জেষ্ঠ্য শিক্ষকদের বাদ দিয়ে কণিষ্ঠ শিক্ষকদের পদোন্নতি
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে পদোন্নতি ‘বঞ্চনা’ নিয়ে অসন্তোষ চরমে। জেষ্ঠ্য শিক্ষকদের বাদ দিয়ে কণিষ্ঠ শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া, এক বিষয়ের শিক্ষককে অন্য বিষয়ে পদোন্নতি দেওয়া ও পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
প্রায় ১২ বছর অপেক্ষার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৭১১ জন প্রভাষককে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তারা বিসিএস ২৮, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এসব ব্যাচের আরো প্রায় দুই হাজার তিনশ’ শিক্ষা ক্যাডার সদস্য পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন। অথচ একই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা ইতোমধ্যে একাধিক পদোন্নতি পেয়েছেন বলে শিক্ষা সমিতির দাবি।
শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, বিসিএস ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬তম ব্যাচের সব শিক্ষকই পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। শিক্ষা সমিতির নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতির পরিবর্তে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন ‘ভেঙ্গে ভেঙ্গে’ বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতিই দিয়ে আসছেন। এতে অনেকক্ষেত্রেই জুনিয়র কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেলেও সিনিয়র সদস্যরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এবারও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সহকারি থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৯০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এতে সহকারি অধ্যাপকের ৬৯০টি পদ শূন্য হয়। এর আগেও বেশ কিছু পদ শূন্য ছিল। সেই হিসেবে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি হলেও আরো অন্তত এক হাজার থেকে ১২শ’ প্রভাষক পদোন্নতি প্রত্যাশী ছিলেন।
পদোন্নতির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে ইংরেজি বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৫৮ জনকে শূণ্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার সহকারি অধ্যাপকের পদোন্নতিতে ৫১জনকে দেওেয়া হয়েছে। কী কারণে সাতটি শূণ্য পদে পদোন্নতি হয়নি তা নিয়ে ‘অসন্তোষ’ বিরাজ করছে শিক্ষকদের মধ্যে।
গত বছর আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে শূণ্য পদে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল ২২জনকে। অথচ এবার সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো ১০জনকে। সেই হিসেবে শূণ্য পদ থাকা সত্বেও ১২টি পদে এই বিষয়ে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
একইভাবে ব্যবস্থাপনা ও ভূগোলসহ অন্যান্য বিষয়ে শূণ্য পদ থাকা সত্বেও পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হননি অনেক কর্মকর্তা। এই বঞ্চনাকে ‘ক্যাডার বৈষম্য’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বঞ্চিত শিক্ষক এবং শিক্ষা ক্যাডার নেতারা। তারা সংশোধিত আদেশ জারির মাধ্যমে শূণ্য পদ পদোন্নতির দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) সমিতির’ মহাসচিব শওকত মোল্ল্যা সংবাদকে বলেছেন, এবার পদোন্নতি হয়েছে বিসিএস ২৮তম ব্যাচ থেকে। এই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন উপসচিব।
বিসিএস ২৮ থেকে ৩৬তম ব্যাচে প্রায় তিন হাজার শিক্ষাক ক্যাডার সদস্য ইতোমধ্যে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে মাত্র ৭১১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বাকি সবাই বহু আগেই পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন।’
তিনি বঞ্চিত সব ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার সদস্যের পদোন্নতি দাবি করে বলেন, ‘শিক্ষকদের বঞ্চিত রেখে, অসন্তোষ্ট রেখে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।’
প্রশাসন ক্যাডারে পদ শূন্য না থাকলেও ‘সুপার নিউমারারি’ (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া হয় উল্লেখ করে শওকত মোল্ল্যা বলেন, ‘৩৩তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতিতে সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ নেই।’ অর্থাৎ এসব শিক্ষক ইতোমধ্যে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করায় তারা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। এ কারণে বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও সরকারের বাড়তি কোন অর্থের প্রয়োজন হবে না।
এদিকে ২৮তম ব্যাচের সবাই পদোন্নতি না পেলেও ৩৩তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়ায় ‘অসন্তোষ’ চরমে। ইসলাম শিক্ষায় শূণ্য পদ না থাকা সত্বেও ২৯জনকে (৩২তম) পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ফলে সিনিয়র ব্যাচ (৩২তম) ব্যাচকে শেষ না করেই জুনিয়র ব্যাচকে (৩৩তম) পদোন্নতি দেওয়া হলো।
এর ফলে ব্যাচভিত্তিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের মাঝে জুনিয়রদের অধীনে কাজ করার মানসিক হতাশাকে প্রকট হতে পারে বলে বিসিএস শিক্ষা সমিতির নেতাদের ধারণা। তারা বলেন, পদোন্নতি কমিটি চাইলে এই বিষয়ের ৩২তম ব্যাচের অবশিষ্ট ৯ জনকে পদোন্নতি দিয়ে ব্যাচ ভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া যেত। এই ব্যাচের কর্মকর্তারা প্রায় ১১ বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে, ৩২ তম বিসিএসে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য বিসিএসের আয়োজন করা হয়।
হোসেন মাহমুদ নামের একজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বলেন, ৩০ তম ব্যাচ প্রভাষক আবার নতুন পদোন্নতিতে ৩৫তম (ব্যাচ) সহকারি অধ্যাপক। এটি ‘সত্যিই’ আজিব!
মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম নামের একজন বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি ‘হতাশা ও বঞ্চনার’ অন্য নাম।
৩২তম বিসিএসের পদোন্নতি বঞ্চিত একজন শিক্ষক বলেন, পদোন্নতি যোগ্যতা অর্জন সত্বেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের বঞ্চিত রেখে শূণ্য পদে জুনিয়র ব্যাচকে পদোন্নতি দেওয়ার মানে হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়ন করা। ওই কর্মকর্তা এই পদোন্নতির সংশোধনীর দাবি জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আরেকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পদোন্নতি পেয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক হয় কিভাবে?
৩৪তম ব্যাচের আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন শিক্ষক বলেন, তার ব্যাচ থেকে ৫৮ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু তার ‘সিরিয়াল’ (মেরিট লিস্ট) ৩৮ নম্বরে। তাকে ‘ষড়যন্ত্র’ করে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। আমাকে বঞ্চিত করার জন্যই ৩৭জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আরেকজনের পদোন্নতি হলেই আমার হতো।’
বিসিএস শিক্ষা সমিতি সংসদ নির্বাচনের আগে শূণ্য পদে দ্রƒত পদোন্নতি, ক্যাডার বৈষ্যম নিরসনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন কর্মবিরতি পালন করে। এরপর সরকারের আশ^াসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।
জেষ্ঠ্য শিক্ষকদের বাদ দিয়ে কণিষ্ঠ শিক্ষকদের পদোন্নতি
শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে পদোন্নতি ‘বঞ্চনা’ নিয়ে অসন্তোষ চরমে। জেষ্ঠ্য শিক্ষকদের বাদ দিয়ে কণিষ্ঠ শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া, এক বিষয়ের শিক্ষককে অন্য বিষয়ে পদোন্নতি দেওয়া ও পদ শূন্য থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি না দেওয়ার অভিযোগ ওঠেছে।
প্রায় ১২ বছর অপেক্ষার পর গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ৭১১ জন প্রভাষককে সহকারি অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। তারা বিসিএস ২৮, ২৯, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৪তম ব্যাচের কর্মকর্তা। এসব ব্যাচের আরো প্রায় দুই হাজার তিনশ’ শিক্ষা ক্যাডার সদস্য পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন। অথচ একই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা ইতোমধ্যে একাধিক পদোন্নতি পেয়েছেন বলে শিক্ষা সমিতির দাবি।
শিক্ষা ক্যাডার সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, বিসিএস ২৮, ২৯, ৩০, ৩১, ৩২, ৩৩, ৩৪, ৩৫ ও ৩৬তম ব্যাচের সব শিক্ষকই পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। শিক্ষা সমিতির নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতির পরিবর্তে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি দাবি জানিয়ে আসছিলেন। কিন্তু শিক্ষা প্রশাসন ‘ভেঙ্গে ভেঙ্গে’ বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতিই দিয়ে আসছেন। এতে অনেকক্ষেত্রেই জুনিয়র কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেলেও সিনিয়র সদস্যরা পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
এবারও শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর সহকারি থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৬৯০ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। এতে সহকারি অধ্যাপকের ৬৯০টি পদ শূন্য হয়। এর আগেও বেশ কিছু পদ শূন্য ছিল। সেই হিসেবে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি হলেও আরো অন্তত এক হাজার থেকে ১২শ’ প্রভাষক পদোন্নতি প্রত্যাশী ছিলেন।
পদোন্নতির তালিকা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত সেপ্টেম্বরে ইংরেজি বিষয়ে সহযোগী অধ্যাপক পদে ৫৮ জনকে শূণ্য পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবার সহকারি অধ্যাপকের পদোন্নতিতে ৫১জনকে দেওেয়া হয়েছে। কী কারণে সাতটি শূণ্য পদে পদোন্নতি হয়নি তা নিয়ে ‘অসন্তোষ’ বিরাজ করছে শিক্ষকদের মধ্যে।
গত বছর আরবি ও ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে শূণ্য পদে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল ২২জনকে। অথচ এবার সহকারি অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হলো ১০জনকে। সেই হিসেবে শূণ্য পদ থাকা সত্বেও ১২টি পদে এই বিষয়ে কাউকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
একইভাবে ব্যবস্থাপনা ও ভূগোলসহ অন্যান্য বিষয়ে শূণ্য পদ থাকা সত্বেও পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হননি অনেক কর্মকর্তা। এই বঞ্চনাকে ‘ক্যাডার বৈষম্য’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছেন বঞ্চিত শিক্ষক এবং শিক্ষা ক্যাডার নেতারা। তারা সংশোধিত আদেশ জারির মাধ্যমে শূণ্য পদ পদোন্নতির দাবি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ‘বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) সমিতির’ মহাসচিব শওকত মোল্ল্যা সংবাদকে বলেছেন, এবার পদোন্নতি হয়েছে বিসিএস ২৮তম ব্যাচ থেকে। এই ব্যাচে নিয়োগ পাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা এখন উপসচিব।
বিসিএস ২৮ থেকে ৩৬তম ব্যাচে প্রায় তিন হাজার শিক্ষাক ক্যাডার সদস্য ইতোমধ্যে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে মাত্র ৭১১ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বাকি সবাই বহু আগেই পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন।’
তিনি বঞ্চিত সব ব্যাচের শিক্ষা ক্যাডার সদস্যের পদোন্নতি দাবি করে বলেন, ‘শিক্ষকদের বঞ্চিত রেখে, অসন্তোষ্ট রেখে মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করা ও স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার।’
প্রশাসন ক্যাডারে পদ শূন্য না থাকলেও ‘সুপার নিউমারারি’ (সংখ্যাতিরিক্ত) পদ সৃষ্টি করে পদোন্নতি দেওয়া হয় উল্লেখ করে শওকত মোল্ল্যা বলেন, ‘৩৩তম ব্যাচ পর্যন্ত পদোন্নতিতে সরকারের কোন আর্থিক সংশ্লেষ নেই।’ অর্থাৎ এসব শিক্ষক ইতোমধ্যে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করায় তারা আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন। এ কারণে বঞ্চিত শিক্ষা ক্যাডার সদস্যদের পদোন্নতি দেওয়া হলেও সরকারের বাড়তি কোন অর্থের প্রয়োজন হবে না।
এদিকে ২৮তম ব্যাচের সবাই পদোন্নতি না পেলেও ৩৩তম ব্যাচের বেশ কয়েকজন শিক্ষককে পদোন্নতি দেওয়ায় ‘অসন্তোষ’ চরমে। ইসলাম শিক্ষায় শূণ্য পদ না থাকা সত্বেও ২৯জনকে (৩২তম) পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ফলে সিনিয়র ব্যাচ (৩২তম) ব্যাচকে শেষ না করেই জুনিয়র ব্যাচকে (৩৩তম) পদোন্নতি দেওয়া হলো।
এর ফলে ব্যাচভিত্তিক বৈষম্য বৃদ্ধি পাওয়ার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের মাঝে জুনিয়রদের অধীনে কাজ করার মানসিক হতাশাকে প্রকট হতে পারে বলে বিসিএস শিক্ষা সমিতির নেতাদের ধারণা। তারা বলেন, পদোন্নতি কমিটি চাইলে এই বিষয়ের ৩২তম ব্যাচের অবশিষ্ট ৯ জনকে পদোন্নতি দিয়ে ব্যাচ ভিত্তিক পদোন্নতি দেওয়া যেত। এই ব্যাচের কর্মকর্তারা প্রায় ১১ বছর ধরে পদোন্নতির অপেক্ষায় ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষে, ৩২ তম বিসিএসে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, মহিলা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সন্তানদের জন্য বিসিএসের আয়োজন করা হয়।
হোসেন মাহমুদ নামের একজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বলেন, ৩০ তম ব্যাচ প্রভাষক আবার নতুন পদোন্নতিতে ৩৫তম (ব্যাচ) সহকারি অধ্যাপক। এটি ‘সত্যিই’ আজিব!
মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম নামের একজন বলেন, শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি ‘হতাশা ও বঞ্চনার’ অন্য নাম।
৩২তম বিসিএসের পদোন্নতি বঞ্চিত একজন শিক্ষক বলেন, পদোন্নতি যোগ্যতা অর্জন সত্বেও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানের বঞ্চিত রেখে শূণ্য পদে জুনিয়র ব্যাচকে পদোন্নতি দেওয়ার মানে হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অবমূল্যায়ন করা। ওই কর্মকর্তা এই পদোন্নতির সংশোধনীর দাবি জানান এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
আরেকজন শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মনোবিজ্ঞান বিষয়ে পদোন্নতি পেয়ে মৃত্তিকাবিজ্ঞানের সহকারি অধ্যাপক হয় কিভাবে?
৩৪তম ব্যাচের আব্দুর রাজ্জাক নামের একজন শিক্ষক বলেন, তার ব্যাচ থেকে ৫৮ জন পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু তার ‘সিরিয়াল’ (মেরিট লিস্ট) ৩৮ নম্বরে। তাকে ‘ষড়যন্ত্র’ করে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘আমি বারবার ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি। আমাকে বঞ্চিত করার জন্যই ৩৭জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। আরেকজনের পদোন্নতি হলেই আমার হতো।’
বিসিএস শিক্ষা সমিতি সংসদ নির্বাচনের আগে শূণ্য পদে দ্রƒত পদোন্নতি, ক্যাডার বৈষ্যম নিরসনসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন কর্মবিরতি পালন করে। এরপর সরকারের আশ^াসে তারা কর্মসূচি স্থগিত করেন।