alt

শিক্ষা

কাজে আসছে না প্রকল্পের আওতায় কেনা শত কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ

রাকিব উদ্দিন : রোববার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩

প্রকল্পের আওতায় কেনা প্রায় শত কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ কোন কাজেই আসছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ‘অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন’পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এতে বিদেশিদের (এডিবি) কাছে দেশের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন হয়েছে; এটি ‘লজ্জাজনক’। যদিও মাউশির দাবি সব উপকরণ খারাপ নয়; ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়নি।

এই পরিস্থিততে মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ‘কালো তালিকাভুক্তির’ নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তিতে সময়ক্ষেপণ করছে মাউশি। এই সুযোগে জামানতের (ট্যাক্স-ভ্যাট বাদে প্রায় ১৩ কোটি) টাকা ফেরত পেতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে নিম্নমানের আইসিটি উপকরণ পেয়েছেন। তারা বলছেন, নিম্নমানের ও অকার্যকর পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রচলিত বিধি-বিধানের আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২০ ও ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের ৬৪০টি বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিতে দুই শ্রেণীতে দুটি বিষয় ‘ট্রেড’ চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানে ‘কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি’ (আইসিটি) ট্রেড বা বিষয় চালু করা হয়েছে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানে ‘আইটি সাপোর্ট’ বা শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।

মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’র (সেসিপ) আওতায় ওইসব বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে শুধুমাত্র ‘আইসিটি’ ট্রেডের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সেসিপ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

সেসিপ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষার’ ২০টি ‘ট্রেডের’ (বিষয়) বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ ও মালামাল ১০টি লট বা প্যাকেজে কেনা হয়েছে। এসব মালামাল ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়েছে। ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লটগুলোর কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে ৯টি লটের মালামাল নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন প্রশ্ন বা অভিযোগ আসেনি।

কিন্তু ‘আইসিটি ট্রেড’ শিক্ষা উপকরণের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ট্রেডের উপকরণ সরবরাহ করেছে ফ্লোরা টেলিকম অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ (জেবি)। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৩৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেস্কটপ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, কি বোর্ড, সিপিইউ, চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেসিপ প্রকল্পের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক প্রফেসর ড. সামসুন নাহার সংবাদকে বলেন, ‘আমি এ প্রকল্পের দায়িত্ব নেয়ার আগেই শিক্ষা উপকরণ কেনার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। এখন শুধুমাত্র আইসিটি উপকরণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। এটা ঠিক। আবার যেসব স্কুলে উপকরণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলো রিপ্লেসমেন্ট করে দিচ্ছে ফ্লোরা টেলিকম।’

৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মোট ২৬৪ কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ কেনা হয়েছে জানিয়ে সামসুন নাহার বলেন, ‘এর মধ্যে ফ্লোরা টেলিকম প্রায় ৯৭ কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের কাজ পেয়েছে। তারা সফ্টওয়্যার অরিজিনালের পরিবর্তে ওভ্যান্তু দিয়েছে, এটিই সমস্যা। এই পণ্যটি দেশেও প্রচলিত।’

ফ্লোরা টেলিকম কিছু ফার্নিচার সরবরাহ করেনি জানিয়ে সামসুন নাহার বলেন, ‘যেসব মাল সরবরাহ করা হয়নি সেগুলোর বিল দেব না। তবে যেসব ব্র্যান্ডের উপকরণ দেয়া হয়েছে, সেগুলো আমাদের দেশে ব্যবহারও হচ্ছে। এগুলোতে বড় ধরনের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

গত বছরের ৯ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের ‘সিপিটিইউ’র মহাপরিচালকে দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব আ ন ম তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অন্তর্ভুক্ত ‘পিভিআইপি ইক্যুইমপেন্ট ফর আইসিটি ট্রেড’ এর দ্রব্যাদি সরবরাহের জন্য ফ্লোরা টেলিকম অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজকে (জেবি) কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করে ‘অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার সরবরাহ করার কারণে সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক’।

নিম্নমানের মালামাল সরবরাহের জন্য সরকারের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণœ’ হয়েছে-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন অভিযোগের বিষয়ে ড. সামসুন নাহার বলেন, ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে কেন? পুরো বিষয়টি মাউশি তদন্ত করছে। কারণ পদাধিকার বলে সেসিপের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাউশি মহাপরিচালক। তাছাড়া ঠিকাদারের পুরো বিল এখনও দেয়া হয়নি।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ‘এমতাবস্থায়, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেড অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজকে সরকারি বা সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য কোন প্রকল্পের বা প্রতিষ্ঠানের কার্যে সার্ভিস প্রদানের অযোগ্য করে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এ চিঠির অনুলিপি মাউশি মহাপরিচালক, প্রকল্প কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দেয়া হয়েছে। মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া সেসিপ প্রকল্পের প্রধানও মাউশি মহাপরিচালক। কার্যাদেশ দেয়া ও অর্থ পরিশোধকারী মাউশির তৎকালীন মহাপরিচালককে সম্প্রতি একটি সাংবিধানিক সংস্থায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর শিক্ষা উপকরণের বিতর্কের কারণে মাউশির বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বেকায়দায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে সেগুলো ‘অনেক পুরোনো’। এগুলো কার্যত অচল। দরপত্রে শর্ত অনুযায়ী, পুরনো পণ্য দেয়ার সুযোগ নেই। মাউশির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কেন পুরনো শিক্ষা উপকরণ বুঝে নিলেন সেটিই এখন প্রশ্ন।

জানতে চাইলে মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল আজম সংবাদকে জানান, সারাদেশের ছয়শ’র বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে। সবকটি স্কুলেই ঢালাওভাবে খারাপ মাল দেয়ার অভিযোগ সত্য কি না সেটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে মাউশি মহাপরিচালক।

মহাপরিচালকের নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি সংস্থার সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওইসব শিক্ষা উপকরণের বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়ে আনা হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পুনরায় খতিয়ে দেখে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মাউশি। তারা মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের প্রমাণ পেয়েছে বলে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্লোরা টেলিকম লিটিটেডের নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলাম দুলাল সংবাদকে বলেন, ‘মালামালে কোন সমস্যা নাই; আমার টাকাই দিচ্ছে না ছয় মাস হলো। আমি যে ল্যাপটপ-কম্পিউটারের দাম ৪৭ হাজার টাকা কোট করেছি, সেগুলোর মার্কেটে দাম আছে এখন ৮০ হাজার টাকা। আমি করোনার ভেতরে এত কষ্ট করে মালগুলো দিয়েছি.....এখন এগুলো এলসি টেন্ডার...ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার......যাই হোক এখন একটি ফয়সালা হয়তো হয়ে যাবে।’

মন্ত্রণালয় কী কী সমস্যার কথা বলছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিনিস্ট্রি থেকে কিছু কিছু (অভিযোগ) বলছে.... আমি ৬০ কোটি টাকার মতো পেয়েছি। আমার এখনও ১২/১৩ কোটি টাকা বকেয়া আছে।’

এদিকে আইসিটি ‘কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি’ (আইসিটি) ট্রেড চালু হওয়া দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে আইসিটি উপকরণ সরবরাহ করেছে সেগুলো যেভাবেই রাখা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রথমত পণ্যের গুণগত মান নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। দ্বিতীয়ত তাদের শিক্ষক ও ল্যাব এসিসটেন্টও নিয়োগ দেয়া হয়নি।

ছবি

শিক্ষা অবকাঠামো নির্মাণে ‘দুর্নীতি’ স্বাভাবিক রীতিতে পরিণত হচ্ছে

ছবি

সব বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছতে, থাকছে জবি-ইবিও

ছবি

৪৫তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা ১৯ মে

ছবি

গুচ্ছে যাচ্ছে না ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

নতুন শিক্ষাবর্ষের চার মাস, দুই বই সংশোধনের জটিলতা কাটছে না

শ্রমিকের ছেলে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ, অর্থের অভাবে ভর্তি হতে পারছেনা

ছবি

করোনা মহামারি: প্রতি ৫ জন শিশুর মধ্যে মাত্র এক জন লাইভ ক্লাসে অংশ নেয়

ছবি

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা থেকে বের হওয়ার সিদ্ধান্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে

ছবি

ঢাবিতে আন্তর্জাতিক গণিত দিবস পালিত

ছবি

ইবিতে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ, মাইকে প্রচার

ছবি

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে কোনো পরীক্ষা নয়

ছবি

আগুন জ্বালিয়ে রাবি শিক্ষার্থীদের রেলপথ অবরোধ, রেল কর্তৃপক্ষের মামলা

দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা-উপশাখা খোলার উদ্যোগ, দেশীয় উদ্যোক্তাদের উদ্বেগ

ছবি

ঢাবির সঙ্গে যৌথ কাজ করতে আগ্রহী অস্ট্রেলিয়ার ডারউইন ইউনিভার্সিটি

ছবি

ফাতেমা ইকবাল ট্রাস্ট ও প্রভোস্ট বৃত্তি পেলেন ঢাবির ৩২ ছাত্রী

ছবি

মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয় করণের দাবীতে ফরিদপুরে শিক্ষকদের মানববন্ধন

প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ : ভর্তিতে সতর্কতা জারি বিএমডিসির

ছবি

বঙ্গবন্ধু মডেকিলে বশ্বিবদ্যিালয়ে চর্তুথ সমার্বতন কাল

ছবি

রাবির ভিসিকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের আপত্তিকর স্লোগান

ছবি

জাবির ছাত্রী হলে মধ্যরাতে হয়রানি, আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা

ছবি

দুপুরে প্রকাশ হবে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার ফল, জানা যাবে যেভাবে

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ : রাবির প্রশাসন ভবনে তালা, বিক্ষোভ

খাতা চ্যালেঞ্জ করে নতুন করে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেন ৩১৫ জন

ছবি

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটিতে সকালে পরীক্ষা,সন্ধ্যায় ফল প্রকাশ

ছবি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন, লড়াইয়ে ১ লাখ ৩৯ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার

ছবি

পাঠ্যবইয়ের দরপত্রে পরিবর্তন আসছে

১৫ মার্চ শুরু হচ্ছে ‘ন্যাশনাল স্টিম অলিম্পিয়াড-২০২৩’

ছবি

বঙ্গবন্ধু মেডিকেল ভার্সিটিতে নবাগত শিক্ষার্থীদের ইনডাকশন প্রোগ্রাম

এইচএসসি পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়ণের আবেদন বেড়েছে ৬৫ শতাংশ

ছবি

প্রাথমিকের বৃত্তির সংশোধিত ফল প্রকাশ

ছবি

স্থগিতকৃত ‘প্রাথমিক বৃত্তি’র ফল আজ রাতেই

ছবি

প্রাথমিকের বৃত্তির সংশোধিত ফল প্রকাশ বিকেলে

ছবি

কোডিং ভুলে প্রাথমিক বৃত্তির ফল প্রকাশের পর স্থগিত

ছবি

বিতর্কহীন থাকতে বই প্রত্যাহার করা হয়েছে

ছবি

প্রাথমিকের বৃত্তির ফল প্রকাশ

tab

শিক্ষা

কাজে আসছে না প্রকল্পের আওতায় কেনা শত কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ

রাকিব উদ্দিন

রোববার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৩

প্রকল্পের আওতায় কেনা প্রায় শত কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ কোন কাজেই আসছে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দাবি ‘অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন’পণ্য সরবরাহ করা হয়েছে। এতে বিদেশিদের (এডিবি) কাছে দেশের ‘ভাবমূর্তি’ ক্ষুণ্ন হয়েছে; এটি ‘লজ্জাজনক’। যদিও মাউশির দাবি সব উপকরণ খারাপ নয়; ভাবমূর্তিও নষ্ট হয়নি।

এই পরিস্থিততে মালামাল সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ‘কালো তালিকাভুক্তির’ নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তিতে সময়ক্ষেপণ করছে মাউশি। এই সুযোগে জামানতের (ট্যাক্স-ভ্যাট বাদে প্রায় ১৩ কোটি) টাকা ফেরত পেতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, তারা বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়ে নিম্নমানের আইসিটি উপকরণ পেয়েছেন। তারা বলছেন, নিম্নমানের ও অকার্যকর পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। প্রচলিত বিধি-বিধানের আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০২০ ও ২০২১ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের ৬৪০টি বৃত্তিমূলক শিক্ষা চালু করেছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিটিতে দুই শ্রেণীতে দুটি বিষয় ‘ট্রেড’ চালু করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৩৯৩টি প্রতিষ্ঠানে ‘কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি’ (আইসিটি) ট্রেড বা বিষয় চালু করা হয়েছে। এজন্য এসব প্রতিষ্ঠানে ‘আইটি সাপোর্ট’ বা শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে।

মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া ‘সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম’র (সেসিপ) আওতায় ওইসব বিদ্যালয়ে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। বিদ্যালয়গুলোতে শুধুমাত্র ‘আইসিটি’ ট্রেডের জন্য প্রায় ১০০ কোটি টাকার উপকরণ সরবরাহ করা হয়েছে। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে সেসিপ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।

সেসিপ প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘বৃত্তিমূলক শিক্ষার’ ২০টি ‘ট্রেডের’ (বিষয়) বিভিন্ন ধরনের শিক্ষা উপকরণ ও মালামাল ১০টি লট বা প্যাকেজে কেনা হয়েছে। এসব মালামাল ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়েছে। ১০টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লটগুলোর কাজ পেয়েছে। এর মধ্যে ৯টি লটের মালামাল নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন প্রশ্ন বা অভিযোগ আসেনি।

কিন্তু ‘আইসিটি ট্রেড’ শিক্ষা উপকরণের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই ট্রেডের উপকরণ সরবরাহ করেছে ফ্লোরা টেলিকম অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজ (জেবি)। এই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ৩৯৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেস্কটপ, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, কি বোর্ড, সিপিইউ, চেয়ার-টেবিল ও অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেসিপ প্রকল্পের যুগ্ম প্রোগ্রাম পরিচালক প্রফেসর ড. সামসুন নাহার সংবাদকে বলেন, ‘আমি এ প্রকল্পের দায়িত্ব নেয়ার আগেই শিক্ষা উপকরণ কেনার কার্যাদেশ দেয়া হয়েছিল। এখন শুধুমাত্র আইসিটি উপকরণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বলা হচ্ছে স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ করা হয়নি। এটা ঠিক। আবার যেসব স্কুলে উপকরণের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে সেগুলো রিপ্লেসমেন্ট করে দিচ্ছে ফ্লোরা টেলিকম।’

৬৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য মোট ২৬৪ কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ কেনা হয়েছে জানিয়ে সামসুন নাহার বলেন, ‘এর মধ্যে ফ্লোরা টেলিকম প্রায় ৯৭ কোটি টাকার শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের কাজ পেয়েছে। তারা সফ্টওয়্যার অরিজিনালের পরিবর্তে ওভ্যান্তু দিয়েছে, এটিই সমস্যা। এই পণ্যটি দেশেও প্রচলিত।’

ফ্লোরা টেলিকম কিছু ফার্নিচার সরবরাহ করেনি জানিয়ে সামসুন নাহার বলেন, ‘যেসব মাল সরবরাহ করা হয়নি সেগুলোর বিল দেব না। তবে যেসব ব্র্যান্ডের উপকরণ দেয়া হয়েছে, সেগুলো আমাদের দেশে ব্যবহারও হচ্ছে। এগুলোতে বড় ধরনের কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’

গত বছরের ৯ নভেম্বর পরিকল্পনা কমিশনের ‘সিপিটিইউ’র মহাপরিচালকে দেয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেয়া হয়।

মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব আ ন ম তরিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) অন্তর্ভুক্ত ‘পিভিআইপি ইক্যুইমপেন্ট ফর আইসিটি ট্রেড’ এর দ্রব্যাদি সরবরাহের জন্য ফ্লোরা টেলিকম অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজকে (জেবি) কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী মালামাল সরবরাহ না করে ‘অপ্রচলিত ও লাইসেন্সবিহীন অপারেটিং সিস্টেম সফটওয়্যার সরবরাহ করার কারণে সরকারের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তাদের এ ধরনের কার্যকলাপ বিদেশিদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে, যা অত্যন্ত লজ্জাজনক’।

নিম্নমানের মালামাল সরবরাহের জন্য সরকারের ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণœ’ হয়েছে-শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এমন অভিযোগের বিষয়ে ড. সামসুন নাহার বলেন, ‘ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হবে কেন? পুরো বিষয়টি মাউশি তদন্ত করছে। কারণ পদাধিকার বলে সেসিপের প্রোগ্রাম ডিরেক্টর মাউশি মহাপরিচালক। তাছাড়া ঠিকাদারের পুরো বিল এখনও দেয়া হয়নি।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, ‘এমতাবস্থায়, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ফ্লোরা টেলিকম লিমিটেড অ্যান্ড বাংলাদেশ সায়েন্স হাউজকে সরকারি বা সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নযোগ্য কোন প্রকল্পের বা প্রতিষ্ঠানের কার্যে সার্ভিস প্রদানের অযোগ্য করে কালো তালিকাভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’

এ চিঠির অনুলিপি মাউশি মহাপরিচালক, প্রকল্প কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকেও দেয়া হয়েছে। মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া সেসিপ প্রকল্পের প্রধানও মাউশি মহাপরিচালক। কার্যাদেশ দেয়া ও অর্থ পরিশোধকারী মাউশির তৎকালীন মহাপরিচালককে সম্প্রতি একটি সাংবিধানিক সংস্থায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। আর শিক্ষা উপকরণের বিতর্কের কারণে মাউশির বর্তমান মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বেকায়দায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, যেসব শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে সেগুলো ‘অনেক পুরোনো’। এগুলো কার্যত অচল। দরপত্রে শর্ত অনুযায়ী, পুরনো পণ্য দেয়ার সুযোগ নেই। মাউশির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা কেন পুরনো শিক্ষা উপকরণ বুঝে নিলেন সেটিই এখন প্রশ্ন।

জানতে চাইলে মাউশির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার পরিচালক অধ্যাপক ড. একেএম শফিউল আজম সংবাদকে জানান, সারাদেশের ছয়শ’র বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয়েছে। সবকটি স্কুলেই ঢালাওভাবে খারাপ মাল দেয়ার অভিযোগ সত্য কি না সেটি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছে মাউশি মহাপরিচালক।

মহাপরিচালকের নির্দেশনার আলোকে সম্প্রতি সংস্থার সব জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওইসব শিক্ষা উপকরণের বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়ে আনা হয়েছে। এসব প্রতিবেদন পুনরায় খতিয়ে দেখে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে মাউশি। তারা মাত্র পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে নিম্নমানের শিক্ষা উপকরণ সরবরাহের প্রমাণ পেয়েছে বলে তদন্ত কমিটির এক সদস্য জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্লোরা টেলিকম লিটিটেডের নির্বাহী পরিচালক শহিদুল ইসলাম দুলাল সংবাদকে বলেন, ‘মালামালে কোন সমস্যা নাই; আমার টাকাই দিচ্ছে না ছয় মাস হলো। আমি যে ল্যাপটপ-কম্পিউটারের দাম ৪৭ হাজার টাকা কোট করেছি, সেগুলোর মার্কেটে দাম আছে এখন ৮০ হাজার টাকা। আমি করোনার ভেতরে এত কষ্ট করে মালগুলো দিয়েছি.....এখন এগুলো এলসি টেন্ডার...ইন্টারন্যাশনাল টেন্ডার......যাই হোক এখন একটি ফয়সালা হয়তো হয়ে যাবে।’

মন্ত্রণালয় কী কী সমস্যার কথা বলছে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মিনিস্ট্রি থেকে কিছু কিছু (অভিযোগ) বলছে.... আমি ৬০ কোটি টাকার মতো পেয়েছি। আমার এখনও ১২/১৩ কোটি টাকা বকেয়া আছে।’

এদিকে আইসিটি ‘কম্পিউটার অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি’ (আইসিটি) ট্রেড চালু হওয়া দুটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যেভাবে আইসিটি উপকরণ সরবরাহ করেছে সেগুলো যেভাবেই রাখা হয়েছে। এগুলো ব্যবহার করা যাচ্ছে না। প্রথমত পণ্যের গুণগত মান নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। দ্বিতীয়ত তাদের শিক্ষক ও ল্যাব এসিসটেন্টও নিয়োগ দেয়া হয়নি।

back to top