alt

শিক্ষা

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে আরও দু’তিনটি বই সংশোধনের কথা ভাবা হচ্ছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর দুটি বই প্রত্যাহারের পর আরও দু’তিনটি বই সংশোধনের কথা ভাবছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এটি নির্ভর করছে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর। সংশোধনী বেশি হলে পুরো বই পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।

দুটি বই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গত শুক্রবার সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, তারা এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘ওয়াকিবহাল’ আছেন। দুটি বই প্রত্যাহার হয়েছে। আরও দু’তিনটি বই সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। সেগুলোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন।

এই সংশোধন প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগতে পারে-জানতে চাইলে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এটি বিশেষজ্ঞরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। তারা ইতোমধ্যে তিনটি ‘সভা’ করেছেন। কমিটির মতামত হাতে পেলে যত দ্রুত সম্ভব সংশোধনী স্কুল পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

বই আকারে এই সংশোধনী দেয়া হবে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নির্ভর করছে বইগুলোর আকার কেমন হচ্ছে। যদি ২০/২৫ পৃষ্ঠার সংশোধনী আসে সেক্ষেত্রে তা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর চেয়ে বেশি সংশোধনীর সুপারিশ আসলে পুরো বই পাল্টে যাবে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে সংশোধনী পাঠানো হতে পারে।

১০ ফেব্রুয়ারি এনসিটিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি পাঠদান হতে প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।

এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষা প্রশাসনের এক বিশেষ বৈঠক ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি বই পাঠদান থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান সংবাদকে বলেন, নতুন কারিকুলামে সিক্সে এবং সেভেনে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের দুটি অংশ। এর একটি অনুশীলন বই, আরেকটি অনুসন্ধানী পাঠ। এনসিটিবি দুই শ্রেণীর অনুসন্ধানী পাঠ অংশটি প্রত্যাহারের কথা বলেছে।

দুই শ্রেণীর দুটি বই প্রত্যাহারের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কীনা জানতে চাইলে ড. মশিউজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা মূলত যে বইটিকে তাদের মূল পাঠ্য হিসেবে পড়বে, সেটি হচ্ছে তার অনুশীলন বই। এই অংশটি শুধু সংশোধন হবে, প্রত্যাহার নয়। উঠে যাচ্ছে শুধু অনুসন্ধানী পাঠ। এই বই মূলত শিক্ষার্থীরা অনুশীলন বইয়ে যা পড়বে, তার সঙ্গে যেন নিজেদের চিন্তাকে মেলাতে পারে তার জন্য করা হয়েছিল।

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে বিশ্বের নানা সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে মশিউজ্জামান বলেন, বিশেষ করে মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাগুলো এসেছে; একই সঙ্গে প্রাচীন দেব-দেবী নিয়ে কথা এসেছে, তাদের সংস্কৃতির নানা ছবি ব্যবহার হয়েছে। এসব বিষয় নিয়েই আপত্তি এসেছে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই ইতোমধ্যে সারাদেশের শিক্ষার্থীর হাতে পৌছে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বই দুটি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয়া হলেও বইগুলো পড়ার সুযোগ থাকছে শিক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে ড. মশিউজ্জামান বলেন, এবার বইগুলো ‘অ্যাকটিভিটি বেইজড’। পাঠ্যবইয়ে যে ‘কন্টেন্ট’ আছে, তাই সব নয়। এর বাইরেও পড়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের আছে। ফলে দুটি বই স্থগিত করলেও শিক্ষার্থীদের পড়ার ক্ষেত্রে কোন বিঘ্ন ঘটবে না।

অনুশীলন পাঠের সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ভারতবর্ষ দখল করেছেন, নাকি বিজয় করেছেন- এমন কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা আছে। প্রাচীন দেব-দেবী নিয়ে প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে বেশি কথা বলা হচ্ছে। এনসিটিবি এসব বিষয়, বইগুলো যারা তৈরি করেছেন, বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের সঙ্গে বসবে। এরপর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ্যয়ের ১১তম অধ্যায়ে ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে কিশোর-কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে তাদের শরীরের নানা অঙ্গের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি ‘প্রকাশ্যে পড়ার উপযোগী নয়’- এমন অভিযোগ ওঠে, যা বাদ কিংবা সংশোধন হতে পারে।

আর ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠায় বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসন, সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সুলতানি শাসন নিয়ে যা লেখা হয়েছে, সেখানেও সংশোধনী আসতে পারে। একই বইয়ে ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় মানুষের পূর্বপুরুষক্রম নিয়ে আলোচনা এবং সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ ও ৫২ পৃষ্ঠায় ট্রান্সজেন্ডার বিষয় নিয়ে যে আলোচনা রয়েছে তাও সংশোধন হতে পারে।

৯ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বই নিয়ে একটি ‘চিহ্নিত গোষ্ঠী’ অপপ্রচারে নেমেছে। এসব পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে যেসব লেখক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা জড়িত, তাদের ‘কদর্য ভাষায়, কুৎসিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে এবং হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এর আগে নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংশোধনে এবং কেন ভুল হল তা তদন্তে দুই কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি, ভুল বা ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিমকে আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপপরিচালক আজিজ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে একটি গঠন করা হয়।

অন্য কমিটির আহ্বায়ক হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার। এ কমিটি নতুন শিক্ষাক্রমের ভুল-ভ্রান্তির জন্য এনসিটিবির কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত তাদের খুঁজে বের করবে। এ কমিটি ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যদান শুরু হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট ১০টি করে বই থাকছে। বইগুলি হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি বিষয়ের বই নিয়ে ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা আপত্তি করছেন।

ছবি

শিক্ষার্থীর ‘কটূক্তি’র অভিযোগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সাময়িক বহিষ্কার

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষায় বসছে সাড়ে ১২ লাখ শিক্ষার্থী

ছবি

২৬ জুন শুরু এইচএসসি, কেন্দ্র এলাকায় চলাচলে ডিএমপির বিধিনিষেধ জারি

ছবি

রাতের ঘটনায় আসন বাতিল, শৃঙ্খলা কমিটিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমার প্রস্তুতি

পরীক্ষার আগের সপ্তাহ পর্যন্ত ফরম পূরণের সুযোগ, জানাল শিক্ষা বোর্ড

ছবি

মহামারির আশঙ্কায় এইচএসসি কেন্দ্রে মাস্ক, স্যানিটাইজার ও ডেঙ্গু প্রতিরোধের নির্দেশ

পরীক্ষা পেছানোর পরিকল্পনা নেই, প্রস্তুত শিক্ষা বোর্ডগুলো

ছবি

ভিসি নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি, আবেদন শেষ ২৬ জুন

ছবি

আদালতের রায়ে এক যুগ পর চাকরিতে ফিরছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৮৮ কর্মকর্তা-কর্মচারী

ছবি

‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ চালু না হওয়া পর্যন্ত ইউজিসির অধীনেই চলবে সাত কলেজ

ছবি

উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি, আন্দোলনে ছাত্রদলসহ শিক্ষার্থীরা

ছবি

শাহরিয়ার সাম্য হত্যার ঘটনায় ঢাবিতে অর্ধদিবস শ্রদ্ধা, নিরাপত্তা জোরদারে উদ্যোগ

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল স্থানান্তর ও রাজস্ব ফাঁকিতে দুদকের নজরে দুই প্রতিষ্ঠান

ছবি

কোরবানির ঈদ আর গ্রীষ্ম: লম্বা ছুটিতে যাচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

ছবি

১৬ কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন, বাদ শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী নেতাদের নাম

ছবি

কুয়েটে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হলেও শিক্ষকদের অনড় কর্মবিরতি, অনিশ্চয়তায় শিক্ষার্থীরা

ছবি

৬ বছর পর ইইডিতে উপপরিচালক পদায়ন

ছবি

শিক্ষার্থী-শিক্ষক উত্তেজনায় কুয়েটে অনিশ্চয়তায় একাডেমিক কার্যক্রম

ছবি

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অ্যাডহক কমিটির মাধ্যমে নিয়মিত কমিটি গঠন স্থগিত

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা ২৪ মে

ছবি

মে মাসের মাঝামাঝিতে তারিখ ঘোষণার লক্ষ্যে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ

ছবি

কক্সবাজারে পরীক্ষা দিচ্ছে সেই ১৩ শিক্ষার্থী

ছবি

ভিসি অপসারণ একমাত্র দাবি: কুয়েট শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন

ছবি

কৃষি গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ১২ এপ্রিল

ছবি

বৃহস্পতিবার শুরু হচ্ছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা, অংশ নেবে ১৯ লাখের বেশি শিক্ষার্থী

ছবি

১৩৫ কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়

ছবি

শিক্ষা সংস্কারে পদক্ষেপ নেই, বাজেট বাড়ানোর দাবি শিক্ষাবিদদের

ছবি

এসএসসি পরীক্ষার জন্য কোচিং সেন্টার বন্ধ ও কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা

ছবি

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ফল প্রকাশে দুই মাসের স্থগিতাদেশ

ছবি

পেছালো এসএসসির গণিত পরীক্ষা, নতুন সময়সূচি প্রকাশ

ছবি

ঢাবির সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা চূড়ান্ত নয়, পুনঃতদন্তে কমিটি

ছবি

নতুন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’ অনুমোদিত

ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহিংসতা: ১২৮ জনের তালিকা প্রকাশ

ছবি

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলো তিতুমীরের শিক্ষার্থীরা

ছবি

অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের মৃত্যুতে ঢাবিতে রোববার ছুটি

ছবি

শাবিপ্রবির ভর্তি পরীক্ষায় আপাতত সব কোটা স্থগিত

tab

শিক্ষা

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে আরও দু’তিনটি বই সংশোধনের কথা ভাবা হচ্ছে

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর দুটি বই প্রত্যাহারের পর আরও দু’তিনটি বই সংশোধনের কথা ভাবছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। এটি নির্ভর করছে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ওপর। সংশোধনী বেশি হলে পুরো বই পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম।

দুটি বই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত গত শুক্রবার সব উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ফরহাদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, তারা এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ‘ওয়াকিবহাল’ আছেন। দুটি বই প্রত্যাহার হয়েছে। আরও দু’তিনটি বই সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। সেগুলোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা মতামত দেবেন।

এই সংশোধন প্রক্রিয়ায় কত সময় লাগতে পারে-জানতে চাইলে ফরহাদুল ইসলাম বলেন, এটি বিশেষজ্ঞরদের মতামতের ওপর নির্ভর করছে। তারা ইতোমধ্যে তিনটি ‘সভা’ করেছেন। কমিটির মতামত হাতে পেলে যত দ্রুত সম্ভব সংশোধনী স্কুল পর্যায়ে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

বই আকারে এই সংশোধনী দেয়া হবে কীনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি নির্ভর করছে বইগুলোর আকার কেমন হচ্ছে। যদি ২০/২৫ পৃষ্ঠার সংশোধনী আসে সেক্ষেত্রে তা স্কুলে স্কুলে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এর চেয়ে বেশি সংশোধনীর সুপারিশ আসলে পুরো বই পাল্টে যাবে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে সংশোধনী পাঠানো হতে পারে।

১০ ফেব্রুয়ারি এনসিটিবির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর জন্য প্রণীত ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ পাঠ্যপুস্তক দুটি পাঠদান হতে প্রত্যাহারের কথা জানানো হয়।

এর আগে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে শিক্ষা প্রশাসনের এক বিশেষ বৈঠক ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ নামে দুটি বই পাঠদান থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে এনসিটিবির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান সংবাদকে বলেন, নতুন কারিকুলামে সিক্সে এবং সেভেনে ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের দুটি অংশ। এর একটি অনুশীলন বই, আরেকটি অনুসন্ধানী পাঠ। এনসিটিবি দুই শ্রেণীর অনুসন্ধানী পাঠ অংশটি প্রত্যাহারের কথা বলেছে।

দুই শ্রেণীর দুটি বই প্রত্যাহারের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে কীনা জানতে চাইলে ড. মশিউজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা মূলত যে বইটিকে তাদের মূল পাঠ্য হিসেবে পড়বে, সেটি হচ্ছে তার অনুশীলন বই। এই অংশটি শুধু সংশোধন হবে, প্রত্যাহার নয়। উঠে যাচ্ছে শুধু অনুসন্ধানী পাঠ। এই বই মূলত শিক্ষার্থীরা অনুশীলন বইয়ে যা পড়বে, তার সঙ্গে যেন নিজেদের চিন্তাকে মেলাতে পারে তার জন্য করা হয়েছিল।

ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে বিশ্বের নানা সভ্যতার ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে মশিউজ্জামান বলেন, বিশেষ করে মিশরীয় সভ্যতা, সুমেরীয় সভ্যতা ও মেসোপটেমিয়া সভ্যতাগুলো এসেছে; একই সঙ্গে প্রাচীন দেব-দেবী নিয়ে কথা এসেছে, তাদের সংস্কৃতির নানা ছবি ব্যবহার হয়েছে। এসব বিষয় নিয়েই আপত্তি এসেছে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই ইতোমধ্যে সারাদেশের শিক্ষার্থীর হাতে পৌছে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বই দুটি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেয়া হলেও বইগুলো পড়ার সুযোগ থাকছে শিক্ষার্থীদের।

এ বিষয়ে ড. মশিউজ্জামান বলেন, এবার বইগুলো ‘অ্যাকটিভিটি বেইজড’। পাঠ্যবইয়ে যে ‘কন্টেন্ট’ আছে, তাই সব নয়। এর বাইরেও পড়ার সুযোগ শিক্ষার্থীদের আছে। ফলে দুটি বই স্থগিত করলেও শিক্ষার্থীদের পড়ার ক্ষেত্রে কোন বিঘ্ন ঘটবে না।

অনুশীলন পাঠের সংশোধনের বিষয়ে তিনি বলেন, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি ভারতবর্ষ দখল করেছেন, নাকি বিজয় করেছেন- এমন কিছু বিষয় নিয়েও আলোচনা আছে। প্রাচীন দেব-দেবী নিয়ে প্রাচীন ইতিহাস নিয়ে বেশি কথা বলা হচ্ছে। এনসিটিবি এসব বিষয়, বইগুলো যারা তৈরি করেছেন, বিশেষজ্ঞ যারা আছেন, তাদের সঙ্গে বসবে। এরপর প্রয়োজনীয় সংশোধন করে সেগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।

নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুসন্ধানী পাঠ্যয়ের ১১তম অধ্যায়ে ‘মানব শরীর’ শিরোনাম অংশে কিশোর-কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকালে তাদের শরীরের নানা অঙ্গের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়টি ‘প্রকাশ্যে পড়ার উপযোগী নয়’- এমন অভিযোগ ওঠে, যা বাদ কিংবা সংশোধন হতে পারে।

আর ষষ্ঠ শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের ৯৫ পৃষ্ঠায় বাংলায় প্রায় ৬০০ বছরের মুসলিম শাসন, সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে সুলতানি শাসন নিয়ে যা লেখা হয়েছে, সেখানেও সংশোধনী আসতে পারে। একই বইয়ে ১৩ নম্বর পৃষ্ঠায় মানুষের পূর্বপুরুষক্রম নিয়ে আলোচনা এবং সপ্তম শ্রেণীর বিজ্ঞান অনুশীলন বইয়ের ৫১ ও ৫২ পৃষ্ঠায় ট্রান্সজেন্ডার বিষয় নিয়ে যে আলোচনা রয়েছে তাও সংশোধন হতে পারে।

৯ ফেব্রুয়ারি এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের পরীক্ষামূলক বই নিয়ে একটি ‘চিহ্নিত গোষ্ঠী’ অপপ্রচারে নেমেছে। এসব পাঠ্যপুস্তক রচনার সঙ্গে যেসব লেখক, শিক্ষক, শিক্ষাবিদ-বিশেষজ্ঞরা জড়িত, তাদের ‘কদর্য ভাষায়, কুৎসিতভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করা হচ্ছে এবং হুমকি দেয়া হচ্ছে।

এর আগে নতুন শিক্ষাক্রমে ছাপানো পাঠ্যপুস্তকের ভুল সংশোধনে এবং কেন ভুল হল তা তদন্তে দুই কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর জন্য প্রণীত পাঠ্যপুস্তকের অসঙ্গতি, ভুল বা ত্রুটি চিহ্নিত করে তা সংশোধনে প্রয়োজনীয় সুপারিশের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক অধ্যাপক আবদুল হালিমকে আহ্বায়ক এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপপরিচালক আজিজ উদ্দিনকে সদস্য সচিব করে একটি গঠন করা হয়।

অন্য কমিটির আহ্বায়ক হলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খালেদা আক্তার। এ কমিটি নতুন শিক্ষাক্রমের ভুল-ভ্রান্তির জন্য এনসিটিবির কোন কোন কর্মকর্তা জড়িত তাদের খুঁজে বের করবে। এ কমিটি ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

২০২৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যদান শুরু হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে মোট ১০টি করে বই থাকছে। বইগুলি হলো- বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান, ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এগুলোর মধ্যে মাত্র দুটি বিষয়ের বই নিয়ে ধর্মীয় সংগঠনের নেতারা আপত্তি করছেন।

back to top