alt

শিক্ষা

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কার্যক্রম যাচাই-বাছাইয়ে উদ্যোগ

রাকিব উদ্দিন : শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

শিক্ষকতার সনদ (এনটিআরসিএ) রয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, এমপিওভুক্তি হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রায় সব কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও মাউশির কোন কোন কর্মকর্তার দাবি তারা শুধুমাত্র নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়া, সনদ ও অন্যান্য নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।

কিছুদিন আগে এ কার্যক্রম শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ কাজে সংস্থার ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষ জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোরও সহায়তা নেয়া হচ্ছে।

তবে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন এবং শিক্ষক-কর্মচারীর যাবতীয় সনদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়ায় ‘তীব্র অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।

শিক্ষা প্রশাসনের দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, গত বছর দুই হাজার সাত শতাধিক এবং চলতি বছর আড়াইশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রেই নীতিমালা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক তদবির বিবেচনায় নিতে হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তি নিয়ে পরবর্তীতে অনেক ভুল-ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার তথ্য প্রকাশ পায়। এ কারণে সব প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সংবাদকে বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটি যাচাই-বাছাই হতেই পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানের সবকিছু যাচাই-বাছাই কাম্য নয়। সেটি হলে শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হবেন।’

সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই এমপিওভুক্ত করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবার এনটিআরসিএ (জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) সনদ ছাড়া কেউ নিয়োগ পায় না। তাহলে এ সনদ নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের কী প্রয়োজন সেটি বোধগম্য নয়।’

শিক্ষকরা মনে করছেন, এখন সনদ এবং প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের হয়রানি ছাড়া কিছুই হবে না। নানা অজুহাতে বিপদে ফেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ‘অনৈতিক সুবিধা’ আদায় করা হবে।

সম্প্রতি মাউশির রাজশাহী অঞ্চল অফিস থেকে আঞ্চলিক পরিচালককে (অধ্যাপক) আহ্বায়ক করে একটি এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে প্রতি জেলায় একটি করে কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিই নিজ নিজ অঞ্চল ও জেলা পর্যায়ে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তার যাবতীয় সনদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।

‘অঞ্চল পর্যায়ে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/স্তর এমপিও কোড পাওয়া কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, স্নাতক (পাস) কলেজ ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ অংশ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন রেকর্ডপত্র যাচাই কমিটি মনোনয়ন প্রসঙ্গে’ কমিটিগুলো গঠন করা হয়।

গত ১৪ মার্চ জারি করা আঞ্চলিক অফিসের চিঠিতে বলা হয়, ‘নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/স্তর এমপিও কোড পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, এমপিও কোড ও অন্যান্য কাগজপত্র এবং ব্যক্তি এমপিওর ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের সব পরীক্ষার সনদ/মার্কশিট, এনটিআরসিএ নিবন্ধন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), এনটিআরসিএ মূল সুপারিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের মূলকপি যাচাই-বাছাই করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জন্য নির্দেশক্রমে কমিটি মনোনয়ন প্রদান কার হলো।’

বিভাগীয় কমিটিতে রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক, রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহীর শাহমখদুম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে রাখা হয়েছে। আর জেলা পর্যায়ের কমিটিতেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষের প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক এএসএম আবদুল খালেক সংবাদকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ই উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এখন এমপিও যাচাই-বাছাই কাজ চলছে।’

নতুন ও পুনো সব প্রতিষ্ঠানের জনবল যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা নতুন প্রতিষ্ঠানের ‘স্টাফ’দের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। আগে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এখন শিক্ষক-কর্মচারীর বিষয়ে যাচাই-বাছাই হচ্ছে বলে জানান আবদুল খালেক।

কিন্তু শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সময় এর জনবল, শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, যাবতীয় সনদ ও নথিপত্র বিবেচনায় নেয়া হয়। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন বা পাঠদানের অনুমোদন আছে সেটি বিবেচনায় নেয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

শিক্ষক-কর্মচারীদের সব সনদ পুনরায় যাচাই-বাছাই কার্যক্রম জোড়ালো করার লক্ষ্যে গত ২২ মার্চ সব আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা করেন মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। ওই সভায় এমপিওভুক্তিতে ‘ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন মাউশি মহাপরিচালক।

এ বিষয়ে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর সনদ ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ের সব শিক্ষা কর্মকর্তাদের কড়াভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

এ কাজে কাউকে অযথা হয়রানি করলে বা ঘুষ দাবি করলে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাউশি মহাপরিচালক।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অধীনে দুই হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। ওই সময় অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ার অভিযোগ ওঠে। আবার অনেক অযোগ্য প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অভিযোগ ওঠে।

পরবর্তীতে বাদপড়া অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিও পেতে আপিল আবেদন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১২ জানুয়ারি নতুন করে আরও ২৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আরও ৮৩ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রস্তাব

জনপ্রতিনিধিদের ডিও লেটারের (চাহিদাপত্র) আলোকে ৮৩টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্তির জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এক্ষেত্রেও ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালা এবং জনবল কাঠামোর কিছু শর্ত আমলে না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এমপিওভুক্তির জন্য এবার অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এরপর গত ২৮ মার্চ ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিকের ৩২টি, মাধ্যমিক ১৫টি, উচ্চ মাধ্যমিক ১২টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ২০টি এবং ছয়টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে বছরে সরকারের ৩২ কোটি ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ৯১০ টাকা ব্যয় হবে।

যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের দাবি, রাজনৈতিক বিবেচনা নয়, যোগ্যতার মাপকাঠিতে এমপিও দেয়া হচ্ছে।

২০২১ সালের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হয়। ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর), পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর) এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার (৪০ নম্বর)। এ নীতিমালার ২২ ধারায় বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে।

২২ ধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, বস্তি এলাকা, ছিটমহল, নারীশিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী (প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি) এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ চারুকলা, বিকেএসপিসহ সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলযোগ্য।

মাউশির এমপিও শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদনের সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন তথ্য ইচ্ছেমতো বেশি দেখিয়ে প্রস্তাবনা জমা দেন। এর ওপর আবার জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ থাকে। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এমপিওভুক্ত করা হয়। এ কারণে অনেক ধরনের ভুলভ্রান্তি থেকে যায়।

ছবি

একাদশে ভর্তি, শেষ ধাপের ফল প্রকাশ রাতে

ছবি

সংঘর্ষের পর দুই হলে তল্লাশি, পাঁচ বহিরাগত আটক

ছবি

তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ১১০০ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে এডিবি

ছবি

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার তারিখ জানাল পিএসসি

ছবি

স্বাধীনতা বিসিএস শিক্ষা সংসদের সভাপতি নাসির ও সম্পাদক জাফর

প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা : ৯ বছরেও শেষ হয়নি পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ছবি

রাজস্ব খাতভুক্ত বৃত্তি পাচ্ছে ২৫ হাজার শিক্ষার্থী

ছবি

‘স্বাধীনতার ৫২ বছরে দেশে ধর্মভিত্তিক শিক্ষার প্রসার ঘটেছে’

একাদশে ভর্তি : দ্বিতীয় ধাপের ফল আজ

ছবি

ছয় দফা দাবিতে মাউশিতে অবস্থান কর্মসূচি শিক্ষা ক্যাডারদের

মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের ঘটনায় শিক্ষিকা ও ৬ ডাক্তারসহ ৭ জন গ্রেপ্তার

ছবি

শিবচরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি এর নির্মাণ কাজ উদ্বোধন

ছবি

৯ম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জাতীয় পর্ব অনুষ্ঠিত

ছবি

শেষ হয়নি প্রশ্নপত্র তৈরি, অক্টোবরে লিখিত পরীক্ষা নিয়ে সংশয়

ছবি

চবি উপাচার্যের বাসভবন ও পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর

ছবি

ইউজিসি সদস্য হিসেবে যোগ দিলেন ড. হাসিনা খান

ছবি

একাদশে ভর্তি : শিক্ষার্থীদের পছন্দের তালিকায় নেই দু’শতাধিক কলেজ-মাদ্রাসা

ছবি

বৈষম্য নিরসন না করলে বৃহত্তর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি শিক্ষা ক্যাডারদের

ছবি

আগামী বছর ফেব্রুয়ারিতে এসএসসি, জুনে এইচএসসি

ছবি

৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা আজ শুরু হয়েছে

শিক্ষায় বিভিন্ন প্রকল্পের ১৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়নি

ছবি

৪৩তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ চায় ২৪ পরীক্ষার্থী

ছবি

১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার ফল প্রকাশ, উত্তীর্ণ ২৬২৪২ জন

ছবি

কমনওয়েলথ বৃত্তিপ্রাপ্তদের জন্য ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রি-ডিপারচার ব্রিফিং

ছবি

ঢাবি শিক্ষক রহমতউল্লার অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বাতিল

ছবি

ভুল প্রশ্নে আলিম পরীক্ষা, বিপাকে ২২৬ শিক্ষার্থী

ছবি

আইসিটি পরিক্ষায় বহিষ্কার ৪৫, অনুপস্থিত ১২৪১৯

ছবি

তিন বোর্ডের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু

ছবি

তিন বোর্ডের এইসএসসি পরীক্ষা শুরু কাল

ছবি

পদত্যাগ করলেন আইডিয়াল কলেজের মুশতাক

ছবি

জবির স্নাতক প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু ৩ সেপ্টেম্বর

ছবি

এইচএসসি ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষায় বহিষ্কার ৬৬, অনুপস্থিত ৭৪০৪

ছবি

এসএসসি’র কৃতি পরিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা দিল এনার্জিপ্যাক

ছবি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে ৭৫ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে

ছবি

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার স্থাপনের নির্দেশ

ছবি

মুন্সিগঞ্জে মামাতো বোনের ‘প্রক্সি’ পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়লেন ফুফাতো বোন

tab

শিক্ষা

এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ কার্যক্রম যাচাই-বাছাইয়ে উদ্যোগ

রাকিব উদ্দিন

শনিবার, ০১ এপ্রিল ২০২৩

শিক্ষকতার সনদ (এনটিআরসিএ) রয়েছে, নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে, এমপিওভুক্তি হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রায় সব কার্যক্রম সম্পন্ন হওয়ার পর দেশের সব এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কার্যক্রম পুনরায় যাচাই-বাছাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও মাউশির কোন কোন কর্মকর্তার দাবি তারা শুধুমাত্র নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর নিয়োগ প্রক্রিয়া, সনদ ও অন্যান্য নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন।

কিছুদিন আগে এ কার্যক্রম শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। এ কাজে সংস্থার ৯টি আঞ্চলিক কার্যালয় ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষ জেলা পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোরও সহায়তা নেয়া হচ্ছে।

তবে নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি সম্পন্ন হওয়ার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন এবং শিক্ষক-কর্মচারীর যাবতীয় সনদ পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়ায় ‘তীব্র অসন্তোষ’ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরা।

শিক্ষা প্রশাসনের দু’জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকে জানিয়েছেন, গত বছর দুই হাজার সাত শতাধিক এবং চলতি বছর আড়াইশ’ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়। এতে অনেক ক্ষেত্রেই নীতিমালা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক তদবির বিবেচনায় নিতে হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর এমপিওভুক্তি নিয়ে পরবর্তীতে অনেক ভুল-ত্রুটি বা সীমাবদ্ধতার তথ্য প্রকাশ পায়। এ কারণে সব প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় সনদ ও নথিপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের (স্বাশিপ) সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু সংবাদকে বলেন, ‘কারো বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে সেটি যাচাই-বাছাই হতেই পারে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানের সবকিছু যাচাই-বাছাই কাম্য নয়। সেটি হলে শিক্ষকরা হয়রানির শিকার হবেন।’

সবকিছু যাচাই-বাছাই করেই এমপিওভুক্ত করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আবার এনটিআরসিএ (জাতীয় শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ) সনদ ছাড়া কেউ নিয়োগ পায় না। তাহলে এ সনদ নতুন করে যাচাই-বাছাইয়ের কী প্রয়োজন সেটি বোধগম্য নয়।’

শিক্ষকরা মনে করছেন, এখন সনদ এবং প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক স্বীকৃতি যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে শিক্ষকদের হয়রানি ছাড়া কিছুই হবে না। নানা অজুহাতে বিপদে ফেলে শিক্ষক-কর্মচারীদের কাছ থেকে ‘অনৈতিক সুবিধা’ আদায় করা হবে।

সম্প্রতি মাউশির রাজশাহী অঞ্চল অফিস থেকে আঞ্চলিক পরিচালককে (অধ্যাপক) আহ্বায়ক করে একটি এবং জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে প্রধান করে প্রতি জেলায় একটি করে কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটিই নিজ নিজ অঞ্চল ও জেলা পর্যায়ে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-কর্মকর্তার যাবতীয় সনদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।

‘অঞ্চল পর্যায়ে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/স্তর এমপিও কোড পাওয়া কলেজ (উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, স্নাতক (পাস) কলেজ ও স্কুল অ্যান্ড কলেজের কলেজ অংশ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরেজমিন রেকর্ডপত্র যাচাই কমিটি মনোনয়ন প্রসঙ্গে’ কমিটিগুলো গঠন করা হয়।

গত ১৪ মার্চ জারি করা আঞ্চলিক অফিসের চিঠিতে বলা হয়, ‘নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/স্তর এমপিও কোড পাওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের পাঠদান, একাডেমিক স্বীকৃতি, এমপিও কোড ও অন্যান্য কাগজপত্র এবং ব্যক্তি এমপিওর ক্ষেত্রে শিক্ষক-কর্মচারীদের সব পরীক্ষার সনদ/মার্কশিট, এনটিআরসিএ নিবন্ধন (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), এনটিআরসিএ মূল সুপারিশ ও নিয়োগ সংক্রান্ত কাগজপত্রের মূলকপি যাচাই-বাছাই করার নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের জন্য নির্দেশক্রমে কমিটি মনোনয়ন প্রদান কার হলো।’

বিভাগীয় কমিটিতে রাজশাহী অঞ্চলের পরিচালক, রাজশাহী কলেজ এবং রাজশাহীর শাহমখদুম ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষকে রাখা হয়েছে। আর জেলা পর্যায়ের কমিটিতেও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে একটি সরকারি এবং একটি বেসরকারি কলেজের অধ্যক্ষের প্রতিনিধিকে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে মাউশির ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক এএসএম আবদুল খালেক সংবাদকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ই উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কমিটি গঠন করে দিয়েছে। এখন এমপিও যাচাই-বাছাই কাজ চলছে।’

নতুন ও পুনো সব প্রতিষ্ঠানের জনবল যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা নতুন প্রতিষ্ঠানের ‘স্টাফ’দের নথিপত্র যাচাই-বাছাই করছেন। আগে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এখন শিক্ষক-কর্মচারীর বিষয়ে যাচাই-বাছাই হচ্ছে বলে জানান আবদুল খালেক।

কিন্তু শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলছেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির সময় এর জনবল, শিক্ষকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া, যাবতীয় সনদ ও নথিপত্র বিবেচনায় নেয়া হয়। তাছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বীকৃতি নবায়ন বা পাঠদানের অনুমোদন আছে সেটি বিবেচনায় নেয়া একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

শিক্ষক-কর্মচারীদের সব সনদ পুনরায় যাচাই-বাছাই কার্যক্রম জোড়ালো করার লক্ষ্যে গত ২২ মার্চ সব আঞ্চলিক অফিসের পরিচালক এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি সভা করেন মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। ওই সভায় এমপিওভুক্তিতে ‘ঘুষ, অনিয়ম ও দুর্নীতি’র বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেন মাউশি মহাপরিচালক।

এ বিষয়ে অধ্যাপক নেহাল আহমেদ সংবাদকে বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে নতুন এমপিওভুক্ত হওয়া সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীর সনদ ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। এজন্য মাঠ পর্যায়ের সব শিক্ষা কর্মকর্তাদের কড়াভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।’

এ কাজে কাউকে অযথা হয়রানি করলে বা ঘুষ দাবি করলে অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন মাউশি মহাপরিচালক।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বিভাগের অধীনে দুই হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে। ওই সময় অনেক যোগ্য প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ার অভিযোগ ওঠে। আবার অনেক অযোগ্য প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্তির অভিযোগ ওঠে।

পরবর্তীতে বাদপড়া অনেক প্রতিষ্ঠান এমপিও পেতে আপিল আবেদন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে আপিল নিষ্পত্তি করে গত ১২ জানুয়ারি নতুন করে আরও ২৫৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

আরও ৮৩ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রস্তাব

জনপ্রতিনিধিদের ডিও লেটারের (চাহিদাপত্র) আলোকে ৮৩টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে (স্কুল ও কলেজ) এমপিওভুক্তির জন্য সারসংক্ষেপ পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। এক্ষেত্রেও ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালা এবং জনবল কাঠামোর কিছু শর্ত আমলে না নেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, ‘বিশেষ বিবেচনায়’ এমপিওভুক্তির জন্য এবার অর্ধশত প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছিল। এরপর গত ২৮ মার্চ ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য পাঠানো হয়।

প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিকের ৩২টি, মাধ্যমিক ১৫টি, উচ্চ মাধ্যমিক ১২টি, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ২০টি এবং ছয়টি ডিগ্রি কলেজ রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলে বছরে সরকারের ৩২ কোটি ৪৫ লাখ ১৭ হাজার ৯১০ টাকা ব্যয় হবে।

যদিও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানের দাবি, রাজনৈতিক বিবেচনা নয়, যোগ্যতার মাপকাঠিতে এমপিও দেয়া হচ্ছে।

২০২১ সালের এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হয়। ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর), পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর) এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার (৪০ নম্বর)। এ নীতিমালার ২২ ধারায় বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে।

২২ ধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাঁওড়, চরাঞ্চল, বস্তি এলাকা, ছিটমহল, নারীশিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী (প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি) এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ চারুকলা, বিকেএসপিসহ সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলযোগ্য।

মাউশির এমপিও শাখার একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আবেদনের সময় প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষার্থী, শিক্ষকসহ বিভিন্ন তথ্য ইচ্ছেমতো বেশি দেখিয়ে প্রস্তাবনা জমা দেন। এর ওপর আবার জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশ থাকে। এ তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই এমপিওভুক্ত করা হয়। এ কারণে অনেক ধরনের ভুলভ্রান্তি থেকে যায়।

back to top