আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু জটিলতায় পরেছে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই। এই স্তরের অন্তত চারটি বইয়ের নতুন শিক্ষাক্রম শনিবার (২ ডিসেম্বর) নাগাদ চূড়ান্ত হয়নি। এসব বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হলেও ‘পা-ুলিপি’ না পাওয়ায় ছাপাখানা মালিকরা কাজ করতে পারছেন না। আবার একটি বইয়ের কয়েক লাখ কপি ছাপার পর ‘বিতর্কের’ কারণে ‘কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশ ছাপা বন্ধ রাখা হয়।
যদিও এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম শনিবার সংবাদকে বলেন, ‘বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রায় ৯০ শতাংশ বই ছাপার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বাকি বইগুলো খুব শীঘ্রই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’
অন্য স্তরের বইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিকের বইও যথাসময়ে পৌঁছে যাবে। মাধ্যমিকের মোট ২১ কোটি বইয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি বই ছাপা হয়ে গেছে। বাকি বইয়ের ছাপার কাজ চলমান।’
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে সারাদেশে মোট তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থী ধরে নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপা হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য এবার মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি পাঠ্যবই ছাপছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)।
সরকার ২০১০ সাল থেকে ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তব উৎসব পালন করে আসছে। এর আগে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করা হতো।
কিন্তু আগামী জানুয়ারিতে হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এবার নভেম্বরের মধ্যে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছিল এনসিটিবি। এই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। আবার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়েও নানা ‘সমালোচনা’ হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এই ‘সমালোচনা’ এড়াতে নির্বাচনের পর পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালনের পরামর্শ দিয়েছে সরকারের একটি সংস্থা।
এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ের পা-ুলিপি শনিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়া সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ বইয়ের পা-ুলিপি গত সপ্তাহের শেষের দিকে ছাপাখানা মালিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে। এসব বইয়ের পা-ুলিপি (পাঠ্যক্রম) প্রণয়নে বিলম্ব হয়েছে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীতে ১৩টি করে বিষয়ের বই পাঠদান হবে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে মোট দশটি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতি শ্রেণীতে মোট বই ১৩টি।
অন্তত তিনটি ছাপাখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের সব বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে স্কুল পর্যায়ে বই পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না। তারা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে আশবাদী।
তবে পা-ুলিপি নিয়ে বারবার ‘বিতর্ক’, ছাপা শুরু হওয়ার পর কয়েকটি বইয়ের পা-ুলিপি প্রত্যাহার বা সংশোধন এবং যথাসময়ে পা-ুলিপি প্রস্তুত না হওয়ায় ডিসেম্বরের মধ্যে মাধ্যমিকের সব বই ছাপা শেষ হচ্ছে না বলে ছাপাখানা মালিকরা জানিয়েছেন।
আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম পাঠদান শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই ছাপা নিয়েই বেশি ‘জটিলতায়’ পরেছে এনসিটিবি।
এ বইটি কয়েকটি ছাপাখানায় পুরোদমে মুদ্রণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় এনসিটিবির নির্দেশ স্থগিত করা হয়েছে। ছাপা স্থগিতের প্রায় একমাসেও পা-ুলিপি সংশোধন বা চূড়ান্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
বিরূপ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পেছাচ্ছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেণী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগে ও পরে ‘হরতাল’ ও ‘অবরোধ’ কর্মসূচি থাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পেছানো হয়েছে। সংশোধিত সূচি অনুযায়ী আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা রয়েছে। এদিন থেকে প্রথম পর্যায়ে ইআইআইএন (এডুকেশন ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর)-ধারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
আর জানুয়ারির সুবিধাজনক সময়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ইআইআইএন-বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’র কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সব মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
গত ২৮ নভেম্বর ‘স্কিম পরিচালক’ সৈয়দ মাহফুজ আলী স্বাক্ষরিত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো এক চিঠিতে প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ‘স্কিমে’ পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান বা মাদ্রাসার বিশেষায়িত বিষয়গুলোর শিক্ষকরা এ তালিকা অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষণ দিতে শিক্ষকদের তথ্য ও তালিকা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘স্কিমে’ পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থেই শিক্ষকদের তালিকায় যেনো কোচিং সেন্টারের কেউ অন্তর্ভুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
‘শিক্ষাক্রমের নামে প্রজন্ম ধ্বংসের নীলনকশা’
নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নামে সরকার প্রজন্ম ধ্বংসের ‘নীলনকশা’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আলোচকরা।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘পরিকল্পিত শিক্ষা ধ্বংসের কালপঞ্জি : ১৯৭২-২০২২’ শীর্ষক সেমিনারে এ অভিযোগ করা হয়। শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন (শিশির) এবং সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সভায় সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের নামে প্রজন্মকে ‘ধ্বংসের নীলনকশা’ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করাই অভিভাবক-শিক্ষকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি অবিলম্বে গ্রেপ্তার চারজনের মুক্তির দাবি করেছেন।
রাখাল রাহা বলেন, গ্রেপ্তার চারজন কোনো চুরি ডাকাতি বা কারও সম্পত্তি লুট করেননি। তারা কোনো ব্যাংক ডাকাতি করেননি। তাহলে কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হলো? নতুন কারিকুলামের নামে নতুন প্রজন্মকে ‘ধ্বংসের যে নীলনকশা’ করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তার দাবি।
রাখাল রাহার দাবি, এ পর্যন্ত যে কয়টি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ‘খারাপ ও বাস্তবতাবিবর্জিত’ শিক্ষাক্রম হলো নতুন শিক্ষাক্রম। এ শিক্ষাক্রমের ফলে দেশে নিম্নমানের প্রচুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সৃষ্টি হবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাবে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আলোচক ছিলেন অধ্যাপক সালেহ মতিন, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার মোল্লা, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রমুখ।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচার’ ও ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিল থানায় এনসিটিবির পক্ষ্য থেকে সংস্থার সহকারী সচিব আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় সম্প্রতি চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে তিনজন এবং টাঙ্গাইল থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- আবুল হাসনাত কবির (৫১), গোলাম রাব্বী (৩৭), জাহাঙ্গীর কবির ও কাজী পনির।
শনিবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৩
আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যবই ছাপা প্রায় শেষ পর্যায়ে। কিন্তু জটিলতায় পরেছে মাধ্যমিকের পাঠ্যবই। এই স্তরের অন্তত চারটি বইয়ের নতুন শিক্ষাক্রম শনিবার (২ ডিসেম্বর) নাগাদ চূড়ান্ত হয়নি। এসব বই ছাপার দরপত্র আহ্বান করা হলেও ‘পা-ুলিপি’ না পাওয়ায় ছাপাখানা মালিকরা কাজ করতে পারছেন না। আবার একটি বইয়ের কয়েক লাখ কপি ছাপার পর ‘বিতর্কের’ কারণে ‘কর্তৃপক্ষের’ নির্দেশ ছাপা বন্ধ রাখা হয়।
যদিও এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম শনিবার সংবাদকে বলেন, ‘বই ছাপার অগ্রগতি ভালো। প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিকের প্রায় ৯০ শতাংশ বই ছাপার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। বাকি বইগুলো খুব শীঘ্রই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলে আমরা আশাবাদী।’
অন্য স্তরের বইয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মাধ্যমিকের বইও যথাসময়ে পৌঁছে যাবে। মাধ্যমিকের মোট ২১ কোটি বইয়ের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কোটি বই ছাপা হয়ে গেছে। বাকি বইয়ের ছাপার কাজ চলমান।’
২০২৪ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরে সারাদেশে মোট তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থী ধরে নিয়ে পাঠ্যপুস্তক ছাপা হচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর জন্য এবার মোট ৩০ কোটি ৭০ লাখ ৮৩ হাজার ৫১৭ কপি পাঠ্যবই ছাপছে ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড’ (এনসিটিবি)।
সরকার ২০১০ সাল থেকে ১ জানুয়ারি পাঠ্যপুস্তব উৎসব পালন করে আসছে। এর আগে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করা হতো।
কিন্তু আগামী জানুয়ারিতে হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এবার নভেম্বরের মধ্যে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছাপার কাজ শেষ করার লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করেছিল এনসিটিবি। এই লক্ষ্য পূরণ হচ্ছে না। আবার নতুন শিক্ষাক্রম নিয়েও নানা ‘সমালোচনা’ হচ্ছে। নির্বাচনের আগে এই ‘সমালোচনা’ এড়াতে নির্বাচনের পর পাঠ্যপুস্তক উৎসব পালনের পরামর্শ দিয়েছে সরকারের একটি সংস্থা।
এনসিটিবির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, অষ্টম ও নবম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ ও ‘বিজ্ঞান অনুশীলন পাঠ’ বইয়ের পা-ুলিপি শনিবার পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়া সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ বইয়ের পা-ুলিপি গত সপ্তাহের শেষের দিকে ছাপাখানা মালিকদের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হবে। এসব বইয়ের পা-ুলিপি (পাঠ্যক্রম) প্রণয়নে বিলম্ব হয়েছে। অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণীতে ১৩টি করে বিষয়ের বই পাঠদান হবে। এর মধ্যে একজন শিক্ষার্থীকে মোট দশটি বই পড়তে হয়। বিভিন্ন ধর্মের বই মিলিয়ে প্রতি শ্রেণীতে মোট বই ১৩টি।
অন্তত তিনটি ছাপাখানা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রাথমিক স্তরের সব বই ছাপার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে স্কুল পর্যায়ে বই পৌঁছে দেয়া যাচ্ছে না। তারা ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রাথমিকের সব বই স্কুল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার ব্যাপারে আশবাদী।
তবে পা-ুলিপি নিয়ে বারবার ‘বিতর্ক’, ছাপা শুরু হওয়ার পর কয়েকটি বইয়ের পা-ুলিপি প্রত্যাহার বা সংশোধন এবং যথাসময়ে পা-ুলিপি প্রস্তুত না হওয়ায় ডিসেম্বরের মধ্যে মাধ্যমিকের সব বই ছাপা শেষ হচ্ছে না বলে ছাপাখানা মালিকরা জানিয়েছেন।
আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম পাঠদান শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ষষ্ঠ শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিকবিজ্ঞান’ এবং ‘বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ’ বই ছাপা নিয়েই বেশি ‘জটিলতায়’ পরেছে এনসিটিবি।
এ বইটি কয়েকটি ছাপাখানায় পুরোদমে মুদ্রণ কাজ চলমান থাকা অবস্থায় এনসিটিবির নির্দেশ স্থগিত করা হয়েছে। ছাপা স্থগিতের প্রায় একমাসেও পা-ুলিপি সংশোধন বা চূড়ান্ত করতে পারেনি সংশ্লিষ্টরা।
বিরূপ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে পেছাচ্ছে শিক্ষক প্রশিক্ষণ
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেণী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম গত ১ ডিসেম্বর শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগে ও পরে ‘হরতাল’ ও ‘অবরোধ’ কর্মসূচি থাকায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পেছানো হয়েছে। সংশোধিত সূচি অনুযায়ী আগামী ৯ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু করার কথা রয়েছে। এদিন থেকে প্রথম পর্যায়ে ইআইআইএন (এডুকেশন ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর)-ধারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু হয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।
আর জানুয়ারির সুবিধাজনক সময়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে ইআইআইএন-বিহীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হবে। নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’র কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে সব মাধ্যমিক স্কুল, মাদ্রাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণী শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
গত ২৮ নভেম্বর ‘স্কিম পরিচালক’ সৈয়দ মাহফুজ আলী স্বাক্ষরিত জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের পাঠানো এক চিঠিতে প্রথম পর্যায়ে প্রশিক্ষণার্থী শিক্ষকদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ‘স্কিমে’ পাঠাতে বলা হয়েছিল। তবে প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান বা মাদ্রাসার বিশেষায়িত বিষয়গুলোর শিক্ষকরা এ তালিকা অন্তর্ভুক্ত হবেন না।
দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রশিক্ষণ দিতে শিক্ষকদের তথ্য ও তালিকা ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে ‘স্কিমে’ পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রশিক্ষণার্থেই শিক্ষকদের তালিকায় যেনো কোচিং সেন্টারের কেউ অন্তর্ভুক্ত না হয় তা নিশ্চিত করতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ করা হয়েছে।
‘শিক্ষাক্রমের নামে প্রজন্ম ধ্বংসের নীলনকশা’
নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়নের নামে সরকার প্রজন্ম ধ্বংসের ‘নীলনকশা’ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন আলোচকরা।
শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘পরিকল্পিত শিক্ষা ধ্বংসের কালপঞ্জি : ১৯৭২-২০২২’ শীর্ষক সেমিনারে এ অভিযোগ করা হয়। শিক্ষা ও শিশু রক্ষা আন্দোলন (শিশির) এবং সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সভায় সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক রাখাল রাহা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের নামে প্রজন্মকে ‘ধ্বংসের নীলনকশা’ করা হয়েছে। এর প্রতিবাদ করাই অভিভাবক-শিক্ষকসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তিনি অবিলম্বে গ্রেপ্তার চারজনের মুক্তির দাবি করেছেন।
রাখাল রাহা বলেন, গ্রেপ্তার চারজন কোনো চুরি ডাকাতি বা কারও সম্পত্তি লুট করেননি। তারা কোনো ব্যাংক ডাকাতি করেননি। তাহলে কেন তাদের গ্রেপ্তার করা হলো? নতুন কারিকুলামের নামে নতুন প্রজন্মকে ‘ধ্বংসের যে নীলনকশা’ করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ করাই তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে তার দাবি।
রাখাল রাহার দাবি, এ পর্যন্ত যে কয়টি শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে ‘খারাপ ও বাস্তবতাবিবর্জিত’ শিক্ষাক্রম হলো নতুন শিক্ষাক্রম। এ শিক্ষাক্রমের ফলে দেশে নিম্নমানের প্রচুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল সৃষ্টি হবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাবে।
সেমিনারে অন্যদের মধ্যে আলোচক ছিলেন অধ্যাপক সালেহ মতিন, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক আবদুস সাত্তার মোল্লা, অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক আবদুস সালাম প্রমুখ।
নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ‘অপপ্রচার’ ও ‘বিভ্রান্তিকর তথ্য’ ছড়ানোর অভিযোগে গত ২৩ অক্টোবর রাজধানীর মতিঝিল থানায় এনসিটিবির পক্ষ্য থেকে সংস্থার সহকারী সচিব আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা করেন। সেই মামলায় সম্প্রতি চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এর মধ্যে গত ২৩ নভেম্বর ঢাকা থেকে তিনজন এবং টাঙ্গাইল থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা হলেন- আবুল হাসনাত কবির (৫১), গোলাম রাব্বী (৩৭), জাহাঙ্গীর কবির ও কাজী পনির।