alt

শিক্ষা

উচ্চ শিক্ষিতদের ৩৯ শতাংশ বেকার, সরকারি জরিপ

রাকিব উদ্দিন : বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪

দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীর ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশই কর্মহীন। আর ৩৪ শতাংশ উচ্চ শিক্ষিতরা স্নাতক সম্পন্ন করার দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে চাকরি পায়। পাঠ্যক্রমের সঙ্গে শ্রমবাজারের প্রাসঙ্গিকতার অভাবের কারণে একাডেমিক গবেষণার সঙ্গে শিল্প-কারখানার কার্যকর সহযোগিতা অনুপস্থিত। এর ফলে উচ্চ শিক্ষা স্তরে যা শেখানো হচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্রে যা ঘটবে তার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে সরকারের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের আওতাধীন সেক্টরসমূহের জন্য সেক্টর অ্যাকশন প্লান প্রণয়ন ও পরিবীক্ষণসহ সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (১ম সংশোধনী’ র্শীষক প্রকল্পের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা সেক্টরের ‘সেক্টর অ্যাকশন প্লান’ প্রণয়নের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর আজ ঢাকায় একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই গতকাল প্রতিবেদনটি সরকারের বিভিন্ন স্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। কর্মশালায় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থর্নীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাউসার আহাম্মদের প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পের সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে ভর্তি বাড়ানো হলে তা কেবল চাকরিতে নিয়োগ-অযোগ্য উচ্চশিক্ষিত স্নাতক-বেকার তৈরি করবে। বাংলাদেশের তিন ধারার উচ্চশিক্ষার মধ্যে সাধারণ ও কারিগরি বিশ^বিদ্যালয়সমূহ হতে ছাত্র সংখ্যার দিক থেকে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অবস্থান সবচেয়ে ওপরে। সমস্যা বা চ্যালেঞ্জও এ বিশ^বিদ্যালয় ও এর অধিকৃত কলেজসমূহে বেশি।

জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনইউ) অধীনে সারাদেশে দুই হাজার ২৫৭টি কলেজ রয়েছে। এর ৫৫৫টি সরকারি। বাকিগুলো বেসরকারি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মোট ৮৮১টিতে কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। এনইউ’র অধীন সারাদেশের কলেজে মোট ৩১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, যা দেশে উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনের ‘দেশে উচ্চ শিক্ষায় লক্ষ্য অর্জনের ঘাটতি’ শীর্ষক অংশে বলা হয়েছে, ‘এত অগ্রগতির পরও দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীর সংখ্যা এখনও খুবই সীমিত। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ ও পুরুষের মধ্যে তা ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ভৌগোলিকভাবে শহর এলাকার ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গ্রাম এলাকার ৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের উচ্চশিক্ষা রয়েছে।’

উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীদের বেকারত্বের বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এটা আমাদের উচ্চশিক্ষার সিস্টেমের সমস্যা। আমরা শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে পারিনি। বিনিয়োগও সেভাবে হয়নি। প্রয়োজনের চেয়ে সঙ্গতি না রেখে এতবেশি উচ্চশিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, এই রেজাল্টায় আমরা উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরি করেছি। কিন্তু ভালো নাগরিক তৈরি করতে পারিনি।’

উচ্চশিক্ষাকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘তাদের কর্মসংস্থানের সাবজেক্ট যেমন- সফট স্কিল, কম্পিউটার, আইটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), টেকনোলজি এসব সাবজেক্টে আমরা ভালোভাবে গুরুত্ব দেয়নি। আমরা বিজনেস, আর্টস অথবা সোশ্যাল সায়েন্স, ইতিহাস-এসব সাবজেক্টে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের যুগে বিশ^ এখন একইভূত বাজার। সুতরাং আমাদের গ্রাজুয়েটরা যদি সমপর্যায়ের না হয় তারাতো প্রডিউস করতে পারবে না। সুতরাং অন্য দেশ থেকে ইম্পোর্ট করতে হবে। এতে আমাদের ইকোনোমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

উচ্চশিক্ষায় বেকারত্বের সংকট শুধু বাংলাদেশে নয়-মন্তব্য করে ঢাবির সাবেক উপাচার্য বলেন, ‘ভারতে কলেজ গ্রাজুয়েটদের বেকারের সংখ্যা ৫৪ শতাংশ। আর দেশটির সাধারণ বিশ^বিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীদের বেকারত্বে হার ১৭ শতাংশ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২৬ শতাংশ নারী। কাজেই ভর্তির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মাঝে বড় পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে চূড়ান্ত শিক্ষা সমাপনীর হার খুবই কম-২০ শতাংশেরও নিচে।

উচ্চশিক্ষায় সাম্প্রতিক বছরে ভর্তি বেড়েছে; এই বৃদ্ধির বড় একটি অংশ ভর্তি হয়েছে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে। সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় নেয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ভর্তির হার ২১ শতাংশের কাছাকাছি। স্নাতকদের মান ও চাকরিতে নিয়োগের যোগ্যতা প্রত্যাশার চেয়ে কম।

বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজ স্নাতকদের নিয়ে ‘ট্রেসার গবেষণায়’ জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও চাকরি-প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের (ইউজিসি) আওতায় বিশ^বিদ্যালয়ের স্নাতকদের নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা যায়, ‘তাদের ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ কর্মহীন।’

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর কয়েকটি হলো- বৃহৎ শিল্প-কারখানাগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন উইং প্রতিষ্ঠা করতে হবে অথবা বিদ্যমানগুলোকে কার্যকর করতে হবে।

গবেষণা করার বিষয়ে শুধু একাডেমিক অর্জনের উপর নজর না দিয়ে পাশাপাশি গবেষণার ফলাফলের প্রায়োগিক দিকের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। গবেষণার ফলাফল হতে যাতে প্যাটেন্টিং করা যায় সে বিষয়ে নজর দেয়া দরকার বলে প্রতিবেদনে মন্তব করা হয়েছে।

দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী অথচ উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ২৬ শতাংশ। নারীদ্রে অধিক হারে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি করার প্রণোদনা হিসেবে নারীদের জন্য উদারভাবে বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য বুনিয়াদি ও পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক গবেষণা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

শ্রম আইন কার্যকর করতে হবে যাতে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারী ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষকদের আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশ^বিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করতে হবে।

পরীক্ষার আগের সপ্তাহ পর্যন্ত ফরম পূরণের সুযোগ, জানাল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

মহামারির আশঙ্কায় এইচএসসি কেন্দ্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের নির্দেশ

পরীক্ষা পেছানোর পরিকল্পনা নেই, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ডগুলো

ছবি

ভিসি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ২৬ জুন

ছবি

আদালতের রায়ে এক যুগ পর চাকরিতে ফিরছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ছবি

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির অধীনেই চলবে সাত কলেজ

ছবি

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, আন্দোলনে ছাত্রদলসহ শিক্ষার্থীরা

ছবি

শাহরিয়ার সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাবিতে অর্ধদিবস শ্রদ্ধা, নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল স্থানান্তর ও রাজস্ব ফাঁকিতে দুদকের নজরে দুই প্রতিষ্ঠান

ছবি

কোরবানির ঈদ আর গ্রীষ্ম: লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ছবি

১৬ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের নাম

ছবি

কুয়েটে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষকদের অনড় কর্মবিরতি, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

ছবি

৬ বছর পর ইইডিতে উপপরিচালক পদায়ন

ছবি

শিক্ষার্থী-শিক্ষক উত্তেজনায় কুয়েটে অনিশ্চয়তায় একাডেমিক কার্যক্রম

ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন স্থগিত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ মে

ছবি

মে মাসের মাঝামাঝিতে তারিখ ঘোষণার লক্ষ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ

ছবি

কক্সবাজারে পরীক্ষা দিচ্ছে সেই ১৩ শিক্ষার্থী

ছবি

ভিসি অপসারণ একমাত্র দাবি: কুয়েট শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন

ছবি

কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১২ এপ্রিল

ছবি

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

ছবি

১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

শিক্ষা সংস্কারে পদক্ষেপ নেই, বাজেট বাড়ানোর দাবি শিক্ষাবিদদের

ছবি

এসএসসি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার বন্ধ ও কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা

ছবি

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ফল প্রকাশে দুই মাসের স্থগিতাদেশ

ছবি

পেছালো এসএসসির গণিত পরীক্ষা, নতুন সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

ঢাবির সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা চূড়ান্ত নয়, পুনঃতদন্তে কমিটি

ছবি

নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদিত

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা প্রকাশ

ছবি

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে রোববার ছুটি

ছবি

শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষায় আপাতত সব কোটা স্থগিত

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৪-২০ মার্চ অনলাইনে ক্লাস

ছবি

এডাব্লিউএস ক্লাউড ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য জাপানে ক্যারিয়ারের সুযোগ

ছবি

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রিটিশ কাউন্সিলের ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ লার্নিং সেন্টার

ছবি

ঢাবি ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার আসিফের মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানায় একদল ব্যক্তি

tab

শিক্ষা

উচ্চ শিক্ষিতদের ৩৯ শতাংশ বেকার, সরকারি জরিপ

রাকিব উদ্দিন

বুধবার, ০৫ জুন ২০২৪

দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীর ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশই কর্মহীন। আর ৩৪ শতাংশ উচ্চ শিক্ষিতরা স্নাতক সম্পন্ন করার দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে চাকরি পায়। পাঠ্যক্রমের সঙ্গে শ্রমবাজারের প্রাসঙ্গিকতার অভাবের কারণে একাডেমিক গবেষণার সঙ্গে শিল্প-কারখানার কার্যকর সহযোগিতা অনুপস্থিত। এর ফলে উচ্চ শিক্ষা স্তরে যা শেখানো হচ্ছে এবং কর্মক্ষেত্রে যা ঘটবে তার মধ্যে সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে সরকারের এক প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের অধীনে বাস্তবায়নাধীন ‘আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের আওতাধীন সেক্টরসমূহের জন্য সেক্টর অ্যাকশন প্লান প্রণয়ন ও পরিবীক্ষণসহ সার্বিক সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ (১ম সংশোধনী’ র্শীষক প্রকল্পের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।

এই প্রকল্পের আওতায় শিক্ষা সেক্টরের ‘সেক্টর অ্যাকশন প্লান’ প্রণয়নের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর আজ ঢাকায় একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই গতকাল প্রতিবেদনটি সরকারের বিভিন্ন স্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়। কর্মশালায় পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থর্নীতি বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. কাউসার আহাম্মদের প্রধান অতিথি থাকার কথা রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শিল্পের সঙ্গে সংযোগ ঘটানোর বিষয়ে মনোযোগ না দিয়ে ভর্তি বাড়ানো হলে তা কেবল চাকরিতে নিয়োগ-অযোগ্য উচ্চশিক্ষিত স্নাতক-বেকার তৈরি করবে। বাংলাদেশের তিন ধারার উচ্চশিক্ষার মধ্যে সাধারণ ও কারিগরি বিশ^বিদ্যালয়সমূহ হতে ছাত্র সংখ্যার দিক থেকে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের অবস্থান সবচেয়ে ওপরে। সমস্যা বা চ্যালেঞ্জও এ বিশ^বিদ্যালয় ও এর অধিকৃত কলেজসমূহে বেশি।

জানা গেছে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনইউ) অধীনে সারাদেশে দুই হাজার ২৫৭টি কলেজ রয়েছে। এর ৫৫৫টি সরকারি। বাকিগুলো বেসরকারি। এর মধ্যে সরকারি-বেসরকারি মোট ৮৮১টিতে কলেজে স্নাতক (সম্মান) পড়ানো হয়। এনইউ’র অধীন সারাদেশের কলেজে মোট ৩১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে, যা দেশে উচ্চশিক্ষায় মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৭২ শতাংশ।

পরিকল্পনা কমিশনের প্রতিবেদনের ‘দেশে উচ্চ শিক্ষায় লক্ষ্য অর্জনের ঘাটতি’ শীর্ষক অংশে বলা হয়েছে, ‘এত অগ্রগতির পরও দেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীর সংখ্যা এখনও খুবই সীমিত। বাংলাদেশের নারীদের মধ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ ও পুরুষের মধ্যে তা ১৫ দশমিক ৫ শতাংশ। ভৌগোলিকভাবে শহর এলাকার ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ এবং গ্রাম এলাকার ৮ দশমিক ৮ শতাংশ মানুষের উচ্চশিক্ষা রয়েছে।’

উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীদের বেকারত্বের বিষয়ে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, ‘এটা আমাদের উচ্চশিক্ষার সিস্টেমের সমস্যা। আমরা শিক্ষাকে কর্মমুখী করতে পারিনি। বিনিয়োগও সেভাবে হয়নি। প্রয়োজনের চেয়ে সঙ্গতি না রেখে এতবেশি উচ্চশিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, এই রেজাল্টায় আমরা উচ্চশিক্ষিত বেকার তৈরি করেছি। কিন্তু ভালো নাগরিক তৈরি করতে পারিনি।’

উচ্চশিক্ষাকে পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়ে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য বলেন, ‘তাদের কর্মসংস্থানের সাবজেক্ট যেমন- সফট স্কিল, কম্পিউটার, আইটি (তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি), টেকনোলজি এসব সাবজেক্টে আমরা ভালোভাবে গুরুত্ব দেয়নি। আমরা বিজনেস, আর্টস অথবা সোশ্যাল সায়েন্স, ইতিহাস-এসব সাবজেক্টে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘তৃতীয় শিল্পবিপ্লবের যুগে বিশ^ এখন একইভূত বাজার। সুতরাং আমাদের গ্রাজুয়েটরা যদি সমপর্যায়ের না হয় তারাতো প্রডিউস করতে পারবে না। সুতরাং অন্য দেশ থেকে ইম্পোর্ট করতে হবে। এতে আমাদের ইকোনোমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

উচ্চশিক্ষায় বেকারত্বের সংকট শুধু বাংলাদেশে নয়-মন্তব্য করে ঢাবির সাবেক উপাচার্য বলেন, ‘ভারতে কলেজ গ্রাজুয়েটদের বেকারের সংখ্যা ৫৪ শতাংশ। আর দেশটির সাধারণ বিশ^বিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণকারীদের বেকারত্বে হার ১৭ শতাংশ।’

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২৬ শতাংশ নারী। কাজেই ভর্তির ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ ও আর্থ-সামাজিক অবস্থানের মাঝে বড় পার্থক্য রয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে চূড়ান্ত শিক্ষা সমাপনীর হার খুবই কম-২০ শতাংশেরও নিচে।

উচ্চশিক্ষায় সাম্প্রতিক বছরে ভর্তি বেড়েছে; এই বৃদ্ধির বড় একটি অংশ ভর্তি হয়েছে মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে। সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিবেচনায় নেয়া হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে ভর্তির হার ২১ শতাংশের কাছাকাছি। স্নাতকদের মান ও চাকরিতে নিয়োগের যোগ্যতা প্রত্যাশার চেয়ে কম।

বিশ^বিদ্যালয় ও কলেজ স্নাতকদের নিয়ে ‘ট্রেসার গবেষণায়’ জানা যায়, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও চাকরি-প্রস্তুতিতে ঘাটতি রয়েছে। ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশনের (ইউজিসি) আওতায় বিশ^বিদ্যালয়ের স্নাতকদের নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা যায়, ‘তাদের ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ কর্মহীন।’

উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। এর কয়েকটি হলো- বৃহৎ শিল্প-কারখানাগুলোতে গবেষণা ও উন্নয়ন উইং প্রতিষ্ঠা করতে হবে অথবা বিদ্যমানগুলোকে কার্যকর করতে হবে।

গবেষণা করার বিষয়ে শুধু একাডেমিক অর্জনের উপর নজর না দিয়ে পাশাপাশি গবেষণার ফলাফলের প্রায়োগিক দিকের ওপরও গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। গবেষণার ফলাফল হতে যাতে প্যাটেন্টিং করা যায় সে বিষয়ে নজর দেয়া দরকার বলে প্রতিবেদনে মন্তব করা হয়েছে।

দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক নারী অথচ উচ্চশিক্ষায় নারীর অংশগ্রহণ মাত্র ২৬ শতাংশ। নারীদ্রে অধিক হারে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি করার প্রণোদনা হিসেবে নারীদের জন্য উদারভাবে বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য বুনিয়াদি ও পেশাগত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এজন্য বিশ^বিদ্যালয় শিক্ষক গবেষণা প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

শ্রম আইন কার্যকর করতে হবে যাতে কারিগরি শিক্ষা গ্রহণকারী ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। বিশ^বিদ্যালয়ের বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষকদের আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন বিশ^বিদ্যালয় হতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের জন্য উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে সরকারকে আর্থিকভাবে সহায়তা প্রদান করতে হবে।

back to top