alt

শিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন কমিটির প্রধানই তদন্তের আওতায়

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

‘শরীফার গল্প’সহ পাঠ্যবইয়ের ‘ভুল-ত্রুটি’ শনাক্ত করতে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির কার্যক্রম ধীরগতিতে এগুচ্ছে। দুই সপ্তাহে কমিটি মাত্র ভার্চুয়ালি একটি সভা করেছে। এই কমিটির আহ্বায়ক ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইআরবি) উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রশীদ। তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই অন্তত ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ ১০টি অভিযোগে তদন্ত করছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসির তদন্তের ‘চাপে’ আবদুর রশীদ নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়নে ঠিকমত সময় দিতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির দায়িত্বে থাকায় ইউজিসির তদন্ত কার্যক্রমেও ‘ঢিলেঢালা’ অবস্থা বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

যদিও অধ্যাপক আবদুর রশীদ শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে একটি সভা করেছেন। এ বিষয়ে ‘পড়াশোনা’ করছেন। যত দ্রুত সম্ভব তারা আরেকটি সভা করবেন। খুব দ্রুত সম্ভব তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘রিপোর্ট’ জমা দেবেন।

সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে পাঠের অংশ হিসেবে ‘শরীফার গল্প’ রাখা হয়েছে। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়টি পর্যালোচনায় গত ২৪ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যের কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইআরবি উপাচার্য আবদুর রশীদকে কমিটির আহ্বায়ক এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

পাঁচ সদস্যের মূল্যায়ন কমিটির তিন সদস্য হলেন-ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর কফিল উদ্দীন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা সরকারি আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ।

এ কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, আহ্বায়কের ‘ব্যস্ততা’ ও সদস্য সচিবের ‘অসুস্থতার’ কারণে তারা এ পর্যন্ত শুধু ভার্চুয়ালি একটি সভা করতে পেরেছেন।

মূল্যায়ন কমিটির ‘ঢিলেঢালা’ কার্যক্রমে আস্থাহীনতায় ভুগছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা। তারা কমিটির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না থেকে নিজস্ব উদ্যোগেই নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো পাঠ্যবইয়ের ‘সমালোচিত’ বিষয়, ভুল-ত্রুটি বা কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, তারা প্রতিটি বিষয়ের বই ‘ভালোভাবে’ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক ‘অভিজ্ঞ’ শিক্ষকদের কাছে দিয়েছেন। এনসিটিবির বিষয় বিশেষজ্ঞরাও বইগুলি পূণরায় ‘ভালোভাবে’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্লাস টিচাররাও ছোট-খাটো ভুল থাকলে ধরিয়ে দিচ্ছেন; নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। সাধারণ অভিভাবক ও নাগরিকরা ছোট-খাটো ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত পরামর্শ ও মতামতও আমলে নেয়া হচ্ছে।’

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও অধ্যাপক আব্দুর রশীদের নেতৃত্বাধীন কমিটি মূল্যায়ন কার্যক্রম খুব একটা এগিয়ে নিতে পারেননি। কমিটির কার্যক্রমে এনসিটিবি আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ শিক্ষাবর্ষের দুই মাস চলে গেছে। শিক্ষার্থীদের যত দ্রুত সম্ভব ভুল-ত্রুটি ও শিক্ষাক্রমের ওপর সংশোধনী বা ব্যাখ্যা স্কুল পর্যায়ে পাঠাতে হবে। আবার আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম সংবাদকে বলেছেন, ‘কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেই তিনি শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন কমিটিতে থাকতে পারবে না, আমি সেটি মনে করি না। আমার মনে হয়, শরীফার গল্প নিয়ে যেহেতু ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হচ্ছে, সেই বিবেচনায় হয়তো ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।’

তবে তিনি মনে করেন, মূল্যায়ন কমিটির কার্যক্রম এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে ইউজিসির তদন্ত-দুটিই গুরুত্বসহকারে করা উচিত।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে।

আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইআরবি উপাচার্য প্রফেসর আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ তদন্ত করতে গত বছরের ২৬ নভেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘জনৈক ইমরুল হাসান কর্তৃক ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে ১০টি অনিয়ম, দুনীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।’

উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, নিজের বাসার কাজের মেয়েকে বিশ^বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া, দুর্নীতির অভিযোগে একটি বিশ^বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি পাওয়া একজনকে ইআরবিতে নিয়োগ দেয়া, ইউজিসি নীতিমালা লঙ্গন করে অবসরপ্রাপ্ত একজনকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখায় নিয়োগ দেয়া, নিয়মরীতি উপেক্ষা করে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে একজনকে নিয়োগ দেয়া, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ এক কর্মচারীকে ৯ম গ্রেডে বসানো, একটি গাড়ি মেরামতে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ের অভিযোগ, বিশেষ প্রতিষ্ঠান থেকে ফার্নিচার ও মালামাল কেনা, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে বিরোধ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরোধ এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে একটি বিশেষ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ইআরবি উপাচার্য আবদুর রশীদ বলেন, অভিযোগগুলো সঠিক নয়। এই বিশ^বিদ্যালয়ে আগে থেকেই নানা সমস্যা ছিল, নিয়োগে নিয়ম-কানুন ঠিকমত মানা হয়নি। আগের প্রশাসন কোনো কাজই ঠিকমত করেনি। কোনো বিধিবিধান তৈরি হয়নি।

ইআরবি ‘সেভাবে (প্রাতিষ্ঠানিকভাবে) গড়ে ওঠেনি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইউজিসির তদন্তের আলোকে দু’জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরো দু-একজনের সমস্যা আছে। উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এসব পদক্ষেপ নেয়ার কারণেই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে।’

উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি পদ শূন্য। জনবল ছাড়া কাজ করব কীভাবে? মূলত কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্যই লিয়েনে, অস্থায়ীভাবে কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম হয়নি।’

পাঠ্যবইয়ের সংখ্যা বাড়লেও ছাপার কাজে পিছিয়ে

ছবি

কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

জালিয়তি, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সাবেক সচিবের ছেলের পরীক্ষার ফলাফল বাতিল

এইচএসসির ফল বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ে বিক্ষোভ

ছবি

আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় গঠনের দাবিতে সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের ফের ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষা শুরু ৪ জানুয়ারি

ছবি

ফল পুনর্মূল্যায়নের দাবিতে বিক্ষোভ, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যানের পদত্যাগের ঘোষণা

ছবি

পদত্যাগ করবেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার

ছবি

‘মনগড়া ফল’ বাতিলের দাবিতে যশোর বোর্ড ঘেরাও করে এইচএসসি অনুত্তীর্ণদের বিক্ষোভ

ছবি

ইন্টারন্যাশনাল এসাসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি প্রেসিডেন্টস এর কোষাধ্যক্ষ সবুর খান

এমপিওভুক্তির দাবিতে টানা তৃতীয় দিন শিক্ষা ভবনের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান

ছবি

সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে বেড়েছে জিপিএ-৫

ছবি

আলিমে বেড়েছে পাসের হার, জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৬১৩ জন

ছবি

এইচএসসিতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে মেয়েরা

ছবি

১৩৮৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শতভাগ পরীক্ষার্থী পাস

ছবি

এইচএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার ৭৭.৭৮

ছবি

এইচএসসির ফল আজ, জানা যাবে যেভাবে

ছবি

এইচএসসির ফল প্রকাশ আগামীকাল, জানা যাবে যেভাবে

ছবি

মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগ এবারও ‘ভাগ্যে’

ছবি

কমনওয়েলথ স্কলারশিপ কমিশনের ৬৫ বছরের ঐতিহ্য উদযাপন করল ব্রিটিশ কাউন্সিল

ছবি

এইচএসসির ফল প্রকাশ ১৫ অক্টোবর

ছবি

বিজ্ঞানমেলায় মুখরিত মানারাত কলেজ

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে ৩ দিনব্যাপী ইনপার্সন শিক্ষক প্রশিক্ষণ শুরু

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেই লক্ষাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য

ছবি

স্টাডি ইউকে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডসের জন্য আবেদন আহ্বান

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে পুলিশে দিলেন জবি শিক্ষার্থীরা

পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ‘বৈষম্যবিরোধী ‘গ্রাফিতি’

ছবি

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অধ্যাপক মনজুর আহমেদের নেতৃত্বে কমিটি করল সরকার

এবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল

শিক্ষায় বদলি নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ছবি

গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনদের ক্লাস শুরু ২০ অক্টোবর

ছবি

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা যেভাবে হবে

মাধ্যমিকে এবারও লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তি

ছবি

ইউআইটিএস এ আউটকাম বেজড এডুকেশন বিষয়ক সেমিনার

ছবি

অক্টোবরেই এইচএসসির ফল: অধ্যাপক তপন

ছবি

বিনামূল্যে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ এর আইটি প্রশিক্ষণ

tab

শিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন কমিটির প্রধানই তদন্তের আওতায়

রাকিব উদ্দিন

শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

‘শরীফার গল্প’সহ পাঠ্যবইয়ের ‘ভুল-ত্রুটি’ শনাক্ত করতে গঠিত মূল্যায়ন কমিটির কার্যক্রম ধীরগতিতে এগুচ্ছে। দুই সপ্তাহে কমিটি মাত্র ভার্চুয়ালি একটি সভা করেছে। এই কমিটির আহ্বায়ক ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইআরবি) উপাচার্য অধ্যাপক আবদুর রশীদ। তার বিরুদ্ধে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই অন্তত ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ ১০টি অভিযোগে তদন্ত করছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

ইউজিসির তদন্তের ‘চাপে’ আবদুর রশীদ নতুন শিক্ষাক্রম মূল্যায়নে ঠিকমত সময় দিতে পারছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই কমিটির দায়িত্বে থাকায় ইউজিসির তদন্ত কার্যক্রমেও ‘ঢিলেঢালা’ অবস্থা বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

যদিও অধ্যাপক আবদুর রশীদ শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে একটি সভা করেছেন। এ বিষয়ে ‘পড়াশোনা’ করছেন। যত দ্রুত সম্ভব তারা আরেকটি সভা করবেন। খুব দ্রুত সম্ভব তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ‘রিপোর্ট’ জমা দেবেন।

সপ্তম শ্রেণীর ‘ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান’ বইয়ে পাঠের অংশ হিসেবে ‘শরীফার গল্প’ রাখা হয়েছে। এনিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। এ বিষয়টি পর্যালোচনায় গত ২৪ জানুয়ারি পাঁচ সদস্যের কমিটি করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ইআরবি উপাচার্য আবদুর রশীদকে কমিটির আহ্বায়ক এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবির) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামানকে কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে।

পাঁচ সদস্যের মূল্যায়ন কমিটির তিন সদস্য হলেন-ইসলামিক ফাউন্ডেশনের গভর্নর কফিল উদ্দীন সরকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিম এবং ঢাকা সরকারি আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবদুর রশিদ।

এ কমিটির সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, আহ্বায়কের ‘ব্যস্ততা’ ও সদস্য সচিবের ‘অসুস্থতার’ কারণে তারা এ পর্যন্ত শুধু ভার্চুয়ালি একটি সভা করতে পেরেছেন।

মূল্যায়ন কমিটির ‘ঢিলেঢালা’ কার্যক্রমে আস্থাহীনতায় ভুগছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা। তারা কমিটির ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না থেকে নিজস্ব উদ্যোগেই নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো পাঠ্যবইয়ের ‘সমালোচিত’ বিষয়, ভুল-ত্রুটি বা কোনো সমস্যা থাকলে সেগুলো শনাক্তের চেষ্টা করছেন।

জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, তারা প্রতিটি বিষয়ের বই ‘ভালোভাবে’ পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বিষয়ভিত্তিক ‘অভিজ্ঞ’ শিক্ষকদের কাছে দিয়েছেন। এনসিটিবির বিষয় বিশেষজ্ঞরাও বইগুলি পূণরায় ‘ভালোভাবে’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। অভিভাবকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামত নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্লাস টিচাররাও ছোট-খাটো ভুল থাকলে ধরিয়ে দিচ্ছেন; নানা রকম পরামর্শ দিচ্ছেন। সাধারণ অভিভাবক ও নাগরিকরা ছোট-খাটো ভুল ধরিয়ে দিচ্ছেন। গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত পরামর্শ ও মতামতও আমলে নেয়া হচ্ছে।’

এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও অধ্যাপক আব্দুর রশীদের নেতৃত্বাধীন কমিটি মূল্যায়ন কার্যক্রম খুব একটা এগিয়ে নিতে পারেননি। কমিটির কার্যক্রমে এনসিটিবি আশাবাদী হতে পারছেন না। কারণ শিক্ষাবর্ষের দুই মাস চলে গেছে। শিক্ষার্থীদের যত দ্রুত সম্ভব ভুল-ত্রুটি ও শিক্ষাক্রমের ওপর সংশোধনী বা ব্যাখ্যা স্কুল পর্যায়ে পাঠাতে হবে। আবার আগামী শিক্ষাবর্ষের বই ছাপার প্রস্তুতিও নিতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর তাসলিমা বেগম সংবাদকে বলেছেন, ‘কারো বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেই তিনি শিক্ষাক্রম মূল্যায়ন কমিটিতে থাকতে পারবে না, আমি সেটি মনে করি না। আমার মনে হয়, শরীফার গল্প নিয়ে যেহেতু ধর্মীয় উসকানি দেওয়া হচ্ছে, সেই বিবেচনায় হয়তো ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যকে কমিটির প্রধান করা হয়েছে।’

তবে তিনি মনে করেন, মূল্যায়ন কমিটির কার্যক্রম এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে ইউজিসির তদন্ত-দুটিই গুরুত্বসহকারে করা উচিত।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়। চলতি শিক্ষাবর্ষে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে।

আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইআরবি উপাচার্য প্রফেসর আব্দুর রশীদের বিরুদ্ধে ‘অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ তদন্ত করতে গত বছরের ২৬ নভেম্বর ইউজিসি চেয়ারম্যানকে চিঠি দেয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়, ‘জনৈক ইমরুল হাসান কর্তৃক ইসলামি আরবি বিশ^বিদ্যালয়ের প্রফেসর আবদুর রশীদের বিরুদ্ধে ১০টি অনিয়ম, দুনীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।’

উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, নিজের বাসার কাজের মেয়েকে বিশ^বিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেয়া, দুর্নীতির অভিযোগে একটি বিশ^বিদ্যালয় থেকে অব্যাহতি পাওয়া একজনকে ইআরবিতে নিয়োগ দেয়া, ইউজিসি নীতিমালা লঙ্গন করে অবসরপ্রাপ্ত একজনকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শাখায় নিয়োগ দেয়া, নিয়মরীতি উপেক্ষা করে পরিচালক (অর্থ ও হিসাব) পদে একজনকে নিয়োগ দেয়া, অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ এক কর্মচারীকে ৯ম গ্রেডে বসানো, একটি গাড়ি মেরামতে ৬ লাখ টাকা ব্যয়ের অভিযোগ, বিশেষ প্রতিষ্ঠান থেকে ফার্নিচার ও মালামাল কেনা, উপ-উপাচার্যের সঙ্গে বিরোধ, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরোধ এবং উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রজীবনে একটি বিশেষ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা।

এসব অভিযোগের বিষয়ে ইআরবি উপাচার্য আবদুর রশীদ বলেন, অভিযোগগুলো সঠিক নয়। এই বিশ^বিদ্যালয়ে আগে থেকেই নানা সমস্যা ছিল, নিয়োগে নিয়ম-কানুন ঠিকমত মানা হয়নি। আগের প্রশাসন কোনো কাজই ঠিকমত করেনি। কোনো বিধিবিধান তৈরি হয়নি।

ইআরবি ‘সেভাবে (প্রাতিষ্ঠানিকভাবে) গড়ে ওঠেনি’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ইউজিসির তদন্তের আলোকে দু’জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। আরো দু-একজনের সমস্যা আছে। উপ-উপাচার্যের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে। এসব পদক্ষেপ নেয়ার কারণেই আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে।’

উপাচার্য বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি পদ শূন্য। জনবল ছাড়া কাজ করব কীভাবে? মূলত কাজ চালিয়ে নেয়ার জন্যই লিয়েনে, অস্থায়ীভাবে কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো দুর্নীতি-অনিয়ম হয়নি।’

back to top