alt

শিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা

৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা বহাল থাকছে। তবে ৫০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা রাখার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত মূল্যায়ন কমিটি। কমিটি লিখিত মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। দশটি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে কমিটি। আর শিক্ষাক্রমে পাঁচ ঘণ্টার পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) সংবাদকে জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ২৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

টানা পাঁচ ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে রাখা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব বিষয়ে পাঁচ ঘণ্টা পরীক্ষা হবে না। কোনো বিষয়ে তিন ঘণ্টা.... কোনো বিষয়ে দুই ঘণ্টার পরীক্ষাও হতে পারে। সেটি নির্ভর করবে বিষয়ের (গুরুত্বের) ওপর।’ পরবর্তীতে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার সময় চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান ফরহাদুল ইসলাম।

নতুন শিক্ষাক্রমে (কারিকুলাম) প্রথমবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালে। এ পরীক্ষার নাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতির ধরন ঠিক করতে গত ৫ মার্চ ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির সদস্যরা এ পরীক্ষার নাম ‘মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’ রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।

এ কমিটি গত ২২ এপ্রিল মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে একটি বৈঠক করে। সেই বৈঠকেই সুপারিশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে এনসিটিবিরও একটি কমিটি ছিল। সেই কমিটি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলো চূড়ান্ত নয়। আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে; এরপর সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।

লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা বা মূল্যায়ন রাখা যেতে পারে। আন্তঃসম্পর্ক বজায় রেখে লিখিত মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ (মূল্যায়ন) ৫০ শতাংশ ও ‘কার্যক্রমভিত্তিক’ মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ ৫০ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। স্কুলভিত্তিক ষান্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত মূল্যায়ন সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টে মূল্যায়নের সাত পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচকের বিষয়টি অভিভাবক এবং অংশীজনদের অবহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুযায়ী প্রণীত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো কোনো দেশের মডেলকে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং কোনো কোনো দেশে এই মডেল সফল বাস্তবায়ন হয়েছে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির আন্তর্জাতিক গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়ে অংশীজনকে অবহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’ আরেক সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি ও গাইড লাইনের আলোকে নৈপুণ্য প্ল্যাটফর্মের হালনাগাদ করা যেতে পারে এবং এ বিষয়ে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে।’

মূল্যায়ন কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে মোট সময় হবে পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে লিখিত অংশের সময় কত ও কার্যক্রমভিত্তিক অংশের জন্য সময় কত হবে, তা বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির কিছু সুপারিশ নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। শীঘ্রই চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

১৯৬২ সাল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা হয়ে আসছে। নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর এসএসসি পরীক্ষা থাকবে নাকি উঠে যাচ্ছে সেই বিষয়ে নানা রকম আলোচনা হয়ে আসছিল।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রমে দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হয়। একটি বছরব্যাপী শ্রেণীকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি হলো- বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।

তবে চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের ‘শিখনকালীন’ মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। বাকি অংশের সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।

এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাদের যুক্তি হলো-নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে কোনো লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে তারা লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।

একজন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বোঝাতে নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। ত্রিভুজ হচ্ছে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্ত হচ্ছে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ হলো- উন্নতি প্রয়োজন।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত ১ ফেব্রুয়ারি এনসিটিবি এবং শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষ ও অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে মূল্যায়ন পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান মন্ত্রী। তিনি বিষয়টি নিয়ে জন-অসন্তোষ নিরসনে এ কার্যক্রম যাচাই– বাছাইয়ের পরামর্শ দেন।

পরবর্তীতে ৪ ফেব্রুয়ারি মূল্যায়ন পদ্ধতি ও নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির আহ্বায়ক হলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীম। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন এনসিটিবি, মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রতিনিধিরা।

ছবি

সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ নিয়ে এলো ইউসিবিডি

পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ

ছবি

এনসিটিবি ঘেরাও নিয়ে দুই সংগঠনের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

শিক্ষাবর্ষের ১৪ দিন গড়ালেও সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পায়নি

ছবি

গত বছর বিডিকলিংয়ে আইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী

পীরগাছায় অধ্যক্ষ পদ শূন্য: সংকটে শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রশাসনিক কার্যক্রম

প্রকল্পের আওতায় সাধারণ হাইস্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা, ৫ বছরেও শিক্ষক নিয়োগের সুরাহা হয়নি

মাধ্যমিকের ৩টি বইয়ের ছাপা ২০ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে চায় এনসিটিবি

জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনি ও ভিসি কোটা বাতিল; ইউনিট থাকছে ৭টি

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: গুচ্ছে থাকতে ‘তৃতীয় অনুরোধ’ মন্ত্রণালয়ের

চার বছর পর ৬ লাখ শিক্ষার্র্থীর বৃত্তির বকেয়া টাকা ছাড়

ছবি

মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বিকাশ

ছবি

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে জাইকা ও সরকারের ৩৭.৮ কোটি টাকার অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ

ছবি

২০ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

অভিবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে আমি প্রবাসী ও শিখো

ছবি

স্কুলে ভর্তির ফল প্রকাশ,‌ জানবেন যেভাবে

ছবি

প্রাথমিকের মাত্র ১ কোটি বই উপজেলায় পৌঁছেছে

ছবি

আইডাব্লিউএস অনলাইন স্কুলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০% পর্যন্ত স্কলারশিপ

ছবি

বাউবি প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের এইচএসসি (নিশ-১) পরীক্ষার ফলাফল

ছবি

টেকসই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের মধ্যে সেরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি

ছবি

অবসর প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও বলবৎ হবে

পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও শিক্ষাক্রমের ওপর ‘শে^তপত্র’ প্রকাশ: বই ছাপায় অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পায়নি এনসিটিবি

ছবি

টিএমজিবি সদস্যদের সন্তানদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

ছবি

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা ১০ এপ্রিল শুরু, রুটিন প্রকাশ

ছবি

র‌্যাগিংয়ের দায়ে চুয়েটের ১১ শিক্ষার্থী ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার

ইএফটিতে শিক্ষকদের এমপিও প্রক্রিয়ায় জটিলতা

ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের অস্থায়ী সমাধান

ছবি

স্কুলে ভর্তির ‘ভাগ্য নির্ধারণ’ ১৭ ডিসেম্বর, মাউশির বিজ্ঞপ্তি

ছবি

৮৫ শতাংশ উপস্থিতি ছাড়া প্রাথমিকে উপবৃত্তি নয়

ছবি

১১তম বেলটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ স্থগিত আদেশ বহাল

ছবি

প্রাথমিকে শরীরচর্চা, সংগীত, চারুকলার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ: উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের বেকারত্ব ২৮ শতাংশ

ছবি

আইসিপিসি ঢাকা রিজিওনাল ২০২৪ এ চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

স্কুলে ভর্তির লটারির তারিখ পরিবর্তন করে ১৭ ডিসেম্বর

tab

শিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি পরীক্ষা

৫০ শতাংশ লিখিত ও ৫০ শতাংশ কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

নতুন শিক্ষাক্রমে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা বহাল থাকছে। তবে ৫০ শতাংশ লিখিত পরীক্ষা রাখার সুপারিশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত মূল্যায়ন কমিটি। কমিটি লিখিত মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ এবং কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন ৫০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে। দশটি বিষয়ের ওপর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের সুপারিশ করেছে কমিটি। আর শিক্ষাক্রমে পাঁচ ঘণ্টার পরীক্ষা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।

এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বুধবার (২৪ এপ্রিল) সংবাদকে জানিয়েছেন, নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন ২৩ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়েছে।

টানা পাঁচ ঘণ্টা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা কেন্দ্রে রাখা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব বিষয়ে পাঁচ ঘণ্টা পরীক্ষা হবে না। কোনো বিষয়ে তিন ঘণ্টা.... কোনো বিষয়ে দুই ঘণ্টার পরীক্ষাও হতে পারে। সেটি নির্ভর করবে বিষয়ের (গুরুত্বের) ওপর।’ পরবর্তীতে শিক্ষা বোর্ডগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরীক্ষার সময় চূড়ান্ত করা হবে বলে জানান ফরহাদুল ইসলাম।

নতুন শিক্ষাক্রমে (কারিকুলাম) প্রথমবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২০২৬ সালে। এ পরীক্ষার নাম ও মূল্যায়ন পদ্ধতির ধরন ঠিক করতে গত ৫ মার্চ ১৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির সদস্যরা এ পরীক্ষার নাম ‘মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি)’ রাখার পক্ষে মতামত দিয়েছেন।

এ কমিটি গত ২২ এপ্রিল মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে একটি বৈঠক করে। সেই বৈঠকেই সুপারিশের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, নতুন কারিকুলামে মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে এনসিটিবিরও একটি কমিটি ছিল। সেই কমিটি ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এগুলো চূড়ান্ত নয়। আরও পর্যালোচনা করা হচ্ছে; এরপর সুপারিশ চূড়ান্ত করা হবে।

লিখিত পরীক্ষার বিষয়ে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, মূল্যায়ন পদ্ধতিতে যোগ্যতা ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়নের পাশাপাশি লিখিত পরীক্ষা বা মূল্যায়ন রাখা যেতে পারে। আন্তঃসম্পর্ক বজায় রেখে লিখিত মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ (মূল্যায়ন) ৫০ শতাংশ ও ‘কার্যক্রমভিত্তিক’ মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ ৫০ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। স্কুলভিত্তিক ষান্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।

সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত মূল্যায়ন সনদ/ট্রান্সক্রিপ্টে মূল্যায়নের সাত পর্যায়ের স্কেলে যোগ্যতা ও পারদর্শিতার সূচকের বিষয়টি অভিভাবক এবং অংশীজনদের অবহিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা-২০২১ অনুযায়ী প্রণীত শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কোনো কোনো দেশের মডেলকে পর্যালোচনা করা হয়েছে এবং কোনো কোনো দেশে এই মডেল সফল বাস্তবায়ন হয়েছে এবং মূল্যায়ন পদ্ধতির আন্তর্জাতিক গ্রহণ যোগ্যতার বিষয়ে অংশীজনকে অবহিত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।’ আরেক সুপারিশে বলা হয়েছে, ‘চূড়ান্ত মূল্যায়ন পদ্ধতি ও গাইড লাইনের আলোকে নৈপুণ্য প্ল্যাটফর্মের হালনাগাদ করা যেতে পারে এবং এ বিষয়ে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে।’

মূল্যায়ন কমিটির একাধিক সদস্য জানিয়েছেন, লিখিত ও কার্যক্রমভিত্তিক মূল্যায়ন মিলিয়ে মোট সময় হবে পাঁচ ঘণ্টা। এর মধ্যে লিখিত অংশের সময় কত ও কার্যক্রমভিত্তিক অংশের জন্য সময় কত হবে, তা বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ খালেদ রহীম সাংবাদিকদের বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমে পাবলিক পরীক্ষার মূল্যায়ন পদ্ধতির কিছু সুপারিশ নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন। শীঘ্রই চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হবে বলে জানান তিনি।

১৯৬২ সাল থেকে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা হয়ে আসছে। নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার পর এসএসসি পরীক্ষা থাকবে নাকি উঠে যাচ্ছে সেই বিষয়ে নানা রকম আলোচনা হয়ে আসছিল।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এরপর ২০২৫ সালে পঞ্চম ও দশম শ্রেণী, ২০২৬ সালে একাদশ এবং ২০২৭ সালে দ্বাদশ শ্রেণীতে এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রমে দুই পদ্ধতিতে মূল্যায়ন করা হয়। একটি বছরব্যাপী শ্রেণীকক্ষে শিখনকালীন মূল্যায়ন, অন্যটি হলো- বছর শেষে সামষ্টিক মূল্যায়ন। শিক্ষাক্রমের রূপরেখায় প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত কোনো পরীক্ষা রাখা হয়নি। এর পরিবর্তে শতভাগ শিখনকালীন মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।

তবে চতুর্থ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পাঁচটি বিষয়ে কিছু অংশের ‘শিখনকালীন’ মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। বাকি অংশের সামষ্টিক মূল্যায়ন হবে।

এই মূল্যায়ন পদ্ধতি নিয়ে অভিভাবক, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অংশীজনদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। তাদের যুক্তি হলো-নির্দিষ্ট দিন বা সময়ে কোনো লিখিত পরীক্ষা না থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগ ব্যাহত হতে পারে। এ কারণে তারা লিখিত পরীক্ষা রাখার দাবি জানিয়ে আসছেন।

একজন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি বোঝাতে নম্বর বা গ্রেডের পরিবর্তে ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও বৃত্ত ব্যবহার করার কথা বলা হয়েছে নতুন শিক্ষাক্রমে। ত্রিভুজ হচ্ছে সবচেয়ে দক্ষ বা ভালো, বৃত্ত হচ্ছে মোটামুটি ভালো এবং চতুর্ভুজ হলো- উন্নতি প্রয়োজন।

শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী গত ১ ফেব্রুয়ারি এনসিটিবি এবং শিক্ষাক্রম প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্তৃপক্ষ ও অংশীজনদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে মূল্যায়ন পদ্ধতির বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে চান মন্ত্রী। তিনি বিষয়টি নিয়ে জন-অসন্তোষ নিরসনে এ কার্যক্রম যাচাই– বাছাইয়ের পরামর্শ দেন।

পরবর্তীতে ৪ ফেব্রুয়ারি মূল্যায়ন পদ্ধতি ও নতুন শিক্ষাক্রম নিয়ে ১৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ কমিটির আহ্বায়ক হলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন) মোহাম্মদ খালেদ রহীম। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন এনসিটিবি, মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বিভিন্ন অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রতিনিধিরা।

back to top