জানুয়ারির ১৩ দিন চলে গেছে। এখনও দেশের সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই হাতে পায়নি। মার্চের আগে সবশিক্ষার্থীর হাতে বই পৌছানো সম্ভব হবে না বলে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের ধারণা। তারা এই অবস্থার জন্য ছাপাখানা ও কাগজ মিল মালিকদের ‘সিন্ডিকেটকে’ দায়ী করছেন।
এনসিটিবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, কয়েকটি ছাপাখানার মালিক ‘সক্ষমতার’ চেয়ে বেশি কাজ নিয়েছেন। কাগজ মিল মালিকরাও একইভাবে বেশি কাগজ সরবরাহের চুক্তি করেছেন; কিন্তু সেই অনুযায়ী ছাপাখানাগুলোকে কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না মিলগুলো।
যদিও ছাপাখানা মালিকরা বলছেন, হঠাৎ কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, কাগজের উৎপাদন স্বল্পতা, দেশের কাগজ মিলগুলোর সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়ে দরপত্রে কাগজের ‘স্পেসিফিকেশন’ নির্ধারণের কারণেই বই ছাপার কাজ ‘ধীরগতিতে’ এগুচ্ছে।
শিক্ষাবর্ষের ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও সারাদেশে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত সারাদেশে মাত্র ১২ কোটি বই বিতরণ করতে পেরেছে এনসিটিবি।
আর চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই এবং শিক্ষকদের জন্য ছাপা প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপা হচ্ছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন শিক্ষার্থী ধরে নিয়ে পাঠ্যবই ছাপছে এনসিটিবি।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সোমবার সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘এবার ১১৬টি প্রেস (ছাপাখানা) পাঠ্যবই ছাপছে। আমরা যখন দরপত্র আহ্বান করি, তখন প্রিন্টার্সরা (ছাপাখানা মালিক) বলেছিল- তারা দৈনিক এক কোটি ৪২ লাখ বই ছাপাতে পারবেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা দৈনিক ১৫ থেকে ২০ লাখ বই ছাপতে পারছেন।’
প্রেসগুলো তাদের ‘সক্ষমতা প্রদর্শন’ করছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা কাগজের দাম বেড়ে যাওয়া ও আর্ট কার্ড (বইয়ের মলাটের কাগজ) সঙ্কট এবং ব্যাংকের সমস্যার (ঋণ পাওয়া) কথা বলছেন। আসলে বাজারে এগুলোর কোনো সঙ্কট নেই। দামও খুব বেশি বাড়েনি। ব্যাংকের সমস্যাও আমরা সমাধান করে দিচ্ছি। কারণ তারা বিতর্কিত ব্যাংকগুলো থেকে টাকা পাওয়ার চেষ্টা করেছিল।’
ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘যারা পাঠ্যবই ছাপার কাজ নিয়েছে, তারাই আবার নোট-গাইড ছাপছেন, কাগজ-কালির ব্যবসা করছেন। একসঙ্গে তারা অনেক বেশি কাজ নিয়েছেন। তাছাড়া আমরা বই ছাপার জন্য তাদের যে টাকা দিচ্ছি, তাতে প্রতি টন কাগজ এক লাখ ৪৮ হাজার টাকায় কিনলেও তাদের লাভ হয়।’
তবে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান সংবাদকে বলেছেন, ‘যারা নোট-গাইড ছাপছে তাদের ধরছে না কেন এনসিটিবি? এটাতো তাদেরই কাজ। আর বর্তমানে প্রতি টন কাগজের দাম এক লাখ ৩৮ হাজার টাকার মতো। এর সঙ্গে ট্যাক্স-ভ্যাট আছে, ব্যাংক লোনের সুদ আছে; এই খরচ কে দেবে?’
প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশিতে কাজ
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ১০/১৫ শতাংশ কমে বই ছাপার কাজ নিতো ছাপাখানাগুলো। কিন্তু এবার কিছু দরপত্রে এনসিটিবির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি ব্যয়েও প্রেসগুলোকে কাজ দেয়া হয়েছে। আবার মোট কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়েছে ৩৬টি প্রেস। এই প্রেসগুলোকে নিয়মিত তদারকি করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এবার ক্ষেত্রবিশেষ প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ পার্সেন্ট বেশিতে প্রেসগুলোকে কাজ দিয়েছি। এতে আমাদের প্রায় ৮৭ কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এরপরও তারা বই নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা করছে।’
আর্ট কার্ড আমদানির উদ্যোগ
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, বাজারে আর্ট কার্ডের সঙ্কট রয়েছে। প্রিন্টার্সরাও একই দাবি করছেন। সেজন্য বিদেশ থেকে আর্ট কার্ড আমদানির জন্য প্রিন্টার্সদের সহযোগিতা করছে এনসিটিবি।
এ বিষয়ে রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘প্রয়োজনেই বিদেশ থেকে আর্ট কার্ড আমদানি করা হচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সব ধরণের সহায়তা করছি। কিন্তু বইয়ের মানের সঙ্গে কোনো আপোস করা হবে না।’
এ বিষয়ে তোফায়েল খান বলেন, ‘বাজারে সঙ্কট আছে বলেই তো আর্ট কার্ড আমদানি করতে আমাদের সহায়তা করছে এনসিটিবি। দুই ধাপে আর্ট কার্ড আমদানি হচ্ছে। প্রথম ধাপের আর্ট কার্ড জানুয়ারির শেষ নাগাদ দেশে পৌছাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আসবে। এরপর আমরা বই দিতে পারব।’
অগ্রাধিকারের বই
প্রথম থেকে পঞ্চম এবং দশম শ্রেণীর সব বই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে পৌছে দেয়ার হবে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তারা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই তিন শ্রেণীর সব বই ছাপা শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই কাজে আরও দু’তিনদিন সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
নিম্নমানের বই কর্তন
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার অভিযোগে এবার অন্তত ৭/৮টি প্রেসের প্রায় তিন লাখের মতো বই কর্তন বা ধ্বংস করা হয়েছে।
এর মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এনসিটিবির একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল বাদশা মিয়া রোডে ‘সরকার প্রেসে’ অভিযান চালিয়ে ‘নিম্নমানের’ কাগজে বই ছাপার ‘সত্যতা’ পায়। এরপর ‘অনুমোদনহীন নিম্নমানের কাগজে মুদ্রণকৃত তৃতীয় শ্রেণীর ২০ হাজার বই ও দশ লাখ ফর্মা ছাপা কাগজ কেটে ধ্বংস করা হয়।
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিম্নমানের কাগজে মুদ্রণের আভিযোগে আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রেসের আড়াই থেকে তিন লাখের বই কেটে ফেলেছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা বেশি টাকা দিয়ে নিম্নমানের বই ছাপতে দেব না।’
৪৪১টি বই পরিমার্জন
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এবার শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে পান্ডুলিপির পরিমার্জন ও সংশোধন এবং সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে পাঠ্যবই ছাপার নানা প্রক্রিয়া অনুমোদনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
নতুন করে টেন্ডার বা দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। প্রাথমিকের মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ২৮টি লটের পুণরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্রের শর্তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব কারণে এনসিটিবি যথাসময়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছি। এর মধ্যে ৪/৫টি মেজর সমস্যা পেয়েছি, সেগুলো সমাধান করেছি।’
ফেব্রুয়ারিতেই সবাই বই পাবে-শিক্ষা উপদেষ্টা
ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি সোমবার পরিকল্পনা কমিশনে ‘এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব)’ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় ইরাব সভাপতি আকতারুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুছা মল্লিক, দপ্তর সম্পাদক রুম্মান তূর্য, কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল হাই তুহিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমদিকে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। পাঠ্যবই নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা বলেছিলেন ‘সব বই নির্ধারিত সময়েই পাবে’। কিন্তু পরে শেষদিকে দেখলাম পাঠ্যবই হাতে পৌঁছে দিতে এখনও অনেক কাজ বাকি।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা আর্ট পেপার পাচ্ছিলাম না। কাগজের সংকটও ছিল। পরে ছাত্র প্রতিনিধি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের সহায়তায় আর্ট পেপারের সমস্যাটা সমাধান হয়েছে।’
কিছু আর্ট পেপার ঘাটতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘(আর্ট পেপার নিয়ে) বিদেশ থেকে জাহাজ রওনা হয়ে গেছে। আশা করছি, জানুয়ারির শেষদিকে জাহাজ এসে পৌঁছাবে।’
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
জানুয়ারির ১৩ দিন চলে গেছে। এখনও দেশের সব শিক্ষার্থী পাঠ্যবই হাতে পায়নি। মার্চের আগে সবশিক্ষার্থীর হাতে বই পৌছানো সম্ভব হবে না বলে এনসিটিবির কর্মকর্তাদের ধারণা। তারা এই অবস্থার জন্য ছাপাখানা ও কাগজ মিল মালিকদের ‘সিন্ডিকেটকে’ দায়ী করছেন।
এনসিটিবির শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, কয়েকটি ছাপাখানার মালিক ‘সক্ষমতার’ চেয়ে বেশি কাজ নিয়েছেন। কাগজ মিল মালিকরাও একইভাবে বেশি কাগজ সরবরাহের চুক্তি করেছেন; কিন্তু সেই অনুযায়ী ছাপাখানাগুলোকে কাগজ সরবরাহ করতে পারছে না মিলগুলো।
যদিও ছাপাখানা মালিকরা বলছেন, হঠাৎ কাগজের দাম বৃদ্ধি পাওয়া, কাগজের উৎপাদন স্বল্পতা, দেশের কাগজ মিলগুলোর সক্ষমতা বিবেচনায় না নিয়ে দরপত্রে কাগজের ‘স্পেসিফিকেশন’ নির্ধারণের কারণেই বই ছাপার কাজ ‘ধীরগতিতে’ এগুচ্ছে।
শিক্ষাবর্ষের ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও সারাদেশে সোমবার (১৩ জানুয়ারি) পর্যন্ত সারাদেশে মাত্র ১২ কোটি বই বিতরণ করতে পেরেছে এনসিটিবি।
আর চলতি ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য মোট ৪০ কোটি ১৫ লাখ ৬৭ হাজার ২০২ কপি বই ছাপছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এ ছাড়া দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য সাড়ে আট হাজারের বেশি ব্রেইল বই এবং শিক্ষকদের জন্য ছাপা প্রায় ৪১ লাখ সহায়িকা বই ছাপা হচ্ছে।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট চার কোটি ৩৪ লাখ তিন হাজার ২৮৩ জন শিক্ষার্থী ধরে নিয়ে পাঠ্যবই ছাপছে এনসিটিবি।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সোমবার সংবাদকে জানিয়েছেন, ‘এবার ১১৬টি প্রেস (ছাপাখানা) পাঠ্যবই ছাপছে। আমরা যখন দরপত্র আহ্বান করি, তখন প্রিন্টার্সরা (ছাপাখানা মালিক) বলেছিল- তারা দৈনিক এক কোটি ৪২ লাখ বই ছাপাতে পারবেন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, তারা দৈনিক ১৫ থেকে ২০ লাখ বই ছাপতে পারছেন।’
প্রেসগুলো তাদের ‘সক্ষমতা প্রদর্শন’ করছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘তারা কাগজের দাম বেড়ে যাওয়া ও আর্ট কার্ড (বইয়ের মলাটের কাগজ) সঙ্কট এবং ব্যাংকের সমস্যার (ঋণ পাওয়া) কথা বলছেন। আসলে বাজারে এগুলোর কোনো সঙ্কট নেই। দামও খুব বেশি বাড়েনি। ব্যাংকের সমস্যাও আমরা সমাধান করে দিচ্ছি। কারণ তারা বিতর্কিত ব্যাংকগুলো থেকে টাকা পাওয়ার চেষ্টা করেছিল।’
ড. রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘যারা পাঠ্যবই ছাপার কাজ নিয়েছে, তারাই আবার নোট-গাইড ছাপছেন, কাগজ-কালির ব্যবসা করছেন। একসঙ্গে তারা অনেক বেশি কাজ নিয়েছেন। তাছাড়া আমরা বই ছাপার জন্য তাদের যে টাকা দিচ্ছি, তাতে প্রতি টন কাগজ এক লাখ ৪৮ হাজার টাকায় কিনলেও তাদের লাভ হয়।’
তবে মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খান সংবাদকে বলেছেন, ‘যারা নোট-গাইড ছাপছে তাদের ধরছে না কেন এনসিটিবি? এটাতো তাদেরই কাজ। আর বর্তমানে প্রতি টন কাগজের দাম এক লাখ ৩৮ হাজার টাকার মতো। এর সঙ্গে ট্যাক্স-ভ্যাট আছে, ব্যাংক লোনের সুদ আছে; এই খরচ কে দেবে?’
প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশিতে কাজ
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, বিগত সময়ে প্রাক্কলিত ব্যয়ের চেয়ে ১০/১৫ শতাংশ কমে বই ছাপার কাজ নিতো ছাপাখানাগুলো। কিন্তু এবার কিছু দরপত্রে এনসিটিবির প্রাক্কলিত দরের চেয়ে অন্তত ২০ শতাংশ বেশি ব্যয়েও প্রেসগুলোকে কাজ দেয়া হয়েছে। আবার মোট কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ নিয়েছে ৩৬টি প্রেস। এই প্রেসগুলোকে নিয়মিত তদারকি করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে একেএম রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘এবার ক্ষেত্রবিশেষ প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ২০ পার্সেন্ট বেশিতে প্রেসগুলোকে কাজ দিয়েছি। এতে আমাদের প্রায় ৮৭ কোটি টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এরপরও তারা বই নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার চেষ্টা করছে।’
আর্ট কার্ড আমদানির উদ্যোগ
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, বাজারে আর্ট কার্ডের সঙ্কট রয়েছে। প্রিন্টার্সরাও একই দাবি করছেন। সেজন্য বিদেশ থেকে আর্ট কার্ড আমদানির জন্য প্রিন্টার্সদের সহযোগিতা করছে এনসিটিবি।
এ বিষয়ে রিয়াজুল হাসান বলেন, ‘প্রয়োজনেই বিদেশ থেকে আর্ট কার্ড আমদানি করা হচ্ছে। আমরা ব্যবসায়ীদের সব ধরণের সহায়তা করছি। কিন্তু বইয়ের মানের সঙ্গে কোনো আপোস করা হবে না।’
এ বিষয়ে তোফায়েল খান বলেন, ‘বাজারে সঙ্কট আছে বলেই তো আর্ট কার্ড আমদানি করতে আমাদের সহায়তা করছে এনসিটিবি। দুই ধাপে আর্ট কার্ড আমদানি হচ্ছে। প্রথম ধাপের আর্ট কার্ড জানুয়ারির শেষ নাগাদ দেশে পৌছাবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে আসবে। এরপর আমরা বই দিতে পারব।’
অগ্রাধিকারের বই
প্রথম থেকে পঞ্চম এবং দশম শ্রেণীর সব বই আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সারাদেশে পৌছে দেয়ার হবে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, তারা ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এই তিন শ্রেণীর সব বই ছাপা শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই কাজে আরও দু’তিনদিন সময় লাগতে পারে বলে তিনি জানান।
নিম্নমানের বই কর্তন
এনসিটিবি থেকে জানা গেছে, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপার অভিযোগে এবার অন্তত ৭/৮টি প্রেসের প্রায় তিন লাখের মতো বই কর্তন বা ধ্বংস করা হয়েছে।
এর মধ্যে একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে এনসিটিবির একটি বিশেষজ্ঞ দল গত ১২ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার মাতুয়াইল বাদশা মিয়া রোডে ‘সরকার প্রেসে’ অভিযান চালিয়ে ‘নিম্নমানের’ কাগজে বই ছাপার ‘সত্যতা’ পায়। এরপর ‘অনুমোদনহীন নিম্নমানের কাগজে মুদ্রণকৃত তৃতীয় শ্রেণীর ২০ হাজার বই ও দশ লাখ ফর্মা ছাপা কাগজ কেটে ধ্বংস করা হয়।
এ বিষয়ে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিম্নমানের কাগজে মুদ্রণের আভিযোগে আমরা ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রেসের আড়াই থেকে তিন লাখের বই কেটে ফেলেছি। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমরা বেশি টাকা দিয়ে নিম্নমানের বই ছাপতে দেব না।’
৪৪১টি বই পরিমার্জন
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এবার শিক্ষাবর্ষের শেষ দিকে নতুন শিক্ষাক্রম বাতিল করে ২০১২ সালের শিক্ষাক্রমের বই ছাপার উদ্যোগ নেয়া হয়। একই সঙ্গে পান্ডুলিপির পরিমার্জন ও সংশোধন এবং সরকার পরিবর্তনের পর প্রশাসনে রদবদলের কারণে পাঠ্যবই ছাপার নানা প্রক্রিয়া অনুমোদনে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে।
নতুন করে টেন্ডার বা দরপত্র আহ্বান করতে হয়েছে। প্রাথমিকের মোট ৯৮টি লটের মধ্যে ২৮টি লটের পুণরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। দরপত্রের শর্তেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। এসব কারণে এনসিটিবি যথাসময়ে সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেনি।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা ৪৪১টি বই পরিমার্জন করেছি। এর মধ্যে ৪/৫টি মেজর সমস্যা পেয়েছি, সেগুলো সমাধান করেছি।’
ফেব্রুয়ারিতেই সবাই বই পাবে-শিক্ষা উপদেষ্টা
ফেব্রুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীরা সব পাঠ্যবই হাতে পাবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তিনি সোমবার পরিকল্পনা কমিশনে ‘এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইরাব)’ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে এ কথা বলেন তিনি।
এ সময় ইরাব সভাপতি আকতারুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক সেলিম আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুছা মল্লিক, দপ্তর সম্পাদক রুম্মান তূর্য, কার্যনির্বাহী সদস্য আবদুল হাই তুহিনসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমদিকে আমি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। পাঠ্যবই নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা বলেছিলেন ‘সব বই নির্ধারিত সময়েই পাবে’। কিন্তু পরে শেষদিকে দেখলাম পাঠ্যবই হাতে পৌঁছে দিতে এখনও অনেক কাজ বাকি।’
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আরও বলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা আর্ট পেপার পাচ্ছিলাম না। কাগজের সংকটও ছিল। পরে ছাত্র প্রতিনিধি, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্যদের সহায়তায় আর্ট পেপারের সমস্যাটা সমাধান হয়েছে।’
কিছু আর্ট পেপার ঘাটতি আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘(আর্ট পেপার নিয়ে) বিদেশ থেকে জাহাজ রওনা হয়ে গেছে। আশা করছি, জানুয়ারির শেষদিকে জাহাজ এসে পৌঁছাবে।’