alt

শিক্ষা

শিক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পের ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি

কারণ : পূর্ণকালীন পিডি না থাকা ও কর্মকর্তাদের অদক্ষতা

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষার ৭৩টি প্রকল্পের এক হাজার তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি। এর মধ্যে সাত প্রকল্পেই প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘অদক্ষতা’, ‘গাফিলতি’ এবং প্রকল্প দলিল (ডিপিপি) সংক্রান্ত ‘জটিলতার’ কারণে এ অর্থ ব্যয় হয়নি বলে প্রকল্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

৭৩টি প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ২৩টিতে ‘পূর্ণকালীন’ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সংস্থা প্রধানরা ‘পিডি’র দায়িত্ব ধরে রেখেছেন। এ কারণে অধীনস্থ কর্মকর্তারা ‘স্বাধীনভাবে’ দায়িত্বপালন করতে পারছেন না। যার ফলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে।

এ নিয়ে সম্প্রতি অন্তত তিন দফায় প্রকল্প পরিচালক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী যথাসময়ে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে না পারায় সভায় ‘তীব্র অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন বলে সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভায় সচিব সোলেমান খান শিক্ষার সব প্রকল্পের এক বছরের আর্থিক বিবরণী, বার্ষিক প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান এবং বরাদ্দকৃত টাকা অব্যয়িত থাকার কারণ জানতে চান।

ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ্য থেকে দাবি করা হয়, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পের তথ্য নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। ইউজিসি বারবার চিঠি দিয়েও তথ্য পাচ্ছে না। আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ‘পিডি’র কর্তৃত্ব ধরে রাখার কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে বলে সভায় অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান সংবাদকে বলেন, ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে ওই প্রকল্পের জন্য পূর্ণকালীন পিডি থাকতে হয়। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দু-একটি ক্ষেত্রে উপাচার্যরাও আলাদা পিডি নিয়োগ না দিয়ে নিজেরাই প্রকল্প চালাতে চান। এ কারণে প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পিডি নিয়োগের জন্য নূন্যতম তিনজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক বা কর্মকর্তার একটি প্যানেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠাতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্যানেল থেকে একজনকে পিডি নিয়োগ দেয় শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি।’

এছাড়া বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে নির্ধারিত ‘রেট’ বা বাজার দর অনুযায়ী হচ্ছে জানিয়ে ইউজিসি সচিব বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে ২০২৩-এই সময়ে প্রায় সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কাজ নিয়েও তা সারেন্ডার করছেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকছে না।’

মোট প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৫০ কোটি টাকা ও তার অধিক অর্থ ব্যয় না করা প্রকল্প ছয়টি। এর মধ্যে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আরএডিপিতে (সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বরাদ্দ ছিল ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অব্যয়িত রয়েছে ১৫৯ কোটি টাকা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া ‘কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে’ বিদায়ী অর্থ বছরে ২৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ১৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়নি।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ’ প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরএডিপিতে ১৩২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ১২৮ কোটি ২১ লাখ টাকাই অব্যয়িত রয়েছে।

‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (আইইআইএমএস) প্রকল্পে বিদায়ী অর্থবছরে আরডিপিতে ২০৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ১২৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকাই ব্যয় হয়নি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১৮৮ একর জমিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সেখানে জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। একই বছরের ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবরে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনা মহামারীসহ নানা কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়।

ইউজিসি থেকে জানা গেছে, নীল সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্থাপন আইন পাস হয়। তখন থেকে অস্থায়ীভাবে চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

চট্টগ্রামে স্থাপন হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫টি বিভাগে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর একাডেমিক সুবিধাসহ দেড় হাজার শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৬৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

চট্টগ্রামের চর রাঙামাটিয়ার হামিদচর এলাকায় প্রায় একশ’ একর জমিতে ‘গ্রিন ফিল্ড প্রজেক্ট’ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন হচ্ছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ২০২১ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায় এবং ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায় শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

গত ২১ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সই করা মন্ত্রণালয়ের এক সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের আরএডিপি বরাদ্দের ৭১ দশমিক ৪০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এ সময় আরএডিপি বাস্তবায়নের জাতীয় অগ্রগতি ছিল ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জুন ২০২৩ পর্যন্ত জাতীয় অগ্রগতির চেয়ে আমাদের অগ্রগতি অনেকটাই কম।’

কার্যবিবরণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ার জন্য কতিপয় সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ২৩টি প্রকল্পে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক না থাকা। অনেক বড় বড় প্রকল্পে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন আশানুরূপ নয়।’

পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগ না দিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই দায়িত্ব ধরে রেখেছেন। এতে প্রকল্প ধীর গতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। যেমন ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের পিডি উপাচার্য নিজেই। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর অগ্রগতির জন্য পিডিরা কর্তৃক প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে তার ওপর অর্পিত আর্থিক ক্ষমতা প্রয়োগ না করা, করতে না পারাও অন্যতম কারণ।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিডিদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য উপাচার্য কর্তৃক একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিতে পিডিরা সভাপতি হিসেবে থাকলেও উপাচার্যের অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের কোন ক্ষমতা পিডিদের থাকে না। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পসমূহের অর্থ ব্যয়ে এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।’

ব্যয়ের সক্ষমতা বিবেচনায় না করেই এডিপি/আরএডিপি প্রণয়ন করার কারণে কোন কোন প্রকল্পে ‘অকারণেই অব্যয়িত’ অর্থ রয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এডিপি/আরএডিপি প্রণয়নকারণে প্রকল্পের প্রতিটি অংশের বাস্তব অবস্থা এবং ক্রয় পরিকল্পনা বিবেচনা করা হলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হত না।’

এছাড়া মাঠপর্যায়ের প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা না করেই প্রকল্প প্রণয়ন/সংশোধন করায় প্রকল্প/সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব হয়ে থাকে-মন্তব্য করে কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ‘এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্ধ ছাড়ে বিলম্ব এবং বাস্তবায়ন কাজ সময়মতো করা সম্ভব হয় না।

জানা গেছে, শিক্ষার মোট প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩৩টির মেয়াদ গত জুনে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়নি। এ কারণে ৩৩টি প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরও ১৯টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত এসব প্রকল্পের বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় না করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ছবি

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা ১১ আগস্টের পরে

ছবি

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা ১১ আগস্টের পরে

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা

ছবি

ডিজিটালাইজিং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিষয়ে আইসিসি’র কর্মশালা

ছবি

গোপালগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

শেষ ধাপেও কলেজ পায়নি ১২ হাজার শিক্ষার্থী, আবার থাকবে আবেদনের সুযোগ

ছবি

বেসিসে সেন্ট্রাল লজিস্টিকস ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম (সিএলটিপি) বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কর্মশালা

ছবি

পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই

ছবি

নবম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে জবি শিক্ষকরা

ছবি

এনার্জিপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শনে এইউএসটি’র শিক্ষার্থীরা

ছবি

গোপালগঞ্জে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ভাষার উপর ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করলেন ব্রুনাই দারুস সালামের হাইকমিশনার

ছবি

‘স্মার্ট শিক্ষা ও স্মার্ট গবেষণার মাধ্যমে স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তুলতে হবে’

ছবি

প্রাথমিক বিদ্যালয় হবে শুদ্ধাচার চর্চার আঁতুড়ঘর : প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

ছবি

নারী, প্রতিবন্ধী ও নৃগোষ্ঠীর জন্য কোটা চায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট

ছবি

সপ্তাহ পেরোলো জবি শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি 

ছবি

কুমিল্লায় বৃত্তি প্রদান ও পুরস্কার বিতরণ, প্রাথমিকে সেরা সাহস স্কুল

ছবি

বারি ও ডিআইইউ এর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি

ছবি

মোবাইল ও ডিজিটাল স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে বাংলাদেশে অষ্ট্রেলিয়ার ২২ শিক্ষার্থী

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখা শুভঙ্করের ফাঁকি : জবি শিক্ষক সমিতি

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বর্ণপদক পেলেন

ছবি

শাহরাস্তিতে মোবাইল ফোনে নকল করার দায়ে শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষার দিনে বৃষ্টি হলে সময় বাড়ানোর নির্দেশ

ছবি

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

ছবি

জামালপুরে একটি সংস্থার কার্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান

এইচ এসসি পরীক্ষা শুরু আগামীকাল

ছবি

পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে এবার কর্মবিরতিতে যাচ্ছে জবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি

ঢাবিতে দুদিনব্যাপী সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাজারমুখী দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত করতে হবে -শিক্ষামন্ত্রী

ছবি

পেনশন নয়, এটা তো ইন্স্যুরেন্স!

ছবি

গবেষণায় বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার জবি

ছবি

২০ কোটি টাকা ঢাবির বাজেট গবেষণায় বরাদ্দ

ছবি

বৃষ্টি উপেক্ষা করে জবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

ছবি

যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৯ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার

ছবি

প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে জবি শিক্ষককদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী

tab

শিক্ষা

শিক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পের ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি

কারণ : পূর্ণকালীন পিডি না থাকা ও কর্মকর্তাদের অদক্ষতা

রাকিব উদ্দিন

শনিবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩

২০২২-২৩ অর্থবছরে শিক্ষার ৭৩টি প্রকল্পের এক হাজার তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি। এর মধ্যে সাত প্রকল্পেই প্রায় সাড়ে পাঁচশ’ কোটি টাকা অব্যয়িত রয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘অদক্ষতা’, ‘গাফিলতি’ এবং প্রকল্প দলিল (ডিপিপি) সংক্রান্ত ‘জটিলতার’ কারণে এ অর্থ ব্যয় হয়নি বলে প্রকল্প বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।

৭৩টি প্রকল্পের মধ্যে অন্তত ২৩টিতে ‘পূর্ণকালীন’ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও সংস্থা প্রধানরা ‘পিডি’র দায়িত্ব ধরে রেখেছেন। এ কারণে অধীনস্থ কর্মকর্তারা ‘স্বাধীনভাবে’ দায়িত্বপালন করতে পারছেন না। যার ফলে প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে।

এ নিয়ে সম্প্রতি অন্তত তিন দফায় প্রকল্প পরিচালক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খান ও মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শিক্ষামন্ত্রী যথাসময়ে বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয় করতে না পারায় সভায় ‘তীব্র অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন বলে সভায় উপস্থিত ছিলেন এমন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত প্রকল্প বাস্তবায়ন সংক্রান্ত সভায় সচিব সোলেমান খান শিক্ষার সব প্রকল্পের এক বছরের আর্থিক বিবরণী, বার্ষিক প্রকিউরমেন্ট প্ল্যান এবং বরাদ্দকৃত টাকা অব্যয়িত থাকার কারণ জানতে চান।

ওই সভায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) পক্ষ্য থেকে দাবি করা হয়, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া প্রকল্পের তথ্য নিয়মিত পাওয়া যাচ্ছে না। ইউজিসি বারবার চিঠি দিয়েও তথ্য পাচ্ছে না। আবার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ‘পিডি’র কর্তৃত্ব ধরে রাখার কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ব্যাহত হচ্ছে বলে সভায় অভিযোগ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান সংবাদকে বলেন, ৫০ কোটি টাকার বেশি হলে ওই প্রকল্পের জন্য পূর্ণকালীন পিডি থাকতে হয়। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পের জন্য দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তা পাওয়া যাচ্ছে না। আবার দু-একটি ক্ষেত্রে উপাচার্যরাও আলাদা পিডি নিয়োগ না দিয়ে নিজেরাই প্রকল্প চালাতে চান। এ কারণে প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

পিডি নিয়োগের জন্য নূন্যতম তিনজন দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষক বা কর্মকর্তার একটি প্যানেল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঠাতে হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্যানেল থেকে একজনকে পিডি নিয়োগ দেয় শিক্ষা সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি।’

এছাড়া বর্তমানে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামো নির্মাণকাজ ২০১৮ সালে নির্ধারিত ‘রেট’ বা বাজার দর অনুযায়ী হচ্ছে জানিয়ে ইউজিসি সচিব বলেন, ‘২০১৮ সাল থেকে ২০২৩-এই সময়ে প্রায় সব ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম অন্তত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এ কারণে অনেক ঠিকাদার কাজ নিয়েও তা সারেন্ডার করছেন। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু করার থাকছে না।’

মোট প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৫০ কোটি টাকা ও তার অধিক অর্থ ব্যয় না করা প্রকল্প ছয়টি। এর মধ্যে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপন, ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আরএডিপিতে (সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) বরাদ্দ ছিল ২৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে অব্যয়িত রয়েছে ১৫৯ কোটি টাকা।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া ‘কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টে’ বিদায়ী অর্থ বছরে ২৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ১৩০ কোটি ২৭ লাখ টাকা ব্যয় হয়নি।

‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণ’ প্রকল্পে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আরএডিপিতে ১৩২ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ১২৮ কোটি ২১ লাখ টাকাই অব্যয়িত রয়েছে।

‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ইন্টিগ্রেটেড এডুকেশনাল ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (আইইআইএমএস) প্রকল্পে বিদায়ী অর্থবছরে আরডিপিতে ২০৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। এর মধ্যে ১২৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকাই ব্যয় হয়নি।

ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১৮৮ একর জমিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর সেখানে জমির চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। একই বছরের ৯ অক্টোবর নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনে ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়নের জন্য প্রকল্প অনুমোদন করে একনেক। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৯২০ কোটি ৯৪ লাখ ৩৯ হাজার টাকা। ২০২০ সালের অক্টোবরে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ হওয়ার কথা ছিল। করোনা মহামারীসহ নানা কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন পিছিয়ে যায়।

ইউজিসি থেকে জানা গেছে, নীল সমুদ্র অর্থনীতির সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্থাপন আইন পাস হয়। তখন থেকে অস্থায়ীভাবে চলছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

চট্টগ্রামে স্থাপন হওয়া এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫টি বিভাগে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থীর একাডেমিক সুবিধাসহ দেড় হাজার শিক্ষার্থীর আবাসিক সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯৬৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

চট্টগ্রামের চর রাঙামাটিয়ার হামিদচর এলাকায় প্রায় একশ’ একর জমিতে ‘গ্রিন ফিল্ড প্রজেক্ট’ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন হচ্ছে। প্রকল্পের বাস্তবায়ন ২০২১ সালের মধ্যে প্রথম পর্যায় এবং ২০২৫ সালের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায় শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

গত ২১ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির সই করা মন্ত্রণালয়ের এক সভার কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০২২ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের আরএডিপি বরাদ্দের ৭১ দশমিক ৪০ শতাংশ অর্থ ব্যয় হয়েছে। এ সময় আরএডিপি বাস্তবায়নের জাতীয় অগ্রগতি ছিল ৮৪ দশমিক ১৬ শতাংশ।

ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘জুন ২০২৩ পর্যন্ত জাতীয় অগ্রগতির চেয়ে আমাদের অগ্রগতি অনেকটাই কম।’

কার্যবিবরণী প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি সন্তোষজনক না হওয়ার জন্য কতিপয় সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম ২৩টি প্রকল্পে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক না থাকা। অনেক বড় বড় প্রকল্পে পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) না থাকায় প্রকল্প বাস্তবায়ন আশানুরূপ নয়।’

পূর্ণকালীন পিডি নিয়োগ না দিয়ে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এই দায়িত্ব ধরে রেখেছেন। এতে প্রকল্প ধীর গতিতে বাস্তবায়ন হচ্ছে। যেমন ‘রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন’ প্রকল্পের পিডি উপাচার্য নিজেই। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীর অগ্রগতির জন্য পিডিরা কর্তৃক প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ে তার ওপর অর্পিত আর্থিক ক্ষমতা প্রয়োগ না করা, করতে না পারাও অন্যতম কারণ।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিডিদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য উপাচার্য কর্তৃক একাধিক কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিতে পিডিরা সভাপতি হিসেবে থাকলেও উপাচার্যের অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ের কোন ক্ষমতা পিডিদের থাকে না। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্পসমূহের অর্থ ব্যয়ে এ ধরনের পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।’

ব্যয়ের সক্ষমতা বিবেচনায় না করেই এডিপি/আরএডিপি প্রণয়ন করার কারণে কোন কোন প্রকল্পে ‘অকারণেই অব্যয়িত’ অর্থ রয়ে গেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘এডিপি/আরএডিপি প্রণয়নকারণে প্রকল্পের প্রতিটি অংশের বাস্তব অবস্থা এবং ক্রয় পরিকল্পনা বিবেচনা করা হলে এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হত না।’

এছাড়া মাঠপর্যায়ের প্রকৃত তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা না করেই প্রকল্প প্রণয়ন/সংশোধন করায় প্রকল্প/সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদনে বিলম্ব হয়ে থাকে-মন্তব্য করে কার্যবিবরণীতে বলা হয়, ‘এ ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রে অর্ধ ছাড়ে বিলম্ব এবং বাস্তবায়ন কাজ সময়মতো করা সম্ভব হয় না।

জানা গেছে, শিক্ষার মোট প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৩৩টির মেয়াদ গত জুনে উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত হয়নি। এ কারণে ৩৩টি প্রকল্পের মধ্যে ইতোমধ্যে ১২টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আরও ১৯টি প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। মেয়াদ বৃদ্ধি না হওয়া পর্যন্ত এসব প্রকল্পের বিপরীতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় না করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

back to top