alt

শিক্ষা

শিক্ষাবর্ষের বাকি ১৫ দিন

প্রাথমিকের মাত্র ১ কোটি বই উপজেলায় পৌঁছেছে

রাকিব উদ্দিন : মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নতুন শিক্ষাবর্ষের আর বাকি ১৫ দিন। শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয়ার কথা। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপছে সরকার। এরমধ্যে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মাত্র প্রাথমিক স্তরের এক কোটির কিছু বেশি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে।

কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি সোমবার পর্যন্ত ছাপাখানায় গড়ায়নি। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কথা রয়েছে।

অথচ গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মোট বইয়ের অন্তত ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হতো। এর আগের বছরগুলোতেও এই সময়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়ে যেত।

এনসিটিবির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ছাপাখানা মালিকরা ইচ্ছে করে পাঠ্যবই ছাপায় বিলম্ব করছেন। এর আগে তারা নোট-গাইড বই ছেপে ব্যবসা করতে চান। এজন্য তারা এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তিতে সময় নষ্ট করা, অযথা কাগজ সঙ্কট দেখানোসহ নানা টালবাহান করছেন।

পাঠ্যবই ছাপার কাজে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সোমবার সংবাদকে বলেছেন, ‘ছাপাখানা মালিকরা নানা অজুহাতে ডিলে (বিলম্ব) করছেন। বাজারে কাগজের অভাব নেই, অথচ তারা কাগজ সঙ্কটের কথা বলছেন; তারা পাঠ্যবই ছাপতে ডিলে করছেন, অথচ আমরা নিষেধ করার পরও নোট-গাইড বই ছাপাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সহ-সভাপতি জুনায়েদ আল মাহফুজ সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা অহেতুক দেরি করছি, তা ঠিক নয়। এনসিটিবি কাগজের বার্স্টিং-১৬ নির্ধারণ করেছে; কিন্তু বাজারে সেই মাপের কাগজের মূল্য অনেক বেশি। মিলগুলোও সেই মাপের কাগজ উৎপাদন করছে না। তাহলে ব্যবসায়ীরা কী করবে?’

নোট-গাইড বই ছাপার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দু’একজন ছাড়া মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের কেউ নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর এক কোটির মতো বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেছে ছাপাখানা মালিকরা। আরও প্রায় ৪০ লাখের মতো বই ছাপা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপা শুরু হয়নি।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। আর মাদ্রাসার এবতেদায়ি এবং মাধ্যমিক স্তরের মোট দুই কোটি ২৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩১ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপা হচ্ছে।

প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ পাওয়া দু’জন ছাপাখানার মালিক সংবাদকে জানিয়েছেন, ১ জানুয়ারির আগে প্রাথমিকের প্রায় শতভাগ বই ছাপা শেষ হতে পারে। এ কাজে দেরির জন্য তারা দরপত্র আহ্বান, চুক্তি ও কার্যাদেশ প্রদানে এনসিটিবির সময়ক্ষেপনকে দায়ী করছেন।

মুদ্রণ শিল্প সমিতির একজন নেতা জানিয়েছেন, ইন্সস্পেকশন এজেন্ট নিয়োগ না হওয়ায় কার্যাদেশ পেয়েও ছাপাখানা মালিকরা ছাপা শুরু করতে পারেননি।

ইন্সস্পেকশন এজেন্ট (তদারকি প্রতিনিধি) নিয়োগ হয়েছে কী না জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায় ৫৬ শতাংশ মাইনাসে মাধ্যমিকের বইয়ের পিডিআই’র চুক্তি করেছি ব্যুরো ভেরিতাসের সঙ্গে; এটি ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান। পিএলআই’র কাজ দেবো মেশিনটুলস প্রতিষ্ঠানকে।’

গত বছরও প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ মাইনাসে মাধ্যমিক স্তরের পিডিআইয়ের কাজ পেয়েছিল ইনফিনিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ‘তদারকি’ কাজে ‘গাফিলতির’ অভিযোগ ওঠে।

পাঠ্যবই ছাপা থেকে বিতরণ পর্যন্ত এর গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকরি কাজ করার পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ‘ইন্সপেকশন এজেন্ট’ নিয়োগ দেয় এনসিটিবি।

দুই ধাপে এই ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগ দেয় সংস্থাটি। এরমধ্যে বই উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত সব কাজ তদারকের জন্য প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই) ও মাঠপর্যায়ে বই সরবরাহের পর পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) বইয়ের গুণগত মান যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠায় এনসিটিবিতে।

সাধারণত প্রাথমিক স্তরে বইয়ের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য পিডিআই ও পিএলআই একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়। মাধ্যমিক স্তরে দুই ধাপের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়।

ওপেন টেন্ডার পদ্ধতিতে (ওটিএম) ইন্সস্পেকশন এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়োগ দেয়া হয়। এনসিটিবির প্রাক্কলিত দরের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়।

এজেন্টগুলো গ্লজ টেস্টার, স্টিফনেস টেস্টার, বার্স্টিং স্ট্রেংথ টেস্টার ইত্যাদি মেশিনের মাধ্যমে বইয়ের গুণগত মান যাচাই করে থাকে।

অনেক সময় ছাপাখানা মালিক এবং কাগজ মিল মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকমত কাগজ পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই এনসিটিবিতে প্রতিবেদন জমা দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘কাজ পেতে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাক্কলিত দরপত্রের অর্ধেকেরও কম টাকায় কাজ পেতে চাই। প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানই এভাবে কাজ পেতে চাই। এজন্য আমরা আগামীতে সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠান মেশিনটুলস দিয়ে কাজ করাব।’

ব্যুরো ভেরিতাসের কাজ পাওয়া নিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান বলেন, ৯০ শতাংশের নিচে দর দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে বইয়ের মান যাচাই আদৌ সম্ভব? প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানগুলো এমন দর দিয়ে কাজ নেয়, তারপর প্রেসগুলো থেকে সুবিধা আদায় করে। এগুলো আর করতে দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে জুনায়েদ আল মাহফুজ বলেন, ‘দুই কোটি টাকার ইন্সস্পেকশন কাজ যে প্রতিষ্ঠান ৫/৬ লাখ টাকায় করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য সর্ম্পকে সবাই জানে। তারা প্রিন্টার্সদের কাজ থেকে সুবিধা নেবেই। এসব বিষয়ে এনসিটিবি ব্যবস্থা নিতে পারে।’

এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট চার কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৩৯১ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৪০ কোটি দশ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮ কপি বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের দুই কোটি ১৪ লাখ ২১ হাজার ২১১ জন্য শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ তিন হাজার ৬০৬ কপি বই।

আর মাধ্যমিক স্তরের দুই কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ১৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এরমধ্যে মাদ্রাসার এবতেদায়ি স্তরের বইও রয়েছে।

এবার এমনিতেই শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে পান্ডুলিপির পরিমার্জন ও সংশোধন এবং সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে পাঠ্যবই ছাপার নানা প্রক্রিয়া অনুমোদনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

নতুন করে টেন্ডার বা দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। প্রাথমিকের মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ২৮টি লটের পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্রের শর্তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব কারণে এনসিটিবি যথাসময়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি।

ছবি

৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ

ছবি

২০ জনকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠাল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

অভিবাসীদের দক্ষতা উন্নয়নে আমি প্রবাসী ও শিখো

ছবি

স্কুলে ভর্তির ফল প্রকাশ,‌ জানবেন যেভাবে

ছবি

আইডাব্লিউএস অনলাইন স্কুলে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০% পর্যন্ত স্কলারশিপ

ছবি

বাউবি প্রকাশ করেছে ২০২৪ সালের এইচএসসি (নিশ-১) পরীক্ষার ফলাফল

ছবি

টেকসই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বাংলাদেশের মধ্যে সেরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি

ছবি

অবসর প্রদানের ক্ষেত্রে সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও বলবৎ হবে

পাঠ্যপুস্তক ছাপা ও শিক্ষাক্রমের ওপর ‘শে^তপত্র’ প্রকাশ: বই ছাপায় অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য পায়নি এনসিটিবি

ছবি

টিএমজিবি সদস্যদের সন্তানদের মাঝে শিক্ষাবৃত্তি ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ

ছবি

২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা ১০ এপ্রিল শুরু, রুটিন প্রকাশ

ছবি

র‌্যাগিংয়ের দায়ে চুয়েটের ১১ শিক্ষার্থী ছয় মাসের জন্য বহিষ্কার

ইএফটিতে শিক্ষকদের এমপিও প্রক্রিয়ায় জটিলতা

ছবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসন সংকটে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের অস্থায়ী সমাধান

ছবি

স্কুলে ভর্তির ‘ভাগ্য নির্ধারণ’ ১৭ ডিসেম্বর, মাউশির বিজ্ঞপ্তি

ছবি

৮৫ শতাংশ উপস্থিতি ছাড়া প্রাথমিকে উপবৃত্তি নয়

ছবি

১১তম বেলটা আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ স্থগিত আদেশ বহাল

ছবি

প্রাথমিকে শরীরচর্চা, সংগীত, চারুকলার শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ: উপদেষ্টা

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েটদের বেকারত্ব ২৮ শতাংশ

ছবি

আইসিপিসি ঢাকা রিজিওনাল ২০২৪ এ চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

স্কুলে ভর্তির লটারির তারিখ পরিবর্তন করে ১৭ ডিসেম্বর

মাধ্যমিকের ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ এখনও শুরু হয়নি

ছবি

ব্যাটেল অব মাইন্ডস ২০২৪ এর বিজয়ী বিইউপি’র টিম পারডন আস, কামিং থ্রু

ছবি

৬৫ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর ‘টপ ইন দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড’ অর্জন

ছবি

প্রকৌশল গুচ্ছ ভাঙছে, চুয়েটও ভর্তি পরীক্ষা নেবে এককভাবে

ছবি

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা : অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

ছবি

ঢাকা কলেজগুলোতে উত্তেজনা নিরসনে বৈঠকের আহ্বান, কিন্তু দুই অধ্যক্ষের অনীহা

ছবি

ডিআইইউ এর সাথে বিশ্বের ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর

জেসিআই ওয়ার্ল্ড ডিবেটিং চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জয় করলো জেসিআই বাংলাদেশ ডিবেটিং দল

সোহরাওয়ার্দী কলেজ দুইদিন ও কবি নজরুল একদিন বন্ধ ঘোষণা

ছবি

সাত কলেজের মঙ্গলবারের পরীক্ষা স্থগিত

ছবি

ঘন কুয়াশায় ঢাকা কুড়িগ্রাম, তাপমাত্রা ১৫.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস

শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চিত ৭ হাজার শিক্ষক

ছবি

বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন ইএফটিতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত

ছবি

বাংলাদেশে আইডাব্লিউএস অনলাইন স্কুল

tab

শিক্ষা

শিক্ষাবর্ষের বাকি ১৫ দিন

প্রাথমিকের মাত্র ১ কোটি বই উপজেলায় পৌঁছেছে

রাকিব উদ্দিন

মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪

নতুন শিক্ষাবর্ষের আর বাকি ১৫ দিন। শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেয়ার কথা। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৪০ কোটি বই ছাপছে সরকার। এরমধ্যে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মাত্র প্রাথমিক স্তরের এক কোটির কিছু বেশি বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে।

কিন্তু মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের পাঠ্যবইয়ের পাণ্ডুলিপি সোমবার পর্যন্ত ছাপাখানায় গড়ায়নি। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কথা রয়েছে।

অথচ গত বছর ডিসেম্বরের মাঝামাঝিতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের মোট বইয়ের অন্তত ৫৫ থেকে ৬০ শতাংশ বই উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছে দেয়া হতো। এর আগের বছরগুলোতেও এই সময়ে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়ে যেত।

এনসিটিবির কর্মকর্তাদের অভিযোগ, ছাপাখানা মালিকরা ইচ্ছে করে পাঠ্যবই ছাপায় বিলম্ব করছেন। এর আগে তারা নোট-গাইড বই ছেপে ব্যবসা করতে চান। এজন্য তারা এনসিটিবির সঙ্গে চুক্তিতে সময় নষ্ট করা, অযথা কাগজ সঙ্কট দেখানোসহ নানা টালবাহান করছেন।

পাঠ্যবই ছাপার কাজে বিলম্ব হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সোমবার সংবাদকে বলেছেন, ‘ছাপাখানা মালিকরা নানা অজুহাতে ডিলে (বিলম্ব) করছেন। বাজারে কাগজের অভাব নেই, অথচ তারা কাগজ সঙ্কটের কথা বলছেন; তারা পাঠ্যবই ছাপতে ডিলে করছেন, অথচ আমরা নিষেধ করার পরও নোট-গাইড বই ছাপাচ্ছেন।’

এ বিষয়ে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সহ-সভাপতি জুনায়েদ আল মাহফুজ সংবাদকে বলেছেন, ‘আমরা অহেতুক দেরি করছি, তা ঠিক নয়। এনসিটিবি কাগজের বার্স্টিং-১৬ নির্ধারণ করেছে; কিন্তু বাজারে সেই মাপের কাগজের মূল্য অনেক বেশি। মিলগুলোও সেই মাপের কাগজ উৎপাদন করছে না। তাহলে ব্যবসায়ীরা কী করবে?’

নোট-গাইড বই ছাপার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দু’একজন ছাড়া মুদ্রণ ব্যবসায়ীদের কেউ নোট-গাইড বইয়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়।’

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) থেকে জানা গেছে, সোমবার পর্যন্ত প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণীর এক কোটির মতো বই উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেছে ছাপাখানা মালিকরা। আরও প্রায় ৪০ লাখের মতো বই ছাপা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপা শুরু হয়নি।

২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ৯ কোটি ৩৮ লাখ পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। আর মাদ্রাসার এবতেদায়ি এবং মাধ্যমিক স্তরের মোট দুই কোটি ২৪ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য প্রায় ৩১ কোটি ১৬ লাখ বই ছাপা হচ্ছে।

প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ পাওয়া দু’জন ছাপাখানার মালিক সংবাদকে জানিয়েছেন, ১ জানুয়ারির আগে প্রাথমিকের প্রায় শতভাগ বই ছাপা শেষ হতে পারে। এ কাজে দেরির জন্য তারা দরপত্র আহ্বান, চুক্তি ও কার্যাদেশ প্রদানে এনসিটিবির সময়ক্ষেপনকে দায়ী করছেন।

মুদ্রণ শিল্প সমিতির একজন নেতা জানিয়েছেন, ইন্সস্পেকশন এজেন্ট নিয়োগ না হওয়ায় কার্যাদেশ পেয়েও ছাপাখানা মালিকরা ছাপা শুরু করতে পারেননি।

ইন্সস্পেকশন এজেন্ট (তদারকি প্রতিনিধি) নিয়োগ হয়েছে কী না জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘প্রায় ৫৬ শতাংশ মাইনাসে মাধ্যমিকের বইয়ের পিডিআই’র চুক্তি করেছি ব্যুরো ভেরিতাসের সঙ্গে; এটি ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠান। পিএলআই’র কাজ দেবো মেশিনটুলস প্রতিষ্ঠানকে।’

গত বছরও প্রাক্কলিত দরের চেয়ে প্রায় ৯৭ দশমিক ৪ শতাংশ মাইনাসে মাধ্যমিক স্তরের পিডিআইয়ের কাজ পেয়েছিল ইনফিনিটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান। পরে এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ‘তদারকি’ কাজে ‘গাফিলতির’ অভিযোগ ওঠে।

পাঠ্যবই ছাপা থেকে বিতরণ পর্যন্ত এর গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য নিজস্ব কর্মকর্তাদের মাধ্যমে তদারকরি কাজ করার পাশাপাশি তৃতীয় পক্ষ হিসেবে ‘ইন্সপেকশন এজেন্ট’ নিয়োগ দেয় এনসিটিবি।

দুই ধাপে এই ইন্সপেকশন এজেন্ট নিয়োগ দেয় সংস্থাটি। এরমধ্যে বই উৎপাদন থেকে বিতরণ পর্যন্ত সব কাজ তদারকের জন্য প্রি-ডেলিভারি ইন্সপেকশন (পিডিআই) ও মাঠপর্যায়ে বই সরবরাহের পর পোস্ট ল্যান্ডিং ইন্সপেকশন (পিএলআই) বইয়ের গুণগত মান যাচাই করে প্রতিবেদন পাঠায় এনসিটিবিতে।

সাধারণত প্রাথমিক স্তরে বইয়ের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য পিডিআই ও পিএলআই একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করা হয়। মাধ্যমিক স্তরে দুই ধাপের জন্য দুটি প্রতিষ্ঠানকে তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়।

ওপেন টেন্ডার পদ্ধতিতে (ওটিএম) ইন্সস্পেকশন এজেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়োগ দেয়া হয়। এনসিটিবির প্রাক্কলিত দরের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান কাজ পাওয়ার জন্য মনোনীত হয়।

এজেন্টগুলো গ্লজ টেস্টার, স্টিফনেস টেস্টার, বার্স্টিং স্ট্রেংথ টেস্টার ইত্যাদি মেশিনের মাধ্যমে বইয়ের গুণগত মান যাচাই করে থাকে।

অনেক সময় ছাপাখানা মালিক এবং কাগজ মিল মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে ঠিকমত কাগজ পরীক্ষা নিরীক্ষা না করেই এনসিটিবিতে প্রতিবেদন জমা দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ড. একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘কাজ পেতে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রাক্কলিত দরপত্রের অর্ধেকেরও কম টাকায় কাজ পেতে চাই। প্রায় সবকটি প্রতিষ্ঠানই এভাবে কাজ পেতে চাই। এজন্য আমরা আগামীতে সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠান মেশিনটুলস দিয়ে কাজ করাব।’

ব্যুরো ভেরিতাসের কাজ পাওয়া নিয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান বলেন, ৯০ শতাংশের নিচে দর দেয়া প্রতিষ্ঠানগুলো দিয়ে বইয়ের মান যাচাই আদৌ সম্ভব? প্রতিবছর প্রতিষ্ঠানগুলো এমন দর দিয়ে কাজ নেয়, তারপর প্রেসগুলো থেকে সুবিধা আদায় করে। এগুলো আর করতে দেয়া হবে না।

এ বিষয়ে জুনায়েদ আল মাহফুজ বলেন, ‘দুই কোটি টাকার ইন্সস্পেকশন কাজ যে প্রতিষ্ঠান ৫/৬ লাখ টাকায় করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য সর্ম্পকে সবাই জানে। তারা প্রিন্টার্সদের কাজ থেকে সুবিধা নেবেই। এসব বিষয়ে এনসিটিবি ব্যবস্থা নিতে পারে।’

এনসিটিবি জানিয়েছে, আগামী ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট চার কোটি ৪৮ লাখ ৪০ হাজার ৩৯১ শিক্ষার্থীর জন্য মোট ৪০ কোটি দশ লাখ ৩৪ হাজার ৫৮ কপি বই ছাপার কাজ শুরু হয়েছে। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরের দুই কোটি ১৪ লাখ ২১ হাজার ২১১ জন্য শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৯ কোটি ৩৮ লাখ তিন হাজার ৬০৬ কপি বই।

আর মাধ্যমিক স্তরের দুই কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ১৮০ জন শিক্ষার্থীর জন্য ছাপা হচ্ছে ৩০ কোটি ৯৬ লাখ ১২ হাজার ৮৪৭ কপি বই। এরমধ্যে মাদ্রাসার এবতেদায়ি স্তরের বইও রয়েছে।

এবার এমনিতেই শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে পান্ডুলিপির পরিমার্জন ও সংশোধন এবং সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে পাঠ্যবই ছাপার নানা প্রক্রিয়া অনুমোদনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।

নতুন করে টেন্ডার বা দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। প্রাথমিকের মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ২৮টি লটের পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্রের শর্তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব কারণে এনসিটিবি যথাসময়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি।

back to top