alt

শিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম

সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ না দিয়েই ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন

রাকিব উদ্দিন : রোববার, ০৯ জুন ২০২৪

নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকের ষান্মাসিক (অর্ধ-বার্ষিক) সামষ্টিক মূল্যায়ন আগামী ৩ জুলাই শুরু হচ্ছে। এই কার্যক্রমের সিলেবাস ও নতুন নির্দেশনা রোববার (৯ জুন) প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অথচ এখনও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ পাননি। এই খাতে বরাদ্দ থাকা দুইশ’ কোটি টাকার বেশি ফেরত যাচ্ছে।

মাউশির একটি ‘প্রোগ্রামের’ অধীনে ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’র মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

এই স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী রোববার সংবাদকে জানান, তারা নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর চার লাখ ২৫ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত তারা তিন লাখ ৪২ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছেন।

গত দুই বছরে ধাপে ধাপে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সবাইকে বিষয়ভিত্তিক সাতদিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘বাকি যে শিক্ষকরা রয়ে গেছেন, যারা অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের, তাদেরকে আমি চাচ্ছিলাম প্রশিক্ষণে নিয়ে আসব। কিন্তু তাদের একোমোডেশন করার কোনো সুযোগই পায়নি...ট্রেনিং চলছে আমার একটার পর একটা। আর অনুমোদনহীন কারা, তাদের নাম-ঠিকানা পায়নি, ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রশিক্ষণের বাদ রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষকরাও প্রশিক্ষণ পাননি’ বলে জানান স্কিম পরিচালক।

গত ৪ জুন প্রকাশিত মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডেসিমিনেশন অফ নিউ কারিকুলাম স্কিম পরিচালনায় অগ্রিম অর্থ উত্তোলন প্রক্রিয়াকরণ, মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে সঠিক তথ্য (না পাওয়া) প্রাপ্তিসহ আরও কিছু কারণে প্রশিক্ষণ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে ২১১ কোটি টাকা অব্যয়িত থেকে যাবে।’

এ বিষয়ে স্কিম পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘নানা কারণে আমি ধারণা করছি, এই টাকা ফেরত যেতে পারে। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

৩০ জুন পর্যন্ত বর্তমান অর্থবছর। ১ জুলাই নতুন অর্থবছর শুরু। সেই হিসেবে চলতি মাসেই এই টাকা ব্যয় করতে হবে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

মাউশি থেকে জানা গেছে, সারাদেশে ১৫ থেকে ২০ হাজারে মতো অনুমোদনবিহীন অর্থাৎ ‘এডুকেশন ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ (ইআইআইএন) না থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৮০ হাজার থেকে এক লাখের মতো শিক্ষক রয়েছে। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তারা এই ধরণের শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন বা ডাটা বেইজ প্রণয়ন করতে পারেনি। এ কারণে তাদের প্রশিক্ষণে সমস্যায় পরেছেন স্কিম অফিসের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম সংবাদকে বলেছেন, ‘সব শিক্ষককে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েই নতুন শিক্ষাক্রমে পুরোপুরি বাস্তবায়নে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে এমনিতেই শিক্ষকের বিপুল সংখ্যক পদ খালি। এ নিয়ে অভিভাকরা খুবই উদ্বিগ্ন।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশেই ইআইআইএন বিহীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ না পেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের অবশ্যই প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।’

ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ৩ জুলাই থেকে
মাধ্যমিকের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন আগামী ৩ জুলাই শুরু হবে বলে রোববার মাউশির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এদিন মাউশি এই কার্যক্রমের সিলেবাস ও নতুন নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। এতে এই কার্যক্রম ছুটি চলাকালীন অনলাইন ক্লাস করে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বসে কাজ পর্যবেক্ষণ করে ফিডব্যাক দিতে শিক্ষকদের বলা হয়েছে।

মাউশির চিঠিতে বলা হয়েছে, এনসিটিবি থেকে পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সিলেভাস ও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।

এর আগে এনসিটিবির চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৩ জুলাই থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত সংশোধিত রুটিন ইতোপূর্বে পাঠানো হয়েছে।

এনসিটিবির চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন জুলাই মাসে শুরু হতে যাচ্ছে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে সারাদেশের নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেণীর কার্যক্রম সম্পন্ন করার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে পর্যন্ত শিখন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সেই পর্যন্ত অভিজ্ঞতাগুলোকে বিবেচনা করে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর সব বিষয়ের নির্ধারিত অংশ উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১২ জুন পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম চলাকালীন এই অভিজ্ঞতাগুলো শেষ করবেন শিক্ষকরা। যেহেতু ১২ জুনের পরে ছুটির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, বন্ধের আগে যদি ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত কোনো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে বিকল্প উপায় অবলম্বন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষকদের।

বিকল্প হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন করার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ছুটির আগেই শিক্ষার্থীকে ছুটিতে করণীয় অভিজ্ঞতাটির ধাপগুলো কী কী তা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিন। শিক্ষার্থীর বিকল্প কোন কোন কাজ পর্যবেক্ষণ করেন তার পারদর্শিতা যাচাই করবেন তা জানিয়ে দিন।

কোথাও দলগত কাজ, পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ থাকলে তা বিকল্প উপায়ে (উদাহরণস্বরূপ, দলগত কাজের বদলে একক কাজ, পরিবারের সদস্যদের থেকে তথ্য সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণের কাজটি বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ থেকে বা ভিডিয়ো দেখে বা ডকুমেন্ট পড়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে) কাজটি সম্পন্ন করার কৌশল বলে দিতে হবে।

কাজ শেষে সক্রিয় পরীক্ষণের বদলে শিক্ষার্থী কী অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে তার ধারণা এবং জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে অনলাইন ক্লাস করে, অভিভাবকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপে, মোবাইল গ্রুপে নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ বাড়িতে বসে কাজ পর্যবেক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নয়
গত ৩০ এপ্রিল মাউশির এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ক্লাস নেয়া যাবে না। এতে বলা হয়, ‘বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সেশন বা শ্রেণী কার্যক্রম চালাতে পারবেন না।’

মাউশি জানায়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সেশন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। একটি শ্রেণীর একটি বিষয়ে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া যাবে, একই বিষয়ের একাধিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া যাবে না। যে শিক্ষক যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, তিনিই সে বিষয়ের সেশন/শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।

নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ (মূল্যায়ন) ৬৫ শতাংশ ও ‘কার্যক্রমভিত্তিক’ মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ ৩৫ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। স্কুলভিত্তিক ষান্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।

ছবি

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির দ্বাদশ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত

ছবি

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরেও নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় ফিরল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

সাত কলেজের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে, জানাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল বন্ধের কর্মসূচি প্রত্যাহার, শিক্ষার্থীদের হামলার বিচার দাবি

ছবি

চলমান পরীক্ষাগুলো হবে, জানালেন ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষ

ছবি

সাত কলেজ সংকট সমাধানে অনিশ্চয়তায় শিক্ষা উপদেষ্টা

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনা: গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে নির্দেশ

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভিসি পদত্যাগের দাবি এবং সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন

ছবি

ঢাকা কলেজসহ সাত কলেজকে আলাদা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে সরকার

ছবি

হাই কোর্টে স্থগিত হল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও টেকনিক্যাল স্কুলে ৩,৫৩৪ জন নিয়োগ

ছবি

খুলনায় গুলি করে হত্যা: কোনো ক্লু পাচ্ছে না পুলিশ

ছবি

ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত

ছবি

পুনরায় ফল প্রকাশের দাবি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের

ছবি

সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে যুক্তরাজ্যের স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ নিয়ে এলো ইউসিবিডি

পাঠ্যবই থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দযুক্ত গ্রাফিতি বাদ

ছবি

এনসিটিবি ঘেরাও নিয়ে দুই সংগঠনের পাল্টাপাল্টি অবস্থান

শিক্ষাবর্ষের ১৪ দিন গড়ালেও সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই পায়নি

ছবি

গত বছর বিডিকলিংয়ে আইসিটি প্রশিক্ষণ নিয়েছে ৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী

পীরগাছায় অধ্যক্ষ পদ শূন্য: সংকটে শিক্ষক-কর্মচারী ও প্রশাসনিক কার্যক্রম

প্রকল্পের আওতায় সাধারণ হাইস্কুলে বৃত্তিমূলক শিক্ষা, ৫ বছরেও শিক্ষক নিয়োগের সুরাহা হয়নি

মাধ্যমিকের ৩টি বইয়ের ছাপা ২০ জানুয়ারির মধ্যে শেষ করতে চায় এনসিটিবি

জাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় মুক্তিযোদ্ধা নাতি-নাতনি ও ভিসি কোটা বাতিল; ইউনিট থাকছে ৭টি

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি: গুচ্ছে থাকতে ‘তৃতীয় অনুরোধ’ মন্ত্রণালয়ের

চার বছর পর ৬ লাখ শিক্ষার্র্থীর বৃত্তির বকেয়া টাকা ছাড়

ছবি

মিডওয়াইফারি ডিপ্লোমা কোর্সে শিক্ষাবৃত্তি দিচ্ছে বিকাশ

ছবি

প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়নে জাইকা ও সরকারের ৩৭.৮ কোটি টাকার অনুদান চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ

ছবি

২০ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

অভিবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে আমি প্রবাসী ও শিখো

ছবি

স্কুলে ভর্তির ফল প্রকাশ,‌ জানবেন যেভাবে

ছবি

প্রাথমিকের মাত্র ১ কোটি বই উপজেলায় পৌঁছেছে

ছবি

আইডাব্লিউএস অনলাইন স্কুলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০% পর্যন্ত স্কলারশিপ

ছবি

বাউবি প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের এইচএসসি (নিশ-১) পরীক্ষার ফলাফল

ছবি

টেকসই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের মধ্যে সেরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি

ছবি

অবসর প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও বলবৎ হবে

পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও শিক্ষাক্রমের ওপর ‘শে^তপত্র’ প্রকাশ: বই ছাপায় অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পায়নি এনসিটিবি

tab

শিক্ষা

নতুন শিক্ষাক্রম

সব শিক্ষককে প্রশিক্ষণ না দিয়েই ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন

রাকিব উদ্দিন

রোববার, ০৯ জুন ২০২৪

নতুন শিক্ষাক্রমে মাধ্যমিকের ষান্মাসিক (অর্ধ-বার্ষিক) সামষ্টিক মূল্যায়ন আগামী ৩ জুলাই শুরু হচ্ছে। এই কার্যক্রমের সিলেবাস ও নতুন নির্দেশনা রোববার (৯ জুন) প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অথচ এখনও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ পাননি। এই খাতে বরাদ্দ থাকা দুইশ’ কোটি টাকার বেশি ফেরত যাচ্ছে।

মাউশির একটি ‘প্রোগ্রামের’ অধীনে ‘ডিসেমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম স্কিম’র মাধ্যমে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

এই স্কিমের পরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী রোববার সংবাদকে জানান, তারা নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর চার লাখ ২৫ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণের পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। এ পর্যন্ত তারা তিন লাখ ৪২ হাজার শিক্ষককে প্রশিক্ষণ দিতে পেরেছেন।

গত দুই বছরে ধাপে ধাপে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। সবাইকে বিষয়ভিত্তিক সাতদিনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে মাউশির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘বাকি যে শিক্ষকরা রয়ে গেছেন, যারা অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানের, তাদেরকে আমি চাচ্ছিলাম প্রশিক্ষণে নিয়ে আসব। কিন্তু তাদের একোমোডেশন করার কোনো সুযোগই পায়নি...ট্রেনিং চলছে আমার একটার পর একটা। আর অনুমোদনহীন কারা, তাদের নাম-ঠিকানা পায়নি, ওই ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রশিক্ষণের বাদ রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান শিক্ষকরাও প্রশিক্ষণ পাননি’ বলে জানান স্কিম পরিচালক।

গত ৪ জুন প্রকাশিত মাউশির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ডেসিমিনেশন অফ নিউ কারিকুলাম স্কিম পরিচালনায় অগ্রিম অর্থ উত্তোলন প্রক্রিয়াকরণ, মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে সঠিক তথ্য (না পাওয়া) প্রাপ্তিসহ আরও কিছু কারণে প্রশিক্ষণ খাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ অব্যয়িত থেকে যাচ্ছে। চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দ থেকে ২১১ কোটি টাকা অব্যয়িত থেকে যাবে।’

এ বিষয়ে স্কিম পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, ‘নানা কারণে আমি ধারণা করছি, এই টাকা ফেরত যেতে পারে। তবে এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি।’

৩০ জুন পর্যন্ত বর্তমান অর্থবছর। ১ জুলাই নতুন অর্থবছর শুরু। সেই হিসেবে চলতি মাসেই এই টাকা ব্যয় করতে হবে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। এবার ৮ম ও ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা ২০২৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। চলতি শিক্ষাবর্ষে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে।

মাউশি থেকে জানা গেছে, সারাদেশে ১৫ থেকে ২০ হাজারে মতো অনুমোদনবিহীন অর্থাৎ ‘এডুকেশন ইনস্টিটিউশন আইডেন্টিফিকেশন নম্বর’ (ইআইআইএন) না থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে ৮০ হাজার থেকে এক লাখের মতো শিক্ষক রয়েছে। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও শিক্ষকদের নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।

কিন্তু মাউশির শিক্ষা কর্মকর্তারা এই ধরণের শিক্ষকদের তালিকা প্রণয়ন বা ডাটা বেইজ প্রণয়ন করতে পারেনি। এ কারণে তাদের প্রশিক্ষণে সমস্যায় পরেছেন স্কিম অফিসের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক তাসলিমা বেগম সংবাদকে বলেছেন, ‘সব শিক্ষককে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েই নতুন শিক্ষাক্রমে পুরোপুরি বাস্তবায়নে যাওয়া উচিত ছিল। কারণ গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে এমনিতেই শিক্ষকের বিপুল সংখ্যক পদ খালি। এ নিয়ে অভিভাকরা খুবই উদ্বিগ্ন।’

তিনি বলেন, ‘সারাদেশেই ইআইআইএন বিহীন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী রয়েছে। এই ধরণের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ না পেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাদের অবশ্যই প্রশিক্ষণের আওতায় আনতে হবে।’

ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন ৩ জুলাই থেকে
মাধ্যমিকের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন আগামী ৩ জুলাই শুরু হবে বলে রোববার মাউশির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এদিন মাউশি এই কার্যক্রমের সিলেবাস ও নতুন নির্দেশনা প্রকাশ করেছে। এতে এই কার্যক্রম ছুটি চলাকালীন অনলাইন ক্লাস করে শিক্ষার্থীদের বাড়িতে বসে কাজ পর্যবেক্ষণ করে ফিডব্যাক দিতে শিক্ষকদের বলা হয়েছে।

মাউশির চিঠিতে বলা হয়েছে, এনসিটিবি থেকে পাঠানো চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সিলেভাস ও এ সংক্রান্ত নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হলো।

এর আগে এনসিটিবির চিঠিতে বলা হয়, আগামী ৩ জুলাই থেকে ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। এ সংক্রান্ত সংশোধিত রুটিন ইতোপূর্বে পাঠানো হয়েছে।

এনসিটিবির চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, যষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন জুলাই মাসে শুরু হতে যাচ্ছে। দৈবচয়নের ভিত্তিতে সারাদেশের নির্বাচিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেণীর কার্যক্রম সম্পন্ন করার তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

এই তথ্যের ভিত্তিতে অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে পর্যন্ত শিখন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে সেই পর্যন্ত অভিজ্ঞতাগুলোকে বিবেচনা করে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণীর সব বিষয়ের নির্ধারিত অংশ উল্লেখ করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ১২ জুন পর্যন্ত শ্রেণী কার্যক্রম চলাকালীন এই অভিজ্ঞতাগুলো শেষ করবেন শিক্ষকরা। যেহেতু ১২ জুনের পরে ছুটির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, বন্ধের আগে যদি ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের জন্য নির্ধারিত কোনো অভিজ্ঞতা সম্পন্ন করা সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে বিকল্প উপায় অবলম্বন করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে শিক্ষকদের।

বিকল্প হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন করার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ছুটির আগেই শিক্ষার্থীকে ছুটিতে করণীয় অভিজ্ঞতাটির ধাপগুলো কী কী তা সহজ ভাষায় বুঝিয়ে দিন। শিক্ষার্থীর বিকল্প কোন কোন কাজ পর্যবেক্ষণ করেন তার পারদর্শিতা যাচাই করবেন তা জানিয়ে দিন।

কোথাও দলগত কাজ, পর্যবেক্ষণ, তথ্য সংগ্রহ ইত্যাদি কাজ থাকলে তা বিকল্প উপায়ে (উদাহরণস্বরূপ, দলগত কাজের বদলে একক কাজ, পরিবারের সদস্যদের থেকে তথ্য সংগ্রহ, পর্যবেক্ষণের কাজটি বাড়ির আশেপাশের পরিবেশ থেকে বা ভিডিয়ো দেখে বা ডকুমেন্ট পড়ে সম্পন্ন করা যেতে পারে) কাজটি সম্পন্ন করার কৌশল বলে দিতে হবে।

কাজ শেষে সক্রিয় পরীক্ষণের বদলে শিক্ষার্থী কী অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে তার ধারণা এবং জমা দেয়ার সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। প্রয়োজনে অনলাইন ক্লাস করে, অভিভাবকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গ্রুপে, মোবাইল গ্রুপে নির্দেশনা দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাজ বাড়িতে বসে কাজ পর্যবেক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।

প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নয়
গত ৩০ এপ্রিল মাউশির এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষিত শিক্ষক ছাড়া ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ক্লাস নেয়া যাবে না। এতে বলা হয়, ‘বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষক ছাড়া অন্য কোনো শিক্ষক ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সেশন বা শ্রেণী কার্যক্রম চালাতে পারবেন না।’

মাউশি জানায়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই শুধু ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সেশন পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। একটি শ্রেণীর একটি বিষয়ে একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া যাবে, একই বিষয়ের একাধিক শিক্ষককে দায়িত্ব দেয়া যাবে না। যে শিক্ষক যে বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন, তিনিই সে বিষয়ের সেশন/শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন।

নতুন শিক্ষাক্রমে লিখিত মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ (মূল্যায়ন) ৬৫ শতাংশ ও ‘কার্যক্রমভিত্তিক’ মূল্যায়নের ‘ওয়েটেজ’ ৩৫ শতাংশ রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। স্কুলভিত্তিক ষান্মাসিক ও বার্ষিক মূল্যায়ন এবং পাবলিক মূল্যায়নে একই পদ্ধতিতে করা যেতে পারে।

back to top