বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজ যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পুরো বই ছাপার কাজ শেষ হতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ গড়াতে পারে। বই ছাপার এই বিলম্বের জন্য এনসিটিবি ও ছাপাখানার মালিকরা পরস্পরকে দায়ী করছেন।
সরকার ২০১০ সাল থেকে পহেলা জানুয়ারি উৎসব করে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর বাকি একমাস ছয় দিন। এখন পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৭০ লাখ কপি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ছাপা শেষে উপজেলায় পৌঁছেছে প্রায় দশ কোটি বই। যা মোট বইয়ের প্রায় ২৮ শতাংশ।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান, কিছু প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ নিয়ে এখনও ছাপার কাজ শুরু না করা ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেরিতে কাজ শুরু করা এবং কালো তালিকাভুক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের পুরো কার্যক্রমই এবার পিছিয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বাজারজাত সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান সংবাদকে বলেন, ‘ছাপাখানার মালিকরা দায়ী নয়, এনসিটিবির ব্যর্থতা ও গাফিলতির কারণেই বই ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেনি; এনসিটিবিই বারবার টেন্ডার বাতিল করেছে তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য।’ ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে সব বই ছাপা সম্ভব কীনা জানতে চাইলে তোফায়েল খান বলেন, ‘মোটেই সম্ভব নয়। কারণ চুক্তি অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বই সরবরাহ করবেন প্রিন্টার্সরা। এ হিসেবে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১৫ জানুয়ারি, কোন কোন প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বই সরবরাহের সুযোগ পাবেন। আবার প্রি-প্রাইমারির বইয়ের টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ সময় আগামী ৮ ডিসেম্বর। এরপর ১৫ ডিসেম্বরে মধ্যে যদি চুক্তি হয় তারপরও ৯০ দিন সময় থাকে। তাহলে কীভাবে ডিসেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ হবে?’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন ২১ নভেম্বর মতিঝিলস্থ এনসিটিবি ভবনে যান ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের ছাপার কাজের খোঁজখবর নিতে। তারা সর্বস্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে জানানো হয়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার মোট ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে নয় কোটি ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৬০৩ কপি বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেছেন ছাপাখানা মালিকরা। এ হিসেবে মোট বইয়ের ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশের ছাপা ও সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে।
এবার প্রাথমিক স্তরের মোট বই ছাপা হচ্ছে নয় কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪ কপি। এর মধ্যে গত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে ছয় কোটি সাত লাখ ২৪ হাজার ৬০৩ কপি বই। যা মোট বইয়ের ৬০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
আর মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের জন্য এবার মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ হয়েছে তিন কোটি ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার কপি বই। যার মোট বইয়ের ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কাজ পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘পিছিয়ে নেই, বই ছাপা ও বিতরণ কার্যক্রম পুরোদমেই চলছে। অনেক ছাপাখানায় এখন দুই শিফ্টে কাজ চলছে, আগামী মাসে কিছু প্রতিষ্ঠানে তিন শিফটে কাজ হবে।’
ইতোমধ্যে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় চার কোটি বই উপজেলায় পৌঁছে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর প্রায় নয় কোটি বই ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এসব কয়েকদিনের মধ্যে বই উপজেলায় পৌঁছে যাবে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, এবার প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার কাজ পেয়েছে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কার্যাদেশ পেয়েছে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ১৫১টি এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলার সাতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
‘সিন্ডিকেট’ বা জোটবদ্ধভাবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এবার প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে দরপত্র জমা দেয়ায় পুনর্দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। এতে সরকারের প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছে। অর্থ সাশ্রয় হলেও বই ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে।
যদিও অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম আশা করছেন, তারা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯০ শতাংশ বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করতে পারবেন। বাকি বই ছাপার কাজও জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী নতুন ক্লাসে ভর্তি হয় না। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বই পেয়ে যাবে।’
আট ছাপাখানায় ‘নজরদারি’ জোরালো হচ্ছে
পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এনসিটিবি’র একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে বই ছাপার কাজ শুরু করছেন না। দুটি প্রতিষ্ঠান কাগজ ক্রয়ের চুক্তিই করেনি, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেরিতে কাগজ ক্রয়ের চুক্তি করেছে, আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েও ছাপার কাজ শুরু করছে না।
এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান ছাপার কাজে ঢিলেমি করছে সেগুলোর মধ্যে ‘আবুল প্রেস’, ‘এমদাদ প্রেস’, ‘টাঙ্গাইল প্রেস’, ‘আনিশা,’ ‘প্রেস লাইন’, ‘ধশ^রী শাহ,’ ‘পেপার প্রসেসিং’, ‘মানামা প্রেস’ অন্যতম।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দু’তিনটি প্রেসের মালিক গত বছরও কার্যাদেশ নিয়ে নির্ধারিত সময়ে বই দিতে পারেনি; এ কারণে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তথ্য গোপন করে এবারও তারা কাজ ভাগিয়েছেন।
একটি প্রেসের মালিক এক যুবলীগ নেতা, অপর একটি প্রেসের সঙ্গে সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব কারণে ওইসব ছাপাখানার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না এনসিটিবি কর্মকর্তারা। এজন্য ওই আট প্রতিষ্ঠানে সরকারের বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে নজরদারি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
এছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সম্প্রতি তিনটি ছাপাখানা পরিদর্শনে গিয়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজে ‘চরম অবহেলা’ দেখতে পান। ‘কাগজ’, ‘কালি’ ও ‘বাঁধাই’য়ের কাজ দেখেও সচিব ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন বলে এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার থেকে পরিদর্শনে যাচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১০টি টিম
নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ন্যূনতম দশটি টিম মাঠে নামছেন। একজন অতিরিক্ত সচিব এই কার্যক্রম তদারকি করবেন। যুগ্ম সচিব ও উপ-সচিবদের নেতৃত্বে পরিদর্শন টিমগুলো সরেজমিনে ছাপাখানায় যাবেন।
এছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নিয়মিত ছাপাখানা পরিদর্শন করছেন। তারা যেখানে মুদ্রণ কাজে গাফিলতির আলামত পাচ্ছেন তাৎক্ষণিক সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণেরও নির্দেশ দিচ্ছেন।
বুধবার, ২৪ নভেম্বর ২০২১
বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজ যথাসময়ে শেষ হচ্ছে না। ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পুরো বই ছাপার কাজ শেষ হতে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি নাগাদ গড়াতে পারে। বই ছাপার এই বিলম্বের জন্য এনসিটিবি ও ছাপাখানার মালিকরা পরস্পরকে দায়ী করছেন।
সরকার ২০১০ সাল থেকে পহেলা জানুয়ারি উৎসব করে পাঠ্যবই বিতরণ করে আসছে। নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর বাকি একমাস ছয় দিন। এখন পর্যন্ত ৩৪ কোটি ৭০ লাখ কপি পাঠ্যবইয়ের মধ্যে ছাপা শেষে উপজেলায় পৌঁছেছে প্রায় দশ কোটি বই। যা মোট বইয়ের প্রায় ২৮ শতাংশ।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভাঙতে দ্বিতীয় দফায় দরপত্র আহ্বান, কিছু প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ নিয়ে এখনও ছাপার কাজ শুরু না করা ও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেরিতে কাজ শুরু করা এবং কালো তালিকাভুক্ত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ায় পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণের পুরো কার্যক্রমই এবার পিছিয়ে যাচ্ছে।
জানতে চাইলে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ ও বাজারজাত সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান সংবাদকে বলেন, ‘ছাপাখানার মালিকরা দায়ী নয়, এনসিটিবির ব্যর্থতা ও গাফিলতির কারণেই বই ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করেনি; এনসিটিবিই বারবার টেন্ডার বাতিল করেছে তাদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার জন্য।’ ৩১ ডিসেম্বর মধ্যে সব বই ছাপা সম্ভব কীনা জানতে চাইলে তোফায়েল খান বলেন, ‘মোটেই সম্ভব নয়। কারণ চুক্তি অনুযায়ী, কার্যাদেশ পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে বই সরবরাহ করবেন প্রিন্টার্সরা। এ হিসেবে, কোন কোন প্রতিষ্ঠান ১৫ জানুয়ারি, কোন কোন প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত বই সরবরাহের সুযোগ পাবেন। আবার প্রি-প্রাইমারির বইয়ের টেন্ডার জমা দেয়ার শেষ সময় আগামী ৮ ডিসেম্বর। এরপর ১৫ ডিসেম্বরে মধ্যে যদি চুক্তি হয় তারপরও ৯০ দিন সময় থাকে। তাহলে কীভাবে ডিসেম্বরের মধ্যে বই ছাপা শেষ হবে?’
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন ২১ নভেম্বর মতিঝিলস্থ এনসিটিবি ভবনে যান ২০২২ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকের ছাপার কাজের খোঁজখবর নিতে। তারা সর্বস্তরের কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন।
বৈঠকে জানানো হয়, ২০২২ শিক্ষাবর্ষের জন্য এবার মোট ৩৪ কোটি ৭০ লাখ ২২ হাজার ১৩০ কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে নয় কোটি ৮৬ লাখ ২১ হাজার ৬০৩ কপি বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করেছেন ছাপাখানা মালিকরা। এ হিসেবে মোট বইয়ের ২৮ দশমিক ৪১ শতাংশের ছাপা ও সরবরাহ সম্পন্ন হয়েছে।
এবার প্রাথমিক স্তরের মোট বই ছাপা হচ্ছে নয় কোটি ৯৮ লাখ ৫৮ হাজার ৮৭৪ কপি। এর মধ্যে গত ২১ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছেছে ছয় কোটি সাত লাখ ২৪ হাজার ৬০৩ কপি বই। যা মোট বইয়ের ৬০ দশমিক ৮১ শতাংশ।
আর মাধ্যমিক শিক্ষা স্তরের জন্য এবার মোট ২৪ কোটি ৭১ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৬ হাজার কপি পাঠ্যবই ছাপা হচ্ছে। এর মধ্যে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ হয়েছে তিন কোটি ৭৮ লাখ ৯৭ হাজার কপি বই। যার মোট বইয়ের ১৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কাজ পিছিয়ে থাকার কারণ জানতে চাইলে এনসিটিবির সদস্য (টেক্সট) প্রফেসর ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘পিছিয়ে নেই, বই ছাপা ও বিতরণ কার্যক্রম পুরোদমেই চলছে। অনেক ছাপাখানায় এখন দুই শিফ্টে কাজ চলছে, আগামী মাসে কিছু প্রতিষ্ঠানে তিন শিফটে কাজ হবে।’
ইতোমধ্যে মাধ্যমিক স্তরের প্রায় চার কোটি বই উপজেলায় পৌঁছে গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আর প্রায় নয় কোটি বই ছাপা ও বাঁধাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এসব কয়েকদিনের মধ্যে বই উপজেলায় পৌঁছে যাবে।
এনসিটিবি জানিয়েছে, এবার প্রাথমিক স্তরের বই ছাপার কাজ পেয়েছে ৩৯টি প্রতিষ্ঠান। মাধ্যমিক স্তরের বই ছাপার কার্যাদেশ পেয়েছে ১৫৮টি প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ১৫১টি এবং ঢাকার বাইরে অন্যান্য জেলার সাতটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
‘সিন্ডিকেট’ বা জোটবদ্ধভাবে এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী এবার প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে দরপত্র জমা দেয়ায় পুনর্দরপত্র আহ্বান করে এনসিটিবি। এতে সরকারের প্রায় ২৩০ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছে। অর্থ সাশ্রয় হলেও বই ছাপার কাজ পিছিয়ে গেছে।
যদিও অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম আশা করছেন, তারা ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে ৯০ শতাংশ বই ছেপে উপজেলা পর্যায়ে সরবরাহ করতে পারবেন। বাকি বই ছাপার কাজও জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে পারবেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই সব শিক্ষার্থী নতুন ক্লাসে ভর্তি হয় না। শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ভর্তির সঙ্গে সঙ্গেই নতুন বই পেয়ে যাবে।’
আট ছাপাখানায় ‘নজরদারি’ জোরালো হচ্ছে
পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা এনসিটিবি’র একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আটটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠান নানা অজুহাতে বই ছাপার কাজ শুরু করছেন না। দুটি প্রতিষ্ঠান কাগজ ক্রয়ের চুক্তিই করেনি, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দেরিতে কাগজ ক্রয়ের চুক্তি করেছে, আবার কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েও ছাপার কাজ শুরু করছে না।
এনসিটিবির তথ্য অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠান ছাপার কাজে ঢিলেমি করছে সেগুলোর মধ্যে ‘আবুল প্রেস’, ‘এমদাদ প্রেস’, ‘টাঙ্গাইল প্রেস’, ‘আনিশা,’ ‘প্রেস লাইন’, ‘ধশ^রী শাহ,’ ‘পেপার প্রসেসিং’, ‘মানামা প্রেস’ অন্যতম।
প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দু’তিনটি প্রেসের মালিক গত বছরও কার্যাদেশ নিয়ে নির্ধারিত সময়ে বই দিতে পারেনি; এ কারণে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। তথ্য গোপন করে এবারও তারা কাজ ভাগিয়েছেন।
একটি প্রেসের মালিক এক যুবলীগ নেতা, অপর একটি প্রেসের সঙ্গে সরকার দলীয় এক সংসদ সদস্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে এনসিটিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব কারণে ওইসব ছাপাখানার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না এনসিটিবি কর্মকর্তারা। এজন্য ওই আট প্রতিষ্ঠানে সরকারের বিশেষ সংস্থার মাধ্যমে নজরদারি উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সংস্থাটি।
এছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব সম্প্রতি তিনটি ছাপাখানা পরিদর্শনে গিয়ে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কাজে ‘চরম অবহেলা’ দেখতে পান। ‘কাগজ’, ‘কালি’ ও ‘বাঁধাই’য়ের কাজ দেখেও সচিব ‘অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন বলে এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার থেকে পরিদর্শনে যাচ্ছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ১০টি টিম
নতুন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ কার্যক্রম পরিদর্শনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নেতৃত্বে ন্যূনতম দশটি টিম মাঠে নামছেন। একজন অতিরিক্ত সচিব এই কার্যক্রম তদারকি করবেন। যুগ্ম সচিব ও উপ-সচিবদের নেতৃত্বে পরিদর্শন টিমগুলো সরেজমিনে ছাপাখানায় যাবেন।
এছাড়াও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও নিয়মিত ছাপাখানা পরিদর্শন করছেন। তারা যেখানে মুদ্রণ কাজে গাফিলতির আলামত পাচ্ছেন তাৎক্ষণিক সেইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণেরও নির্দেশ দিচ্ছেন।