alt

শিক্ষা

জবি থেকে উপাচার্য চায় শিক্ষার্থীরা, আলোচনায় কারা?

মো. মেহেদী হাসান, জবি : শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর থেকে শুরু করে প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা অনেকেই পদত্যাগ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য, প্রক্টররিয়াল বডি ও হল প্রভোস্টসহ অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করার লক্ষ্যে খালি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শীঘ্রই পূরণ করার কথা ভাবছে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে ইতোমধ্যে সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। বাইরের কেনো শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে মানতে নারাজ তাঁরা। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশও করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ছয় জন উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। এসব উপাচার্যরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করা, একটিমাত্র ছাত্রী হল ছাড়া আবাসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে বাহিরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে দেখতে চায় না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য হয়ে আসলে তাঁরা একটি বলয়ের মধ্যে পড়ে যান বলে দাবি শিক্ষকদের। তাই নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যতিত অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি কেউ জবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে তাকে ক্যম্পাসের প্রধান ফটক থেকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্যে হওয়ার আলোচনায় আছেন যারা:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে শিক্ষার্থী মহল সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ। ২০১২ সালে তিনি জবিতে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। পরে ২০১৮ সালে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে গ্রেড-১ অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন এই অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলস এন্ড রেগুলেশন প্রণয়ন সদস্য সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

ড. পেয়ার আহমেদ এর আগে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা ক্যাম্পাস), আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ামাগাটা বিশ্ববিদ্যালয় (জাপান) সহ দেশ ও দেশের বাইরে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ক্যাম্পাসে তিনি একজন সুবক্তা, স্পষ্টবাদী, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। দেশী -বিদেশী জার্নালে তাঁর ৪০ টির বেশি গবেষণা পত্র রয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর লেখা কয়েকটি পাঠ্য-পুস্তক রয়েছে।

আরও আলোচনায় আছেন সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)- এর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন। তিনি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজেকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সরব রেখেছেন। জানা যায়, বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের কাছে হেনস্তার শিকারও হয়েছেন একাধিকবার এই শিক্ষক। এমনকি ২০১৪ সালে তাকে অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও কেড়ে নেন মীজানুর রহমান। এর আগে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি ড. রইস একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিইও হিসেবেও সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মানবাধিকার বিষয়ক অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ একাধিক স্বর্ণপদক লাভ করেন অধ্যাপক রইছ উদ্দিন।আমেরিকা,লন্ডন ,প্যারিস ,জেনেভা,কুয়ালালামপুর সহ অসংখ্য দেশের আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি অংশ নেন। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্হায় প্রভোস্ট, প্রক্টর সহ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি একজন গবেষকও বটে।

উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। তিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রুলস রেগুলেশন তৈরিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

এছাড়া উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু মিছির। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্পোরেট ফাইন্যান্সিয়াল পলিসিস-এ পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। এর আগে তিনি ঢাবি থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এছাড়া তার দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন জার্নালে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিকট সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও উদার হিসেবে পরিচিত তিনি।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে জবি সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধি মাসুদ রানা বলেন, এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসকল উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলকৃত হলগুলো উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কোনো উপাচার্য একটি মানসম্পন্ন লাইব্রেরি, গবেষণাগার স্থাপন করতে পারে নাই। এখন আমাদের একটাই দাবি জবি থেকেই উপাচার্য চাই। যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য না দেওয়া হয় তাহলে ছাত্র সমাজ কি করতে পারে আর কি পারেনা তা ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, কাঠামোগত ও গবেষণার দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে উন্নীত হতে পারে নাই, অথচ জবির পরে প্রতিষ্ঠা হয়েও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় উন্নীত হয়েছে। এর একটাই কারণ জবিকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি করে রাখা হয়েছে। এখানে যারা ভিসি হিসেবে নিয়োগ পায় তারা শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করে, সকালে এসে বিকালে যায়। তিনি আরও বলেন, জবি থেকে নেতৃত্ব আসলে তিনি সামগ্রিক বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু বাইরে থেকে আসলে তিন মাস লাগে শুধু পরিবেশ বুঝতে বুঝতে। আর তার মধ্যেই তিনি একটা বলয়ের মধ্যে ঢুকে যায়। পরবর্তীতে সে বলয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করতে গেলে তাঁকে নিজেই চলে যেতে হবে। তাই আমরা জবি থেকেই ভিসি চাই, তাহলে তিনি সামগ্রিক বিষয় বুঝবেন।

এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানেই লক্ষাধিক শিক্ষকের পদ শূন্য

ছবি

স্টাডি ইউকে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ডসের জন্য আবেদন আহ্বান

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপককে পুলিশে দিলেন জবি শিক্ষার্থীরা

পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে ‘বৈষম্যবিরোধী ‘গ্রাফিতি’

ছবি

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অধ্যাপক মনজুর আহমেদের নেতৃত্বে কমিটি করল সরকার

এবার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল

শিক্ষায় বদলি নিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ

ছবি

গুচ্ছভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনদের ক্লাস শুরু ২০ অক্টোবর

ছবি

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা যেভাবে হবে

মাধ্যমিকে এবারও লটারিতে শিক্ষার্থী ভর্তি

ছবি

ইউআইটিএস এ আউটকাম বেজড এডুকেশন বিষয়ক সেমিনার

ছবি

অক্টোবরেই এইচএসসির ফল: অধ্যাপক তপন

ছবি

বিনামূল্যে আইএসডিবি-বিআইএসইডব্লিউ এর আইটি প্রশিক্ষণ

ছবি

পদোন্নতি পেয়ে অধ্যাপক হলেন শিক্ষা ক্যাডারের ৯৯২ জন

বাধ্যতামূলক আইসিটি শিক্ষার ধারা অব্যাহত রাখা অপরিহার্য : প্রকৌশলী মুজিবুর রহমান

ছবি

ছয় বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন উপাচার্য নিয়োগ

ছবি

নিজ শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য পেল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

বাংলাদেশে ব্রিটিশ কাউন্সিলের নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর স্টিফেন ফোর্বস

স্কোপাস-ইনডেক্সড গবেষণা প্রকাশনার জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ড্যাফোডিল দ্বিতীয়

ছবি

ছাত্র আন্দোলনে নিহত শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা দিবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

‘শিক্ষার্থীদের গিনিপিগ বানিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা নষ্ট করা হয়েছে’

একাদশ শ্রেণীতে ক্লাস শুরু হলেও পাঁচটি বইয়ের ‘পাণ্ডুলিপি’ প্রস্তুত হয়নি

ছবি

মাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণিতে বার্ষিক পরীক্ষা ৭০ নম্বরের, ৩০ নম্বর শিখনমূল্যায়ন

ছবি

বিডিকলিং একাডেমিতে নারীদের জন্য ‘অ্যাডভান্স ফটোশপ’ কোর্স

২০২২ সালের ডিগ্রি ৩য় বর্ষের পরীক্ষার ফরম পূরণের সময়বৃদ্ধি

ছবি

পদত্যাগ করলেন ইউজিসি সদস্য আলমগীর

ছবি

মোঃ সবুর খানকে বাংলাদেশ সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্বর্ধনা

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অন-ক্যাম্পাসে ১ম মেধা তালিকা এবং ১ম অপেক্ষমান তালিকায় অন্তর্ভূক্ত শিক্ষার্থীদের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি

ছবি

ঢাবির উপ-উপাচার্য পদ থেকে সরানো হল সামাদকে

ছবি

সচিবালয়ের সামনে শতাধিক ঢাবি শিক্ষার্থী

ছবি

নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নযোগ্য নয়, পরীক্ষাসহ ফিরছে যত নিয়ম

ছবি

মাধ্যমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন, ফিরছে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ

ছবি

উপাচার্য, উপ–উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করবেন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক

ছবি

ক্রমান্বয়ে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার প্রক্রিয়া শুরু হবে : ঢাবি উপাচার্য

ছবি

এ বছর কমনওয়েলথ বৃত্তি পেয়েছেন ২৬ জন বাংলাদেশি

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ

tab

শিক্ষা

জবি থেকে উপাচার্য চায় শিক্ষার্থীরা, আলোচনায় কারা?

মো. মেহেদী হাসান, জবি

শনিবার, ৩১ আগস্ট ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও প্রক্টর থেকে শুরু করে প্রশাসনের দায়িত্বে থাকা অনেকেই পদত্যাগ করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য, প্রক্টররিয়াল বডি ও হল প্রভোস্টসহ অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়কে গতিশীল করার লক্ষ্যে খালি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো শীঘ্রই পূরণ করার কথা ভাবছে নবগঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এদিকে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষকদের মধ্য থেকে উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে ইতোমধ্যে সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা। বাইরের কেনো শিক্ষককে উপাচার্য হিসেবে মানতে নারাজ তাঁরা। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশও করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

২০০৫ সালে জগন্নাথ কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ছয় জন উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। এসব উপাচার্যরা শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত উন্নয়ন না করা, একটিমাত্র ছাত্রী হল ছাড়া আবাসনের কোনো উদ্যোগ না নেওয়ার কারণে বাহিরের কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপাচার্য হিসেবে দেখতে চায় না শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বাইরের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য হয়ে আসলে তাঁরা একটি বলয়ের মধ্যে পড়ে যান বলে দাবি শিক্ষকদের। তাই নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ব্যতিত অন্য কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যদি কেউ জবির উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, তাহলে তাকে ক্যম্পাসের প্রধান ফটক থেকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও হুশিয়ারি দেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্যে হওয়ার আলোচনায় আছেন যারা:

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের থেকে উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে শিক্ষার্থী মহল সহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. পেয়ার আহমেদ। ২০১২ সালে তিনি জবিতে অধ্যাপক পদে যোগদান করেন। পরে ২০১৮ সালে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে গ্রেড-১ অধ্যাপক হিসেবে উন্নীত হন এই অধ্যাপক। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের রুলস এন্ড রেগুলেশন প্রণয়ন সদস্য সহ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

ড. পেয়ার আহমেদ এর আগে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা ক্যাম্পাস), আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইয়ামাগাটা বিশ্ববিদ্যালয় (জাপান) সহ দেশ ও দেশের বাইরে ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। ক্যাম্পাসে তিনি একজন সুবক্তা, স্পষ্টবাদী, সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। দেশী -বিদেশী জার্নালে তাঁর ৪০ টির বেশি গবেষণা পত্র রয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর লেখা কয়েকটি পাঠ্য-পুস্তক রয়েছে।

আরও আলোচনায় আছেন সাদা দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব)- এর যুগ্ম মহাসচিব অধ্যাপক ড. রইছ উদ্দিন। তিনি শিক্ষার্থীদের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজেকে প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে সরব রেখেছেন। জানা যায়, বিরোধী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে সাবেক উপাচার্য ড. মীজানুর রহমানের কাছে হেনস্তার শিকারও হয়েছেন একাধিকবার এই শিক্ষক। এমনকি ২০১৪ সালে তাকে অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্বও কেড়ে নেন মীজানুর রহমান। এর আগে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান, কলা অনুষদের ডিন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি ড. রইস একজন মানবাধিকার কর্মী হিসেবে পরিচিত। তিনি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনের সিইও হিসেবেও সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মানবাধিকার বিষয়ক অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ একাধিক স্বর্ণপদক লাভ করেন অধ্যাপক রইছ উদ্দিন।আমেরিকা,লন্ডন ,প্যারিস ,জেনেভা,কুয়ালালামপুর সহ অসংখ্য দেশের আন্তর্জাতিক সেমিনারে তিনি অংশ নেন। ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অবস্হায় প্রভোস্ট, প্রক্টর সহ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে তিনি দক্ষতার পরিচয় দেন। তিনি একজন গবেষকও বটে।

উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম। তিনি ১৯৮৬ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০০৮ সালে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং সমাজকর্ম বিভাগের চেয়ারম্যান ও সামজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এসময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল রুলস রেগুলেশন তৈরিতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।

এছাড়া উপাচার্য হওয়ার দৌড়ে আলোচনায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবু মিছির। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কর্পোরেট ফাইন্যান্সিয়াল পলিসিস-এ পিএইচডি সম্পন্ন করেছেন। এর আগে তিনি ঢাবি থেকে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। এছাড়া তার দেশ ও দেশের বাইরের বিভিন্ন জার্নালে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের নিকট সৎ, ন্যায়নিষ্ঠ ও উদার হিসেবে পরিচিত তিনি।

নিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য নিয়োগের বিষয়ে জবি সংস্কার আন্দোলনের প্রতিনিধি মাসুদ রানা বলেন, এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেসকল উপাচার্য নিয়োগ পেয়েছিলেন তারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলকৃত হলগুলো উদ্ধারের কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি। কোনো উপাচার্য একটি মানসম্পন্ন লাইব্রেরি, গবেষণাগার স্থাপন করতে পারে নাই। এখন আমাদের একটাই দাবি জবি থেকেই উপাচার্য চাই। যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উপাচার্য না দেওয়া হয় তাহলে ছাত্র সমাজ কি করতে পারে আর কি পারেনা তা ৫ আগস্ট পর্যন্ত দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইন বলেন, কাঠামোগত ও গবেষণার দিক দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানে উন্নীত হতে পারে নাই, অথচ জবির পরে প্রতিষ্ঠা হয়েও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় উন্নীত হয়েছে। এর একটাই কারণ জবিকে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি করে রাখা হয়েছে। এখানে যারা ভিসি হিসেবে নিয়োগ পায় তারা শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করে, সকালে এসে বিকালে যায়। তিনি আরও বলেন, জবি থেকে নেতৃত্ব আসলে তিনি সামগ্রিক বিষয়টি বুঝবেন। কিন্তু বাইরে থেকে আসলে তিন মাস লাগে শুধু পরিবেশ বুঝতে বুঝতে। আর তার মধ্যেই তিনি একটা বলয়ের মধ্যে ঢুকে যায়। পরবর্তীতে সে বলয়ের বাইরে গিয়ে কাজ করতে গেলে তাঁকে নিজেই চলে যেতে হবে। তাই আমরা জবি থেকেই ভিসি চাই, তাহলে তিনি সামগ্রিক বিষয় বুঝবেন।

back to top