alt

শিক্ষা

৬ষ্ঠ শ্রেণীর দুটি বিষয়ের নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ স্থগিত

‘অপপ্রচার’ ও ‘গাফিলতি’ই কারণ

রাকিব উদ্দিন : বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

একটি মহলের ‘অপপ্রচার’ ও কিছু কর্মকর্তার ‘গাফিলতির’ কারণে আটকে গেছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর দুটি বিষয়ের নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই মুদ্রণ। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ বিষয়টি সম্প্রতি একটি সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসে। সেখানে ‘অপপ্রচারের’ জন্য কোচিং সেন্টারের মালিকদের দায়ী করা হয়েছে।

এর আলোকে ‘অপপ্রচারকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিল থাকায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ (এনসিটিবি) পক্ষ্য থেকে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে কোচিং সেন্টারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য কোচিং সেন্টারের মালিকরা নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হয়েছেন। তারাই কিছু লোককে রাস্তায় নামিয়েছেন। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম পাঠদান শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই ছাপা নিয়েই বেশি ‘জটিলতায়’ পরেছে এনসিটিবি।

এর মধ্যে ‘বিজ্ঞান ও অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি কয়েকটি ছাপাখানায় পুরোদমে মুদ্রণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় সম্প্রতি এনসিটিবির নির্দেশ তা স্থগিত করা হয়েছে। বইটির প্রায় এক লাখ কপি ছাপানো হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিভাবকদের ‘অপপ্রচারের’ কারণে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে ‘ধীরে’ এগুচ্ছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

এনসিটিবির সম্পাদনা শাখার একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, কিছু ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়জুড়ে দিয়ে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইটির ২৬০ পৃষ্ঠার মতো পা-ুলিপি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। পরে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বইটির আকার ২০০ পৃষ্ঠার কাছাকাছি রাখা হচ্ছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রম, সেহেতু আমরা একটু ভেবে চিন্তে সবকিছু চূড়ান্ত করছি। তবে নভেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়ে যাবে।’

অপপ্রচার রোধে পদক্ষেপ

এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই ছাপার কাজ এখন চলমান। এই সময়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এসব বই যাওয়ার কথা নয়। এরপরও বইগুলির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘ফেইসবুকে’ নানা রকম ‘অপপ্রচার’ হচ্ছে। রাজধানীর ভিকারুন নিসা স্কুলসহ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচির নামে শিক্ষাক্রমের ‘অপব্যাখ্যা’ দেয়া হচ্ছে, ‘ভুল তথ্য’ প্রচার করা হচ্ছে এবং শিক্ষাক্রমে যেসব তথ্য-উপাত্ত নেই তা জুড়ে দিয়ে অপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সচিব নাজমা আখতার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা মামলা করেছি। কারণ আমরা অপপ্রচারের শিকার হচ্ছি। আমাদের কাছে বই আসার আগেই অভিভাবকরা কীভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই পেলেন? তারা কিসের ভিত্তিতে মানববন্ধব করে বই বাতিলের দাবি করছেন? সব বই তো এখনও ছাপা হয়নি।’

আন্দোলনকারী অভিভাবকরা কোথাও থেকে, কীভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বইগুলো পেলেন বিষয়টি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি; এজন্য মামরা করেছি। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী পদক্ষেপ নেয় সেই অপেক্ষায় আছি।’

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ২৩ অক্টোবর রাতে ‘জুম সভা’ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের সাড়ে চারশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে। ওই সভায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের ৫৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৪৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান সংযুক্ত ছিলেন বলে মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এএসএম আবদুল খালেক জানিয়েছেন।

কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, জুম সভায় শিক্ষামন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষককে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি শিক্ষাক্রম সম্পর্কে অভিভাবকদের অবহিত করতে সব স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।

সভায় ‘অপপ্রচার’ নিয়ে সতর্ক থাকতে প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণী শিক্ষকদের পরার্মশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে একাধিক বলেন, সভায় জানানো হয়েছে মূল্যায়ন নির্দেশিকা ও টিচার্স গাইড শীঘ্রই সারাদেশের স্কুলে পৌঁছে যাবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহে আগামী নভেম্বরে একটি অ্যাপ চালু করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি কার্যক্রমও নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে হবে বলে সভায় জানানো হয়।

জুম সভায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্কুলের প্রধান বা সহকারী প্রধানরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভিকারুন নিসা স্কুলসহ অন্যান্য স্থানে যারা জমায়েত হচ্ছেন তাদের মধ্যে আসল অভিভাবক ছিলেন না। তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকারের ‘শিক্ষাক্রমকে’ বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকদের নতুন শিক্ষাক্রমের ক্লাস পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া, সব স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন এবং ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সদস্যদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

ওই সভায় ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের সামনে যারা মানববন্ধন করেছিলেন তাদের কেউই প্রকৃত অভিভাবক নন। তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন।

সভায় শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও সে পরীক্ষার মূল্যায়ন নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে হবে।

জুম সভার বিষয়ে মাউশির পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা ও কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা শুনেছি। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গাইড লাইন (দিকনির্দেশনা) দেয়া হয়েছে।’

কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ চালানোর কথাও তুলে ধরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন....আমরাও খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যারা অভিভাবকের ব্যানারে নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার (শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি) চালাচ্ছেন তারা কেউই প্রকৃত অভিভাবক নয়।’

‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’র ব্যানারে একদল ‘অভিভাবক’ গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে নতুন শিক্ষাক্রম সংস্কার ও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রাখার দাবি জানান।

তারা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বিষয়।

নতুন শিক্ষাক্রমে তাত্ত্বিক বিষয়ের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নকে বেশি জোর দেয়া হয়েছে দাবি করে মানববন্ধনে বলা হয়, ‘সাময়িক পরীক্ষাও তুলে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়নমুখী হচ্ছে না। বইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় তারা ডিভাইসমুখী হচ্ছে।’

তারা আরও অভিযোগ করেন, নতুন শিক্ষাক্রমে সবচেয়ে বড় সমস্যা দলগত কার্যক্রমে। দেখা যাচ্ছে, স্কুল থেকে দেয়া দলগত কাজটি করতে হচ্ছে স্কুল পিরিয়েডের পর। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের বন্ধু-বান্ধবীর বাসায় বা অন্য কোথাও একত্রিত হয়ে তা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এতে ছাত্রছাত্রী অভিভাবক উভয়কেই নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অনেক অভিভাবক স্কুল ছুটির পর তার সন্তানকে অন্য কারো বাসায় নিয়ে যেতে আগ্রহী নয় এবং স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না বলে ওই মানববন্ধনে দাবি করা হয়।

ছবি

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা ১১ আগস্টের পরে

ছবি

এইচএসসির স্থগিত পরীক্ষা ১১ আগস্টের পরে

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষার নতুন তারিখ ঘোষণা

ছবি

ডিজিটালাইজিং ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড বিষয়ে আইসিসি’র কর্মশালা

ছবি

গোপালগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

শেষ ধাপেও কলেজ পায়নি ১২ হাজার শিক্ষার্থী, আবার থাকবে আবেদনের সুযোগ

ছবি

বেসিসে সেন্ট্রাল লজিস্টিকস ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম (সিএলটিপি) বাস্তবায়ন সম্পর্কিত কর্মশালা

ছবি

পাঁচ হাজার প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নেই

ছবি

নবম দিনের মতো সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে জবি শিক্ষকরা

ছবি

এনার্জিপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক পরিদর্শনে এইউএসটি’র শিক্ষার্থীরা

ছবি

গোপালগঞ্জে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রামিং ভাষার উপর ২ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত

ছবি

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি পরিদর্শন করলেন ব্রুনাই দারুস সালামের হাইকমিশনার

ছবি

‘স্মার্ট শিক্ষা ও স্মার্ট গবেষণার মাধ্যমে স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তুলতে হবে’

ছবি

প্রাথমিক বিদ্যালয় হবে শুদ্ধাচার চর্চার আঁতুড়ঘর : প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী

ছবি

নারী, প্রতিবন্ধী ও নৃগোষ্ঠীর জন্য কোটা চায় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট

ছবি

সপ্তাহ পেরোলো জবি শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি 

ছবি

কুমিল্লায় বৃত্তি প্রদান ও পুরস্কার বিতরণ, প্রাথমিকে সেরা সাহস স্কুল

ছবি

বারি ও ডিআইইউ এর মধ্যে সমঝোতা চুক্তি

ছবি

মোবাইল ও ডিজিটাল স্টোরিটেলিং ফেস্টিভ্যালে অংশ নিতে বাংলাদেশে অষ্ট্রেলিয়ার ২২ শিক্ষার্থী

প্রত্যয় স্কিম নিয়ে পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখা শুভঙ্করের ফাঁকি : জবি শিক্ষক সমিতি

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্বর্ণপদক পেলেন

ছবি

শাহরাস্তিতে মোবাইল ফোনে নকল করার দায়ে শিক্ষার্থী বহিষ্কার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষার দিনে বৃষ্টি হলে সময় বাড়ানোর নির্দেশ

ছবি

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু

ছবি

জামালপুরে একটি সংস্থার কার্যালয় থেকে এইচএসসি পরীক্ষার প্রবেশপত্র প্রদান

এইচ এসসি পরীক্ষা শুরু আগামীকাল

ছবি

পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে এবার কর্মবিরতিতে যাচ্ছে জবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

ছবি

ঢাবিতে দুদিনব্যাপী সিনেট অধিবেশন অনুষ্ঠিত

ছবি

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাজারমুখী দক্ষ জনশক্তি প্রস্তুত করতে হবে -শিক্ষামন্ত্রী

ছবি

পেনশন নয়, এটা তো ইন্স্যুরেন্স!

ছবি

গবেষণায় বাজেট বরাদ্দে বৈষম্যের শিকার জবি

ছবি

২০ কোটি টাকা ঢাবির বাজেট গবেষণায় বরাদ্দ

ছবি

বৃষ্টি উপেক্ষা করে জবি শিক্ষকদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

ছবি

যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতিসহ ৯ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার

ছবি

প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে জবি শিক্ষককদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি

প্রথম ধাপে কলেজ পায়নি ৪৮ হাজার শিক্ষার্থী

tab

শিক্ষা

৬ষ্ঠ শ্রেণীর দুটি বিষয়ের নতুন পাঠ্যবই মুদ্রণ স্থগিত

‘অপপ্রচার’ ও ‘গাফিলতি’ই কারণ

রাকিব উদ্দিন

বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৩

একটি মহলের ‘অপপ্রচার’ ও কিছু কর্মকর্তার ‘গাফিলতির’ কারণে আটকে গেছে ৬ষ্ঠ শ্রেণীর দুটি বিষয়ের নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই মুদ্রণ। নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ বিষয়টি সম্প্রতি একটি সরকারি সংস্থার প্রতিবেদনেও উঠে আসে। সেখানে ‘অপপ্রচারের’ জন্য কোচিং সেন্টারের মালিকদের দায়ী করা হয়েছে।

এর আলোকে ‘অপপ্রচারকারীদের’ বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিল থাকায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের’ (এনসিটিবি) পক্ষ্য থেকে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা মনে করছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হলে কোচিং সেন্টারের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এজন্য কোচিং সেন্টারের মালিকরা নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে ‘ষড়যন্ত্রে’ লিপ্ত হয়েছেন। তারাই কিছু লোককে রাস্তায় নামিয়েছেন। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসব অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম পাঠদান শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই ছাপা নিয়েই বেশি ‘জটিলতায়’ পরেছে এনসিটিবি।

এর মধ্যে ‘বিজ্ঞান ও অনুসন্ধানী পাঠ’ বইটি কয়েকটি ছাপাখানায় পুরোদমে মুদ্রণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় সম্প্রতি এনসিটিবির নির্দেশ তা স্থগিত করা হয়েছে। বইটির প্রায় এক লাখ কপি ছাপানো হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিভাবকদের ‘অপপ্রচারের’ কারণে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ের পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে ‘ধীরে’ এগুচ্ছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।

এনসিটিবির সম্পাদনা শাখার একাধিক কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, কিছু ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়জুড়ে দিয়ে ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইটির ২৬০ পৃষ্ঠার মতো পা-ুলিপি চূড়ান্ত করা হয়েছিল। পরে শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বিষয়গুলো বাদ দিয়ে বইটির আকার ২০০ পৃষ্ঠার কাছাকাছি রাখা হচ্ছে।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘পাঠ্যবই ছাপা নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। যেহেতু নতুন শিক্ষাক্রম, সেহেতু আমরা একটু ভেবে চিন্তে সবকিছু চূড়ান্ত করছি। তবে নভেম্বরের মধ্যেই পাঠ্যবই ছাপা শেষ হয়ে যাবে।’

অপপ্রচার রোধে পদক্ষেপ

এনসিটিবির ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই ছাপার কাজ এখন চলমান। এই সময়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছে এসব বই যাওয়ার কথা নয়। এরপরও বইগুলির বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ‘ফেইসবুকে’ নানা রকম ‘অপপ্রচার’ হচ্ছে। রাজধানীর ভিকারুন নিসা স্কুলসহ কয়েকটি স্থানে বিভিন্ন কর্মসূচির নামে শিক্ষাক্রমের ‘অপব্যাখ্যা’ দেয়া হচ্ছে, ‘ভুল তথ্য’ প্রচার করা হচ্ছে এবং শিক্ষাক্রমে যেসব তথ্য-উপাত্ত নেই তা জুড়ে দিয়ে অপ্রচার চালানো হচ্ছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির সচিব নাজমা আখতার সংবাদকে বলেন, ‘আমরা মামলা করেছি। কারণ আমরা অপপ্রচারের শিকার হচ্ছি। আমাদের কাছে বই আসার আগেই অভিভাবকরা কীভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বই পেলেন? তারা কিসের ভিত্তিতে মানববন্ধব করে বই বাতিলের দাবি করছেন? সব বই তো এখনও ছাপা হয়নি।’

আন্দোলনকারী অভিভাবকরা কোথাও থেকে, কীভাবে নতুন শিক্ষাক্রমের বইগুলো পেলেন বিষয়টি তদন্ত হওয়া প্রয়োজন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি; এজন্য মামরা করেছি। এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কী পদক্ষেপ নেয় সেই অপেক্ষায় আছি।’

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি গত ২৩ অক্টোবর রাতে ‘জুম সভা’ করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ঢাকা অঞ্চলের সাড়ে চারশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানের সঙ্গে। ওই সভায় ঢাকা, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের ৫৮টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ৪৫৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান সংযুক্ত ছিলেন বলে মাউশির ঢাকা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-পরিচালক এএসএম আবদুল খালেক জানিয়েছেন।

কয়েকজন শিক্ষক জানিয়েছেন, জুম সভায় শিক্ষামন্ত্রী নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ বিরুদ্ধে সব স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সব শিক্ষককে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি শিক্ষাক্রম সম্পর্কে অভিভাবকদের অবহিত করতে সব স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ আয়োজনের পরামর্শ দিয়েছেন।

মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সভাপতিত্বে সভা সঞ্চালনা করেন অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী।

সভায় ‘অপপ্রচার’ নিয়ে সতর্ক থাকতে প্রধান শিক্ষক ও শ্রেণী শিক্ষকদের পরার্মশ দেয়া হয়েছে জানিয়ে একাধিক বলেন, সভায় জানানো হয়েছে মূল্যায়ন নির্দেশিকা ও টিচার্স গাইড শীঘ্রই সারাদেশের স্কুলে পৌঁছে যাবে। শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের তথ্য সংগ্রহে আগামী নভেম্বরে একটি অ্যাপ চালু করা হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি কার্যক্রমও নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে হবে বলে সভায় জানানো হয়।

জুম সভায় অংশ নেয়া বিভিন্ন স্কুলের প্রধান বা সহকারী প্রধানরা শিক্ষামন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ভিকারুন নিসা স্কুলসহ অন্যান্য স্থানে যারা জমায়েত হচ্ছেন তাদের মধ্যে আসল অভিভাবক ছিলেন না। তারা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সরকারের ‘শিক্ষাক্রমকে’ বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিভাবকদের নতুন শিক্ষাক্রমের ক্লাস পর্যবেক্ষণের সুযোগ দেয়া, সব স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ আয়োজন এবং ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির সদস্যদের সম্পৃক্ত করার বিষয়ে পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

ওই সভায় ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কেকা রায় চৌধুরী দাবি করেন, তার প্রতিষ্ঠানের সামনে যারা মানববন্ধন করেছিলেন তাদের কেউই প্রকৃত অভিভাবক নন। তারা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে থাকতে পারেন।

সভায় শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ও সে পরীক্ষার মূল্যায়ন নতুন শিক্ষাক্রম অনুসারে হবে।

জুম সভার বিষয়ে মাউশির পরিচালক অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অভিজ্ঞতা ও কী কী সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তা শুনেছি। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন গাইড লাইন (দিকনির্দেশনা) দেয়া হয়েছে।’

কয়েকজন প্রধান শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচারের’ চালানোর কথাও তুলে ধরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকরা জানিয়েছেন....আমরাও খোঁজ নিয়ে দেখেছি, যারা অভিভাবকের ব্যানারে নতুন শিক্ষাক্রমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার (শিক্ষাক্রম বাতিলের দাবি) চালাচ্ছেন তারা কেউই প্রকৃত অভিভাবক নয়।’

‘সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন’র ব্যানারে একদল ‘অভিভাবক’ গত ১৯ অক্টোবর রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুলের সামনে মানববন্ধন করে নতুন শিক্ষাক্রম সংস্কার ও পরীক্ষা পদ্ধতি চালু রাখার দাবি জানান।

তারা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা নেই। চতুর্থ থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়তে হবে আটটি বিষয়।

নতুন শিক্ষাক্রমে তাত্ত্বিক বিষয়ের চেয়ে শিখনকালীন মূল্যায়নকে বেশি জোর দেয়া হয়েছে দাবি করে মানববন্ধনে বলা হয়, ‘সাময়িক পরীক্ষাও তুলে দেয়া হয়েছে। পরীক্ষা পদ্ধতি না থাকায় ছাত্রছাত্রীরা অধ্যয়নমুখী হচ্ছে না। বইয়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় তারা ডিভাইসমুখী হচ্ছে।’

তারা আরও অভিযোগ করেন, নতুন শিক্ষাক্রমে সবচেয়ে বড় সমস্যা দলগত কার্যক্রমে। দেখা যাচ্ছে, স্কুল থেকে দেয়া দলগত কাজটি করতে হচ্ছে স্কুল পিরিয়েডের পর। এ কারণে ছাত্রছাত্রীদের বন্ধু-বান্ধবীর বাসায় বা অন্য কোথাও একত্রিত হয়ে তা সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এতে ছাত্রছাত্রী অভিভাবক উভয়কেই নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। অনেক অভিভাবক স্কুল ছুটির পর তার সন্তানকে অন্য কারো বাসায় নিয়ে যেতে আগ্রহী নয় এবং স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না বলে ওই মানববন্ধনে দাবি করা হয়।

back to top