চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ছাপা এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর (উচ্চ মাধ্যমিক) বই মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণের কাজ পেতে চলছে তোড়জোড়। কাগজ সংকটের অজুহাতে যারা এখনও সব বই ছাপতে পারেনি তারাও একাদশ শ্রেণীর বই ছাপা ও বিক্রির কাজ পাচ্ছেন।
কাজ ভাগাতে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে মুদ্রণ শিল্প সমিতির এক নেতার বিরুদ্ধে। এ নেতাও একাদশ শ্রেণীর বই ছাপা ও বিক্রির কাজ পাচ্ছেন। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন একটি ছাপাখানার মালিক।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি একাদশ শ্রেণীর বইয়ের উদ্বোধন করবেন বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওইদিন থেকেই সারাদেশে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বই কিনতে পাওয়া যাবে। ওইদিন একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হচ্ছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘বাংলা, বাংলা সহপাঠ, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)-এই চারটি বই আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রয়্যালিটি নিয়ে নির্দিষ্ট মূল্যে সারাদেশে বিক্রি করতে অনুমোদন দিয়ে থাকি।’
তিনি জানান, এবার প্রকাশকদের কাছ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ ‘রয়্যালিটি’ (বই বিক্রির আর্থিক লভ্যাংশ) নেয়া হচ্ছে। গত বছরও একই হারে তা নেয়া হয়েছিল।
তবে যারা বিনামূল্যের পাঠ্যবই এখনও সরবরাহ করতে পারেনি তাদের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বই ছাপার কাজ দেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কার বইয়ের কী ভুল-ত্রুটি বা অনিয়ম হয়েছে সেটির মূল্যায়ন এখনও হয়নি। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষে শাস্তির বিষয়টি আসবে। গুরুতর অপরাধ থাকলে কালো তালিকাভুক্ত হতে পারে।’
এবার সারাদেশে চারটি বিষয়ে মোট ৪৮ লাখ ২০ হাজার কপি বই বাজারজাতকরণের কাজ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বইগুলোর পৃষ্ঠা সংখ্যা, কাগজের মান ও মূল্য আমরা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। আমাদের অনুমোদনের চেয়ে বেশি বই কেউ বিক্রি করতে পারবে না। পৃষ্ঠা সংখ্যাও বাড়াতে পারবে না।’
এছাড়া বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের অন্যান্য বইও এনসিটিবির অনুমোদন নিয়ে ছাপা ও বাজারজাতকরণ করতে হয়। এসব বইয়ের কনটেন্ট (বিষয়বস্তু), পৃষ্ঠা ও মূল্য এনসিটিবি নির্ধারণ করে দেয়। নির্দিষ্ট মূল্যে সারাদেশের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা এসব বই কিনতে পারে।
কারা কীভাবে বই ছাপা ও বাজারজাতকরণের কাজ পাচ্ছেন- জানতে চাইলে এনসিটিবি আরেক কর্মকর্তা জানান, গত ১৭ জানুয়ারি ‘বেস্ট অফার বা টেন্ডার’ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এবার ১০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৪৮ লাখ ২০ হাজার বইয়ের কাজ পাচ্ছে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিউ মুন, লিখন আর্ট, প্রমা, আনন্দ, কর্ণফুলী, সরকার ও রুপালী প্রিন্টার্স অন্যতম।
এর মধ্যে রুপালী প্রিন্টার্সের পরিচালক জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের দরপত্রে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন মাদার্স পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী নিরুপ কুমার সাহা।
শিক্ষা সচিব ও এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে দেয়া লিখিত অভিয়োগে বলা হয়েছে, ‘মাদার্স পাবলিকেশন্স একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ৯ নম্বর লটে সর্বোচ্চ অফার অংশগ্রহণকারী একটি প্রতিষ্ঠান। আমি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করায় আমার সঙ্গে অংশগ্রহণকারী রুপালী প্রিন্টার্স যার পরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম, আমাকে এবং ইউনিট দুই মাদার্স প্রিন্টিং প্রেস (দোয়েল প্রিন্টার্স) আমার পার্টনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, প্রেসে তালা মেরে দেয়ার হুমকি দেয়া এমনকি ১২ ঘণ্টার মধ্যে টেন্ডার তুলে (প্রত্যাহার) না নিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং এনসিটিবির সঙ্গে কাজ করতে নিষেধ করে এবং ট্রেন্ডার প্রত্যাহার করতে বলে।’
রুপালী প্রিন্টার্সের পরিচালক জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক। নিরুপ কুমার সাহার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ওনাকে আমি চিনিই না, তার সঙ্গে আমার কখনো দেখাও হয়নি। অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।’
এ অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে এবং সচিবের কাছে লিখিত দিয়েছেন। সচিব স্যার আমার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, বিষয়টি ব্যবসায়ীদের নিজেদের ব্যাপার। এনসিটিবিতে এ নিয়ে কিছু হয়নি। আমরা নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করেই কাজ দিচ্ছি।’
এনসিটিবি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে কি না জানতে চাইলে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি এনসিটিবিতে ঘটেছে কি না আমার জানা নেই। এখন কার প্রেস কে তালা দিল, নাকি মারামারি করলো তা নিয়ে আমাদের কী করার আছে? বই নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে সেটি আমরা খতিয়ে দেখতাম।’
২০২৩ শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে প্রায় একমাস হলো। এই শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৩৫ কোটি পাঠ্যবই প্রয়োজন। জানুয়ারির প্রথম দিকেই এসব বই বিতরণ হওয়ার কথা। কিন্তু শনিবার (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত দেড় কোটির বেশি বই ছাপা বাকি ছিল বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
শনিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৩
চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তক ছাপা এখনও শেষ হয়নি। এরই মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর (উচ্চ মাধ্যমিক) বই মুদ্রণ ও বাজারজাতকরণের কাজ পেতে চলছে তোড়জোড়। কাগজ সংকটের অজুহাতে যারা এখনও সব বই ছাপতে পারেনি তারাও একাদশ শ্রেণীর বই ছাপা ও বিক্রির কাজ পাচ্ছেন।
কাজ ভাগাতে একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারীকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ ওঠেছে মুদ্রণ শিল্প সমিতির এক নেতার বিরুদ্ধে। এ নেতাও একাদশ শ্রেণীর বই ছাপা ও বিক্রির কাজ পাচ্ছেন। এ ঘটনায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন একটি ছাপাখানার মালিক।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি একাদশ শ্রেণীর বইয়ের উদ্বোধন করবেন বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। ওইদিন থেকেই সারাদেশে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বই কিনতে পাওয়া যাবে। ওইদিন একাদশ শ্রেণীর ক্লাস শুরু হচ্ছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবির বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. রফিকুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘বাংলা, বাংলা সহপাঠ, ইংরেজি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি)-এই চারটি বই আমরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রয়্যালিটি নিয়ে নির্দিষ্ট মূল্যে সারাদেশে বিক্রি করতে অনুমোদন দিয়ে থাকি।’
তিনি জানান, এবার প্রকাশকদের কাছ থেকে সাড়ে ১১ শতাংশ ‘রয়্যালিটি’ (বই বিক্রির আর্থিক লভ্যাংশ) নেয়া হচ্ছে। গত বছরও একই হারে তা নেয়া হয়েছিল।
তবে যারা বিনামূল্যের পাঠ্যবই এখনও সরবরাহ করতে পারেনি তাদের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর বই ছাপার কাজ দেয়া হচ্ছে কি না জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কার বইয়ের কী ভুল-ত্রুটি বা অনিয়ম হয়েছে সেটির মূল্যায়ন এখনও হয়নি। মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষে শাস্তির বিষয়টি আসবে। গুরুতর অপরাধ থাকলে কালো তালিকাভুক্ত হতে পারে।’
এবার সারাদেশে চারটি বিষয়ে মোট ৪৮ লাখ ২০ হাজার কপি বই বাজারজাতকরণের কাজ দেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বইগুলোর পৃষ্ঠা সংখ্যা, কাগজের মান ও মূল্য আমরা নির্ধারণ করে দিচ্ছি। আমাদের অনুমোদনের চেয়ে বেশি বই কেউ বিক্রি করতে পারবে না। পৃষ্ঠা সংখ্যাও বাড়াতে পারবে না।’
এছাড়া বিজ্ঞান, মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগের অন্যান্য বইও এনসিটিবির অনুমোদন নিয়ে ছাপা ও বাজারজাতকরণ করতে হয়। এসব বইয়ের কনটেন্ট (বিষয়বস্তু), পৃষ্ঠা ও মূল্য এনসিটিবি নির্ধারণ করে দেয়। নির্দিষ্ট মূল্যে সারাদেশের বিক্রয় কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা এসব বই কিনতে পারে।
কারা কীভাবে বই ছাপা ও বাজারজাতকরণের কাজ পাচ্ছেন- জানতে চাইলে এনসিটিবি আরেক কর্মকর্তা জানান, গত ১৭ জানুয়ারি ‘বেস্ট অফার বা টেন্ডার’ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর ভিত্তিতে এবার ১০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ৪৮ লাখ ২০ হাজার বইয়ের কাজ পাচ্ছে। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিউ মুন, লিখন আর্ট, প্রমা, আনন্দ, কর্ণফুলী, সরকার ও রুপালী প্রিন্টার্স অন্যতম।
এর মধ্যে রুপালী প্রিন্টার্সের পরিচালক জহুরুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের দরপত্রে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন মাদার্স পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী নিরুপ কুমার সাহা।
শিক্ষা সচিব ও এনসিটিবি চেয়ারম্যানকে দেয়া লিখিত অভিয়োগে বলা হয়েছে, ‘মাদার্স পাবলিকেশন্স একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর ৯ নম্বর লটে সর্বোচ্চ অফার অংশগ্রহণকারী একটি প্রতিষ্ঠান। আমি টেন্ডারে অংশগ্রহণ করায় আমার সঙ্গে অংশগ্রহণকারী রুপালী প্রিন্টার্স যার পরিচালক মো. জহুরুল ইসলাম, আমাকে এবং ইউনিট দুই মাদার্স প্রিন্টিং প্রেস (দোয়েল প্রিন্টার্স) আমার পার্টনার মো. জাহাঙ্গীর আলমকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে, প্রেসে তালা মেরে দেয়ার হুমকি দেয়া এমনকি ১২ ঘণ্টার মধ্যে টেন্ডার তুলে (প্রত্যাহার) না নিলে প্রাণনাশের হুমকি দেয় এবং এনসিটিবির সঙ্গে কাজ করতে নিষেধ করে এবং ট্রেন্ডার প্রত্যাহার করতে বলে।’
রুপালী প্রিন্টার্সের পরিচালক জহুরুল ইসলাম বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক। নিরুপ কুমার সাহার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, ‘ওনাকে আমি চিনিই না, তার সঙ্গে আমার কখনো দেখাও হয়নি। অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই।’
এ অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে এবং সচিবের কাছে লিখিত দিয়েছেন। সচিব স্যার আমার কাছে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। আমি বলেছি, বিষয়টি ব্যবসায়ীদের নিজেদের ব্যাপার। এনসিটিবিতে এ নিয়ে কিছু হয়নি। আমরা নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে অনুসরণ করেই কাজ দিচ্ছি।’
এনসিটিবি অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারে কি না জানতে চাইলে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি এনসিটিবিতে ঘটেছে কি না আমার জানা নেই। এখন কার প্রেস কে তালা দিল, নাকি মারামারি করলো তা নিয়ে আমাদের কী করার আছে? বই নিয়ে কোন অভিযোগ থাকলে সেটি আমরা খতিয়ে দেখতাম।’
২০২৩ শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়েছে প্রায় একমাস হলো। এই শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৩৫ কোটি পাঠ্যবই প্রয়োজন। জানুয়ারির প্রথম দিকেই এসব বই বিতরণ হওয়ার কথা। কিন্তু শনিবার (২৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত দেড় কোটির বেশি বই ছাপা বাকি ছিল বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।