পাঠ্যপুস্তকের চিত্রকর্ম সংশোধন নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক, একদিনে একই সময়ে কর্মসূচি দুই পক্ষের
পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ যুক্ত চিত্রকর্ম বাতিল ও বহালের দাবিতে দুইটি শিক্ষার্থী সংগঠন একই দিনে, একই সময়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন বুধবার সকাল ১১টায় এনসিটিবি ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে। একই সময়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের একটি সংগঠনও ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা একটি চিত্রকর্ম নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই চিত্রকর্মে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং আদিবাসী শব্দগুলো লেখা ছিল। পাশে লেখা ছিল, ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ।’
গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ ব্যানারে এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে বইটির অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’র পক্ষ থেকে সংগঠনের সংগঠক আলিক মৃ বলেছেন, “আদিবাসী শব্দ যুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা বুধবার এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করব। এটি একটি অন্যায় সিদ্ধান্ত, যা আদিবাসী পরিচিতি মুছে দেওয়ার শামিল। এর প্রতিবাদে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চিত্রকর্ম এঁকেছি।”
অন্যদিকে, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া জানিয়েছেন, “আমরা পাঁচ দফা দাবি দিয়েছিলাম। এর মধ্যে পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠার রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো আমাদের অন্যান্য দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, চিত্রকর্মের পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহাকে অপসারণ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন।”
তিনি আরও বলেন, “রাখাল রাহার কারণেই এই বিতর্কিত চিত্রকর্ম বইয়ে যুক্ত হয়েছিল। এছাড়া পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়েছে। এনসিটিবি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল দাবি মেনে নেবে। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। তাই আমরা ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।”
জিয়া দাবি করেন, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং একই সময়ে আদিবাসী সংগঠনের কর্মসূচি নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বইয়ের পেছনের মলাটে থাকা বিতর্কিত চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি জানান, “যে বইগুলো এখনো ছাপা হয়নি, সেগুলোতে আদিবাসী শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম আর থাকবে না।”
রাখাল রাহাকে অপসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, “রাখাল রাহাকে এনসিটিবি দায়িত্ব দেয়নি; দায়িত্ব দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার কাজ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। তাই তাকে অপসারণ করার প্রশ্নই আসে না।”
রাখাল রাহা এ বিষয়ে বলেছেন, “পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে। আমরা ভুলগুলো সংশোধনের চেষ্টা করেছি। তবে এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
এই ঘটনায় দুটি পক্ষের কর্মসূচি একই সময় হওয়ায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আদিবাসী সংগঠনের দাবি, তাদের ঘোষণার পরই স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি একই সময়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ নিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে সংবেদনশীল বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি ও পরিমার্জন নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি স্বচ্ছতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকের চিত্রকর্ম সংশোধন নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক, একদিনে একই সময়ে কর্মসূচি দুই পক্ষের
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫
পাঠ্যপুস্তক থেকে ‘আদিবাসী’ শব্দ যুক্ত চিত্রকর্ম বাতিল ও বহালের দাবিতে দুইটি শিক্ষার্থী সংগঠন একই দিনে, একই সময়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কার্যালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’ নামের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠন বুধবার সকাল ১১টায় এনসিটিবি ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে। একই সময়ে ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ নামের একটি সংগঠনও ঘেরাও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছে।
নবম ও দশম শ্রেণির বাংলা ব্যাকরণ বইয়ের পেছনের প্রচ্ছদে থাকা একটি চিত্রকর্ম নিয়ে এই বিতর্কের সূত্রপাত। ওই চিত্রকর্মে একটি গাছের পাঁচটি পাতায় মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ এবং আদিবাসী শব্দগুলো লেখা ছিল। পাশে লেখা ছিল, ‘পাতা ছেঁড়া নিষেধ।’
গত ১২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী ‘স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’ ব্যানারে এনসিটিবি ঘেরাও করার পর রাতে বইটির অনলাইন সংস্করণ থেকে চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়।
‘সংক্ষুব্ধ আদিবাসী ছাত্রজনতা’র পক্ষ থেকে সংগঠনের সংগঠক আলিক মৃ বলেছেন, “আদিবাসী শব্দ যুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা বুধবার এনসিটিবি ঘেরাও কর্মসূচি পালন করব। এটি একটি অন্যায় সিদ্ধান্ত, যা আদিবাসী পরিচিতি মুছে দেওয়ার শামিল। এর প্রতিবাদে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চিত্রকর্ম এঁকেছি।”
অন্যদিকে, স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি’র আহ্বায়ক মুহম্মদ জিয়াউল হক জিয়া জানিয়েছেন, “আমরা পাঁচ দফা দাবি দিয়েছিলাম। এর মধ্যে পাঠ্যবইয়ের কভার পৃষ্ঠার রাষ্ট্রদ্রোহী পরিভাষা ‘আদিবাসী’ যুক্ত চিত্রকর্ম বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখনো আমাদের অন্যান্য দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, চিত্রকর্মের পরিমার্জন কমিটিতে থাকা রাখাল রাহাকে অপসারণ এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন।”
তিনি আরও বলেন, “রাখাল রাহার কারণেই এই বিতর্কিত চিত্রকর্ম বইয়ে যুক্ত হয়েছিল। এছাড়া পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছাতেও বিলম্ব হয়েছে। এনসিটিবি আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল দাবি মেনে নেবে। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি। তাই আমরা ঘেরাও কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি।”
জিয়া দাবি করেন, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ থাকবে এবং একই সময়ে আদিবাসী সংগঠনের কর্মসূচি নিয়ে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।
এনসিটিবি’র চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেছেন, শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বইয়ের পেছনের মলাটে থাকা বিতর্কিত চিত্রকর্মটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তিনি জানান, “যে বইগুলো এখনো ছাপা হয়নি, সেগুলোতে আদিবাসী শব্দযুক্ত চিত্রকর্ম আর থাকবে না।”
রাখাল রাহাকে অপসারণের বিষয়ে তিনি বলেন, “রাখাল রাহাকে এনসিটিবি দায়িত্ব দেয়নি; দায়িত্ব দিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তার কাজ ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়েছে। তাই তাকে অপসারণ করার প্রশ্নই আসে না।”
রাখাল রাহা এ বিষয়ে বলেছেন, “পাঠ্যপুস্তক সংশোধনের দায়িত্ব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়েছে। আমরা ভুলগুলো সংশোধনের চেষ্টা করেছি। তবে এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে।”
এই ঘটনায় দুটি পক্ষের কর্মসূচি একই সময় হওয়ায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আদিবাসী সংগঠনের দাবি, তাদের ঘোষণার পরই স্টুডেন্টস ফর সভারেন্টি একই সময়ে কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এ নিয়ে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিষয়টি শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাঠ্যপুস্তকে সংবেদনশীল বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি ও পরিমার্জন নিয়ে ভবিষ্যতে আরও বেশি স্বচ্ছতা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আলোচনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।