সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইন্সটিটিউটের শিক্ষকরা। দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এই সময়ে শিক্ষকরা কোনো ধরনের ক্লাস নেয়নি। তবে পরীক্ষাসমূহ এই কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা বলেন, বর্তমান পেনশন স্কিম যেটা চালু হচ্ছে, এটা কি আসলেই পেনশন? নাকি কোনো ইন্স্যুরেন্স। বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মতো এখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রেখে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট হারে টাকা পাওয়া যাবে। এটা তো একপ্রকার ইন্স্যুরেন্স।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছেন, সে লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সেখানে একটি চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য পায়তারা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আমরা এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি করছি। আমরা ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় বসবো, কর্মবিরতি পালন করবো এটা আমরা চাই না, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আমাদের ক্লাসের বাইরে আনা হয়েছে।
এসময় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম বলেন, আমাদের একবারে খাঁদের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে৷ আমরা একটা যৌক্তিক আন্দোলন করছি। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন হবে।
এবিষয়ে রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম যখন চালু করা হয়েছিল, তখন চারটি স্কিম ছিল। সেটা ছিল বর্তমান পেনশন স্কিমের বাইরে থাকা মানুষের জন্য। কিন্তু একটি মহল ষড়যন্ত্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককসহ বর্তমান পেনশন ব্যবস্থার আওতায় থাকা অনেককে এই প্রত্যম স্কিমের আওতায় আনতে চাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা এর মধ্যে আসছে না। এতে আলাদা আলাদা স্কিমের কারণে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষকদের বর্তমান সুযোগ সুবিধাকেও খর্ব করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, উচ্চ শিক্ষায় বিনিয়োগ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। তাঁর শিক্ষানীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যে স্বপ্ন, চিন্তাধারা ছিল তাঁর কোনো প্রতিফলন দেখছিনা। বরং শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়ে, বৈষম্য সৃষ্টি করে শিক্ষকদের আরো মর্যাদাহানি করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সময়ে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব ধরণের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে শিক্ষকরা বিরত থাকবেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তারা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাইনা। এটি শিক্ষকতা পেশার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। আমরা জুন মাস পর্যন্ত পরীক্ষা প্রায় গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করে সেটা পুষিয়ে দেবো।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম একটি বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম। এটি বাতিলের দাবিতে আজ তৃতীয় দ্বিতীয় দিনের মতো আমাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ৩০ জুন আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করব। পরীক্ষা ও জরুরি কার্যক্রম এ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করব। তখন আমাদের হলের প্রভোস্ট হলে যাবেন না, কোনো বিভাগের চেয়ারম্যান বিভাগে যাবেন না, ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা ইনস্টিটিউটে যাবেন না। এমনকি যে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন, তারাও দায়িত্ব পালন করবেন না।
এসময় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. মমিন উদ্দীন বলেন, আমাদের শিক্ষকসমাজকে আজকে রাস্তায় নেমে আসার মতো অবস্থা হয়েছে। আমরা এখানে আন্দোলন করছি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, যারা পহেলা জুলাই থেকে শিক্ষক নিয়োগ হবে তাদের জন্য। একজন শিক্ষক হিসেবে যে ৩০ জুন নিয়োগ পাবে সে প্রায় ১ কোটি টাকা পাবে। কিন্তু একদিন পরে যে নিয়োগ পাবে সে এই টাকাটা পাবে না৷ আর পেনশন স্কিমের মাধ্যমে যেটা পাবে সেটাও ৭৫ বছর পর্যন্ত। মানে কেউ ৮০ বছর যদি বাঁচে তাহলে বাকি ৫ বছর উপরওয়ালার উপর ভরসা করতে হবে।
বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন ২০২৪
সর্বজনীন পেনশন স্কিম সংক্রান্ত ‘বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন’ প্রত্যাহার এবং প্রত্যয় স্কিম বাতিল করে পূর্বের পেনশন স্কিম চালু রাখার দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির ব্যানারে শিক্ষকরা কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইন্সটিটিউটের শিক্ষকরা। দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত ভাষা শহীদ রফিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা। এই সময়ে শিক্ষকরা কোনো ধরনের ক্লাস নেয়নি। তবে পরীক্ষাসমূহ এই কর্মসূচির আওতামুক্ত ছিল।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকরা বলেন, বর্তমান পেনশন স্কিম যেটা চালু হচ্ছে, এটা কি আসলেই পেনশন? নাকি কোনো ইন্স্যুরেন্স। বিভিন্ন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীর মতো এখানে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা রেখে পরবর্তীতে নির্দিষ্ট হারে টাকা পাওয়া যাবে। এটা তো একপ্রকার ইন্স্যুরেন্স।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী ফারুক হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বৈষম্যহীন সোনার বাংলা গড়তে চেয়েছেন, সে লক্ষ্যেই বর্তমান সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। তবে সেখানে একটি চক্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশকে নষ্ট করার জন্য পায়তারা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অস্থিতিশীল করতে পরিকল্পিতভাবে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আমরা এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবি করছি। আমরা ক্লাস বর্জন করে রাস্তায় বসবো, কর্মবিরতি পালন করবো এটা আমরা চাই না, কিন্তু পরিকল্পিতভাবে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আমাদের ক্লাসের বাইরে আনা হয়েছে।
এসময় ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. সেলিম বলেন, আমাদের একবারে খাঁদের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে৷ আমরা একটা যৌক্তিক আন্দোলন করছি। সেই দাবির প্রেক্ষিতেই ৩০ জুন পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন হবে।
এবিষয়ে রসায়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম মো. লুৎফর রহমান বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম যখন চালু করা হয়েছিল, তখন চারটি স্কিম ছিল। সেটা ছিল বর্তমান পেনশন স্কিমের বাইরে থাকা মানুষের জন্য। কিন্তু একটি মহল ষড়যন্ত্র করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষককসহ বর্তমান পেনশন ব্যবস্থার আওতায় থাকা অনেককে এই প্রত্যম স্কিমের আওতায় আনতে চাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা এর মধ্যে আসছে না। এতে আলাদা আলাদা স্কিমের কারণে বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে। শিক্ষকদের বর্তমান সুযোগ সুবিধাকেও খর্ব করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, উচ্চ শিক্ষায় বিনিয়োগ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট। তাঁর শিক্ষানীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে যে স্বপ্ন, চিন্তাধারা ছিল তাঁর কোনো প্রতিফলন দেখছিনা। বরং শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়ে, বৈষম্য সৃষ্টি করে শিক্ষকদের আরো মর্যাদাহানি করা হচ্ছে। আমরা দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে আমরা ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই সময়ে ক্লাস, পরীক্ষাসহ সব ধরণের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কাজ থেকে শিক্ষকরা বিরত থাকবেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান। তারা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হোক সেটা আমরা চাইনা। এটি শিক্ষকতা পেশার মর্যাদা রক্ষার আন্দোলন। আমরা জুন মাস পর্যন্ত পরীক্ষা প্রায় গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। এরপর চূড়ান্ত আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য আমরা পরিকল্পনা করে সেটা পুষিয়ে দেবো।
এবিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. শেখ মাশরিক হাসান বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম একটি বৈষম্যমূলক পেনশন স্কিম। এটি বাতিলের দাবিতে আজ তৃতীয় দ্বিতীয় দিনের মতো আমাদের কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ৩০ জুন আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করব। পরীক্ষা ও জরুরি কার্যক্রম এ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। এ সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করব। তখন আমাদের হলের প্রভোস্ট হলে যাবেন না, কোনো বিভাগের চেয়ারম্যান বিভাগে যাবেন না, ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা ইনস্টিটিউটে যাবেন না। এমনকি যে শিক্ষকেরা প্রশাসনিক দায়িত্বে আছেন, তারাও দায়িত্ব পালন করবেন না।
এসময় শিক্ষক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক মো. মমিন উদ্দীন বলেন, আমাদের শিক্ষকসমাজকে আজকে রাস্তায় নেমে আসার মতো অবস্থা হয়েছে। আমরা এখানে আন্দোলন করছি শিক্ষার্থীদের স্বার্থে, যারা পহেলা জুলাই থেকে শিক্ষক নিয়োগ হবে তাদের জন্য। একজন শিক্ষক হিসেবে যে ৩০ জুন নিয়োগ পাবে সে প্রায় ১ কোটি টাকা পাবে। কিন্তু একদিন পরে যে নিয়োগ পাবে সে এই টাকাটা পাবে না৷ আর পেনশন স্কিমের মাধ্যমে যেটা পাবে সেটাও ৭৫ বছর পর্যন্ত। মানে কেউ ৮০ বছর যদি বাঁচে তাহলে বাকি ৫ বছর উপরওয়ালার উপর ভরসা করতে হবে।