alt

শিক্ষা

কারিগরি বোর্ড : সিস্টেম এনালিস্ট চুরি করেন ৫ হাজার পিস বিশেষ কাগজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৫৭০টি ‘নম্বরপত্র ব্যাকগ্রাউন্ড’ (সনদ তৈরির বিশেষ কাগজ) ‘হারানো’ এবং সিস্টেম এনালিস্টের বিরুদ্ধে ৫ হাজার পিস বিশেষ কাগজ চুরির প্রমাণ পেয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। ২০২১ ও ২০২২ সালের ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা-ইন-ট্যুরিজম পরীক্ষার বিশেষ কাগজ ‘হারানোর’ প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোর্ডের গোপনীয় শাখা অর্থাৎ ‘কম্পিউটার সেলে’ চেইন অব কমান্ড নেই বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। অন্যান্য শাখার নথিপত্রেও ‘ঘষামাঝা’ ও নথি সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।

২০২২ সালে রাতের বেলা বোর্ডের সিস্টেম এনালিট প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে বোর্ডের ‘কম্পিউটার সেলে’ একা প্রবেশ করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ওই রাতে তিনি পাঁচ হাজার ‘ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার’ বা বিশেষ কাগজের একটি বান্ডিল চুরি করেন। এই কাগজ দিয়ে তিনি সনদ তৈরি করতেন বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।

তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালেও ‘শর্ট কোর্সের’ সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় ২০১৭ সালে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। এরপরও ২০২১ সালে শামসুজ্জামানকে একই পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০২১ ও ২০২২ সালের আগেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদের হিসেবে ‘গরমিল’ থাকতে পারে মন্তব্য করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, ‘সামগ্রিকভাবে, বোর্ডের কম্পিউটার সেলসহ বিভিন্ন শাখার মধ্যে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা (চেইন অব কমান্ড) এর দুর্বলতা, দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারীর দায়বদ্ধতাগত অগ্রহণযোগ্যতা এবং এ সুযোগে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সনদপত্র ও নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড হারানো সংক্রান্ত ন্যক্কারজনক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে, যা অতীব দুঃখজনক।’

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন উল হক সম্প্রতি সংবাদকে বলেছেন, সব জাল সনদ চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে। আর বোর্ডের যেসব কর্মচারীর বিরুদ্ধে এই ঘটনায় সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সনদ জালিয়াতির ঘটনায় বোর্ডের ৫২ জন অস্থায়ী কর্মচারীকে রদবদলের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই ওইসব কর্মচারীকে বদলি করা হচ্ছে।

৮ দফা সুপারিশ

সনদ জালিয়াতির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে আট দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

১. হারানো ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার উদ্ধার ও অনৈতিক ব্যবহারের বিষয়ে ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

২. কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান ২০২২ সালের ১১ মার্চ রাতের অন্ধকারে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যেই একাকী কম্পিউটার সেলে প্রবেশ করেন এবং এক বান্ডিল ও কিছু খোলা ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার প্রিন্টিং কক্ষ হতে নিজের বসার কক্ষে নিয়ে আসেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

৩. ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার সংক্রান্ত কাউন্টিং ও চাহিদাপত্রে, নথিতে ও রেজিস্টারের সংশ্লিষ্ট স্থানে কাটাকাটি, স্বাক্ষর না দেয়া, তারিখ সংক্রান্ত ঘষামাজার বিষয়ে হস্তলেখা বিশারদের ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

৪. কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রকিউরমেন্ট শাখার, সনদ শাখা, কম্পিউটার সেলে আবশ্যিকভাবে রেজিস্টার পরিচালনা ও দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের স্বাক্ষর এবং নাম ও পদবি সম্বলিত সিল ব্যবহার করে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করা হলো।

৫. সনদপত্র ও নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তা সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য বোর্ডের স্টোরে, সনদ শাখায় ও কম্পিউটার সেলে নিরাপত্তা সম্বলিত ভল্ট স্থাপনের সুপারিশ করা হলো।

৬. শিক্ষার্থীর তথ্যাদি অনলাইনে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি তা হার্ড কপিতে মুদ্রণ ও বাঁধাই করে একাধিক দপ্তরে বা শাখায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

৭. আবশ্যিকভাবে বোর্ডের স্পর্শকাতর শাখায় দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারী প্রত্যাহার এবং অন্যান্য শাখায় কর্মরত এ ধরনের কর্মচারীর আনাগোনা বন্ধ করতে হবে।

৮. বোর্ড অনুমোদিত ৩৪টি শিক্ষাক্রমের ফলাফল প্রকাশের পর সনদপত্র ও নম্বরপত্র প্রস্তুতকরণ, মুদ্রণ ও বিতরণের কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া কম্পিউটার সেল হতে প্রদত্ত শিক্ষার্থীদের কাউন্টিং অনুসারে ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার সরবরাহ, মুদ্রণ, তুলনাকরণ, রেজিস্টারে লিপিবদ্ধকরণ সহ পর্যায়ক্রমিক বিতরণ পর্যন্ত বিস্তৃত বিধায় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

প্রতিবেদনে বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সনদ শাখার নোটশিটে সনদের ‘উপাত্তের হিসাবে অস্পষ্টতা ও কাটাকাটিজনিত গরমিল পাওয়া গেছে। গৃহীত নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড পেপারের ক্রমিং নম্বর ‘ভুলভাবে’ উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্ট পত্রে কোনো স্মারক নম্বর নেই, প্রাপকের নাম ও পদবি নেই বিধায় তা বাংলাদেশ সচিবালয় নির্দেশমালা-২০১৪ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়নি। সংশ্লিষ্টপত্রে কম্পিউটার সেলের শাখা প্রধান হিসেবে তৎকালীন সিস্টেম এনালিস্টের কোনো স্বাক্ষর নেই বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অসংখ্য সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্টকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ ঘটনায় বোর্ডের চেয়ারম্যান আকবর আলী খানকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন পর তার স্ত্রী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

সনদ জালিয়াতির ঘটনা খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বোর্ডের পরিদর্শক প্রকৌশলী বিএম আমিনুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং উপ-পরিচালক (গবেষণা) রাজু মুহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। আর কমিটির সদস্য হলে বোর্ডের উপ-পরিচালক (কোর্স অ্যাক্রিডিটেশন) এসএম শাহজাহান।

এ কমিটি গত ১৪ মে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ১০ পৃষ্ঠার এক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

ছবি

শামুক নিয়ে গবেষণায় রাবির গবেষক দলের সাফল্য

ছবি

৩০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী স্কুলে আসে না

রাণীনগরে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধনা

ছবি

শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন প্রকল্পের ৫,৪০০ জনের ফাউন্ডেশন ইংলিশ টেস্ট সম্পন্ন

ছবি

নোবিপ্রবি’র আয়োজনে একাডেমিয়া-ইন্ডাস্ট্রি সহযোগিতা বিষয়ে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা চলাকালেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলবে ক্লাস

ছবি

এসএসসি: পুনঃনিরীক্ষণে পরিবর্তন হলো ঢাকা বোর্ডের ২৭২৩ জনের ফল

ছবি

ইউআইটিএস-এ গবেষণা প্রকাশনার উপর আন্তর্জাতিক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত

ছবি

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন সময় বাড়লো দুই দিন

সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ না দিয়েই ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন

ছবি

শিক্ষা ক্যাডার: নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করল শাহেদ-তানভীর-মোস্তাফিজ প্যানেল

ক্যারিয়ার নিয়ে দুশ্চিন্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থী, তাদের ৩৯ শতাংশ শিক্ষার্থীর মনে আত্মহত্যার চিন্তা আসে

ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ক্লাস শুরু ২৩ জুন

অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের ৩ দিন আগে বদলি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে অস্থিরতা

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় খুলছে ৯ জুন

উচ্চ শিক্ষিতদের ৩৯ শতাংশ বেকার, সরকারি জরিপ

বিকাশে একাদশ শ্রেণির ভর্তির আবেদন ফি

ছবি

স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তিমেলায় চলছে বিশেষ ছাড়

ছবি

প্রতিটি কলেজে শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে চাই : মশিউর রহমান

এইচএসসি পরীক্ষা ৩০ জুনই শুরু হবে : ঢাকা শিক্ষা বোর্ড

ছবি

৪৩তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত জবিয়ানদের মিলনমেলা

ছবি

চীনের ৭তলা ভবন থেকে লাফিয়ে পড়লেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে কৌশিক সাহার পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন

ছবি

বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে লেখাপড়ার সুযোগ দিচ্ছে চীন, আবাসনসহ প্রতিমাসে ৪০ হাজার টাকা

ছবি

প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: হাইকোর্টের রায় আদেশ স্থগিত করল আপিল বিভাগ

ছবি

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদনে এবার ‘পেমেন্ট সমস্যা’

ছবি

পেনশন স্কিম বাতিলের দাবিতে জবি শিক্ষকরা ক্লাস নেয়নি ২ ঘন্টা

ছবি

গুচ্ছে আবেদনের সময় বাড়ছে ১ দিন

ছবি

গবেষণার ফলাফল সকলের বোধগম্য হওয়াই বিজ্ঞানীর স্বার্থকতা : সাদেকা হালিম

ছবি

ডেঙ্গু প্রতিরোধে শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জবি উপাচার্যের

ছবি

সার্বজনীন পেনশন বাতিলের দাবিতে জবি শিক্ষক সমিতির মানববন্ধন

ছবি

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন শুরু হলো আজ

ছবি

শিক্ষার্থী সংকট, একীভূত হচ্ছে খুলনার ৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়

ছবি

ওয়াইল্ড লাইফ অলিম্পিয়াডের নিবন্ধন চলছে

ছবি

১৫-২৫ জুলাই একাদশে ভর্তি, ৩০ জুলাই ক্লাস শুরু

একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির আবেদন আগামী ২৬ মে শুরু হচ্ছে

tab

শিক্ষা

কারিগরি বোর্ড : সিস্টেম এনালিস্ট চুরি করেন ৫ হাজার পিস বিশেষ কাগজ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৫৭০টি ‘নম্বরপত্র ব্যাকগ্রাউন্ড’ (সনদ তৈরির বিশেষ কাগজ) ‘হারানো’ এবং সিস্টেম এনালিস্টের বিরুদ্ধে ৫ হাজার পিস বিশেষ কাগজ চুরির প্রমাণ পেয়েছে এ সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। ২০২১ ও ২০২২ সালের ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জনিয়ারিং ও ডিপ্লোমা-ইন-ট্যুরিজম পরীক্ষার বিশেষ কাগজ ‘হারানোর’ প্রমাণ পাওয়া গেছে। বোর্ডের গোপনীয় শাখা অর্থাৎ ‘কম্পিউটার সেলে’ চেইন অব কমান্ড নেই বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে। অন্যান্য শাখার নথিপত্রেও ‘ঘষামাঝা’ ও নথি সংরক্ষণে অব্যবস্থাপনার প্রমাণ পেয়েছে কমিটি।

২০২২ সালে রাতের বেলা বোর্ডের সিস্টেম এনালিট প্রকৌশলী একেএম শামসুজ্জামানের বিরুদ্ধে বোর্ডের ‘কম্পিউটার সেলে’ একা প্রবেশ করার প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। ওই রাতে তিনি পাঁচ হাজার ‘ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার’ বা বিশেষ কাগজের একটি বান্ডিল চুরি করেন। এই কাগজ দিয়ে তিনি সনদ তৈরি করতেন বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।

তার বিরুদ্ধে ২০১৬ সালেও ‘শর্ট কোর্সের’ সনদ জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। ওই ঘটনায় ২০১৭ সালে তাকে শাস্তি দেয়া হয়। এরপরও ২০২১ সালে শামসুজ্জামানকে একই পদে দায়িত্ব দেয়া হয়।

২০২১ ও ২০২২ সালের আগেও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সনদের হিসেবে ‘গরমিল’ থাকতে পারে মন্তব্য করে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়ছে, ‘সামগ্রিকভাবে, বোর্ডের কম্পিউটার সেলসহ বিভিন্ন শাখার মধ্যে প্রশাসনিক শৃঙ্খলা (চেইন অব কমান্ড) এর দুর্বলতা, দৈনিক হাজিরা ভিত্তিক কর্মচারীর দায়বদ্ধতাগত অগ্রহণযোগ্যতা এবং এ সুযোগে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী সনদপত্র ও নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড হারানো সংক্রান্ত ন্যক্কারজনক কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সুনাম ক্ষুণœ হয়েছে, যা অতীব দুঃখজনক।’

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন উল হক সম্প্রতি সংবাদকে বলেছেন, সব জাল সনদ চিহ্নিত করে বাতিল করা হবে। আর বোর্ডের যেসব কর্মচারীর বিরুদ্ধে এই ঘটনায় সম্পৃক্তার প্রমাণ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে সনদ জালিয়াতির ঘটনায় বোর্ডের ৫২ জন অস্থায়ী কর্মচারীকে রদবদলের সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই ওইসব কর্মচারীকে বদলি করা হচ্ছে।

৮ দফা সুপারিশ

সনদ জালিয়াতির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে আট দফা সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

১. হারানো ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার উদ্ধার ও অনৈতিক ব্যবহারের বিষয়ে ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে সত্য উদঘাটনের প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

২. কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের তৎকালীন সিস্টেম এনালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান ২০২২ সালের ১১ মার্চ রাতের অন্ধকারে কোনো অসৎ উদ্দেশ্যেই একাকী কম্পিউটার সেলে প্রবেশ করেন এবং এক বান্ডিল ও কিছু খোলা ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার প্রিন্টিং কক্ষ হতে নিজের বসার কক্ষে নিয়ে আসেন। এ বিষয়ে তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

৩. ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার সংক্রান্ত কাউন্টিং ও চাহিদাপত্রে, নথিতে ও রেজিস্টারের সংশ্লিষ্ট স্থানে কাটাকাটি, স্বাক্ষর না দেয়া, তারিখ সংক্রান্ত ঘষামাজার বিষয়ে হস্তলেখা বিশারদের ফরেনসিক তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণকে চিহ্নিত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

৪. কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের প্রকিউরমেন্ট শাখার, সনদ শাখা, কম্পিউটার সেলে আবশ্যিকভাবে রেজিস্টার পরিচালনা ও দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণের স্বাক্ষর এবং নাম ও পদবি সম্বলিত সিল ব্যবহার করে সংরক্ষণ করার সুপারিশ করা হলো।

৫. সনদপত্র ও নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও গুরুত্বপূর্ণ বিধায় তা সংরক্ষণ ও বিতরণের জন্য বোর্ডের স্টোরে, সনদ শাখায় ও কম্পিউটার সেলে নিরাপত্তা সম্বলিত ভল্ট স্থাপনের সুপারিশ করা হলো।

৬. শিক্ষার্থীর তথ্যাদি অনলাইনে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের পাশাপাশি তা হার্ড কপিতে মুদ্রণ ও বাঁধাই করে একাধিক দপ্তরে বা শাখায় সংরক্ষণ করা যেতে পারে।

৭. আবশ্যিকভাবে বোর্ডের স্পর্শকাতর শাখায় দৈনিক হাজিরা ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারী প্রত্যাহার এবং অন্যান্য শাখায় কর্মরত এ ধরনের কর্মচারীর আনাগোনা বন্ধ করতে হবে।

৮. বোর্ড অনুমোদিত ৩৪টি শিক্ষাক্রমের ফলাফল প্রকাশের পর সনদপত্র ও নম্বরপত্র প্রস্তুতকরণ, মুদ্রণ ও বিতরণের কার্যক্রম একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া কম্পিউটার সেল হতে প্রদত্ত শিক্ষার্থীদের কাউন্টিং অনুসারে ব্যাকগ্রাউন্ড পেপার সরবরাহ, মুদ্রণ, তুলনাকরণ, রেজিস্টারে লিপিবদ্ধকরণ সহ পর্যায়ক্রমিক বিতরণ পর্যন্ত বিস্তৃত বিধায় সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া অটোমেশনের মাধ্যমে সম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হলো।

প্রতিবেদনে বোর্ডের কম্পিউটার সেলের সনদ শাখার নোটশিটে সনদের ‘উপাত্তের হিসাবে অস্পষ্টতা ও কাটাকাটিজনিত গরমিল পাওয়া গেছে। গৃহীত নম্বরপত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড পেপারের ক্রমিং নম্বর ‘ভুলভাবে’ উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্ট পত্রে কোনো স্মারক নম্বর নেই, প্রাপকের নাম ও পদবি নেই বিধায় তা বাংলাদেশ সচিবালয় নির্দেশমালা-২০১৪ অনুসরণ করে প্রস্তুত করা হয়নি। সংশ্লিষ্টপত্রে কম্পিউটার সেলের শাখা প্রধান হিসেবে তৎকালীন সিস্টেম এনালিস্টের কোনো স্বাক্ষর নেই বলে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সম্প্রতি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে অসংখ্য সনদ জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্টকে সম্প্রতি গ্রেপ্তার করে একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এ ঘটনায় বোর্ডের চেয়ারম্যান আকবর আলী খানকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয় এবং তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিছুদিন পর তার স্ত্রী জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।

সনদ জালিয়াতির ঘটনা খতিয়ে দেখতে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে বোর্ডের পরিদর্শক প্রকৌশলী বিএম আমিনুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং উপ-পরিচালক (গবেষণা) রাজু মুহাম্মদ শহীদুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। আর কমিটির সদস্য হলে বোর্ডের উপ-পরিচালক (কোর্স অ্যাক্রিডিটেশন) এসএম শাহজাহান।

এ কমিটি গত ১৪ মে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে ১০ পৃষ্ঠার এক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এর আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ থেকে বোর্ড চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

back to top