এক বছরে শিক্ষায় পারিবারিক ব্যয় প্রাথমিক স্তরে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে আগের বছরের তুলনায় এই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ পরিচালিত ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা মহামারী উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩’ শিরোনামে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে ২০২১ সালে সর্বস্তরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর (কওমি মাদ্রাসা ব্যতীত) মধ্যে ৪২ শতাংশ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ৩৮ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং ২০ শতাংশ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিশুদের শিক্ষার জন্য পারিবারিক ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান ধারা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ফি, প্রাইভেট টিউটর, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ ও স্টেশনারিসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পারিবারিক খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিশুর শিক্ষার জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা, যেখানে গ্রাম ও শহরে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। ওই সময়ে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। উভয় স্তরে প্রধানত প্রাইভেট টিউটরের বেতন ও গাইডবই বা নোটবই বাবদ ওই ব্যয় হয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৪১ শতাংশ অভিভাবক এবং মাধ্যমিক স্তরে ১৭ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন, প্রতি সন্তানের জন্য তাদের মাসিক ব্যয়ের সামর্থ্য ছিল দুই হাজার টাকার মধ্যে, যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের গড় ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
সুপারিশ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারে আর্থিক অবদান রাখে, যা এদের ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকেই নির্দেশ করে। ঝরে পড়ার কারণসমূহ দূর করতে এবং স্কুলে কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্কুলের লেখাপড়ার মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত করা এবং তা পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী হতে হবে।
এছাড়া পারিবারিক সহায়তা এবং শিক্ষা ব্যয়ের বোঝা কমানো প্রাইভেট টিউটরিং, কোচিং, বাণিজ্যিক গাইডবই এবং বিভিন্ন স্কুল ফি-র ক্রমবর্ধমান খরচ পরিবারগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এসব চাপ বৈষম্য এবং শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা কমানোর লক্ষ্যে শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত সুযোগের জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে শ্রেণীকক্ষের কার্যক্রমের মনিটরিং, প্রাইভেট টিউটরিং এবং গাইডবই নির্ভরতা কার্যকরভাবে হ্রাস করা এবং অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মুখস্থভিত্তিক শিখন থেকে নিবৃত্ত করে প্রকৃত জ্ঞান আরোহণের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে।
যেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে তাদের জন্য অতিরিক্ত পাঠ এবং চাহিদাভিত্তিক সহায়তা দিয়ে সফল হতে সাহায্য করা; স্কুল কর্তৃক আরোপিত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ফি নিয়ন্ত্রণ এবং দূর করার জন্য বিধান কার্যকর করা, যা পরিবারের ওপর আর্থিক বোঝা কমাতে এবং শিক্ষায় আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, গবেষণা দলের প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনজুর আহমদ, গবেষণার পর্যালোচক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, গবেষক দলের সদস্য সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন ও আহসান হাবিব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
রোববার, ৩১ মার্চ ২০২৪
এক বছরে শিক্ষায় পারিবারিক ব্যয় প্রাথমিক স্তরে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরে ৫১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে আগের বছরের তুলনায় এই ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘গণসাক্ষরতা অভিযান’ পরিচালিত ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা মহামারী উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩’ শিরোনামে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামগ্রিকভাবে ২০২১ সালে সর্বস্তরে প্রায় ৪৪ মিলিয়ন শিক্ষার্থীর (কওমি মাদ্রাসা ব্যতীত) মধ্যে ৪২ শতাংশ সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, ৩৮ শতাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং ২০ শতাংশ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও শিশুদের শিক্ষার জন্য পারিবারিক ব্যয়ের উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।
মুদ্রাস্ফীতির ক্রমবর্ধমান ধারা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ফি, প্রাইভেট টিউটর, পরিবহন, শিক্ষা উপকরণ ও স্টেশনারিসহ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট পারিবারিক খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে।
২০২২ সালের জানুয়ারি-ডিসেম্বর সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিশুর শিক্ষার জন্য বার্ষিক পারিবারিক গড় ব্যয় ছিল ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা, যেখানে গ্রাম ও শহরে কিছু ভিন্নতা রয়েছে। ওই সময়ে মাধ্যমিক স্তরের একজন শিক্ষার্থীর জন্য পরিবারের ব্যয় ছিল ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। উভয় স্তরে প্রধানত প্রাইভেট টিউটরের বেতন ও গাইডবই বা নোটবই বাবদ ওই ব্যয় হয়েছে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৪১ শতাংশ অভিভাবক এবং মাধ্যমিক স্তরে ১৭ শতাংশ অভিভাবক বলেছেন, প্রতি সন্তানের জন্য তাদের মাসিক ব্যয়ের সামর্থ্য ছিল দুই হাজার টাকার মধ্যে, যা ২০২২ ও ২০২৩ সালের গড় ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম।
সুপারিশ
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা উপার্জনের মাধ্যমে পরিবারে আর্থিক অবদান রাখে, যা এদের ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকেই নির্দেশ করে। ঝরে পড়ার কারণসমূহ দূর করতে এবং স্কুলে কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্কুলের লেখাপড়ার মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত করা এবং তা পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী হতে হবে।
এছাড়া পারিবারিক সহায়তা এবং শিক্ষা ব্যয়ের বোঝা কমানো প্রাইভেট টিউটরিং, কোচিং, বাণিজ্যিক গাইডবই এবং বিভিন্ন স্কুল ফি-র ক্রমবর্ধমান খরচ পরিবারগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।
এসব চাপ বৈষম্য এবং শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা এবং পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা কমানোর লক্ষ্যে শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত সুযোগের জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
প্রতিবেদনে শ্রেণীকক্ষের কার্যক্রমের মনিটরিং, প্রাইভেট টিউটরিং এবং গাইডবই নির্ভরতা কার্যকরভাবে হ্রাস করা এবং অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মুখস্থভিত্তিক শিখন থেকে নিবৃত্ত করে প্রকৃত জ্ঞান আরোহণের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করার কথা বলা হয়েছে।
যেসব শিক্ষার্থী পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে তাদের জন্য অতিরিক্ত পাঠ এবং চাহিদাভিত্তিক সহায়তা দিয়ে সফল হতে সাহায্য করা; স্কুল কর্তৃক আরোপিত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ফি নিয়ন্ত্রণ এবং দূর করার জন্য বিধান কার্যকর করা, যা পরিবারের ওপর আর্থিক বোঝা কমাতে এবং শিক্ষায় আরও বেশি সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে বলেও প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।
এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, গবেষণা দলের প্রধান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মনজুর আহমদ, গবেষণার পর্যালোচক আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী, গবেষক দলের সদস্য সৈয়দ শাহাদাত হোসাইন ও আহসান হাবিব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।