alt

শিক্ষা

সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের বাইরে রেখেই নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু

রাকিব উদ্দিন : শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩

প্রশিক্ষণ অসমাপ্ত রেখেই নতুন শিক্ষাক্রমে বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা প্রশাসন। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী, গত ৩১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে ৭ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে ইতোমধ্যে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ শিক্ষক এখনও নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ পাননি।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শুধু মাধ্যমিক স্তরেই চার লাখ ১৮ হাজার শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮০ হাজার ৭৯০ জন জনের প্রশিক্ষণসম্পন্ন হয়েছে। বাকি এক লাখ ৩৭ হাজার ২১০ জন শিক্ষক এখনও প্রশিক্ষণই পাননি বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

একইভাবে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই স্তরেও বেসরকারি শিক্ষকরা এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ পাননি। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণীতেও নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) অধীনে। সংস্থাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, এনজিও পরিচালিত স্কুল এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

ডিপিই থেকে জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি প্রায় সাড়ে সাত লাখ প্রাথমিক শিক্ষককে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে গত ৮ মে পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের তিন লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৭ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ বাকি রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৮ জন শিক্ষকও প্রশিক্ষণ পাননি।

চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু ছয় মাসে গড়াতে যাচ্ছে। অথচ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে এখনও ছয় লাখের বেশি শিক্ষকের প্রশিক্ষণ বাকি রয়েছে। প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক। ‘অব্যবস্থাপনা’ ও ‘আর্থিক’ সীমাবদ্ধতার কারণে খুব সহসায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সংবাদকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ। তারা অনলাইনে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।’

বেসরকারি শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষক এখনও প্রশিক্ষণের বাইরে রয়েছে তারা বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত স্কুল ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক। তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা ডিপিইর দায়িত্ব।’

গত বছরের নভেম্বরের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘অদক্ষতার’ কারণে এই প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।

শিক্ষাবর্ষ শুরুর পাঁচ মাসেও নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করতে না পারাকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। যথাসময়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মন্তব্য করে শিক্ষাবিদরা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির সংবাদকে বলেন, ‘যেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই ঠিকমতো নতুন শিক্ষাক্রম বুঝতে পারছে না; সেখানে প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করবেন কীভাবে’

‘গোঁজামিল’ দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে-মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এতে খুব সহসাই ইতিবাচক কোন ফল আসবে না। উল্টো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নোট-গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।’

জানা গেছে, সারাদেশেই নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রণীত সহায়ক বই বিক্রি হচ্ছে, যা ‘নোট-গাইড’ নামে পরিচিত। এবার নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই ছাপতে অনেকটা বিলম্ব হওয়ায় বাজারে নোট-গাইড বইয়ের চাহিদাও বেড়েছে।

এনসিটিবি জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অনলাইন ও সরাসরি পাঁচ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা সন্তুষ্ট নন। অনেক বিষয় শ্রেণী শিক্ষকদের কাছে পরিষ্কার নয়। এ কারণে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং পাঠ্যবই ছাপার দায়িত্বে রয়েছে এনসিটিবি। আর মাউশি সারাদেশে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) অর্থায়নে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

গত ৭ মে অনুষ্ঠিত এসইডিপির বাস্তবায়ন পর্যালোচনার এক সভায় এ বিষয়টি উঠে আসে। ওই সভায় ‘ডেসিমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’ স্কিমের পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

সভায় বলা হয়, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর আলোকে প্রণীত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বাস্তবায়নের নিমিত্তে নভেম্বর ২০২২-এর মধ্যে জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের বাধ্যবাধকতা ছিল।’

বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা :

মাউশি সম্প্রতি নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে ৩১ মে থেকে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে ৭ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ সময় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে তাদের সুবিধা মতো মূল্যায়ন কাজ করতে হবে। এজন্য আগামী ৩০ মে অনলাইনে শিক্ষকদের দিকনির্দেশনামূলক কোর্সটি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

মাউশির রুটিন অনুয়ায়ী, ৭ জুন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ৭ জুন ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা, ৮ জুন ইংরেজি, ১০ জুন গণিত, ১১ জুন ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ১৩ জুন ডিজিটাল প্রযুক্তি, ১৪ জুন জীবন ও জীবিকা, ১৫ জুন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ১৭ জুন ধর্ম এবং ১৮ জুন শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণীর ক্ষেত্রে ৭ জুন ডিজিটাল প্রযুক্তি, ৮ জুন জীবন ও জীবিকা, ১০ জুন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ১১ জুন ধর্ম, ১২ জুন শিল্প ও সংস্কৃতি, ১৩ জুন বাংলা, ১৪ জুন ইংরেজি, ১৫ জুন গণিত, ১৭ জুন বিজ্ঞান এবং ১৮ জুন ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়নের নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি।

ছবি

তৃতীয় দফায় তিনদিন শ্রেণি কার্যক্রম বর্জনে ঘোষণা কুবি শিক্ষক সমিতির

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স ১ম বর্ষ ভর্তির আবেদনের ২য় মেধা তালিকা প্রকাশ

ছবি

বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে অব্যাহতি

ছবি

এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু মঙ্গলবার, চলবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত

ছবি

স্বল্প আয়ের মানুষের মাঝে খাদ্য সামগ্রী ও ঈদ উপহার বিতরন

ছবি

রাবি-চবির অধিভুক্ত হল ৯ সরকারি কলেজ

ছবি

১১ মের মধ্যেই এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

নতুন শিক্ষাক্রম : আগের ধাচেই শিক্ষক নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি এনটিআরসিএ’র

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে টেস্ট পরীক্ষার নামে ফি আদায় করলে ব্যবস্থা

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ৩০ জুন, রুটিন প্রকাশ

ছবি

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চলবে : হাইকোর্ট

ছবি

বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দাবিতে দেশব্যাপী মানববন্ধন করবে ছাত্রলীগ

ছবি

তিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তিন ক্যাম্পাসে চলছে পাল্টাপাল্টি মহড়া

ছবি

৩০টি বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব স্থগিত:এনবিআর

ছবি

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

শিক্ষায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরে পারিবারিক ব্যয় বেড়েছে

কক্সবাজারে ওয়্যারলেস অডিও ডিভাইসসহ দুইজন আটক

ছবি

মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে, বেড়েছে মাদ্রাসায়

ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মকর্তা বরখাস্ত

ঢাবির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ২৬ দিনের ছুটি শুরু

ছবি

শনিবার স্কুল খোলা রাখার ইঙ্গিত: শিক্ষামন্ত্রী নওফেল

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত সমাপনী পরীক্ষা পাঁচ ঘণ্টা করার প্রস্তাব এনসিটিবির

ছবি

ঢাবির সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক রাশেদা ইরশাদ

ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা কার কোন কেন্দ্রে, তালিকা প্রকাশ

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের শতাধিক ‘ট্রেড কোর্সের’ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই সংস্থার দ্বন্দ্ব

ছবি

ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলের ২০০ বছর বয়সী ভবন ভাঙার প্রতিবাদে মানববন্ধন

কেমব্রিজ পরীক্ষায় ডিপিএস শিক্ষার্থীদের অনন্য সাফল্য

ছবি

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে

সিমাগো র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ভর্তির ফল ১৮ মার্চ

ছবি

রাবির ‘বি’ ইউনিটের ফল প্রকাশ, পাসের হার ৪৫.৩ শতাংশ

ছবি

হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত রোজায় স্কুল খোলা

ছবি

রমজানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রাখতে কোনো বাধা নেই

ছবি

দ্বিতীয় দিনে পাঁচ দফা দাবিতে জাবির প্রশাসনিক ভবন অবরোধ

ছবি

অপরিকল্পিত ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে দিলো ছাত্র ইউনিয়ন

tab

শিক্ষা

সাড়ে ৬ লাখ শিক্ষককে প্রশিক্ষণের বাইরে রেখেই নতুন শিক্ষাক্রমে মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শুরু

রাকিব উদ্দিন

শুক্রবার, ০৯ জুন ২০২৩

প্রশিক্ষণ অসমাপ্ত রেখেই নতুন শিক্ষাক্রমে বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে শিক্ষা প্রশাসন। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা অনুযায়ী, গত ৩১ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে ৭ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে ইতোমধ্যে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়। অথচ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ শিক্ষক এখনও নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ পাননি।

নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শুধু মাধ্যমিক স্তরেই চার লাখ ১৮ হাজার শিক্ষককে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮০ হাজার ৭৯০ জন জনের প্রশিক্ষণসম্পন্ন হয়েছে। বাকি এক লাখ ৩৭ হাজার ২১০ জন শিক্ষক এখনও প্রশিক্ষণই পাননি বলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

একইভাবে শিক্ষার প্রাথমিক স্তরে চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এই স্তরেও বেসরকারি শিক্ষকরা এখন পর্যন্ত প্রশিক্ষণ পাননি। আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে প্রাথমিকের তৃতীয় শ্রেণীতেও নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) অধীনে। সংস্থাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশাপাশি কিন্ডারগার্টেন স্কুল, এনজিও পরিচালিত স্কুল এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে।

ডিপিই থেকে জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি প্রায় সাড়ে সাত লাখ প্রাথমিক শিক্ষককে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মধ্যে গত ৮ মে পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কিন্ডারগার্টেনের তিন লাখ ৪৪ হাজার ৮৩৭ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ বাকি রয়েছে। এছাড়া বেসরকারি ইবতেদায়ি মাদ্রাসার এক লাখ ২০ হাজার ৫৯৮ জন শিক্ষকও প্রশিক্ষণ পাননি।

চলতি শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিকের প্রথম ও দ্বিতীয় এবং মাধ্যমিক স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু হয়েছে। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন হওয়ার কথা রয়েছে।

নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠদান শুরু ছয় মাসে গড়াতে যাচ্ছে। অথচ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক পর্যায়ে এখনও ছয় লাখের বেশি শিক্ষকের প্রশিক্ষণ বাকি রয়েছে। প্রশিক্ষণের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনেক শিক্ষক। ‘অব্যবস্থাপনা’ ও ‘আর্থিক’ সীমাবদ্ধতার কারণে খুব সহসায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. একেএম রিয়াজুল হাসান সংবাদকে বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ ভাগ শিক্ষকের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ। তারা অনলাইনে প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।’

বেসরকারি শিক্ষকরা প্রশিক্ষণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব শিক্ষক এখনও প্রশিক্ষণের বাইরে রয়েছে তারা বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন, এনজিও পরিচালিত স্কুল ও ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষক। তাদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা ডিপিইর দায়িত্ব।’

গত বছরের নভেম্বরের মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ‘অদক্ষতার’ কারণে এই প্রক্রিয়ায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় বলে ওই কর্মকর্তারা জানান।

শিক্ষাবর্ষ শুরুর পাঁচ মাসেও নতুন শিক্ষাক্রমের শিক্ষক প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ করতে না পারাকে দুঃখজনক বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদরা। যথাসময়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মন্তব্য করে শিক্ষাবিদরা বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বাস্তবায়নও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

জানতে চাইলে ‘জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০’ প্রণয়ন কমিটির সদস্য সচিব ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক শেখ ইকরামুল কবির সংবাদকে বলেন, ‘যেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরাই ঠিকমতো নতুন শিক্ষাক্রম বুঝতে পারছে না; সেখানে প্রশিক্ষণ না পাওয়া শিক্ষকরা খাতা মূল্যায়ন করবেন কীভাবে’

‘গোঁজামিল’ দিয়ে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করতে গেলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে-মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এতে খুব সহসাই ইতিবাচক কোন ফল আসবে না। উল্টো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নোট-গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়বে।’

জানা গেছে, সারাদেশেই নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর প্রণীত সহায়ক বই বিক্রি হচ্ছে, যা ‘নোট-গাইড’ নামে পরিচিত। এবার নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই ছাপতে অনেকটা বিলম্ব হওয়ায় বাজারে নোট-গাইড বইয়ের চাহিদাও বেড়েছে।

এনসিটিবি জানিয়েছে, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নে শিক্ষকদের অনলাইন ও সরাসরি পাঁচ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা সন্তুষ্ট নন। অনেক বিষয় শ্রেণী শিক্ষকদের কাছে পরিষ্কার নয়। এ কারণে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শ্রেণী কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়ছে।

নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং পাঠ্যবই ছাপার দায়িত্বে রয়েছে এনসিটিবি। আর মাউশি সারাদেশে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। মাউশির অধীনে বাস্তবায়ন হওয়া সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের (এসইডিপি) অর্থায়নে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

গত ৭ মে অনুষ্ঠিত এসইডিপির বাস্তবায়ন পর্যালোচনার এক সভায় এ বিষয়টি উঠে আসে। ওই সভায় ‘ডেসিমিনেশন অব নিউ কারিকুলাম’ স্কিমের পরিচালক সৈয়দ মাহফুজ আলী মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষক প্রশিক্ষণের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

সভায় বলা হয়, ‘জাতীয় শিক্ষাক্রম রূপরেখা ২০২১-এর আলোকে প্রণীত ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পরিমার্জিত শিক্ষাক্রম ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে বাস্তবায়নের নিমিত্তে নভেম্বর ২০২২-এর মধ্যে জেলা পর্যায়ের প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণের বাধ্যবাধকতা ছিল।’

বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা :

মাউশি সম্প্রতি নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বিষয়ভিত্তিক ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়ন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এতে ৩১ মে থেকে আগামী ৬ জুন পর্যন্ত প্রস্তুতি নিয়ে ৭ থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এ সময় কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে পরবর্তী সময়ে তাদের সুবিধা মতো মূল্যায়ন কাজ করতে হবে। এজন্য আগামী ৩০ মে অনলাইনে শিক্ষকদের দিকনির্দেশনামূলক কোর্সটি সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

মাউশির রুটিন অনুয়ায়ী, ৭ জুন ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর সামষ্টিক মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে। এর মধ্যে ৭ জুন ষষ্ঠ শ্রেণীর বাংলা, ৮ জুন ইংরেজি, ১০ জুন গণিত, ১১ জুন ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান, ১৩ জুন ডিজিটাল প্রযুক্তি, ১৪ জুন জীবন ও জীবিকা, ১৫ জুন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ১৭ জুন ধর্ম এবং ১৮ জুন শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ের মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে।

সপ্তম শ্রেণীর ক্ষেত্রে ৭ জুন ডিজিটাল প্রযুক্তি, ৮ জুন জীবন ও জীবিকা, ১০ জুন স্বাস্থ্য সুরক্ষা, ১১ জুন ধর্ম, ১২ জুন শিল্প ও সংস্কৃতি, ১৩ জুন বাংলা, ১৪ জুন ইংরেজি, ১৫ জুন গণিত, ১৭ জুন বিজ্ঞান এবং ১৮ জুন ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের মূল্যায়নের নির্দেশনা দিয়েছে মাউশি।

back to top