-প্রতিযোগিতার’ কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা মনে করছেন।

পৃথক দরপত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা হয়। প্রাথমিক স্তরের দরপত্রের মূল্যায়ন কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রাথমিকের বই প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে দরপত্র জমা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন ঠিকাদাররা। এর চেয়েও কিছুটা কমে অর্থাৎ প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কাজ পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বাজার দর হিসেব করেই ভালো দামে মানসম্মত বই ছাপতে চাই। কিন্তু সব ব্যবসায়ী কাজ পেতে চান; এই অতিপ্রতিযোগিতার কারণে সেটি হয়ে উঠে না।’

‘এনসিটিবি দামে ঠকে না, মানে ঠকে’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এক সময় দেশে বই ছাপার ওয়েব মেশিন ছিল হাতে গুনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের। বর্তমানে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের এই মেশিন রয়েছে। তারা সবাই যে কোনমূল্যে বই ছাপার কাজ পেতে চান।’

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রাথমিকের প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপতে প্রতি ফর্মার (৮ পৃষ্ঠায় এক ফর্মা) প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় তিন টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু ছাপাখানা মালিকরা প্রতি ফর্মার খরচ দুই টাকা ২০ পয়সা হিসেব কষেই কাজ নিচ্ছেন।

একই স্তরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ছাপতে প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত ব্যয় তিন টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু ছাপাখানা মালিকরা এই দুই শ্রেণীর বই প্রতি ফর্মার ব্যয় মাত্র দুই টাকা হিসেব কষেই কাজ পেতে যাচ্ছেন।

মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণ কাজের দরপত্র মূল্যায়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই দুই শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত ব্যয় তিন টাকা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ছাপাখানা মালিকরা এই দুই শ্রেণীর বই ছাপতে প্রতি ফর্মার খরচ এক টাকা ৭০ পয়সা ধরেই কাজ পাচ্ছেন।

অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। অষ্টমের বই ছাপার প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত ব্যয় দুই টাকা ৬৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বই ছাপার কাজও ফর্মা প্রতি ব্যয় দুই টাকার কমে ছাপাখানা মালিকরা কাজ নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিকের বই ছাপার প্রাক্কলিত ব্যয় কিছুটা ‘কম’ ধরার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান, ‘প্রাথমিকের বই ছাপতে হবে ৮০ গ্রামেজ কাগজে। এটি ভালো মানের কাগজ। আর গত বছর দেশে ৮০ গ্রামেজ কাগজের সঙ্কট ছিল। সে অভিজ্ঞতা থেকে এবার মাধ্যমিকের বই ছাপতে ৭০ গ্রামেজ কাগজ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার এই স্তরের বইয়ের আকারও কিছুটা বড়। তাছাড়া অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের দরপত্র আহ্বানের সময় বাজারে কাগজের দামও কিছুটা কম ছিল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন ছাপাখানা মালিক সংবাদকে জানান, ছাপাখানা মালিকরা তিন-চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। তারা যে কোনমূল্যে কাজ ‘বাগাতে’ চান। এ সুযোগ নিচ্ছে এনসিটিবি।

এ ছাড়াও এবার মানসম্মত পাঠ্যবই ছাপা ‘চ্যালেঞ্জের’ মুখে পড়বে দাবি করে ওই ছাপাখানা মালিক বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তখন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মানসম্মত বই নিশ্চিত করা এনসিটিবির জন্যও কঠিন হবে। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো কাগজ কিনেই বই ছাপাতে থাকবেন। তখন এনসিটিবির কিছু করার থাকবে না।

এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তকে কাগজের মান ঠিক রাখার জন্য দরপত্রে স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে দেয়। এবার দরপত্রের কারিগরি নির্দেশনা ও নিয়ম মোতাবেক ব্রাইটনেস (উজ্জ্বলতা) থাকবে ৮০ শতাংশ। একইভাবে প্রাথমিকের বই ছাপার কাগজের পুরত্ব (জিএসএম) ৮০ এবং মাধ্যমিকের বই ছাপার কাগজের জিএসএম ৭০ শতাংশ থাকার কথা। আর ব্যবহৃত কাগজ কতখানি মজবুত তার নির্দেশনাকারী ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ নূন্যতম ১২ শতাংশ থাকার কথা।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরির বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপার লক্ষ্য নির্র্ধারণ করেছে এনসিটিবি।

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই পাঠ্যপুস্তক ছাপার কার্যক্রম শেষ করতে চান।

‘নভেম্বরের মধ্যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপা শেষ হয়ে যাবে’-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ছাপার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। দরপত্র নিয়ে এবার কোন সমস্যা হয়নি। সবকিছু দ্রুতই এগুচ্ছে।’

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের দরপত্র আহ্বান হলেও এর মূল্যায়ন শেষ হয়নি। সবকটি বইয়ের পা-ুলিপিও চূড়ান্ত হয়নি।

আর নবম শ্রেণীর কোন বইয়ের পাঠ্যক্রম (পান্ডুলিপি) সোমবার (২১ আগস্ট) নাগাদ চূড়ান্ত হয়নি। এসব বইয়ের পান্ডুলিপি প্রণয়নের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীতে ১৩টি করে বিষয়ের বই পাঠদান হবে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে মোট দশটি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতি শ্রেণীতে মোট বই ১৩টি।

২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন বছরের শুরুতে সারাদেশের শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতি বছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে।

ছবি

নকল-র‌্যাগিং : একযোগে জবির অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার

ছবি

কাটলো জটিলতা, অক্টোবরেই প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা

ছবি

জবির বিবাহিত ও গর্ভবতী ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ

জাবিতে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু হচ্ছে নভেম্বরে

ছবি

এসএসসি নির্বাচনী পরীক্ষার ফল ও ফরম পূরণের তারিখ নির্ধারণ

ছবি

একাদশে ভর্তি, শেষ ধাপের ফল প্রকাশ রাতে

ছবি

সংঘর্ষের পর দুই হলে তল্লাশি, পাঁচ বহিরাগত আটক

ছবি

তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১১০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এডিবি

ছবি

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানাল পিএসসি

ছবি

স্বাধীনতা বিসিএস শিক্ষা সংসদের সভাপতি নাসির ও সম্পাদক জাফর

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা : ৯ বছরেও শেষ হয়নি পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ছবি

রাজস্ব খাতভুক্ত বৃত্তি পাচ্ছে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

‘স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে ধর্মভিত্তিক শিক্ষার প্রসার ঘটেছে’

একাদশে ভর্তি : দ্বিতীয় ধাপের ফল আজ

ছবি

ছয় দফা দাবিতে মাউশিতে অবস্থান কর্মসূচি শিক্ষা ক্যাডারদের

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় শিক্ষিকা ও ৬ ডাক্তারসহ ৭ জন গ্রেপ্তার

ছবি

শিবচরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন

ছবি

৯ম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত

ছবি

শেষ হয়নি প্রশ্নপত্র তৈরি, অক্টোবরে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে সংশয়

ছবি

চবি উপাচার্যের বাসভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর

ছবি

ইউজিসি সদস্য হিসেবে যোগ দিলেন ড. হাসিনা খান

ছবি

একাদশে ভর্তি : শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় নেই দু’শতাধিক কলেজ-মাদ্রাসা

ছবি

বৈষম্য নিরসন না করলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিক্ষা ক্যাডারদের

ছবি

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি, জুনে এইচএসসি

ছবি

৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা আজ শুরু হয়েছে

শিক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পের ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি

ছবি

৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ চায় ২৪ পরীক্ষার্থী

ছবি

১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ২৬২৪২ জন

ছবি

কমনওয়েলথ বৃত্তিপ্রাপ্তদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রি-ডিপারচার ব্রিফিং

ছবি

ঢাবি শিক্ষক রহমতউল্লার অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বাতিল

ছবি

ভুল প্রশ্নে আলিম পরীক্ষা, বিপাকে ২২৬ শিক্ষার্থী

ছবি

আইসিটি পরিক্ষায় বহিষ্কার ৪৫, অনুপস্থিত ১২৪১৯

ছবি

তিন বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু

ছবি

তিন বোর্ডের এইসএসসি পরীক্ষা শুরু কাল

ছবি

পদত্যাগ করলেন আইডিয়াল কলেজের মুশতাক

ছবি

জবির স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ৩ সেপ্টেম্বর

tab

শিক্ষা

প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে

মানসম্মত পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন

রাকিব উদ্দিন

সোমবার, ২১ আগস্ট ২০২৩

সরকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম দামে পাঠ্যবই ছাপতে চায় ছাপাখানা মালিকরা। এ কারণে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য যথাযথ মানের পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। ছাপাখানা মালিকদের ‘অতি-প্রতিযোগিতার’ কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা মনে করছেন।

পৃথক দরপত্রের মাধ্যমে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা হয়। প্রাথমিক স্তরের দরপত্রের মূল্যায়ন কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এতে দেখা গেছে, প্রাথমিকের বই প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমে দরপত্র জমা দিয়ে কাজ পাচ্ছেন ঠিকাদাররা। এর চেয়েও কিছুটা কমে অর্থাৎ প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কমে মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কাজ পাচ্ছেন তারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘আমরা বাজার দর হিসেব করেই ভালো দামে মানসম্মত বই ছাপতে চাই। কিন্তু সব ব্যবসায়ী কাজ পেতে চান; এই অতিপ্রতিযোগিতার কারণে সেটি হয়ে উঠে না।’

‘এনসিটিবি দামে ঠকে না, মানে ঠকে’- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এক সময় দেশে বই ছাপার ওয়েব মেশিন ছিল হাতে গুনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের। বর্তমানে অসংখ্য প্রতিষ্ঠানের এই মেশিন রয়েছে। তারা সবাই যে কোনমূল্যে বই ছাপার কাজ পেতে চান।’

এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, এবার প্রাথমিকের প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপতে প্রতি ফর্মার (৮ পৃষ্ঠায় এক ফর্মা) প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় তিন টাকা ১০ পয়সা। কিন্তু ছাপাখানা মালিকরা প্রতি ফর্মার খরচ দুই টাকা ২০ পয়সা হিসেব কষেই কাজ নিচ্ছেন।

একই স্তরের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর পাঠ্যপুস্তক ছাপতে প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত ব্যয় তিন টাকা ধরা হয়েছিল। কিন্তু ছাপাখানা মালিকরা এই দুই শ্রেণীর বই প্রতি ফর্মার ব্যয় মাত্র দুই টাকা হিসেব কষেই কাজ পেতে যাচ্ছেন।

মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্যবই মুদ্রণ কাজের দরপত্র মূল্যায়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই দুই শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত ব্যয় তিন টাকা ঠিক করা হয়েছিল। কিন্তু ছাপাখানা মালিকরা এই দুই শ্রেণীর বই ছাপতে প্রতি ফর্মার খরচ এক টাকা ৭০ পয়সা ধরেই কাজ পাচ্ছেন।

অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপার দরপত্র মূল্যায়ন কার্যক্রম এখনও শেষ হয়নি। অষ্টমের বই ছাপার প্রতি ফর্মার প্রাক্কলিত ব্যয় দুই টাকা ৬৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বই ছাপার কাজও ফর্মা প্রতি ব্যয় দুই টাকার কমে ছাপাখানা মালিকরা কাজ নিচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

প্রাথমিকের চেয়ে মাধ্যমিকের বই ছাপার প্রাক্কলিত ব্যয় কিছুটা ‘কম’ ধরার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান জানান, ‘প্রাথমিকের বই ছাপতে হবে ৮০ গ্রামেজ কাগজে। এটি ভালো মানের কাগজ। আর গত বছর দেশে ৮০ গ্রামেজ কাগজের সঙ্কট ছিল। সে অভিজ্ঞতা থেকে এবার মাধ্যমিকের বই ছাপতে ৭০ গ্রামেজ কাগজ নির্ধারণ করা হয়েছে। আবার এই স্তরের বইয়ের আকারও কিছুটা বড়। তাছাড়া অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের দরপত্র আহ্বানের সময় বাজারে কাগজের দামও কিছুটা কম ছিল।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন ছাপাখানা মালিক সংবাদকে জানান, ছাপাখানা মালিকরা তিন-চারটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। তারা যে কোনমূল্যে কাজ ‘বাগাতে’ চান। এ সুযোগ নিচ্ছে এনসিটিবি।

এ ছাড়াও এবার মানসম্মত পাঠ্যবই ছাপা ‘চ্যালেঞ্জের’ মুখে পড়বে দাবি করে ওই ছাপাখানা মালিক বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তখন স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মানসম্মত বই নিশ্চিত করা এনসিটিবির জন্যও কঠিন হবে। ব্যবসায়ীরা যে যার মতো কাগজ কিনেই বই ছাপাতে থাকবেন। তখন এনসিটিবির কিছু করার থাকবে না।

এনসিটিবি পাঠ্যপুস্তকে কাগজের মান ঠিক রাখার জন্য দরপত্রে স্পেসিফিকেশন উল্লেখ করে দেয়। এবার দরপত্রের কারিগরি নির্দেশনা ও নিয়ম মোতাবেক ব্রাইটনেস (উজ্জ্বলতা) থাকবে ৮০ শতাংশ। একইভাবে প্রাথমিকের বই ছাপার কাগজের পুরত্ব (জিএসএম) ৮০ এবং মাধ্যমিকের বই ছাপার কাগজের জিএসএম ৭০ শতাংশ থাকার কথা। আর ব্যবহৃত কাগজ কতখানি মজবুত তার নির্দেশনাকারী ‘বাস্টিং ফ্যাক্টর’ নূন্যতম ১২ শতাংশ থাকার কথা।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তর এবং মাদ্রাসা ও কারিগরির বিভিন্ন শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩৫ কোটি পাঠ্যবই ছাপার লক্ষ্য নির্র্ধারণ করেছে এনসিটিবি।

সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতে পারে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান ফরহাদুল ইসলাম বলেন, তারা নির্ধারিত সময়ের আগেই পাঠ্যপুস্তক ছাপার কার্যক্রম শেষ করতে চান।

‘নভেম্বরের মধ্যে প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপা শেষ হয়ে যাবে’-এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যে ছাপার কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। দরপত্র নিয়ে এবার কোন সমস্যা হয়নি। সবকিছু দ্রুতই এগুচ্ছে।’

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণীর বইয়ের দরপত্র আহ্বান হলেও এর মূল্যায়ন শেষ হয়নি। সবকটি বইয়ের পা-ুলিপিও চূড়ান্ত হয়নি।

আর নবম শ্রেণীর কোন বইয়ের পাঠ্যক্রম (পান্ডুলিপি) সোমবার (২১ আগস্ট) নাগাদ চূড়ান্ত হয়নি। এসব বইয়ের পান্ডুলিপি প্রণয়নের কাজ প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীতে ১৩টি করে বিষয়ের বই পাঠদান হবে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে মোট দশটি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতি শ্রেণীতে মোট বই ১৩টি।

২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে নতুন বছরের শুরুতে সারাদেশের শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করে আসছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রতি বছর সরকারের বিশাল এই কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়ন করছে।

back to top