নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের তথ্য নিয়ে জটিলতায় পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এই সংস্থার অধীনে একটি ‘স্কিমের’ (প্রকল্প) আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই খাতের ব্যয় বিবরণী পাচ্ছে না স্কিম অফিস। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও স্কিম অফিসের বিরুদ্ধে ‘তড়িগড়ি’ করে প্রশিক্ষণ আয়োজনের অভিযোগ করেছেন।
‘যথাসময়ে’ প্রশিক্ষণ ব্যয়ের হিসাব না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে অন্তত ৬০টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাউশিকে নির্দেশ দিয়েছে স্কিম অফিস। এই চিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
ওই ৬০ উপজেলার অন্তত তিনটির মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া উচিত প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কারণ তারা প্রশিক্ষণ আয়োজনের সময় পর্যাপ্ত সময় দেয়নি। তড়িগড়ি করেই গত বছরের শেষ দিকে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হয়েছিল।
মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’র স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মাউশির পরিচালকের (কলেজ ও প্রশাসন) কাছে এক চিঠিতে ৬০টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার শাস্তি চেয়েছেন।
মাহফুজ আলী চিঠিতে বলেন, ‘সরকারি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ব্যয় বিবরণী প্রেরণে ব্যর্থ হওয়া উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আমার কাছে এ রকম একটি চিঠি এসেছে। আমরা ব্যাখ্যা চাইব। আবার অনেক সময় যুক্তিসঙ্গত কারণও থাকে...(ব্যয় বিবরণী যথাসময়ে না পাঠানোর)। অনেক সময় টাকা যথাসময়ে ছাড় হয় না; আবার আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে তা করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে।’
চট্টগ্রামের একটি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে সারাদেশের মানুষ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। শিক্ষা কর্মকর্তারাও এই দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ গত বছরের মাঝামাঝি সময়েও করা যেত জানিয়ে অন্য এক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালে যেসব শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত এক থেকে দেড় বছর আগের নেয়া। অথচ শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলো শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগ মুহূর্তে।
বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা চলমান উল্লেখ করে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাদের এই পরীক্ষায়ও নানা রকম দায়িত্বপালন করতে হয়। বিজ্ঞান মেলায় দায়িত্বপালন করতে হয়। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন রকম কার্যক্রমের সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকতে হয়।
অন্য একটি উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, তার উপজেলার ৯৩৬ জন শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের সম্মানী, দুই বেলা করে নাস্তার খরচ, দুপুরের খাবার খরচসহ ৮১ লাখ টাকার মতো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে সব শিক্ষকের হিসেব নম্বরে পাঠাতে হয়েছে।
এসব শিক্ষকের হিসেব কষা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার মন্তব্য করে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণ শুরুর আগেই এসব বিষয় প্রকল্প কর্মকর্তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল। তারা নিজেদের ‘ব্যর্থতা’ ও ‘খামখেয়ালিপনা’ এখন শিক্ষা কর্মকর্তাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।
মাহফুজ আলীর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্কিমের আওতায় সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে ‘নতুন কারিকুলাম বিস্তরণ’ বিষয়ক ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক শ্রেণী শিক্ষকগণের সাত দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ৪৭৪টি উপজেলায় এক যোগে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত হয়েছে। উক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনার ধারা (ঢ) মোতাবেক প্রশিক্ষণ সমাপ্তির ছয় কার্যদিবসের মধ্যে যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলি সম্পাদন ও সমন্বয়পূর্বক ব্যয় বিবরণীর কপি স্কিমে প্রেরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ে ব্যয় বিবরণীর তথ্য স্কিমে প্রেরণ না করায় গত ২১ জানুয়ারি অনলাইন জুম মিটিং এবং বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যয় বিবরণীর তথ্য প্রেরণের জন্য ‘জোর তাগিদসহ অনুরোধ’ করা হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এর পরও ‘অদ্যাবধি (১৫ ফেব্রুয়ারি) ৬০টি ভেন্যু থেকে ব্যয় বিবরণীর তথ্য পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘ফলে স্কিমের পক্ষ্যে মন্ত্রনালয়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি এবং স্কিমের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে।’
মাউশির প্রশিক্ষণ শাখা থেকে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই বোর্ডের একজন সদস্যের নেতৃত্বে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। সংস্থাটির ওই শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব কাজ ‘ঠিকমত’ করতে পারেনি। তারা ‘যথাসময়ে’ প্রশিক্ষণের আয়োজন না করে একবারে ‘অন্তিম’ মুহূর্তে গত বছর সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় তা করে। এ কারণে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নানা রকম চাপের মুখে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়েছে। এখন প্রশিক্ষণ ব্যয়ের হিসেবে ‘জটিলতা’ হলে এর দায়দায়িত্ব এনসিটিবির ওই কর্মকর্তাদের ওপর চাপানো উচিত বলে মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ব্যয় বিবরণী না পাঠানো ৬০টি উপজেলার মধ্যে ঢাকার সাভার, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, গোপালগঞ্জ সদর ও টুঙ্গিপাড়া, নারায়ণগঞ্জ সদর, নরসিংদীর মনোহরদী, লক্ষীপুর কমলনগর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, সিরাজগঞ্জের চৌহালি ও দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ।
চট্টগ্রামের ১২টি উপজেলার ব্যয় বিবরণী না পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। উপজেলাগুলো হলোÑ বাঁশখালী, বায়েজিদ, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, কোতয়ালী, লোহাগাড়া, মিরসরাই, পাহাড়তলী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, পাঁচলাইশ ও সাতকানিয়া।
এছাড়া ঝিনাইদহের শৈকুপা, নড়াইলের লোহাগড়া, কুষ্টিয়া সদর ও দৌলতপুর; সাতক্ষীরার দেবহাটা, সদর ও কালীগঞ্জ; যশোরের মনিরামপুর ও বাঘারপাড়া; খুলনার ডুমুরিয়া; বরিশালের আগৈলঝাড়া, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, গৌরনদী, মেহেদিগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা ও উজিরপুর উপজেলার ব্যয় বিবরণীর তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে স্কিম অফিস থেকে।
অন্যান্য উপজেলার মধ্যে বরগুনার তালতলী; ভোলার সদর, দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও লালমোহন; ঝালকাঠির নলছিটি ও রাজাপুর; টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও বাসাইল; নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও পূর্বধলা; ময়মনহিংহের গফরগাঁও ও সদর; জামালপুরের বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ী দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দর ও জামালপুর সদরের ব্যয় বিবরণীর তথ্য না পাঠানোর অফিযোগ করেছেন মাহফুজ আলী।
মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ব্যয়ের তথ্য নিয়ে জটিলতায় পড়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এই সংস্থার অধীনে একটি ‘স্কিমের’ (প্রকল্প) আওতায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এই খাতের ব্যয় বিবরণী পাচ্ছে না স্কিম অফিস। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও স্কিম অফিসের বিরুদ্ধে ‘তড়িগড়ি’ করে প্রশিক্ষণ আয়োজনের অভিযোগ করেছেন।
‘যথাসময়ে’ প্রশিক্ষণ ব্যয়ের হিসাব না দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে অন্তত ৬০টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাউশিকে নির্দেশ দিয়েছে স্কিম অফিস। এই চিটিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষা কর্মকর্তারা।
ওই ৬০ উপজেলার অন্তত তিনটির মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সংবাদকে জানিয়েছেন, শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেয়া উচিত প্রকল্প কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। কারণ তারা প্রশিক্ষণ আয়োজনের সময় পর্যাপ্ত সময় দেয়নি। তড়িগড়ি করেই গত বছরের শেষ দিকে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হয়েছিল।
মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’র স্কিম পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি মাউশির পরিচালকের (কলেজ ও প্রশাসন) কাছে এক চিঠিতে ৬০টি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার শাস্তি চেয়েছেন।
মাহফুজ আলী চিঠিতে বলেন, ‘সরকারি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের লক্ষ্যে ব্যয় বিবরণী প্রেরণে ব্যর্থ হওয়া উপজেলা/থানা শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এ বিষয়ে মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) প্রফেসর শাহেদুল খবির চৌধুরী গতকাল সংবাদকে বলেন, ‘আমার কাছে এ রকম একটি চিঠি এসেছে। আমরা ব্যাখ্যা চাইব। আবার অনেক সময় যুক্তিসঙ্গত কারণও থাকে...(ব্যয় বিবরণী যথাসময়ে না পাঠানোর)। অনেক সময় টাকা যথাসময়ে ছাড় হয় না; আবার আইবাস প্লাস প্লাস সিস্টেমে তা করতে গিয়ে কিছু সমস্যা হতে পারে। এসব বিষয়ও বিবেচনায় নিতে হবে।’
চট্টগ্রামের একটি উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে বলেন, গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে সারাদেশের মানুষ সংসদ নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত ছিল। শিক্ষা কর্মকর্তারাও এই দায়িত্বে ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের প্রশিক্ষণ গ্রহণের পাশাপাশি কর্মকর্তাদের নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়েছে।
নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ গত বছরের মাঝামাঝি সময়েও করা যেত জানিয়ে অন্য এক মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, ২০২৪ সালে যেসব শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে সেই সিদ্ধান্ত এক থেকে দেড় বছর আগের নেয়া। অথচ শিক্ষক প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হলো শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগ মুহূর্তে।
বর্তমানে এসএসসি পরীক্ষা চলমান উল্লেখ করে শিক্ষা কর্মকর্তারা বলেন, শিক্ষা কর্মকর্তাদের এই পরীক্ষায়ও নানা রকম দায়িত্বপালন করতে হয়। বিজ্ঞান মেলায় দায়িত্বপালন করতে হয়। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন রকম কার্যক্রমের সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকতে হয়।
অন্য একটি উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, তার উপজেলার ৯৩৬ জন শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তাদের সম্মানী, দুই বেলা করে নাস্তার খরচ, দুপুরের খাবার খরচসহ ৮১ লাখ টাকার মতো বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই টাকা ব্যাংকের মাধ্যমে সব শিক্ষকের হিসেব নম্বরে পাঠাতে হয়েছে।
এসব শিক্ষকের হিসেব কষা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার মন্তব্য করে ওই শিক্ষা কর্মকর্তা বলেন, প্রশিক্ষণ শুরুর আগেই এসব বিষয় প্রকল্প কর্মকর্তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল। তারা নিজেদের ‘ব্যর্থতা’ ও ‘খামখেয়ালিপনা’ এখন শিক্ষা কর্মকর্তাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা করছেন।
মাহফুজ আলীর চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্কিমের আওতায় সারাদেশে উপজেলা পর্যায়ে ‘নতুন কারিকুলাম বিস্তরণ’ বিষয়ক ৮ম ও ৯ম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক শ্রেণী শিক্ষকগণের সাত দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ৪৭৪টি উপজেলায় এক যোগে গত ১৭ ডিসেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সমাপ্ত হয়েছে। উক্ত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা সংক্রান্ত নির্দেশনার ধারা (ঢ) মোতাবেক প্রশিক্ষণ সমাপ্তির ছয় কার্যদিবসের মধ্যে যাবতীয় আর্থিক কার্যাবলি সম্পাদন ও সমন্বয়পূর্বক ব্যয় বিবরণীর কপি স্কিমে প্রেরণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
নির্দিষ্ট সময়ে ব্যয় বিবরণীর তথ্য স্কিমে প্রেরণ না করায় গত ২১ জানুয়ারি অনলাইন জুম মিটিং এবং বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ করে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যয় বিবরণীর তথ্য প্রেরণের জন্য ‘জোর তাগিদসহ অনুরোধ’ করা হয় বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
এর পরও ‘অদ্যাবধি (১৫ ফেব্রুয়ারি) ৬০টি ভেন্যু থেকে ব্যয় বিবরণীর তথ্য পাওয়া যায়নি’ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, ‘ফলে স্কিমের পক্ষ্যে মন্ত্রনালয়ে আর্থিক প্রতিবেদন প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি এবং স্কিমের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিচালনা ও বাস্তবায়নে অন্তরায় সৃষ্টি হয়েছে।’
মাউশির প্রশিক্ষণ শাখা থেকে জানা গেছে, নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এই বোর্ডের একজন সদস্যের নেতৃত্বে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়। সংস্থাটির ওই শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব কাজ ‘ঠিকমত’ করতে পারেনি। তারা ‘যথাসময়ে’ প্রশিক্ষণের আয়োজন না করে একবারে ‘অন্তিম’ মুহূর্তে গত বছর সংসদ নির্বাচনের প্রচারণার সময় তা করে। এ কারণে শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নানা রকম চাপের মুখে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়েছে। এখন প্রশিক্ষণ ব্যয়ের হিসেবে ‘জটিলতা’ হলে এর দায়দায়িত্ব এনসিটিবির ওই কর্মকর্তাদের ওপর চাপানো উচিত বলে মাউশির প্রশিক্ষণ শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
ব্যয় বিবরণী না পাঠানো ৬০টি উপজেলার মধ্যে ঢাকার সাভার, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, গোপালগঞ্জ সদর ও টুঙ্গিপাড়া, নারায়ণগঞ্জ সদর, নরসিংদীর মনোহরদী, লক্ষীপুর কমলনগর, হবিগঞ্জের বানিয়াচং, সিরাজগঞ্জের চৌহালি ও দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ।
চট্টগ্রামের ১২টি উপজেলার ব্যয় বিবরণী না পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। উপজেলাগুলো হলোÑ বাঁশখালী, বায়েজিদ, বোয়ালখালী, কর্ণফুলী, কোতয়ালী, লোহাগাড়া, মিরসরাই, পাহাড়তলী, পটিয়া, রাঙ্গুনিয়া, পাঁচলাইশ ও সাতকানিয়া।
এছাড়া ঝিনাইদহের শৈকুপা, নড়াইলের লোহাগড়া, কুষ্টিয়া সদর ও দৌলতপুর; সাতক্ষীরার দেবহাটা, সদর ও কালীগঞ্জ; যশোরের মনিরামপুর ও বাঘারপাড়া; খুলনার ডুমুরিয়া; বরিশালের আগৈলঝাড়া, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, বানারীপাড়া, গৌরনদী, মেহেদিগঞ্জ, মুলাদী, হিজলা ও উজিরপুর উপজেলার ব্যয় বিবরণীর তথ্য না পাওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে স্কিম অফিস থেকে।
অন্যান্য উপজেলার মধ্যে বরগুনার তালতলী; ভোলার সদর, দৌলতখান, তজুমদ্দিন ও লালমোহন; ঝালকাঠির নলছিটি ও রাজাপুর; টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও বাসাইল; নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ ও পূর্বধলা; ময়মনহিংহের গফরগাঁও ও সদর; জামালপুরের বকশীগঞ্জ, সরিষাবাড়ী দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দর ও জামালপুর সদরের ব্যয় বিবরণীর তথ্য না পাঠানোর অফিযোগ করেছেন মাহফুজ আলী।