শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ছয়টি সিনেমা আটক বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সেন্সরবোর্ড। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ৬টি ছবি না আটকালে ১৬ বছরে এমন আরও ৬০টি সিনেমা নির্মাণ হতো। যেগুলোর মধ্যদিয়ে ‘ফ্রিডম অব স্পিচ’ প্রতিষ্ঠা পেত। ফিরে দেখা যাক আটকে পড়া ছবিগুলোর নাম-পরিচয় ও ধরন। এনামুল করিম নির্ঝর সরকারি অনুদান নিয়ে সিনেমা ‘নমুনা’ নির্মাণ করেন যা আটকে যায় সেন্সরবোর্ডে! পরিচালক তখন জানিয়েছিলেন, তার এই ছবি তরুণমনস্ক দর্শকের জন্য বানিয়েছিলেন। গুঞ্জন রয়েছে হাসিনা-খালেদার নেতিবাচক রাজনৈতিক গল্প উঠে এসেছে এই সিনেমায়।
ছবিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৈরি হলেও মুক্তির প্রাক্কালে ক্ষমতায় আসে হাসিনা সরকার। যথারীতি আটকে যায়।
র্নিমাতা নজরুল ইসলাম খানের সিনেমা ‘রানা প্লাজা’। দেশের সবচেয়ে বড় স্ট্রাকচারাল দুর্ঘটনার আলোকে নির্মিত হয়েছিল ছবিটি। ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তির সব প্রস্তুতি ছিল। পেয়েছিল ছাড়পত্রও। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পরিচালক জানতে পারেন, মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে হাইকোর্ট থেকে! তবে এই সময়ে এসে নির্মাতা আশাবাদী। চাকমা ভাষায় নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা ‘আমার বাইসাইকেল র থেংগারি’। ২০১৫ সালের মে মাসে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছেন এর র্নিমাতা অং রাখাইন।
তিনি জানান, ৬৪ মিনিটের ছবি থেকে ২৫ মিনিট কেটে ফেলতে বলেছে সেন্সর বোর্ড! তবেই মিলবে ছাড়পত্র। নির্মাতার প্রশ্ন, তাহলে সিনেমার আর থাকল কী? তিনি শর্ত মানেননি। শুধু অপেক্ষায় ছিলেন সময়ের। যদিও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে, নতুন সরকারও অং রাখাইনের মন আর সিনেমার মান অক্ষুণ্ন রাখতে পারবেন কিনা। কারণ এই সিনেমায় রয়েছে সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে কিছু বিষয়। ছবির গল্প পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন নাসিফুল ওয়ালিদ। প্রযোজনা করেছেন মা নান খিং। ছবিটির পরিবেশক খনা টকিজ। ১৬ বছরের সেন্সরবোর্ডের ইতিহাসে আটকে থাকা সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। কারণ এর প্রেক্ষাপট ছিল হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। এটি নির্মাণ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
২০১৯ সালে ছবিটি ছাড়পত্রের জন্য জমা দেয়া হয়। ফারুকী মনে করেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফল হিসেবে আর কোনো ছবি এভাবে আটকে থাকবে না। ‘মেকআপ’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন অনন্য মামুন। কিন্তু এটি নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার আলোকে তৈরি সিনেমা নয়। তবে এতে লুকিয়ে থাকার কথা গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের ভেতরের গল্প। যে গল্পে রয়েছে রাজনীতিরও খেলা। যথারীতি ছবিটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে আটকে গেল সেন্সর বোর্ডে। ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি আপিল বিভাগে সর্বশেষ শুনানি হয়।
তাতে আপিল বোর্ড জানায়, ‘সিনেমাটি খুব দুর্বল নির্মাণ, দুর্বল চিত্রনাট্য, বাজে শটসহ নানা কারণেই এই ছবি প্রদর্শনের অযোগ্য।’ নতুন বাংলাদেশে ‘মেকআপ’সহ আটকে থাকা সকল সিনেমাই মুক্তির আলোয় ডানা মেলবে বলে বিশ্বাস করেন অনন্য মামুন। ওটিটির জন্য নির্মিত সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ যেটি নির্মাণ করেন রায়হান রাফী। মাত্র মাস তিনেক আগে ‘প্রদর্শন উপযোগী’ নয় বলে সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। অথচ ওটিটি কনটেন্টের জন্য সেন্সরবোর্ড কথা বলারই কথা নয়। তবুও ছবিটি তলব করেছে বোর্ড। এবং নিষিদ্ধ করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে চারটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে ছবিটি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে।
ছবিটি রায়হান রাফী নির্মাণ করেছেন হাসিনা আমলের বিতর্কিত ঘটনা সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। তিন মাস আগের স্মৃতি টেনে রায়হান রাফী বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড ছবিটি দেখে আনকাট ছাড়পত্র দেয়ার কথা শুনেছি প্রথমে। একদিন পরই শুনি অজানা কারণে আটকে দেয়া হলো! যে কারণগুলো দেখাল, সেগুলো আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। এখন আবার আবেদন করব। অনুমতি পেলে ভালো। না পেলে আবার চুপ থাকব।’
মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট ২০২৪
শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে ছয়টি সিনেমা আটক বা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে সেন্সরবোর্ড। বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই ৬টি ছবি না আটকালে ১৬ বছরে এমন আরও ৬০টি সিনেমা নির্মাণ হতো। যেগুলোর মধ্যদিয়ে ‘ফ্রিডম অব স্পিচ’ প্রতিষ্ঠা পেত। ফিরে দেখা যাক আটকে পড়া ছবিগুলোর নাম-পরিচয় ও ধরন। এনামুল করিম নির্ঝর সরকারি অনুদান নিয়ে সিনেমা ‘নমুনা’ নির্মাণ করেন যা আটকে যায় সেন্সরবোর্ডে! পরিচালক তখন জানিয়েছিলেন, তার এই ছবি তরুণমনস্ক দর্শকের জন্য বানিয়েছিলেন। গুঞ্জন রয়েছে হাসিনা-খালেদার নেতিবাচক রাজনৈতিক গল্প উঠে এসেছে এই সিনেমায়।
ছবিটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তৈরি হলেও মুক্তির প্রাক্কালে ক্ষমতায় আসে হাসিনা সরকার। যথারীতি আটকে যায়।
র্নিমাতা নজরুল ইসলাম খানের সিনেমা ‘রানা প্লাজা’। দেশের সবচেয়ে বড় স্ট্রাকচারাল দুর্ঘটনার আলোকে নির্মিত হয়েছিল ছবিটি। ২০১৫ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ছবিটি মুক্তির সব প্রস্তুতি ছিল। পেয়েছিল ছাড়পত্রও। ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় পরিচালক জানতে পারেন, মুক্তিতে নিষেধাজ্ঞা এসেছে হাইকোর্ট থেকে! তবে এই সময়ে এসে নির্মাতা আশাবাদী। চাকমা ভাষায় নির্মিত বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা ‘আমার বাইসাইকেল র থেংগারি’। ২০১৫ সালের মে মাসে সিনেমাটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছেন এর র্নিমাতা অং রাখাইন।
তিনি জানান, ৬৪ মিনিটের ছবি থেকে ২৫ মিনিট কেটে ফেলতে বলেছে সেন্সর বোর্ড! তবেই মিলবে ছাড়পত্র। নির্মাতার প্রশ্ন, তাহলে সিনেমার আর থাকল কী? তিনি শর্ত মানেননি। শুধু অপেক্ষায় ছিলেন সময়ের। যদিও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে, নতুন সরকারও অং রাখাইনের মন আর সিনেমার মান অক্ষুণ্ন রাখতে পারবেন কিনা। কারণ এই সিনেমায় রয়েছে সেনাবাহিনী প্রসঙ্গে কিছু বিষয়। ছবির গল্প পরিচালকের নিজের। চিত্রনাট্য করেছেন নাসিফুল ওয়ালিদ। প্রযোজনা করেছেন মা নান খিং। ছবিটির পরিবেশক খনা টকিজ। ১৬ বছরের সেন্সরবোর্ডের ইতিহাসে আটকে থাকা সিনেমা ‘শনিবার বিকেল’। কারণ এর প্রেক্ষাপট ছিল হলি আর্টিজানে ভয়াবহ জঙ্গি হামলা। এটি নির্মাণ করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
২০১৯ সালে ছবিটি ছাড়পত্রের জন্য জমা দেয়া হয়। ফারুকী মনে করেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ফল হিসেবে আর কোনো ছবি এভাবে আটকে থাকবে না। ‘মেকআপ’ সিনেমাটি নির্মাণ করেন অনন্য মামুন। কিন্তু এটি নির্দিষ্ট কোনো ঘটনা বা দুর্ঘটনার আলোকে তৈরি সিনেমা নয়। তবে এতে লুকিয়ে থাকার কথা গ্ল্যামার ওয়ার্ল্ডের ভেতরের গল্প। যে গল্পে রয়েছে রাজনীতিরও খেলা। যথারীতি ছবিটি সবাইকে অবাক করে দিয়ে আটকে গেল সেন্সর বোর্ডে। ২০২৩ সালের ২১ জানুয়ারি আপিল বিভাগে সর্বশেষ শুনানি হয়।
তাতে আপিল বোর্ড জানায়, ‘সিনেমাটি খুব দুর্বল নির্মাণ, দুর্বল চিত্রনাট্য, বাজে শটসহ নানা কারণেই এই ছবি প্রদর্শনের অযোগ্য।’ নতুন বাংলাদেশে ‘মেকআপ’সহ আটকে থাকা সকল সিনেমাই মুক্তির আলোয় ডানা মেলবে বলে বিশ্বাস করেন অনন্য মামুন। ওটিটির জন্য নির্মিত সিনেমা ‘অমীমাংসিত’ যেটি নির্মাণ করেন রায়হান রাফী। মাত্র মাস তিনেক আগে ‘প্রদর্শন উপযোগী’ নয় বলে সিদ্ধান্ত জানায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড। অথচ ওটিটি কনটেন্টের জন্য সেন্সরবোর্ড কথা বলারই কথা নয়। তবুও ছবিটি তলব করেছে বোর্ড। এবং নিষিদ্ধ করেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে চারটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে ছবিটি নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে।
ছবিটি রায়হান রাফী নির্মাণ করেছেন হাসিনা আমলের বিতর্কিত ঘটনা সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড নিয়ে। তিন মাস আগের স্মৃতি টেনে রায়হান রাফী বলেন, ‘সেন্সর বোর্ড ছবিটি দেখে আনকাট ছাড়পত্র দেয়ার কথা শুনেছি প্রথমে। একদিন পরই শুনি অজানা কারণে আটকে দেয়া হলো! যে কারণগুলো দেখাল, সেগুলো আসলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মতো। এখন আবার আবেদন করব। অনুমতি পেলে ভালো। না পেলে আবার চুপ থাকব।’