alt

শিক্ষা

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা : ৯ বছরেও শেষ হয়নি পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রাকিব উদ্দিন : রোববার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নয় বছরেও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অবসান ঘটেনি। পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৪ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। পরবর্তীতে দুই বছর মেয়াদে এই শিক্ষা চালুর সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু এখন পর্যন্ত এক বা দুই বছর মেয়াদে কোন কোথাও ঠিকমত ‘শিশু শ্রেণি’ চালু হয়নি। এই সুযোগে সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন ও নার্সারি স্কুলে শিক্ষা ‘বাণিজ্য’ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এগুলোতে শিশুদের ইচ্ছেমতো কোচিং পড়তে হচ্ছে। শিশুদের কাঁধে বাড়তি বইয়ের বোঝাও চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকদের বাড়তি খরচও করতে হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়নি। বর্তমানে তিন হাজারের (তিন হাজার ২১৪টি) মতো স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে।’

আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই স্তর চালু হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) তৈরি করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে শেখার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে।’

সরকারি হিসেবেই সারাদেশে ৪৮ হাজার ৯৭৩টি কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের বেশিরভাগেরই নিবন্ধন নেই। একাডেমিক স্বীকৃতিও নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো চলছে।

এ বিষয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ২০১১ সালের একটি বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও ‘প্রায় ৯০ ভাগ’ বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়াই চলছে।

এই বিধিমালা সংশোধন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংশোধনী ‘চূড়ান্ত’ হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই আদেশ জারি করা হবে। তখন বেসরকারি পর্যায়ের ইংরেজি মাধ্যম বাদে বাকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো (কিন্ডারগার্টেনসহ) নিয়মনীতির আওতায় আসবে। নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া এগুলো কেউ চালাতে পারবে না বলে মনে করেন সচিব।

২০১০ সালে প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ এবং নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিশুর বয়স চার বছর পূর্ণ হলে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে ভর্তি হবে। এ শ্রেণীতে দুই বছর অধ্যয়ন শেষে শিশুর বয়স ছয় বছর পূর্ণ হলে সে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হবে। এ দুই বছর ‘প্রাক-প্রাথমিক-১’ এবং দ্বিতীয় বছর ‘প্রাক-প্রাথমিক-২’ নামে পরিচিত হবে।

২০২২ সালের জুনে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির’ (এনসিসিসি) সভায় প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ দুই বছর করার অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে জানা গেছে, দেশে প্রথমে ২০১০ সালে সীমিত পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।

তবে ডিপিইর সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীর স্বল্পতা ও যথাযথ প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে এ প্রক্রিয়া থমকে যায়। অভিভাবকরা সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ‘কোমলমতি শিশুদের’ পাঠাচ্ছেন না। তারা বেসরকারি কিন্ডারগার্ডেন ও নার্সারি স্কুলে শিশুদের পাঠাচ্ছেন। এ কারণে দীর্ঘ সময়েও প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি। এর মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। বাকি ৪৮ হাজার ৯৭৩টি কিন্ডারগার্ডেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাবেরী গায়েন গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক সভায় বলেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার কথা ছিল, তা এখনও চালু হয়নি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে চালানো হচ্ছে, যা হয় ‘খুব ব্যয়বহুল’ নয়তো ‘নীচুমানের’ সেবা প্রদানকারী।

অধ্যাপক কাবেরী গায়েনের অভিযোগ, ‘গত ১০-১২ বছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং শ্রেণীকক্ষের জন্য পৃথক পদ তৈরি করা ছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিন্ন মান বজায় রাখা বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখার জন্য মন্ত্রণালয় কোন নির্দিষ্ট আদেশ প্রচার করতে পারেনি।’

সারাদেশে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু না হলেও এ স্তরের শিশুদের জন্য নিয়মিত ‘বই’ বা ‘খাতা’ ছাপিয়ে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি কিন্ডাগার্ডের স্কুলগুলোও এই বই পাচ্ছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মোখলেস উর রহমান রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সংবাদকে বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর বিষয়ে ডিপিই বা মন্ত্রণালয় (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) বলতে পারবে। তবে আমরা কয়েক বছর ধরে শিশুদের বই ছাপছি।’

এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ‘শিশু’ প্রতি একটি করে মোট ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৪টি ‘আমার বই’ বিতরণ করা হয়েছে।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি কিন্ডারগার্ডেনের এক ‘শিশু’ শিক্ষার্থীর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমার বই’ বিনামূল্যে দেয়া হলেও স্কুলের তালিকা অনুযায়ী তার সন্তানের জন্য ১২শ’ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত পাঁচটি বই কিনতে হয়েছে।

দেশে এতদিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু ছিল; যা শিক্ষা ‘শিশু শ্রেণী’ নামে পরিচিত। ইংরেজি মাধ্যম এবং কিন্ডারগার্ডেনে প্লে-গ্রুপ, নার্সারি ও কেজি শ্রেণীও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের মধ্যে পড়ে।

ছবি

একাদশে ভর্তি, শেষ ধাপের ফল প্রকাশ রাতে

ছবি

সংঘর্ষের পর দুই হলে তল্লাশি, পাঁচ বহিরাগত আটক

ছবি

তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১১০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এডিবি

ছবি

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানাল পিএসসি

ছবি

স্বাধীনতা বিসিএস শিক্ষা সংসদের সভাপতি নাসির ও সম্পাদক জাফর

ছবি

রাজস্ব খাতভুক্ত বৃত্তি পাচ্ছে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

‘স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে ধর্মভিত্তিক শিক্ষার প্রসার ঘটেছে’

একাদশে ভর্তি : দ্বিতীয় ধাপের ফল আজ

ছবি

ছয় দফা দাবিতে মাউশিতে অবস্থান কর্মসূচি শিক্ষা ক্যাডারদের

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় শিক্ষিকা ও ৬ ডাক্তারসহ ৭ জন গ্রেপ্তার

ছবি

শিবচরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন

ছবি

৯ম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত

ছবি

শেষ হয়নি প্রশ্নপত্র তৈরি, অক্টোবরে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে সংশয়

ছবি

চবি উপাচার্যের বাসভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর

ছবি

ইউজিসি সদস্য হিসেবে যোগ দিলেন ড. হাসিনা খান

ছবি

একাদশে ভর্তি : শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় নেই দু’শতাধিক কলেজ-মাদ্রাসা

ছবি

বৈষম্য নিরসন না করলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিক্ষা ক্যাডারদের

ছবি

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি, জুনে এইচএসসি

ছবি

৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা আজ শুরু হয়েছে

শিক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পের ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি

ছবি

৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ চায় ২৪ পরীক্ষার্থী

ছবি

১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ২৬২৪২ জন

ছবি

কমনওয়েলথ বৃত্তিপ্রাপ্তদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রি-ডিপারচার ব্রিফিং

ছবি

ঢাবি শিক্ষক রহমতউল্লার অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বাতিল

ছবি

ভুল প্রশ্নে আলিম পরীক্ষা, বিপাকে ২২৬ শিক্ষার্থী

ছবি

আইসিটি পরিক্ষায় বহিষ্কার ৪৫, অনুপস্থিত ১২৪১৯

ছবি

তিন বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু

ছবি

তিন বোর্ডের এইসএসসি পরীক্ষা শুরু কাল

ছবি

পদত্যাগ করলেন আইডিয়াল কলেজের মুশতাক

ছবি

জবির স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ৩ সেপ্টেম্বর

ছবি

এইচএসসি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় বহিষ্কার ৬৬, অনুপস্থিত ৭৪০৪

ছবি

এসএসসি’র কৃতি পরিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল এনার্জিপ্যাক

ছবি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ৭৫ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে

ছবি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার স্থাপনের নির্দেশ

ছবি

মুন্সিগঞ্জে মামাতো বোনের ‘প্রক্সি’ পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়লেন ফুফাতো বোন

ছবি

পরীক্ষকসহ বহিষ্কার ৮৪, অনুপস্থিত ৭০৮৯

tab

শিক্ষা

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা : ৯ বছরেও শেষ হয়নি পরীক্ষা-নিরীক্ষা

রাকিব উদ্দিন

রোববার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩

নয় বছরেও প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার অবসান ঘটেনি। পরীক্ষামূলকভাবে ২০১৪ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। পরবর্তীতে দুই বছর মেয়াদে এই শিক্ষা চালুর সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু এখন পর্যন্ত এক বা দুই বছর মেয়াদে কোন কোথাও ঠিকমত ‘শিশু শ্রেণি’ চালু হয়নি। এই সুযোগে সারাদেশে কিন্ডারগার্টেন ও নার্সারি স্কুলে শিক্ষা ‘বাণিজ্য’ ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এগুলোতে শিশুদের ইচ্ছেমতো কোচিং পড়তে হচ্ছে। শিশুদের কাঁধে বাড়তি বইয়ের বোঝাও চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এ জন্য অভিভাবকদের বাড়তি খরচও করতে হচ্ছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহম্মেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়নি। বর্তমানে তিন হাজারের (তিন হাজার ২১৪টি) মতো স্কুলে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রয়েছে।’

আগামী বছর থেকে পর্যায়ক্রমে সারাদেশে এই স্তর চালু হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ‘ইতোমধ্যে প্রাক-প্রাথমিকের কারিকুলাম (শিক্ষাক্রম) তৈরি করা হয়েছে। নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের খেলার ছলে শেখার বিষয়টিতে জোর দেয়া হয়েছে।’

সরকারি হিসেবেই সারাদেশে ৪৮ হাজার ৯৭৩টি কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের বেশিরভাগেরই নিবন্ধন নেই। একাডেমিক স্বীকৃতিও নেই। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো চলছে।

এ বিষয়ে গণশিক্ষা সচিব বলেন, বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য ২০১১ সালের একটি বিধিমালা থাকা সত্ত্বেও ‘প্রায় ৯০ ভাগ’ বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়াই চলছে।

এই বিধিমালা সংশোধন হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, সংশোধনী ‘চূড়ান্ত’ হয়ে গেছে। খুব শীঘ্রই আদেশ জারি করা হবে। তখন বেসরকারি পর্যায়ের ইংরেজি মাধ্যম বাদে বাকি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো (কিন্ডারগার্টেনসহ) নিয়মনীতির আওতায় আসবে। নিবন্ধন ও একাডেমিক স্বীকৃতি ছাড়া এগুলো কেউ চালাতে পারবে না বলে মনে করেন সচিব।

২০১০ সালে প্রণীত ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’ এবং নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে শিশুর বয়স চার বছর পূর্ণ হলে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীতে ভর্তি হবে। এ শ্রেণীতে দুই বছর অধ্যয়ন শেষে শিশুর বয়স ছয় বছর পূর্ণ হলে সে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তি হবে। এ দুই বছর ‘প্রাক-প্রাথমিক-১’ এবং দ্বিতীয় বছর ‘প্রাক-প্রাথমিক-২’ নামে পরিচিত হবে।

২০২২ সালের জুনে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির’ (এনসিসিসি) সভায় প্রাক-প্রাথমিকের মেয়াদ দুই বছর করার অনুমোদন দেয়া হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষ অর্থাৎ ২০২৩ সাল থেকেই তা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই) থেকে জানা গেছে, দেশে প্রথমে ২০১০ সালে সীমিত পরিসরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়। এরপর ২০১৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু হয়।

তবে ডিপিইর সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে শিশু শিক্ষার্থীর স্বল্পতা ও যথাযথ প্রস্তুতির ঘাটতির কারণে এ প্রক্রিয়া থমকে যায়। অভিভাবকরা সরকারি বিদ্যালয়গুলোতে ‘কোমলমতি শিশুদের’ পাঠাচ্ছেন না। তারা বেসরকারি কিন্ডারগার্ডেন ও নার্সারি স্কুলে শিশুদের পাঠাচ্ছেন। এ কারণে দীর্ঘ সময়েও প্রাক-প্রাথমিকের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শেষ হয়নি।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক লাখ ১৪ হাজার ৫৩৯টি। এর মধ্যে সরকারি ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। বাকি ৪৮ হাজার ৯৭৩টি কিন্ডারগার্ডেন ও বেসরকারি বিদ্যালয়।

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক কাবেরী গায়েন গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক সভায় বলেন বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যে এক বছরের প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় চালু করার কথা ছিল, তা এখনও চালু হয়নি। বরং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এনজিও বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে চালানো হচ্ছে, যা হয় ‘খুব ব্যয়বহুল’ নয়তো ‘নীচুমানের’ সেবা প্রদানকারী।

অধ্যাপক কাবেরী গায়েনের অভিযোগ, ‘গত ১০-১২ বছরে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক এবং শ্রেণীকক্ষের জন্য পৃথক পদ তৈরি করা ছাড়া, প্রতিষ্ঠানগুলোতে অভিন্ন মান বজায় রাখা বা প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু রাখার জন্য মন্ত্রণালয় কোন নির্দিষ্ট আদেশ প্রচার করতে পারেনি।’

সারাদেশে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু না হলেও এ স্তরের শিশুদের জন্য নিয়মিত ‘বই’ বা ‘খাতা’ ছাপিয়ে আসছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি কিন্ডাগার্ডের স্কুলগুলোও এই বই পাচ্ছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মোখলেস উর রহমান রোববার (১৭ সেপ্টেম্বর) সংবাদকে বলেন, ‘প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালুর বিষয়ে ডিপিই বা মন্ত্রণালয় (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) বলতে পারবে। তবে আমরা কয়েক বছর ধরে শিশুদের বই ছাপছি।’

এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে ‘শিশু’ প্রতি একটি করে মোট ৬৬ লাখ ২৯ হাজার ৮৪টি ‘আমার বই’ বিতরণ করা হয়েছে।

রাজধানীর খিলগাঁওয়ের একটি কিন্ডারগার্ডেনের এক ‘শিশু’ শিক্ষার্থীর অভিভাবক রফিকুল ইসলাম জানান, ‘আমার বই’ বিনামূল্যে দেয়া হলেও স্কুলের তালিকা অনুযায়ী তার সন্তানের জন্য ১২শ’ টাকা দিয়ে অতিরিক্ত পাঁচটি বই কিনতে হয়েছে।

দেশে এতদিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঁচ থেকে ছয় বছর বয়সী শিশুদের জন্য এক বছর মেয়াদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা চালু ছিল; যা শিক্ষা ‘শিশু শ্রেণী’ নামে পরিচিত। ইংরেজি মাধ্যম এবং কিন্ডারগার্ডেনে প্লে-গ্রুপ, নার্সারি ও কেজি শ্রেণীও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের মধ্যে পড়ে।

back to top